Wednesday 17 February 2016

Bar council Related Question

প্রশ্ন-১ বারকাউন্সিল কি? বারকাউন্সিলের গঠন ও কার্যাবলী লেখ। আইনজীবি তালিকাভূক্তি হওয়ার শর্ত ও অযোগ্যতা সম্পর্কে লেখ। পেশাগত আচরণবিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি,মক্কেলের প্রতি,সহআইনজীবির প্রতি এবং জনগণের প্রতি একজন আইনজীবির দায়িত্ব ও কর্তব্য আলোচনা কর।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কি:
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল” আইনের মাধ্যমে গঠিত একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। এই সংস্থা সমগ্র বাংলাদেশের আইনজীবিদের তালিকাভূক্তি,আচরণবিধি,শাস্তি তথা সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনে ৪৬ টি অনুচ্ছেদ,৯৯ টি বিধি এবং পেশাগত আচরণবিধির ৪ টি অধ্যায় আছে। ইহাতে আইনজীবি গণের তালিকাভূক্তি,আচরণবিধি,শাস্তিসহ এই আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুচ্ছেদ,বিধি ও ফরমের বর্ণনা দেওয়া আছে। ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ হইতে এই আইনের কার্যকারিতা আরম্ভ হয়। ইহার পূর্বে এই সংস্থা পূর্ব পাকিস্তান বার কাউন্সিল নামে কার্য সম্পাদন করিয়াছে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বলতে বুঝায়
ÒThe Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order and Rules ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩(১) ,অনুচ্ছেদ ৩(২) এবং অনুচ্ছেদ ১০ মতে আইনজীবিদের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এই আইনের অধীন সকল কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। এক কথায় বার কাউন্সিলকে আইনজীবি সম্প্রদাযের অভিভাবক বলা যায়। ইহা সমগ্র বাংলাদেশ আইনজীবিদের পেশাগত কার্যক্রমের একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর গঠন:
১) এই অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৫(১) অনুসারে বার কাউন্সিল ১৫ জন সদস্য নিযে গঠিত হবে। এদের মধ্যে
ক) পদাধিকার বলে একজন বাংলাদেশ এর্টনি জেনারেল থাকবেন।
খ) সমগ্র বাংলাদেশের আইনজীবিগনের মধ্যে ৭ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন।
গ) অঞ্চল ভিত্তিক আইনজীবিগনের মধ্যে ৭ জন  নির্বাচিত সদস্য হইবেন।
২) অনুচ্ছেদ ৬ অনুসারে বারকাউন্সিল ১ জন সভাপতি এবং ১ জন সহসভাপতি থাকবেন।
ক) পদাধিকার বলে বাংলাদেশের এর্টনি জেনারেল বার কাউন্সিলের সভাপতি হবেন।
খ) বারকাউন্সিলের সদস্যগণের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বারকাউন্সিলের সহসভাপতি নির্বাচিত হবে।
৩) অনুচ্ছে ১১(১) অনুসারে বারকাউন্সিল বিভিন্ন কমিটির সমন্বয়ে গঠিত হবে।যথা-
ক) কার্যপরিষদ কমিটি
খ) অর্থ কমিটি
গ) লিগ্যাল এডুকেশন কমিটি। এসব কমিটিসমূহ এই আইনের বিধি মোতাবেক ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পাদন করবেন। বার কাউন্সিলের সদস্যগণ প্রয়োজন মনে করলে কাজের সুবিধার্থে অনুরুপ অন্যান্য কমিটি গঠন করতে পারিবেন।
৪) অনুচ্ছেদ ১১(ক)(১) অনুসারে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোট বিভাগ বা অধস্তন আদালতে আইনপেশা পরিচালনার উদ্দেশ্যে আইনজীবি হিসেবে তালিকাভূক্তির জন্য নি¤œ বর্ণিত সদস্য লইয়া আইনজীবি তালিকাভূক্তি কমিটি গঠিত হইবে।
ক) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনতি আপীল বিভাগের বিচারপতি হবেন সভাপতি
খ) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হবেন একজন সদস্য
গ) বাংলাদেশের এর্টনি জেনারেল এবং বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে থেকে ২ জন সদস্য নিয়ে আইনজীবি তালিকাভূক্তি কমিটি গঠিত হবে।



বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ক্ষমতা ও কার্যাবলি :
এই আইনের ১০ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নি¤œ বর্ণিত কাজগলো করে থাকেন-
(ক) কোন ব্যক্তিকে এডভোকেট হিসেবে নিয়োগের জন্য অনুমোদন করা,সেই উদ্দেশ্যে পরিক্ষা গ্রহন করা এবং সেই নিয়োগ হতে বরখাস্ত করা।
(খ ) এডভোকেটদের জন্য ৎড়ষষ তৈরী করা এবং তা রক্ষনাবেক্ষন করা।
(ররর) এডভোকেটদের জন্য আচরন-বিধি তৈরী করা।
(গ) এডভোকেটদের পেশাদারী অসদাচারণ নির্ধারণ করা, বিচার করা এবং এরূপ আচরনের জন্য শাস্তির আদেশ দান করা।
(ঘ) এডভোকেটের অধিকার, সুবিধা এবং সুযোগের রক্ষা করা।
(ঙ) বার কাউন্সিলের তহবিলের ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ করা।
(চ) সদস্যদের নির্বাচন করা।
(ছ) এর কমিটির অনুসৃত কার্যবিধি প্রণয়ন করা।
(জ) বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সাথে আলোচনা করে আইন শিক্ষার মানোন্নয়ন করা এবং মানদন্ড প্রণয়ন করা।
(ঝ) অন্যান্য সকল কার্যাবলী সম্পাদন করা যা অত্র আইন বা অন্য আইনের দ্বারা বার কাউন্সিলের উপর ন্যস্ত রয়েছে।
(ঞ) উপরোক্ত কার্যাবলী সম্পাদন করতে যে সকল প্রয়োজনীয় কার্যবলী করতে হয় তা করা।

বাংলাদেশ বারকাউন্সিল অর্ডার অনুসারে আইনজীবি তালিকাভূক্তি হইবার নিয়ামক শর্তসমূহ:
একজন ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই তিনি আইন পেশা গ্রহন করতে পারবে না। বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি যদি একজন এ্যাডভোকেট না হন তাহলে তিনি আইনপেশা পরিচালনা করতে পারবেন না। উক্ত অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে যে, আইন পেশা গ্রহন করার জন্য তাকে অবশ্যই একজন আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউসিলে তালিকাভূক্ত হতে হবে। সেজন্য ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাকে নির্ধারিত ফর্মে দরখাস্ত করতে হবে।
আইনজীবি তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি এই আইনে বর্ণিত বিধান এবং তৎপ্রেক্ষিতে প্রণীত বিধি সাপেক্ষে নিম্নবর্ণিত যোগ্যতাবলী অর্জন করেন তাহলে তিনি আইনজীবি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। যেমন-
১) তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে;
২) তার বয়স ২১ বছর পূর্ণ হতে হবে;
৩) তাকে বাংলাদেশর অভ্যন্তরে অবস্থিত যে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হইতে আইন বিষয়ে ডিক্রিপ্রাপ্ত হইতে হবে অথবা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পূর্বে পাকিস্তানের যে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হইতে আইন বিষয়ে ডিক্রিপ্রাপ্ত হইতে হইবে অথবা ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পূর্বে ভারত থেকে আইনের ডিক্রি লাভ করেছেন অথবা বার কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত বিদেশী কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ব্যাচেলর ডিক্রি লাভ করেছেন অথবা তিনি একজন ব্যরিস্টার।
৪) বার কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত এমন কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং
৫) বার কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত তালিকাভূক্তি ফিস প্রদান করেছেন অথবা নির্ধারিত অন্যান্য শর্তাবলী পূরণ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ২৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনজীবি হিসেবে তালিকাভূক্তির পূর্বে তিনি বার কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত প্রশিক্ষন কোর্সে অংশগ্রহন করবেন এবং সফলতার সাথে তাতে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ব্যর্থতায় তিনি আইনজীবি হতে পারবেন না।
আইনজীবি হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার অযোগ্যতা:
একজন ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশী নাগরিক নন বা ২১ বছর পূর্ণ হয়নি অথবা বাংলাদেশের কোন বিশ্ব বিদ্যালয় বা বার কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত কোন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের কোন ডিক্রি অর্জন করেন নাই তাহলে তিনি আইজীবি হওয়ার যোগ্য হবেন না।
বাংলাদেশর লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এন্ড বারকাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর ২৭(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে একজন ব্যক্তি আইনজীবি হওয়ার অযোগ্য হবেন যদি তিনি-
১) নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সরকারি চাকুরি বা স্বায়ত্বশাসিত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত হন এবং বরখাস্তের তারিথে থেকে ২ বছর অতিবাহিত না হয় ;অথবা
২) নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধে সাজা প্রাপ্ত হয়ে ৫ বছর বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময় অতিবাহিত না হয়।
পেশাগত আচরনবিধি নীতিমালা অনুযায়ী একজন আইনজীবিকে সদাসর্বদায় তার পেশায় মানমর্যাদা বজায় রাখার পাশাপাশি তার ব্যক্তিত্বও বজায় রেখে আইন জীবি হিসেবে আইনগত সেবা প্রদান করতে হবে। আইনপেশা পরিচালনাকালীন তাকে এই বিষযটি মাথায় রেখে আইনগত সেবা প্রদানের কাজটি করতে হবে। তাই আইনজীবিদের পেশাগত মহান দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে অন্যান্য আইনজীবিদের সাথে,মক্কেলের সাথে, জনগনের সাথে এবং আদালতের প্রতি তার আচরণ কেমন হবে এবং দায়িত্ব কর্তব্য কি হবে সে জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এন্ড বারকাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর ৪৪ ধারা জি উপঅনুচ্ছেদে আইনজীবিদের পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচারের কতগুলো নিযমকানুন নির্ধারণ করা আছে।



একজন তালিকাভূক্ত এ্যাডভোকেট এর অসদাচরণের দায়ে কিভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবে?
বরাবর,
সচিব
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল,
রমনা,ঢাকা।
বিষয়: অসদাচরণের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা প্রসঙ্গে।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নি¤œ স্বাক্ষরকারী রাজবাড়ি জেলা আইনজীবি সমিতির একজন প্রবীন সদস্য। নি¤েœ উল্লেখিত অভিযুক্ত আইনজীবি রাজবাড়ি জেলা আইনজীবি সমিতির একজন সদস্য। যিনি পেশাগত নিযুক্তির জন্য প্রত্যেক থানায় একজন করে দালাল নিয়োগ করেছেন এবং তদুপরি শহরের বিভিন্ন মোরে তার পরিচয় দিয়ে বড় বড় বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন। পেশাগত নিযুক্তির জন্য কোন ব্যক্তিকে পরিশ্রমিক দিয়ে নিয়োগ দেওয়া বা কারও সঙ্গে রোজগার ভাগাভাগি করা বা পেশা গত নিযুক্তির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া বাংলাদেশের আইনজীবিদের জন্য অনুসরনীয় পেশাগত সদাচরণ ও শিষ্টাচারের লংগন।
বিধায় প্রার্থনা এই যে,কথিত আইনজীবির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে আপনার সদয় মর্জি হয়।
অভিযুক্ত আইনজীবি                                                                                           ইতি
এ্যাডভোকেট পরিবানু                                                                    এ্যাডভোকেট গোকুল চন্দ্র সরকার
বাজবাড়ি ,আইনজীবী সমিতি।                                                               রাজবাড়ি ,আইনজীবি সমিতি।
মোবা-০১৯২২২২২৩৩৩



বাংলাদেশ বার কাউন্সিল:
আইনজীবীদের পেশার সনদ প্রদান ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। নতুন আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির জন্য পরীক্ষা গ্রহণ, আইনজীবীদের পেশাগত আচরণের জন্য নীতিমালা নির্ধারণ, সব আইনজীবীর কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ, আইন পেশার মান রক্ষা এবং আইনজীবীদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিচার করে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স ও বার কাউন্সিলের আদেশ দ্বারা বার কাউন্সিলের গঠন, নির্বাচন ও পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ন্ত্রিত হয়। আইনজীবীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে দ্য বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনারস অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার অ্যান্ড রুলস, ১৯৭২ এবং ক্যাননস অব প্রফেশনাল কনডাক্টে উল্লেখ আছে।
বার কাউন্সিলের পরিচালনার জন্য একটি পর্ষদ রয়েছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে এই সংস্থার প্রধান। তবে আইনজীবীদের পেশাগত আচরণের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের কাছে ততটা পরিচিত নয় এবং সে কারণে ভুক্তভোগী বিচার প্রার্থীরাও জানেন না যে পেশাগত অসদাচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর বিরুদ্ধে এখানে অভিযোগ দায়ের করতে হয়।
অভিযোগ করবেন যেভাবে:
কোনো আইনজীবীর অসদাচরণের কারণে যেকোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তিনি বার কাউন্সিলের সচিব বরাবর অভিযোগ দায়ের করতে পারেবেন। বার কাউন্সিল সাধারণত সংক্ষিপ্ত শুনানিতে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝির মতো বিষয়গুলো উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হয়। তবে অভিযোগ গুরুতর হলে বা সমাধান না করা গেলে বার কাউন্সিল তা বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেবেন।
আইনজীবীর জন্য ট্রাইব্যুনাল ও শাস্তি:
ভুক্তভোগী কোনো ব্যক্তির অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য বার কাউন্সিলে বর্তমানে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল আছে। একজন চেয়ারম্যান ও দুজন সদস্যের সমন্বয়ে একেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত। অভিযোগ পাওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ তদন্ত করবেন এবং তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত না হলে তা নিষ্পত্তি করে দেবেন আর প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে তিরস্কার করাসহ তাঁর সদস্যপদ স্থগিত অথবা সমিতি থেকে বহিষ্কার করার মতো শাস্তি প্রদান করার বিধান রয়েছে। তবে শাস্তির প্রকার নির্ভর করে অভিযুক্ত ব্যক্তি কত গুরুতর অপরাধ করেছে তার ওপর। তবে কেউ যদি মিথ্যা বা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগ করে এবং তা প্রমাণিত হয়, তবে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে ৫০০ টাকা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়ের রিভিউ আবেদন করতে পারে। এ ছাড়া যেকোনো পক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়ের ৯০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে পারবে।


প্রশ্ন-২ মোয়াক্কেল এর সঙ্গে এবং সিনিয়রের সঙ্গে আচরণ কি হবে?
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার বিধি মোট চারটি পরিচ্ছেদে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে বিধানগুলি সংক্ষেপে নি¤েœ উল্লেখ করা হলো-
আইনজীবীদের সংবিধান 
ÒThe Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order and Rules“১৯৭২ এর
Canons of Professional Conduct and Etiquette” নামক অংশে একজন আইনজীবীর সঙ্গে অন্যান্য আইনজীবী, মক্কেল, আদালত, এবং জনগণের সহিত কাঙ্খিত আচরন, শিষ্টাচার ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বলা হয়েছে । এ সকল বিধি-বিধান মেনে চলা একজন আইনজীবীর আবশ্যকীয় কর্তব্য, এগুলো ভঙ্গ করা “পেশাগত অসদাচরণ” ।
মক্কেলের সাথে সম্পর্ক:
বিধি-১। একজন আইনজীবী কখনোই মক্কেলের সম্পত্তি বা মামলায় জড়িত স্বার্থের প্রতি আসক্ত হবেন না ।
বিধি-২। জড়িত বিষয় সম্পর্কে ইতিপূর্বে কোন গোপনীয় তথ্য অবগত হয়ে থাকলে, একজন আইনজীবী পরবর্তীতে তাহার বিরুদ্ধপক্ষে উক্ত বিষয়ে নিয়োগ গ্রহন করবেন না ।
বিধি-৩। বিরুদ্ধপক্ষের সাথে সম্পর্ক বা অনুরুপ নিয়োগের বিষয়বস্তুতে আইনজীবীর কোন স্বার্থ থাকলে, তা প্রকাশ না করে একজন আইনজীবী পেশাগত নিয়োগ গ্রহন করবেন না ।
বিধি-৪। একজন আইনজীবী কোন মামলায় উভয়পক্ষের নিযুক্ত গ্রহন করবেন না ।
বিধি-৫। একজন আইনজীবী যে সম্পত্তির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন, তিনি সেই সম্পত্তি নিজে বা বেনামে বন্ধকী উদ্ধারের মাধ্যমে বা আদালতের মাধ্যমে ক্রয় করবেন না ।
বিধি-৬। একজন আইনজীবী তাহার নিজের সম্পত্তির সাথে মক্কেলের সম্পত্তি মিশ্রত করবেন না ।
বিধি-৭। একজন আইনজীবী কোন পক্ষের সাথে সম্পর্ক হলে বা বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্ক হওয়া ব্যতীত কোন মামলার বাদী বা বিবাদীকে কোন পরামর্শ প্রদান করবেন না, অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে উক্ত বিষয়ে সম্পৃক্ত করা হয় ।
বিধি-৮। একজন আইনজীবী তাহার পেশাগত ক্ষমতায় আইন ভঙ্গের পরামর্শ দিবেন না ।
বিধি-৯। একজন আইনজীবীর অধিকার হচ্ছে কোন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে অংশগ্রহন করা ।

পেশাগত অসদাচরণের শাস্তিঃ
কোন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আনিত পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ প্রমানিত হলে “বাংলাদেশ বার কাউন্সিল” ট্রাইব্যুনাল এই আইনের অনুচ্ছেদ ৩২(১) অনুসারে উক্ত দোষী আইনজীবীকে তিরস্কার বা আইনপেশা পরিচালনা হতে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত অথবা স্থায়ীভাবে পেশা পরিচালনা হতে অপসারণ করিতে পারেন ।



প্রশ্ন-৩ এ্যাডভোকেট এর পেশাগত আচরণ:
পেশাগত অসদাচরণ বলতে পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট কাজের পরিপন্থিমূলক কাজ বা আচার আচরণ প্রভূতিকে বঝায়। যখন একজন এডভোকেট আইন পেশায় নিয়োজিত থাকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত বিধিমালা ও শিষ্টাচার বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তা এডভোকেটের পেশাগত অসদাচরণ বলে গণ্য হয়। ইধহমষধফবংয ইধৎ ঈড়ঁহপরষ ঈধহড়হং ড়ভ চৎড়ভবংংরড়হধষ ঈড়হফঁপঃ ধহফ ঊঃরয়ঁবঃব এ তিন ধরণের আচার আচরণ ও এক ধরণের কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে যথা-
১) সহ এডভোকেটের সাথে আচরণ
২) মক্কেলের সাথে আচরণ
৩) সাধারণ জনগণের সাথে আচরণ এবং
৪) আদালতের প্রতি কর্তব্য।
জনসাধারনের প্রতি আচরণ:
এখন একজন এডভোকেট যদি উপরোক্ত কাঙ্খিত কার্যকলাপ, শিষ্টাচার সম্বলিত পেশাগত আচরণ এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে ঐ এডভোকেট পেশাগত অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হবেন।
১) কোন আইনজীবী কোন পক্ষকে হয়রানী করার জন্য কিম্বা কোন বিষয় বিলম্বে করার জন্য  মামলা গ্রহন করবেন না।
২) একজন আইনজীবী তার প্রতিপক্ষের সহিত বা তার সাক্ষীদের সহিত যথোপযুক্ত সুন্দর ব্যবহার করবেন। কোন মক্কেলের এমন অধিকার নাই যে তার ইচ্ছানুযায়ী তার আইনজীবী প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করুক।
৩) কোন আইনজীবী যদি বিশ্বাস করেন যে, কোন দেওয়ানী মামলা প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য করা হয়েছে তাহলে তিনি তা গ্রহনে অস্বীকার করতে পারেন কিন্তু একবার এরুপ দায়িত্ব গ্রহন করলে মোক্কেলের দাবীকৃত বৈধ বিষয়বস্তু সম্পর্কে রায়ের জন্য তা আদালতে পেশ করা তার কর্তব্য হয়ে পড়ে।
৪) যে কেহ মক্কেল হতে  চাইলেই কোন আইনজীবী তার নিয়োগ গ্রহন করতে বাধ্য নহেন। ইহা একজন আইনজীবীর নিজের বিবেচ্য বিষয়। ইহা ছাড়াও তিনি বাদীর জন্য কোন ধরণের মামলায় এবং বিবাদীর জন্য কোন ধরণের মামলায় প্রতিনিধিত্ব করবেন তা নিজেই স্থির করবেন।
 ৫) যত শক্তিশালী কর্পোরেট বা ব্যক্তিস্থানীয় মক্কেল হোক, সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবে যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই হোক, আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাপূর্ণ কোন বিষয়ে কারো সেবা বা উপদেশ প্রাপ্তির অধিকার নেই। কোন এডভোকেটের উচিত নয় এসব বিষয়ে কাউকে সহযোগিতা করা। আইনজীবীগণ আইন ও সুবিচারের প্রতিনিধি। আইনজীবীবৃন্দ আদালতকে হেয় প্রতিপন্ন করার যেকোন প্রচেষ্টা প্রতিহত করবেন এবং আদালতের সম্মানকে সমুন্নত রাখবেন। কোন ব্যক্তির,কোন সরকারী অফিসের,কোন ব্যক্তিগত ট্রাস্টের কর্মকর্তা কর্মচারীর দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে আইনজীবীগণ জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। যদি করেন তাহলে ঐ আইনজীবী কঠোর ও যথাযথ ভৎর্সনা যোগ্য। একই সঙ্গে তিনি তার পেশার সম্মান বৃদ্ধি করে,তার মক্কেলের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা করে, তার প্রদত্ত সেবা ও উপদেশ দিয়ে মক্কেলকে অভিভূত করবেন এবং তা করতে গিয়ে তিনি আইনের নৈতিক ভিত্তির কঠোরতম মানদন্ডটিও মেনে চলবেন। যতক্ষন না কোন আইন কোন বিষয়ে চুড়ান্ত ব্যাখ্যা প্রদান করছে বা উপযুক্ত কোন আদালত কোন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছেন একজন আইনজীবী তার সজ্ঞান বিশ্বাস ও বিবেচনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইনটির অর্থের ও ব্যপ্তির ( মিনিং এন্ড একসটেনট  অভ দ্যা ল) ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং এটি তার অধিকারও বটে। সর্বোপরি একজন এডভোকেট তার অসামান্য বিশ্বস্থতা ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একজন অনন্য সাধারণ সৎ,দেশপ্রেমিক ও অনুগত নাগরিক হিসেবে তার জীবনে সর্বোচ্চ সম্মান প্রাপ্ত হন।
৬) কোন আইনজীবী তার পরিচয় না দিয়ে এবং তিনি কোন পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করিয়াছেন তাহা উল্লেখ না করে আদালতে হাজির বা পেশাগত বিষয় উপস্থাপন করবেন না।
৭) কোন আইনজীবী ইতোপূর্বে বিচারিক পদমর্যাদা বলে কিম্বা সরকারী চাকুরীতে নিয়োজিত থাকার কারণে কোন বিষয় পরিচালনা করে থাকলে সেই বিষয়ে কোন পক্ষেই নিয়োগ গ্রহন করবেন না।
৮) একজন আইনজীবী সাধারণ নিযম অনুযায়ী  অন্য কোন পেশা বা ব্যবসা পরিচালনা করবেন না কিম্বা ঐধরণের পেশা বা ব্যবসায় সক্রিয় অংশীদার বা বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করবেন না।
প্রশ্ন:৪ অন্যান্য আইনজীবিদের সঙ্গে আচরণ:
অন্যান্য আইনজীবীর সাথে সম্পর্কঃবার কাউন্সিল আইনের
Canons of Professional Conduct and Etiquette  অংশের ৪ অধ্যায়ে আইনজীবীদেও আচরণবিধি বর্ণিত হয়েছে। এই অংশের প্রথম অধ্যায়ে সহ –আইনজীবেিদও সঙ্গে আচরণ সম্পর্কে ১১ টি বিধি বা নির্দেশন রয়েছে। এগুলি নি¤œরুপ:
বিধি-১। একজন সদস্য হিসেবে প্রত্যেক আইনজীবীর দায়িত্ব নিজের মর্যাদা ও উচ্চাসন সমুন্নত রাখার পাশাপাশি তাহার পেশার মর্যাদা ও উচ্চাসন বজায় রাখা ।
বিধি-২। একজন আইনজীবী বিজ্ঞাপন বা অন্য কোন মাধ্যমে পেশাগত নিযুক্তি অর্জনের চেষ্টা করবেন না ।
বিধি-৩। একজন আইনজীবী পেশাগত নিযুক্তির জন্য কাউকে কোন পারিশ্রমিক প্রদান করবেন না অথবা অননুমোদিত ব্যক্তির সাথে পেশাগত অর্থ বন্টনের অংশীদার হবেন না অথবা অননুমোদিত কোন ব্যক্তিকে আইন পেশা পরিচালনা করতে সহায়তা বা প্ররোচনা দিবেন না ।
বিধি-৪। একজন আইনজীবী অনুপস্থিত থাকলে তাহার অনুপস্থিতিতে এবং তাহার সম্মতি ছাড়া মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে অন্য কোন আইনজীবী তাহার মক্কেলের সাথে আলাপ-আলোচনা করবেন না ।
বিধি-৫। অন্যপক্ষের আইনজীবী অনুপস্থিত থাকাকালে একজন আইনজীবী বিচারকের নিকট কোন তথ্য বা যুক্তিতর্ক, বিচারকের সম্মুখে অথবা উন্মুক্ত আদালত ব্যতীত বিচারাধীন আদালত বা বিচারিক কর্মকর্তার নিকট প্রকাশ করবেন না।
বিধি-৬। একজন মক্কেল একাধিক আইনজীবীর সহযোগিতা চাইলে সে ক্ষেত্রে বাধা দেয়া যাবে না । প্রথমে নিযুক্ত আইনজীবীর বকেয়া ফিস পরিশোধ না করে থাকলে ইহাতে অপর আইনজীবী জড়িত হওয়া সংগত হবে না ।
বিধি-৭। আইনজীবীগণের মধ্যে ব্যক্তিগত সকল বিবাদ এড়ায় চলতে হবে । কোন মামলার বিচার চলাকালে ব্যক্তিগত ইতিহাস বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্টের ব্যাপারে অপর পক্ষের আইনজীবী সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়া যাবে না ।
বিধি-৮। ফিস বিষয়ে আইনজীবীগণের মধ্যে বন্টনের নীতিমালা অনুযায়ী বন্টিত ব্যতীত, আইন সহায়তার জন্য কোন ফিস অন্য কোন ব্যক্তির সঙ্গে বন্টিত করবেন না ।
বিধি-৯। বার কাউন্সিল কর্তৃক সংরক্ষিত সিনিয়র আইনজীবীদের ক্রম অনুসারে সম্মান প্রদর্শন করা সকল আইনজীবীর কর্তব্য। সাংবিধানিক প্রথা হিসেবে এটর্নি জেনারেল ও এ্যাডভোকেট জেনারেরকে ক্রম হিসেবে পথম আইনজীবী হিসেবে গন্য করা হয়-এ নীতিটি মেনে চলতে হবে।
বিধি-১০। নবীন সদস্যগন সর্বদা প্রবীণ সদস্যদের শ্রদ্ধা সম্মান করবেন ।
বিধি-১১। কোন পক্ষে একাধিক আইনজীবী নিয়োজিত হলে, সেই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মামলা পরিচালনা
করবেন।








আদালতের প্রতি আইনজীবীর কর্তব্য:
ÒThe Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order and Rules“ ১৯৭২ এর
Canons of Professional Conduct and Etiquette  অংশে আইনজীবীদের আচরণবিধি বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় অধ্যায়ে আদালতের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে ৯ টি বিধি রয়েছে। এগুলি নিম্নরুপ:
 বিধি-১: অদালতের সুমহান মর্যাদা বজায় রাখার জন্য একজন আইনজীবীর আদালতের প্রতি শ্রদ্ধশীল মনোভাব থাকতে হবে।
বিধি-২:একজন আইনজীবী যার সাক্ষ্যের মাধ্যমে কোন ঘটনা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তাকে আদালতের সমন এড়ানো,আতœগোপন করা অথবা অন্য কোন ভাবে তার সাক্ষ্যকে দুস্প্রাপ্য করার পরামর্শ দিবেন না।
বিধি-৩:একজন আইনজীবী উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে সাক্ষীর সাক্ষ্য,বিরুদ্ধপক্ষ আইনজীবীর বক্তব্য,দলিলের বিষয়বস্তু,কোন বইয়ের ভাষা,আইন এবং সিন্ধান্তের ভুল ব্যাখ্যা জজ বা বিচারিক কর্মকর্তার কাছে করবেন না।
বিধি-৪: একজন আইনজীবী জজ সাহেব বা বিচারিক কর্মকর্তার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখবেন না যার উদ্দেশ্য ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
বিধি-৫: একজন আইনজীবি বিচারাধীন কোন বিষয় নিয়ে জজ সাহেবের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলাপতারিতা করতে পারবেন না। জজ সাহেবের কাছে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না।
 বিধি-৬:সরকারী প্রসিকিউশনের দায়িত্বে নিয়োজিত আইনজীবীর প্রাথমিক দায়িত্ব হল ন্যায় বিচারে সহাযতা করা সাজা নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব নহে।
বিধি-৭: একজন আইনজীবী যদি কোনভাবে সাক্ষ্য গোপন করেন বা কোন ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন তা তাহা নিন্দনীয় কাজ বলে গন্য হবে।
বিধি-৮:একজন আইনজীবী বিচারাধীন কোন বিষয় নিয়ে পত্রপত্রিকায় কোন নিবন্ধ লিখবেন না বা কোন মন্তব্য করবেন না যাহা ন্যায় বিচারের অন্তরায় হতে পারে।
বিধি-৯: একজন আইনজীবী জজবা বিচারিক কর্মকর্তা কর্তৃক অনুরোধ না পেলে নিযুক্তীয় আইনজীবী নহেন এমন কোন আইনজীবী কোন মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানীতে অনাহুতভাবে তার মতামত তুলে ধরবেন না বা কোন বক্তব্য উপস্থাপন করবেন না তবে বিরোধীয় বা প্রাসঙ্গিক কোন বিষয়ে মতামত প্রদানের বিচারক কর্তৃক অনুরোধ পেলে দায়িত্বের সাথে তিনে নিরপেক্ষভাবে সেই বিষয়ে মতামত তুলে ধরবেন।















গড়পশ ঞৎরধষ-১৫(ঈরারষ)
১) একটি দেওয়ানী মামলার সূচনা বক্তব্য, সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা, আরগুমেন্ট (একটি নির্ধারিত বিষয থাকবে)।
জেলা-ঢাকা
থানা-মোহাম্মদপুর
মৌজা-কাটাসুর। গ্রাম-বশিরা এর ১৩৮ নং এস.এ খতিয়ান এর ২০১২ এবং ২১৪ দাগের মোট ২২ শতক জমিতে মোহাম্মদ আলী এবং হযরত আলী দু’জনা সমান অংশে স্বত্ব ও দখল থাকে। মোহাম্মদ আলী তার অংশের জমি থেকে ১০ শতক জমি ইব্রাহিম হোসেনের নিকট ইং ০৮/১০/২০১২ তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত কবলায় বিক্রয় করে এবং দখল হস্তান্তর করে।ইব্রাহিম আলী ঐ জমিতে দখলে ভোগদখল থাকিয়া নিজ নামে নাম খারিজ করিয়া খাজনা দিয়া দাখিলা প্রাপ্তে ঘরবাড়ী নির্মানে ভোগ দখলে আছেন। হযরত আলীর মৃত্যুতে তার চার পুত্র ও তিন কণ্যা থাকে ঐ চার পুত্র ক,খ,গ,ঘ এই মামলায বিবাদী। বিবাদীগন গত ২৪/০১/২০১৩ ই তারিখে বাদীকে মামলার জমি হতে বেদখল করিবার হুমকি দিলে বাদী আদালতে এই মামলা দাখিল করে।
বিবাদী ক,খ,গ,ঘ আদালতে হাজির হইয়া লিখিত বর্ণনা দাখিলপূর্বক মামলায় প্রতিদ্বন্দিতা করে। বিবাদী কর্তৃক দাবীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এরুপ যে, বাদীর আরর্জি কথিত বক্তব্য মতে উল্লেখিত জমি মোহাম্মদ আলী এবং হযরত আলী স্বত্ব দখলীয় জমি বটে। ইব্রাহিম আলী ঐ জমির মধ্য থেকে মাত্র ৬ শতক জমি খরিদ করে কিন্তু ইব্রাহিম আলী মিথ্যা দাবীতে ১০ শতক জমির দাবী উত্থাপন করিয়াছে যা মিথ্যা।
বাদীর আরর্জি বর্ণিত দাবী মতে কোন ধরণের ঘটনা ঘটে নাই বা বেদখলের কোন হুমকি দেওয়া হয় নাই।
২) বাদী মামলার জমি বাবদ বাদীর অনুকূলে স্বত্বের ঘোষনার(উবপষবৎধঃরড়হ ড়ভ ঃরঃষব) জন্য মামলা করে।
বাদীর কেসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, নালিশী জমির ৪০৭ নং আর এস খতিয়ানে যাহা এস এ ৪৭৩ নং খতিয়ানে ঢাকা জেলার জোয়াসার মৌজায় জবেদ আলী শেখ এবং অন্যান্যদের নামে রেকর্ড থাকে। জবেদ আলী শেখ তার ৯০ শতক জমির মধ্য থেকে ৪৫ শতক জমি আরএস দাগনং ১৭৫ থেকে তার স্ত্রী মছিরন বিবির বরাবর হেবাবিল এওয়াজ দলিলমূলে হেবা বিল দলিল নং ২৮৮৯ বলে স্থানান্তর করে।
এই মামলার বাদী মছিরন বিবি বাদীর স্বামী স্ত্রীর দেনমোহরের বিনিময়ে এই জমি হস্তান্তর করে। বাদী ১৭৫ দাগে পূর্ব দিক হতে ৪৫ শতক জমি ভোগ দখল করেন। বাদীর এই ভোগদখলের বিষয় বিবাদীর ভাই সহ অন্যান্য বিবাদীরা অবগত ছিলেন এবং আছেন। বিবাদীরা ০৬/০৬/২০১৪ ইংতারিখে এই জমির স্বত্ব দাবী করলে বাদীর এই মামলার উদ্ভব হয়। বাদী একজন সহজসরল অশিক্ষিত মহিলা হইতেছেন। বিবাদীরা নালিশী জমির স্বত্ব দাবী করায় বাদীর স্বত্বে কালিমা লিপ্ত (ক্লাউডেড)হইয়াছে। যার কারণে বাদী এই মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। বিবাদীগন যে কোন মুহূর্তে বাদীকে বেদখল করতে পারে।
এই মামলায় ১ নং বিবাদী হাজির হয় এবং মামলায় প্রতিদন্দ্বীতা করে। বিবাদী তার লিখিত জবাবে দাবী করেন যে, বাদীর মামলা অত্র আকারে ও প্রকারে চলতে পারে না। পক্ষভাব দোষে অচল এবং তামাদি দোষে বারিত। এই বিবাদী বাদরি আরর্জি ও দাবীর কোন অংশের সত্যতা স্বীকার করেন না। প্রমানের দায়িত্ব বাদীর।
বিবাদরি দাবীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
এই নালিশী জমি জবেদ আলরি স্বত্ব দখলে ছিল। জবেদ আলী মারা গেলে থাকে তার দুই স্ত্রী সুফিয়া এবং রাজিয়া  তিন কন্যা কহিনুর বেগম,শাহিনা এবং মর্জিনা ভাগ্নে থাকে ইউনুস শেখ। জবেদ আলী আর এস ১৭৫ দাগের জমি থেকে তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের বরাবর কিছু জমি হেবাবিল এওয়াজ মূলে হস্তান্তর করেন। বাদী জবেদ আলীর স্ত্রী নয় এবং তার বরাবরে কোন জমি হস্তান্তর করা হয়নি। বাদিনী কোন জমি দখল করেননি। বাদিনীর মামলা খরচাসহ ডিসমিস ও খারিজ হবে।
এই মামলার আরগুমেন্ট:
বাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক
প্রথম অংশে বাদীর কেসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকবে।
দ্বিতীয় অংশে বাদী পক্ষের কতজন দখলীয় সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে এবং কি কি দলিল দাখিল হয়েছে তার বিবরণ থাকবে।
তৃতীয় অংশে থাকবে বিবাদীর সাক্ষীর জবানবন্দী,জেরা এবং দলিরপত্রের ক্রটি এগুলো থাকবে।
৪র্থ অংশে বাদীর দখল,বিবাদীর দখলের সাক্ষী ,বাদীর দখলের সাক্ষী এগুলোর বিবরণ থাকবে।



গড়পশ ঞৎরধষ-১৫(ঈৎরসরহধষ)

১) সাহানাজ বেগম ইং ২৫/১১/২০১০ তারিখে রাজশাহী জেলার পবা থানায় আসামীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে যে, ২৪/১১/২০১০ তারিখে সকাল অনুমান ৫.০০ টার সময় আসামীগন এজাহারকারীর স্বামী আলী মনসুরকে প্রদীপের বাড়ীতে পানি দেওয়ার সময় ঘিরে ধরে ঐ সময় আসামী মমতাজ চাইনিজ কুড়াল দিয়ে মনসুরের মাথার সমনে বামপাশে কোপ মেরে জখম করে। মমতাজ ভিকটিম এর গলায় থাকা সোনার চেন নিয়ে যায়। অন্যান্য আসামীগন ভিকটিম মনসুরকে এলাপাথারী মারপিট করে। বাদীর স্বামীর চিৎকারে বাদীর দেবর অবম এবং শাশুরী মুসিরন সহ অন্যান্য সাক্ষী ঠেকাতে আসলে আসামীগন বাদীর দেবর ও শাশুরীকে মারপিট করে।
পুলিশ তদন্ত শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত হতে আসামীগন জামিন প্রাপ্ত হয়। তরপর মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলী হয়। ঐ আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩২৪,৩২৭,৩৭৯ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলাটি প্রমানের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ এজাহারকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ মোট ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করে। সাক্ষ্য গ্রহন শেষে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারা মতে আসামীদের পরীক্ষা করা হয়। আসামী নিজদিগকে নির্দোষ দাবী করে।
২) নালিশী দরখাস্ত:
বিজ্ঞ মহানগর হাকিমের আদালত,ঢাকা
সিআর মামলা নং ২১৬/২০১৪
ধারা ৪৬৭/৪৭৪/১০৯ দন্ড বিধি।
আসমত আলী
পিতা: জহির আলী
২২/২,তেজকুনি পাড়া
থানা: তেজগাঁও,
ডিএমপি ঢাকা।
অভিযোগকারী
বনাম
১।মোহাম্মদ আলী
পিতা:
২।ইলিয়াছ আলী
পিতা:
৩।মো: শাহজাহান
পিতা:
৪।মো: মোয়াজ্জেম
পিতা:
৫।মো: আব্দুল খালেক
পিতা:
৬। মো: নুরুল আলম খাঁন
পিতা:
আসামীগন
ঘটনার স্থান:সাবরেজিষ্ট্রি অফিস,তেজগাঁও( মোহাম্মদপুর এলাকা),ঢাকা।
ঘটনার তারিখ:১২/১০/২০১৪
ঘটনার সময়:
সাক্ষীগণের নাম ও ঠিকানা:
১)হাসেম ফকির
পিতা:
২) নাজিম উদ্দীন
পিতা:
৩) কুদ্দুস শেখ
পিতা:
আরও অনেকে।
বিষয়: নালিশী দরখাস্ত প্রসঙ্গে।
অভিযোগকারীর বিনীত নিবেদন এই যে,
১) অভিযোগকারী একজন সহজ সরল প্রকৃতির আইন মান্যকারী বটে।
২) অপরদিকে আসামীগন অসৎ,ধূত আইনঅমান্যকারী এবং পরধনলোভী বটে।
৩) অভিযোগকারীর স্বত্ব দখলীয় নি¤œ তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি মালিকানা ক্রয়সূত্রে ৫ ও ৬ নং আসামীগন ১১/১০/২০১৪ তারিখে দাবি করলে মোহাম্মদপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয় এবং পরবর্তীতে ১২/১০/২০১৪ তারিখে মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়া  সাব কবলা দলিল নং ৩৭৯২ তারিখ ২২/১০/২০১০ এর সহি মোহর নকল প্রাপ্ত হইয়া অবগত হন যে, নি¤œ তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি সম্পর্কে একটি কবলা দলিল সৃজন করা হইয়াছে। ঐ তারিখে আর জানা যায় যে বিগত ৩/১০/২০১১ তারিখে একটি ব্যাপক আমমোক্তর নামা দলিল সম্পাদন করা হইয়াছে ঐ দলিলের দাতা হিসাবে অত্র অভিযোগকারীর নাম আছে এবং স্বাক্ষর জাল করা হইয়াছে। ঐ দলিলে এক নম্বর আসামীকে আমমোক্তার দলিল গ্রহীতা দেখানো হইয়াছে। অত্র অভিযোগ কারী উক্ত আমমোক্তরনামা দলিল সম্পাদন করেন নাই। ঐ দলিল জাল,তঞ্চকী ,যোগাযুগী। ঐ আমমোক্তারনামা দলিলের নকল সংগ্রহ হইয়া অভিযোগকারী আরও জানিতে পারেন যে, ১ নং আসামী ঐ আমমোক্তরা নামা দলিল বলে ৪ ও ৫ নং আসামীর প্ররোচনায় ২ ও ৩ নং আসামীর নামে কবলা দলিল করিয়া দিয়েছেন। উক্ত আমমোক্তার নামা দলিল এবং কবলা দলিল সম্পূর্ণ জাল জালিয়াতি বলে সৃজন করা হইয়াছে।
৪ ) অভিযোগকারী ঐ দলিল সম্পর্কে থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা গ্রহন করতে অস্বীকার করে পরে অভিযোগকারী অত্র আদালতে অত্র মামলা দায়ের করিলেন। অত্র মামলা বিচারের এখতিয়ার অত্র আদালতের আছে।
এমতে প্রার্থনা এই যে, আইন ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামীগনের বিরুদ্ধে গেফতারী পরোয়ানা জারি করিয়া জেল হাজতে আটক রাখিতে মর্জি হয়। বিজ্ঞ আদালতের এহেন কার্যে অভিযোগকারী চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন।

তফসিল:
জেলা-ঢাকা, থানা-মোহাম্মদপুর, প্লটনং-৫২, মৌজা-মোহাম্দপুর হাউজিং, খতিয়ান নং-৩৭৬৪৯, যাহার চৌহদ্দিঃ উত্তরে সুরুজ ও তছমুদ্দিন গং, দক্ষিণে-রাস্তা, পূর্বে- রাস্তা এবং পশ্চিমে- মসজিদ।


আমি উপরোক্ত বিবরণ পড়িয়া,শুনিয়া,সত্য থাকায় এ্যাডভোকেট সাহেবের চেম্বারে বসিয়া স্বাক্ষর করিলাম।
নিবেদন ইতি,
স্বাক্ষর

No comments:

Post a Comment