Thursday 29 January 2015

সম্পত্তি হস্তান্তর আইন



Transfer of Property Act,1882
ধারা-১৩৭
অধ্যায়-৮
প্রশ্ন:১ সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে’সম্পত্তি হস্তান্তর বলতে কি বুঝায়?সম্পত্তি হস্তান্তর আইনানুযায়ী সম্পত্তির ধারণা সম্পর্কে আরোচনা কর। কে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে?এই আইন মুসলিম আইনের বিধানকে কতটুকু প্রভাবিত করেছে? কেন বলা হযে থাকে যে, ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের শিরোনামটি ভুল নামের ব্যবহার?
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে সম্পত্তির সংজ্ঞা যেমন দেওয়া হয়নি তেমনি হস্তান্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিধানও যুক্ত করা হয়নি, এই তথ্যের উল্লেখপূবক আলোচনা কর।
এই আইনে ৫ টি দেনদেন হয়।
১)বিক্রয়(Sale)
২)বন্ধক/রেহেন(Mortgage)
৩)বিনিময়(Exchange)
৪)দান(Gift)
৫)ইজারা(Leage)
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী সম্পত্তির সংজ্ঞা দাও।এই আইনে কেন সম্পত্তি হস্তান্তর আইনকে স্বয়ং সম্পূর্ণ আইন বলা হয় না? মুসলিম আইন এই আইনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারে?

উত্তর:
আইনে সম্পত্তি খুব ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। আইন বিশারদ হ্যালস্ বেবী এর মতে, সম্পত্তি হচ্ছে কোন ব্যক্তির নিরঙ্কষ অধিকার যা দর কষাকষি এবং বিক্রি করা যায়। ব্যবসায়ের সুনাম, ট্রেডমার্ক, পেটেন্টস্বত্ব,গ্রন্থস্বত্ব, চুক্তিগত অধিকার সবই সম্পত্তি অন্তভূক্ত।
Law Lexicon গ্রন্থে সম্পত্তির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে নিম্নরুপভাবে-
সম্পত্তি বলতে কোন কিছুর উপর সর্বোচ্চ অধিকারকে বুঝায়, যে অধিকার বলে ভূমিতে বসবাস করেও বস্তু ব্যবহার করে যা অন্যের সৌজন্যে নয়।
ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের অভিমত হল, যে অধিকার বলে মানুষ একগুচ্ছ অধিকার এবং ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য সম্পত্তির ক্ষেত্রে দখলের অধিকার, ভোগের অধিকার, বিনষ্ট করার অধিকার, রেখে দেওয়ার অধিকার এবং হস্তান্তর করার অধিকার লাভ করে তাকে সম্পত্তি বলে।
এলাহবাদ হাই কোর্টের মতে, সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র বস্তুগত পদার্থ সমূহকেই বুঝায় এবং পদার্থের উপর হতে লব্ধ সকল প্রকার অধিকার ও স্বত্বকে এইমত অনুযায়ী সম্পত্তি শব্দটি দ্বারা বন্ধকী দায় মোচনের ন্যায় সংগত অধিকার কায়েমী স্বার্থ প্রভৃতি মামলাযোগ্য অধিকার সমূহকেও অন্তভূক্ত করে।বিষয়ের ব্যাপকতার কারণে সম্ভবত ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হসবতান্তর আইনে সম্পত্তির সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি তবে এটা স্পষ্টযে ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য বা অইন্দ্রীয়গ্রাহ্য সকল বস্তু যার উপর কোন ব্যক্তি তার নিজের সুবিধার্থে পূর্ণ অধিকার ও কতৃত্ব প্রয়োগ করতে পারে তা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির সম্পত্তি। বস্তুর নির্ভরতার দৃষ্টিতে সম্পত্তি দুই প্রকার হতে পারে-
ক)ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য বা শরীরি
খ)ইন্দ্রীয়হীন বা অশরীরী
স্থান্তরের সম্ভাব্যতা অনুযায়ী সম্পত্তি দুই প্রকার-
ক)স্থাবর
খ)অস্থাবর
বৃটিশ অনুযায় দুই প্রকার-
Real Property
Private Property
মালিকানা শর্তের দৃষ্টিভঙ্গিতে দুই প্রকার-
সরকারী
বেসরকারী
কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাবে এবং কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাবে না?
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ ধারার বিধান সাপেক্ষে যে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়। এই ধারায় বলা হয়েছে যে এই আইনে বা বর্তমান বলবৎ অন্য আইনে ভিন্নরুপ কোন বিধান না থাকলে যে কোন প্রকার সম্পত্তি হস্তান্তর করা যেতে পারে তবে কতিপয় সম্পত্তির কথা এ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলি কোন অবস্থায় হস্থান্তরিত নয়-
১)ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারের সম্ভবনা: সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর সম্পত্তি পাবার সম্ভবনা, আত্নীযের মৃত্যুর পর তার ওছিয়তের অনুসারে সম্পত্তি পাবার সম্ভাবনা অর্থাৎ সম্পত্তি লাভে কোন সম্ভাবনাকে হস্তান্তর করা যায় না।
২)পুন:প্রবেশের অধিকার:পরবর্তীকালীন শর্তের ভঙ্গের জন্য দখল পাবার অধিকার সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিক ব্যতীত অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করা যায় না।
৩)ব্যবহার স্বত্ব: এটা হচ্ছে একজনের সম্পত্তি উপর আরেক ব্যক্তির অধিকার।যেমন Easement Right ব্যবহার স্বত্বের অধিকার অন্যের নিকট হস্তান্তর করা যায় না।
৪)ব্যক্তিগত স্বার্থ: কোন সম্পত্তির ভোগ দখলের অধিকার মালিকের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে সীমাবদ্ধ থাকলে তিনি তা হস্তান্তর করতে পারেন না।
৫)ভবিষ্যত খোরপোষের অধিকার:ভবিষ্যৎ খোরপোষের অধিকার জনস্বার্থে হস্তান্তর অযোগ্য করা হয়েছে।
৬)কেবলমাত্র মামলা করার অধিকার:
৭)সরকারী পদ বা বেতন: কোন সরকারী পদ বা বেতন পাওনা হবার আগে বা পরে হস্তান্তর করা যায় না।
৮)বৃত্তি বা পেনশন: বৃত্তি বা পেনশন হস্তান্তর যোগ্য নহে।
৯)সংশ্লিষ্ট স্বার্থের প্রকৃতি বিরোধী কোন স্বার্থ হস্তান্তর করা যায় না।

চিরস্থায়ীত্বের বিরুদ্ধনীতি বলতে কি বুঝ?চিরস্থায়ীত্বের বিরুদ্ধনীতি কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়? এর ব্যতিক্রমগুলি উল্লেখ কর। এটি অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না? উত্তরাধিকার আইনের আলোকে এই নীতির বিধানাবলী আলোচনা কর।
সাধারণভাবে সকল প্রকার সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য। আর কোন সম্পত্তির হস্তান্তর গ্রহীতা তার সম্পত্তিটি পুন: হস্তান্তরের অধিকারসহ আইনত সবধরনের অধিকার ভোগ করার অধিকার লাভ করে থাকে। কারণ কোন সম্পত্তি অনির্ধারিত সময়ের জন্যে হস্তান্তরের অযোগ্য হয়ে থাকলে তা মানব জাতির অকল্যাণ বয়ে আনবে। তাই কোন অজাত ব্যক্তির অনুকূলে কোন সম্পতি হস্তান্তর করত: ভাবষ্যৎ সম্পত্তি সৃষ্টি স্বীকৃতি লাভ করতে থাকলে যদি এর বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রন আরোপ করা না যায় তাহলে অনুরুপভাবে আটকা পড়ে থাকবে। ফলশ্রুতিতে জীবিত ব্যক্তির প্রয়োজনে জমি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। এহেন অসুবিধা দূর করার জন্য সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১৪ ধারায় কত সময়ের মধ্যে অজাত ব্যক্তি অনুকূলে সৃষ্টি স্বাথটি অপন বা কার্যকর হতে হবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।এই ধারায় বলা হয়েছে কোন সম্পত্তি এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না,যা হস্তান্তরের তারিখে জীবিত এক বা একাধিক ব্যক্তির জীবনকাল এবং এরুপ জীবনকালের অব্যবহিত পর হতে অপর কোন ব্যক্তির নাবালক অবস্থা অতিবাহিত হবার পরে বলবৎ হবে। জীবিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের জীবনকাল সমাপ্ত সময় উক্ত নাবালকের অস্তিত্ব থাকতে এবং নাবালক সাবালক হবার সাথে সৃষ্ট স্বার্থ তার উপর অর্পিত হবে।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১৪ ধারায় যে ব্যক্তি জীবিত নেই এমন অস্তিত্বহীন ব্যক্তির অনুকূলে সরাসরি সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করা হযেছে-
১)এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তির অনুকূলে জীবন স্বত্ব সুষ্টি করতে হবে।
২)যে এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তির অনুকুলে জীবন্ত স্বত্ব সৃষ্টি করা হয় তাদের মধ্যে শেষ ব্যক্তির মৃত্যুর পূর্বেই অজাত ব্যক্তির জন্মলাভ করতে হবে,কমপক্ষে মাতৃগর্ভে থাকতে হবে।
এর ব্যতিক্রমগুলি:
১)ব্যক্তিগত চুক্তি:ব্যক্তিগত চুক্তির ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু চুক্তি দ্বারা সম্পত্তিতে কোন ইকুটেবল স্বার্থ সৃষ্টি করলে তবে অন্যরুপ হবে।
২)কল্যানমূখী হস্তান্তর:কল্যানমূখী কোন হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য হবে। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, ধর্মজ্ঞান, বাণিজ্য স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বা মানবজাতির পক্ষে কল্যাণকর কোন কার্যের অগ্রগতির জন্য জনসাধারণের স্বার্থে সম্পত্তি হস্তান্তর করা হলে সে ক্ষেত্রে চিরস্থায়ীত্বের বিরুদ্দ নীতি হবে না।
৩)ন্যাস্ত স্বার্থ:ন্যাস্ত স্বার্থের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না।
৪)ইজারা ক্ষেত্রে:একটি ইজারাকে চিরস্থায়ী হিসাবে অখ্যায়িত করে এতে যদি এই শর্ত রাখা হয় যে ইজারায় উল্লেখিত যে কোন সময় ইজারা দাতা ইজারার পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারবে তবে তা চিরস্থায়ীত্বের বিরুদ্ধনীতিকে ক্ষুন্ন করবে না অথবা ইজারায় এই শর্ত থাকে যে ইজারা গ্রহীতার ইচ্ছানুযায়ী ইজারা সময়ে নবায়ন করা যাবে তবে তা চিরস্থায়ীত্বের বিরুদ্ধ নীতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।
৫)হস্তান্তর যোগ্য নয় এমন স্বাথ:কোন হস্তান্তরকারী হস্তান্তর যোগ্য নয় এমন কোন স্বার্থ নিজের জন্য এবং নিজের বংশধরদের জন্য যদি সংরক্ষিত রাখে এবং বংশধর না থাকলে তা তার নিজের কাছে ফিরে আসার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৬)কপোরেশনের হস্তান্তর:কোন কর্পোরেশনের হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এ বিধি প্রযোজ্য হবে না।
এই নীতির উদ্দেশ্য:
ভবিষ্যৎ সম্পত্তির সৃষ্টি বা অজাত ব্যক্তির বরাবরে ভবিষ্যৎ সম্পত্তি সৃষ্টি কখন স্বীকৃতি লাভ করতে থাকে তখন দেখা গেল যে এর বিরুদ্ধে যদি কোন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা না যায তাহলে এইভাবে অজাত ব্যক্তির বরাবরে একটি হস্তান্তর দ্বারাই সম্পত্তি চিরন্ত্রনভাবে আটকা পড়ে যাবে ফলে জীবিত ব্যক্তির প্রয়োজনে জমি পাওয়া যাবে না এরুপ পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এই আইন ১৪ ধারায় চিরস্থায়ীত্বের বিধান করা হয়েছে।
স্থাবর ও অস্তাবর উভয় সম্পত্তির হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য কিনা:
ভারতীয় আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বিধি স্থাবর ও অস্থাবর উভয় সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। [২০ বোম্বে ৫১১]
উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধানের কোন পরিবতন হবে কিনা:
উত্তরাধিকার আইন বা Succession act এর ক্ষেত্রে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রেও এই বিধি সমভাবে প্রযোজ্য হবে প্রতীয়মান হয়।
১৯২৫ সালের Succession act ১১৪ ধারায় বলা হেয়েছে যে, উইলকারীর মৃত্যুর পরে বা সময় জীবিত একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর পরও যদি উইলকৃত সম্পত্তিতে অধিকার অর্জন বিলম্বিত হয়ে থাকে তাহলে সে উইল বৈধ হবে না।
কোন কোন শর্ত ভূমির সাথে ধাবমান এবং কোন কোন শর্ত ধাবমান নয়?
ধারা-৪০
চুক্তি হচ্ছে আইনের দ্বারা বলবৎ যোগ্য সম্মতি।পক্ষগনের মধ্যে পারস্পরিক প্রস্তাব ও গ্রহন এগুলির সমর্থনে প্রতিদান থাকলে সম্মতি বা এগ্রিমেন্ট গড়ে ওঠে।এই এগ্রিমেন্ট আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য হতে হলে চুক্তি আইনের ধারা ১০ এ বর্ণিত নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হবে।
১)পক্ষগনের চুক্তি করার যোগ্যতা
২)স্বাধীন সম্মতি
৩)আইনগত উদ্দেশ্য
৪)আইন দ্বারা বাতিল করা হয়নি এমন
৫)প্রতিদান আইনানুগ বৈধ হতে হবে।
ক্যাভিন্যান্ট সাধারনত দুই প্রকার-
১)হ্যাঁ সূচক ২)না সূচক
বিধি নিষেধ আরোপিত না সূচক ক্যাভিন্যান্ট বা ভূমির সঙ্গে ধাপমান হয় না এরুপ ক্যাভিন্যান্ট দুই প্রকার হতে পারে।
১)ন্যায় পরতা আইন অনুসারে
২)আইনের বিধান অনুসারে।
আইন অনুসারে নৈতিক শর্ত ব্যবহারের উপর এটা অর্পিত হয়। একে বিধি নিষেধ আরোপিত না সূচক শত বলে। এরুপ শত নম্পত্তির ব্যবহার বা ভোগের অধিকার সীমিত তাই এগুলি নেতিবাচকভাবে সম্পত্তির সাথে ধাবমান হয়।এই নেতিবাচক ধাবমান ক্যাভিন্যান্ট গুলো সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪০ ধারায় বিবৃত হয়েছে।এই ক্যাভিন্যান্ট গুরি সকল ক্ষেত্রে ভূমির ধাবমান হয় না এবং সকল ক্ষেত্রে পরবর্তী ক্রেতার উপর বাধ্যকর হয় না।বাধাসূচক এই শতগুলি সকলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায় না।অন্যান্য শর্তের ন্যায় বাধাসূচক শর্তগুলি তত গুরুত্বপূণ নয় কাজেই ইহা ন্যাযপর বলে বিবেচিত হয়েছে যে ,এগুলিকে শুধুমাত্র জ্ঞাত ক্রেতা বা বিনামূল্যে হস্তান্তর গ্রহীতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা উচিৎ।এই শর্ত বা ক্যাভিন্যান্টগুলি সম্পত্তির উন্নয়ন ও সম্পত্তির সুবিধাজনক ভোগের জন্য প্রয়োজনীয় বলে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে বিধায় এগুলিকে রক্ষায় ৪০ ধারার উদ্দেশ্য।বাধাসূচক ক্যাভিন্যান্ট ভূমির ব্যবহারের উপর বাধা আরোপকারী ক্যাভিন্যান্ট ৪০ ধারার ১ম অনুচ্ছেদে আলোচিত শর্ত বা চুক্তি ক্যাভিন্যান্ট বাধাসূচক এবং ইহা তৃতীয় ব্যক্তির নিজের স্থাবর সম্পত্তি উপভোগ করার জন্য অন্যের স্থাবর সম্পত্তিতে যাতে তার কোন স্বার্থ নেই বা যার উপর তার কোন ব্যবহার শর্ত নেই তৃতীয় ব্যক্তি কর্তৃক নির্দিষ্টভাবে ভোগের উপর বাধা আরোপ করা হয়। স্থাবর সম্পত্তির উপর এরুপ বাধা আরোপের অধিকার শুধু মাত্র জ্ঞাত ক্রেতা এবং বিনামূল্যে হস্তান্তর গ্রহীতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায়। ৪০ ধারার শেষ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, উক্ত অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞাত মূল্যের হস্তান্তর গ্রহীতার বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করা যাবে না।
উদাহরণ: ক ২৯,৩০ নম্বর দাগের মালিক সে ২৯ দাগ নম্বরের জমি এই শর্তে খ এর নিকট বিক্রি করল এই ভূমির ২৯ দাগ নম্বরের কিছু জমি খোলা রাখবে এবং কোন দালান কোঠা নির্মান করতে পারবে না। খ ২৯ দাগ নম্বরের জমি গ এবং ৩০ দাগ নম্বরের জমি ঙ এর নিকট বিক্রি করল খ বা গ উক্ত ভূমিতে দালান নির্মানের উদ্যোগ নিলে ক বা ঙ তা প্রতিরোধ করতে পারবে কিনা তা এখন বিবেচ্য বিষয়।
সমাধান:২৯ দাগের কিছু অংশ খোলা রাখার জন্য ক,খ এর উপর যে শর্ত আরোপ করেছিল তা সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ১১ ও ৪০ ধারা অনুসারে সিদ্ধ ছিল কাজেই ক, খ কে উক্ত নির্মান কার্য হতে বিরত রাখতে পারে। এই শর্তের কথা জেনেও যদি গ ২৯ দাগের জমি কেনে তবে ক,গ কেও নির্মান কার্য হতে বিরত রাখতে পার।এরপর ক ৩০ নম্বর দাগের জমি ঙ এর নিকট বিক্রয় করলে ঙ ও এ অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। কিন্তু এরুপ শর্তের কথা না জেনে এবং মূল্যের বিনিময়ে গ ২৯ দাগের জমি কিনে থাকলে ক বা ঙ কেউ গ কে নির্মান কার্য হতে বিরত রাখতে পারবে না।কারণ ৪০ ধারা অনুসারে এ ধরনের শর্ত সকল ক্ষেত্রে ভূমির সঙ্গে দৌড়ায় না্ ইহা আইনগত শর্ত নহে ন্যায়পর শর্ত কাজেই এই ধরনের শর্ত জ্ঞাতসারে বা বিনামূল্যে গ্রহীতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায়। অনঅবগতিতে ও মূল্যের বিনিময়ে ক্রেতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায় না।
ধাপমান কভিন্যান্ট বা ভূমির সাথে দৌড়ায় এমন কভিন্যান্ট:
সকল চুক্তির ন্যায় সম্পত্তি হস্তান্তর চুক্তিতেও কতিপয় শর্ত থাকে ব্যক্ত বা স্পষ্ট আর কতিপয় শর্ত থাকে অব্যক্ত বা মৌন। আইনে স্বীকৃত মৌন শর্তগুলি পক্ষগনের উপর অবশ্যই কার্যকর হবে এবং এগুলি সম্পত্তির সাথে ধাবমান হবে।
উদাহরণ-
ক)স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে ৫৫(২)ধারা অনুযায়ী এটা ধরে নেওয়া হয় যে, বিক্রির সময় বিক্রেতা ঐ সম্পত্তি বিক্রির অধিকার ছিল।
খ)রেহেন এর ক্ষেত্রে ৬৫ ধারা অনুসারে ধরে নেওয়া হয় যে রেহেন দাতা রেহেন সম্পত্তির মালিক।
গ)তেমনি ইজারার ক্ষেত্রেও ইজারা দাতা ও ইজারা গ্রহীতার উপর কতিপয় দায় দায়িত্ব থাকে যেগুলি চুক্তিতে উল্লেখ না থাকলেও উভয় পক্ষই তা অনুসরণ করতে বাধ্য এগুলি সব সম্পত্তির সাথে ধাবমান।
ভুমির সাথে ধাবমান শর্তগুলি আবার দুই ভাগে বিভক্ত-
ক)আইনগত ও
খ)নৈতিক
ক)আইনগত:যে সব ভূমির শর্ত বা Title বা লাভ প্রাপ্তির অধিকার হস্তান্তর গ্রহীতার উপর বর্তায়।এইশর্ত বা লাভ নির্বিঘ্ন করার দায়িত্ব হস্তান্তরকারীর উপর বর্তায়।বিক্রি,রেহেন বা ইজারা যখন করা হয় তখন এর সুযোগ গ্রহনের অধিকার ভূমির হস্তান্তর গ্রহীতার নিকট ধাবিত হয়,তখন বলা হয় যে,শর্ত বা চুক্তি ভূমির সঙ্গে দৌড়ায়।
খ)নৈতিক:ব্যবহারের অধিকারকে অর্জিত শর্ত বা চুক্তিকে বিধি নিষেধ আরোপিত না সূচক শর্ত বলা হয়।
টাল্ক বনাম মকহে মামলায় ইংল্যান্ডে এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্রেতা চুক্তি করেছিল যে, কৃত জমিতে সে কোন বাড়ী নির্মান করবে না, কিছুদিন পর সে ঐ জমিতে বাড়ী নির্মান করতে চাইলে আদালত তাকে বাধা দেয় একে এক প্রকারের স্টোপেল বলা যেতে পারে। এরুপ শর্ত বা চুক্তি সকল ক্ষেত্রে সম্পত্তির সাথে ধাবমান হয না বা দৌড়ায় না।
প্রশ্ন:
ক)লিসপেনডেন্ট নীতিটি ব্যাখ্যা কর।এ নীতির উদ্দেশ্য কি? নোটিশের নীতি দ্বারা এ নীতির প্রয়োগ কি ক্ষতিগ্রস্থ হবে? আলোচনা কর।
খ)মামলা চালিত অবস্থায় কৃত কোনো হস্তান্তর কি বাতিল?
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫২ ধারায় লিসপেনডেস নীতি বর্ণনা করা হয়েছে নীতির মূল বক্তব্য হলো, আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকলে উক্ত মামলার কোনো পক্ষই মামলার ফলাফলকে প্রভাবিত করার জন্য বিরোধীয় সম্পত্তিটি হস্তান্তর করতে পারবে না
অর্থা নীতি অনুযায়ী মামলার বিরোধীয় সম্পত্তি কোনো পক্ষ হস্তান্তর করে থাকলে তার দ্বারা মামলার ফলাফল কোনোভাবেই প্রভাবিত হবে না
সংক্ষেপে, মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকাকালীন পক্ষগণ নতুন কোনো অবস্থা সৃষ্টি করতে পারবে না
ব্রিটিশ কমন থেকে নীতিটির উৎপত্তি
ধারায় মূলত মামলা চলাকালে মামলার বিষয়বস্তু স্থিতাবস্থায় রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫২ ধারায় বলা হয়েছে যে বাংলাদেশের ভেতরে বা বাইরে এখতিয়ারাধীন আদালতে স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে মামলা অথবা কার্যক্রম চলার সময় মামলাটি ষড়য্ন্ত্রমূলক না হলে এবং তাতে সম্পত্তির কোন স্বত্ব সম্পর্কে প্রত্যক্ষ সুস্পষ্টভাবে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়ে থাকলে আদালতের অনুমতি এবং কোন শর্ত আরোপ করলে সে মোতাবেক ব্যতিত আর কোনো পক্ষ এরূপভাবে উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেনা যার ফলে আদালতের সম্ভাব্য ডিক্রি বা আদেশের ফলে অন্যপক্ষ যে অধিকার পেতে পারে তা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা ব্যহত হতে পারে
মামলা চলাকালীন বিষয় বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে ধারার ব্যাখ্যায় বর্ণিত আছে। বলা হযেছে, ধারার উদ্দেশ্যে আরজি দাখিল বা কার্যক্রম রুজু হবার তারিখ হতে, আদালতের সৃষ্টি চুরান্ত ডিক্রি জারী হয়ে সম্পূর্ণ দায় পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মামলা বা কার্যক্রম চলছে বলে গণ্য করতে হবে
নীতিটি প্রয়োগ করতে হলে মামলাটি যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে দায়ের করতে হবে
কোনো ষড়যন্তমূলক মামলার ক্ষেত্রে নীতিটি প্রযোজ্য হবে না
আর মামলার বিষয়বস্তু হস্তান্তর হলেও তাতে চলমান মামলার ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়বে না
লিসপেনডেস নীতির উপাদান:
১। স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে কোনো মামলা বা কার্যক্রম আদালতে বিচারাধীন থাকতে হবে
২। যে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন থাকবে সে আদালতের উক্ত মামলাটি বিচার করার এখতিয়ার থাকতে হবে
৩। অনুরূপ মামলা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়ের থাকতে হবে
৪। আদালতের অনুমতিক্রমে বা আদালত প্রদত্ত শর্ত মোতাবেক সম্পত্তি হস্তান্তর স্বত্ব বা মালিকানা
৫। আদালতের বিচারাধীন থাকার সময় মামলার বিষয়বস্তু অর্থা স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবে না এবং করলেও তার দ্বারা মামলার কোনো পক্ষের অধিকার প্রভাবিত হবে না
কাজেই, আইনের বিধান মেনে সবারই উচিৎ মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার বিষয় বস্তুর কোনো রকম হস্তান্তর না করা। এতে অহেতুক জটিলতা বাড়ে। কিন্তু মামলার রায়ের কোনো পরিবর্তন হয় না
বায়নানামা বহাল থাকাবস্থায় সম্পত্তি অন্য কারো কাছে কোন প্রকারের হস্তান্তর করা যাবে কি না?
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ধারা- ৫৩() অনুযায়ী,বায়না নামা দলিল বহাল থাকাবস্থায় কোন স্থাবর সম্পত্তি বায়না গ্রহীতা ব্যতিত অন্য কারো কাছে কোন  প্রকার বিক্রয়, দান, হেবা ইত্যাদি  অর্থাৎ কোন প্রকারের হস্তান্তর করা যাবে না। যদি কোন প্রকারের হস্থান্তর করা হয় তাহলে যে দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে সেটি বাতিল হয়ে যাবে।
যদি আইনানুগ ভাবে বায়না নামাটি বাতিল করা হয় তাহলে ভিন্ন যে কারো কাছে হস্তান্তর করতে
পারবে
কোন ব্যক্তি সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে?
চুক্তি সম্পাদনের যোগ্য এবং হস্তান্তর যোগ্য সম্পত্তির স্বত্বাধিকারি অথবা যে সম্পত্তি তার নিজের না কিন্তু তা হস্তান্তর করার ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রত্যক ব্যক্তি বর্তমান আইনের অধিনে সম্পত্তির হস্তান্তর করতে পারবে।।।
বিনিময় (Exchange) কি?
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১১৮ ধারায় বলা হয়েছে যে যদি দুই বা ততোধিক ব্যক্তি তাদের পারস্পারিক মতামতের ভিত্তিতে একজন আর এক জনের একটি জিনিসের মালিকানা স্বত্বের বদলে অপর একজনের কোন জিনিসের মালিকানা স্বত্বের হস্তান্তর, অথবা কোনো একটি জিনিস অর্থ এবং অপর জিনিসটি অন্য কিছু হয় অথবা দুটি জিনিসই যদি অর্থ হয় এবং তা যদি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে আদান প্রদান হয়ে থাকে তাহলে সেই পদ্ধতিকে বিনিময় বলে
যেমন: রহিম করিমকে ৫০০০/- দিল এবং করিম বিনিময়ে রহিমকে তার ২৫ শতাংশ জমি এক বছরের জন্য আবাদ করার সুযোগ দিল
বিনিময় কি ভাবে করা যায়?
বিনিময়ের সম্পত্তি দুটো যদি স্থাবর সম্পত্তি হয় এবং তার একটির মূল্য যদি ১০০ টাকা বা তার বেশি হয়, তাহলে উক্ত বিনিময়টি রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে।
কিন্তু বিনিময় মুল্য যদি ১০০ টাকার কম হয় তাহলে শুধুমাত্র দখল অর্পনের মাধ্যমে কার্যকর করা যাবে
স্থাবর সম্পত্তির বিনিময় দখল অর্পনের মাধ্যমে করা যায় আবার রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমেও করা যেতে পারে
উল্লেখ্য যে মৌখিক বিনিময় দ্বারা কোনো পক্ষের কোনো স্বার্থের সৃষ্টি হয় না কাজেই অস্থাবর সম্পত্তি এবং ১০০ টাকার কম মূল্যের স্থাবর সম্পত্তির বিনিময় রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে করা হলে তা বৈধ্য হবে
বিনিময়ের পক্ষসমুহের অধিকার দায়িত্ব: বিনিময়ের প্রত্যেক পক্ষই হলেন একজন ক্রেতা এবং বিক্রেতা বিনিময়ের প্রত্যেক পক্ষই একই সংগে তাদের পরস্পরের বিষয় বস্তু, একই সময়ে হস্তান্তর এবং গ্রহন করবে। উভয় পক্ষই তাদের সস্পত্তির যাবতীয় বিষয়ে পরস্পরকে অবগত করবে মোট কথা উভয় পক্ষই সমান ভাবে দায়িত্ব পালন করবে এবং অধিকার ভোগ করবে
বিনিময় এবং বিক্রয়ের মধ্যে পার্থক্য:
বিক্রয়ের ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে সম্পত্তি হস্তান্তরিত হয়, কিন্তু বিনিময়ের ক্ষেত্রে একটি সম্পত্তির বদলে অপর একটি সম্পত্তি হস্তান্তরিত হয়
মূল্য বা টাকার বিনিময়ে সম্পত্তি হস্তান্তরকে বিক্রয় বলে অন্য দিকে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে সম্পত্তির আপোষমূলক হস্তান্তরকে বিনিময় বলে
বিনিময়ের ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় দেখা যায় যে সম্পত্তির সাথে কিছু অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে যেমন বিনিময়যোগ্য সম্পত্তির মুল্য কম বা বেশি হলে সেক্ষেত্রে অর্থ বা টাকা প্রদান করেও বিনিময় সমন্বয় করা যেতে পারে কিন্তু বিক্রির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অর্থ বা টাকা প্রদান করতে হয়
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ১২২ ধারায় দানকে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে ,এতে বলা হয়েছে "কোন ব্যক্তি কতৃক স্বেচ্ছাপ্রণোণিত হয়ে কোন প্রকার প্রতিদান গ্রহণ না করে কোন অস্থাবর বা স্থাবর সম্পত্তি অপর ব্যক্তিকে হস্তান্তর করা হলে এবং সে ব্যক্তি বা তার পক্ষে অন্য কেউ উহা গ্রহণ করলে তাকে বলা হয় 'দান'যে ব্যক্তি অনুরুপভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর করে তাকে বলা হয় দান কতা  এবং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করে তাকে বলা হয় দানগ্রহীতা"

প্রশ্ন-১ ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী সম্পত্তি হস্তান্তর বলতে কি বুঝ? কেন বলা হয় যে, ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের শিরোনামটি ভুল নামের ব্যবহার এই আইন মুসলিম আইনের বিধানকে কতখানি প্রভাবিত করেছে?
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ৫ ধারায় সম্পত্তি হস্তান্তরের সংজ্ঞা প্রদান করা হেেয়ছে। ৫ ধারার মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের সংজ্ঞা এবং ৬ ধারার মাধ্যমে কোন কোন  সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় এবং কোনগুলো হস্তান্তর নয়- সে সম্পর্কে বিভিন্ন বিধি বিধৃত হয়েছে।
হস্তান্তর শব্দের অর্থ হচ্ছে হাত বদল। অতএব সম্পত্তি হস্তান্তর বলতে এক ব্যক্তি কাছ হতে অন্য ব্যক্তির কাছে সম্পত্তি অর্পণকে বোঝায়। অর্থাৎ কোন সম্পত্তি এক বক্তি হতে অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করাকেই সম্পত্তির হস্তান্তর বলে। তবে আমরা জানি যে, স্থাবর সম্পত্তি এক স্থান হতে উঠিয়ে অন্য স্থানে নেওয়া যায় না। তাই বলা যায় যে, কোন সম্পত্তির স্বত্ব বা দখল বা অধিকার হস্তান্তরকেই সম্পত্তির হস্তান্তর বলে।
কোন সম্পত্তির আইনগত স্বত্ব,স্বার্থ,অধিকার এবং দখল কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অন্য কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করাকে সম্পত্তি হস্তান্তর বলে।
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে-
”সম্পত্তি হস্তান্তর বলতে সেই কাজকে বুঝায়, যা দ্বারা একজন জীবিত ব্যক্তি বর্তমানে বা ভবিষ্যত কোন সম্পত্তি এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তিকে বা নিজেকে বা তার নিজের এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তিগনের কাছে অর্পন করেন এবং এরুপ কাজকে সম্পত্তি হস্তান্তর বলা হয়।
এই ধারানুসারে সম্পত্তি হস্তান্তর শুধুমাত্র জীবিত ব্যক্তিগনের মাঝে সম্পন্ন হবে। তাছাড়া, হস্তন্তরের জন্য সম্পত্তির অস্তিত্ব থাকা প্রয়োজন। অস্তিত্ববিহীন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায না।
কোন ব্যক্তি যখন সম্পত্তির বিলি ব্যবস্থা করেন এবং নিজেকে এর একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করেন তখন নিজের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়। সম্পত্তি বলতে এই ধারা অনুসারে স্থাবর সম্পত্তি বুঝতে হবে।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুসারে সম্পত্তি হস্তান্তর বলতে পক্ষগনের কার্যদ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তরের কতিপয় অংশকে বুঝায়। আইনের কার্যকারিতা দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর বুঝায় না।
তাছাড়া অন্য কোন আইনে সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান থাকলে সম্পত্তি হস্তান্তর অকার্যকর হবে। যেমন- কোন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত আইন,কোম্পানী আইন প্রভৃতি।
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের আওতায় পাঁচটি পদ্ধতির মাধ্যমে এক ব্যক্তি তার স্থাবর সম্পত্তি অপর কোন জীবিত ব্যক্তির অনুকূলে হস্তান্তর করতে পারে। এগুলি হচ্ছে-


  •  বিক্রয়
  •  রেহেন, 
  •  ইজারা, 
  • দান ও
  •  বিনিময়
অন্য কোন পদ্ধতিতে সম্পত্তি হস্তান্তর এই আইনের আওতাভূক্ত নয়। তাছাড়া এই আইন অনুসারে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হলে অন্য আইনের সাহায়্য ও সহযোগীতা প্রয়োজন। হস্তান্তরের চুক্তির জন্য ১৯৭২ সালের চুক্তি আইন এবং হস্তান্তর দলিল কার্যকর করার জন্য ১৯০৮ সালের রেজিস্টেশন আইন প্রয়োজন।
নজীর-
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ৫ ধারায় পক্ষগনের কার্য দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে,কাজেই আইন প্রয়োগ দ্বারা যে সম্পত্তি হস্তান্তর হতে পারে সে সম্পর্কে অত্র আইনে বলা হয়নি।
[চখউ ১৯৫৪ (কধৎ)৩৯২]
ব্যবসায়ের সুনাম সম্পত্তি হিসেবে গন্য হয়। নালিশযোগ্য দাবী ও সম্পত্তি বকেয়া খাজনা আদায়ের অধিকার সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে।
[অওজ ১৯৬০ ৯ঈধষ) ৩৭৮]
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের তথ্যানুযায়ী উইরের দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না। কারণ অত্র আইনে ৫ দারা সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, কোন জীবিত লোক সম্পর্কে শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর বলে বিবেচিত হবে।
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, সম্পত্তি হস্তান্তর বলতে এমন এক কাজকে বুঝায় যদ্বারা কোন জীবিত ব্যক্তি বর্তমানে বা ভবিষ্যতে কোন সম্পত্তি এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তির নিকট বা তার নিজের নিকট অর্পন করে।
’ ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের শিরোনামটি ভুল নামের ব্যবহার’ এই আইন মুসলিম আইনের বিধানকে কতখানি প্রভাবিত করেছে:
১৮৮২ সালের ৪নং আইন হিসেবে প্রণীত ’সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের(ঞযব ঞৎধহংভবৎ ড়ভ চৎড়ঢ়বৎঃু অপঃ)শিরোনামটি মূলত নিম্নলিখিত দুটো কারণে ভূল নামের ব্যবহার হিসেবে পরিগণিত হয়-
    এই আইনে সম্পত্তির কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই;
    হস্তান্তরের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিধান এই আইনে যুক্ত করা হয় নাই।
উপরোক্ত দুটো বিষয়কে সামনে রেখে-
প্রথমত: সম্পত্তি শব্দটির সংজ্ঞা ব্যতিরেকে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন শিরোনামটির প্রয়োগ সঠিক নয়। কারণ আইনে সম্পত্তি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
হ্যালসবেরির মতে- সম্পত্তি হচ্ছে কোন ব্যক্তির নিরঙ্কুশ অধিকার যা দরকষাকষি এবং বিক্রি করা যায়।
ব্যবসায়ের সুনাম ,ট্রেডমার্ক, পেটেন্টস্বত্ব,কপিরাইট বা গ্রন্থস্বত্ব ও চুক্তিগত অধিকার সবই সম্পত্তির অন্তভূক্ত।
সম্পত্তি বলতে কোন কিছুর উপর সর্বোচ্চ অধিকার বুঝায় যে অধিকার বলে একব্যক্তি ভূমিতে বসবাস করে ও বস্তু ব্যবহার করে, যা অন্যের সৌজন্যে নয়।
আইনগত ধারণা হিসেবে সম্পত্তি হচ্ছে একগুচ্ছ অধিকার এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সম্পত্তির ক্ষেত্রে দখলের অধিকার,ভোগের অধিকার,বিনষ্ট করার অধিকার,রেখে দেয়ার অধিকার, হস্তান্তর করার অধিকার ইত্যাদি বুঝায়।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনকে স্বয়ং সম্পূর্ণ আইন বলা যায় না। কারণ এ আইনের  সব শ্রেণীর সম্পত্তির হস্তান্তরের বিধান বর্ণিত হয়নি এবং তা এই আইনের প্রস্তাবনা হতেই বোঝা যায়। এই আইনের প্রস্তাবনায়  বলা হয়েছে যে, পক্ষগনের কার্যদ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের কতিপয় অংশের সংজ্ঞা প্রদান এবং সংশোধনের প্রয়োজনে এই আইনটি প্রণয়ন করা হলো। এ অর্থে অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের বিষয়টি এই আইনে স্থান পায়নি এবং সুনির্দিষ্ট কতগুলো পদ্ধতি ব্যতীত অন্যান্য পদ্ধতিসমূহের হস্তান্তরের বেলায় এই সম্পত্তি হস্তান্তর আইন সম্পূর্ণ নীরব। এই আইন শুধুমাত্র বিক্রি ,দান, রেহেন, ইজারা, এবং বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। আর স্মরণ রাখতে হবে যে, যে ক্ষেত্রে একজন জীবিত ব্যক্তির দ্বারা অন্য জীবিত ব্যক্তির বরাবরে সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রেই পক্ষগনের কার্যকারিতার দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছে বলে গন্য হবে। আবার সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫ ধারায় ভাষ্যের বিশ্লেষনে বলতে হয় যে, যেহেতু এই ধারায় জীবিত ব্যক্তি কর্তৃক হস্তান্তরের বিধান বর্ণিত রয়েছে সেহেতু উইলের দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হবে না।
সাধারণভাবে পক্ষগনের কার্যকারিতা ছাড়াও আইনের প্রয়োগ বা কার্যকারিতার দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়। কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর আইনটি সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ক্ষেত্রে আইনের কার্যকারিতাকে স্বীকৃতি দেয়নি কিন্তু যেখানে কোন ব্যক্তি দেউলিয়া হয়ে যায় অথবা তার সম্পত্তি বাজেযাপ্ত ঘোষিত হয় সেখানে আদালত কর্তৃক সম্পত্তি হস্তান্তরকেই আইনের কার্যকারিতা দ্বারা হস্তান্তর বলা যায়।
অতএব দেখা যাচ্ছে যে, ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের বিধান মতে পক্ষগনের কার্যকারিতার দ্বারাই সম্পত্তি হস্তান্তর করা সম্ভব। আইনের কার্যকারিতা দ্বারাও যে সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায সে বিষয়ে  এই আইন কিছুই বলেনি। মোট কথা আইনের কার্যকারিতার দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও এই আইনটি প্রযোজ্য নয়। যেমন- উত্তরাধিকার,দেউলিয়া,ডিক্রিজারি,ত্যাগ ও বাজেযাপ্ত। উদাহরণ: করিম তার বাড়িটি রহিমের কাছে বিক্রযের মাধ্যমে হস্তান্তর করে। এক্ষেত্রে এরুপ হস্তান্তরটি পক্ষগনের কার্যকারিতার দ্বারা হস্তান্তরিত হয়েছে বলে গন্য হবে। কিন্তু করিম যদি দেউলিয়া হয়ে যায় এবং দেউলিয়া রিসিভার নিয়োগ করা হয়,তাহলে সেক্ষেত্রে করিমের সম্পত্তির প্রয়োজন হয় না। আর এভাবে সম্পত্তির হস্তান্তরকেই আইনের কার্যকারিতার দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর বলে।
কোন হস্তান্তরের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে পাওয়া না গেলে ইকুইটি আইনের নিরীখে অনুরুপ হস্তান্তরটি পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে। কাজেই কোন হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই আইনের বিধান যথেষ্ট বলে গন্য না হলে আদালত সমূহ ইংলিশ ইকুইটি আইনকে এক্ষত্রে প্রয়োগ করে থাকেন। আবার অনেক ক্ষেত্রেই সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের অধীনে সম্পত্তি হস্তান্তরের বেলায় অপরাপর আইনসমূহেরও সাহায্য নিতে হয়। যেমন- কোন কোন সম্পত্তির হস্তান্তর সম্পূর্ণ করতে চুক্তি আইন এবং রেজিষ্ট্রেশন আইনের শরণাপন্ন হতে হয়। এছাড়াও এই আইনের যে সকল বিধান মুসলিম আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সেক্ষেত্রে মুসলিম আইনের বিধানই প্রাধান্য পাবে। কাজেই বলা যায় যে, ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়।
এতএব উপরোল্লিখিত বিশদ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় যে, যদিও আইনটির শিরোনাম দেয়া হয়েছে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন তথাপি সম্পত্তির সংজ্ঞা এই আইনে নেই। এমনকি সকল প্রকার সম্পত্তির হস্তান্তরও এই আইন দ্বারা সম্পন্ন করা যায় না। কারণ সর্বপ্রকার সম্পত্তির হস্তান্তর এই আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। কাজেই শিরোনামে এই আইনটিকে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন নামে অভিহিত করে যে ভুল নামের ব্যবহার করা হয়েছে তা আংশিক হলেও সত্য বলা যায়।
হস্তান্তরের সাথে সকর বিধান যুক্ত হয় নাই/স্বয়ং সম্পূর্ণ আইন হিসাবে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে হস্তান্তর সংক্রান্ত সকল বিধি বিধানকে নিয়ন্ত্রন করে না। যেমন-
১) অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর: ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে কেবলমাত্র স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত হস্তান্তরের বিধান রয়েছে। অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর এই আইন দ্বারা সম্পন্ন হয় না।
২) আদালতের মাধ্যমে হস্তান্তর: দেউলিয়া আইন দ্বারা দেউলিয়া আদালত কর্তৃক ডিক্রিজারিপূর্বক স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরিত হইতে পারে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন সম্পূণনীরব দর্শকের ভ’মিকা পালন কওে,কারণ এই সম্পর্কিত হস্তান্তরের বিধান সম্পত্তি সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে যুক্ত করা হয়নি।
৩) ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে হস্তান্তর:মুসলিম আইনে বর্ণিত ওয়াকফ ও দানের ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর এবং হিন্দু আইনে বর্ণিত দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে স্পত্তি হস্তান্তরের বিধান প্রয়োগ হবে না।
৪) বিধি নিষেধ আরোপও নিষিদ্ধ:সম্পত্তি হস্তান্তরের উপর আংশিক বা পূর্ণ বিধি-নিষেধ আরোপ করা যাইতে পারে। অপরদিকে মামলা চলাকালীন আদালতের নির্দেশে সম্পত্তি হস্তান্তর নিষিদ্ধ থাকতে পারে। ফলে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে হস্তান্তরের বিধানকে স্বয়ং সম্পূর্ণ বলা যায় না।
৫) মৃত ব্যক্তি কর্তৃক হস্তান্তর:উইলের ক্ষেত্রেও সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের বিধান প্রযোজ্য নহে।কারণ এই ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি কর্তৃক জীবিত ব্যক্তি অনুকূলে সম্পত্তি হস্তান্তর হয়ে থাকেযা সম্পত্তি হস্তান্তর আইন মুক্ত করা হয়নি।
৬) আইনের মাধ্যমে হস্তান্তর:কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি উত্তরাধিকার আইন মোতাবেক মৃত ব্যক্তি ওয়ারেশদের নিকট হস্তান্তর হয় যার বিধান এই আইনে সংযুক্ত হয় নাই।
উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, সম্পত্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত সকল বিধান যেহেতু এই আইনে যুক্ত করা হয়নি এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেওয়ানী কার্যবিধি ও রেজিষ্ট্রেশন আইনের উপর নির্ভরশীল সেহেতু এই আইনকে স্বংসম্পূর্ণ আইন বলা যায়না।
এই আইন মুসলিম আইনের বিধানকে কতখানি প্রভাবিত করেছে:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ২ ধারায় বলা হয়েছে যে, এই আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যা বর্ণিত রয়েছে তার কোন কিছুই মুসলিম আইনের বিধানকে প্রভাবিত করবে না। মুসলিম আইন ও সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে মুসলিম আইন প্রাধান্য পাবে।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের বিধান মতে, পক্ষগনের কার্যকারিতার দ্বারাই সম্পত্তি হস্তান্তর করা সম্ভব। আইনের কার্যকারিতার দ্বারা নয়। কাজেই আইনের কার্যকারিতার দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য নয়,যেমন- উত্তরাধিকার,দেউলিয়া,ডিক্রিজারি ইত্যাদি।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫২ ধারায় বর্ণিত লিসপেনডেন্ট নীতির আলোকে,এই আইনের সাথে মুসলিম আইনের বিরোধ দেখা দিলে মুসলিম আইন যে প্রাধান্য পাবে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তাই একজন দাতা মুসলিম আইনের অধীনে একটি সম্পত্তির দখল  গ্রহীতার নিকট অর্পন করে থাকলে এবং পরে সেই দান প্রত্যাহার করে সম্পত্তিটি ফিরিয়ে নিতে চাইলে লাহোর হাইকোর্ট তা অগ্রাহ্য করেন (১৯৬৫,পিএলডি লাহোর ২০০) কেননা,এক্ষেত্রে রিসপেনডেন্স প্রযোগ করে দান গ্রহীতা কর্তৃক সম্পত্তি বিক্রি করা বন্ধ করা যায না।
১৮৮২ সালের হস্তান্তর আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বলতে কি বুঝ? ইহা কত প্রকার ও কিকি? সকল প্রকার সম্পত্তি হস্তার যোগ্য কি? এই আইনে  কি কি সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় এবং কি কি সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না- আলোচনা কর। সম্পত্তি হস্তান্তরের আওতায় কত প্রকার সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়?
সম্পত্তি বলতে কি বুঝ:
আইনে সম্পত্তি খুব ব্যাপক র্অথে ব্যবহৃত হয়। আইন বশিারদ হ্যালস্ ববেী এর মতে, সম্পত্তি হচ্ছে কোন ব্যক্তরি নরিঙ্কষ অধকিার যা দর কষাকষি এবং বক্রিি করা যায়। ব্যবসায়রে সুনাম, ট্রডেমাক, পটেন্টেস্বত্ব,গ্রন্থস্বত্ব, চুক্তগিত অধকিার সবই সম্পত্তি অন্তভূক্ত।
খধি খবীরপড়হ গ্রন্থে সম্পত্তরি সংজ্ঞা দওেয়া হয়ছেে নম্নিরুপভাবে-
সম্পত্তি বলতে কোন কছিুর উপর র্সবোচ্চ অধকিারকে বুঝায়, যে অধকিার বলে ভূমতিে বসবাস করওে বস্তু ব্যবহার করে যা অন্যরে সৌজন্যে নয়।
ভারতীয় সুপ্রীম র্কোটরে অভমিত হল, যে অধকিার বলে মানুষ একগুচ্ছ অধকিার এবং ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য সম্পত্তরি ক্ষত্রেে দখলরে অধকিার, ভোগরে অধকিার, বনিষ্ট করার অধকিার, রখেে দওেয়ার অধকিার এবং হস্তান্তর করার অধকিার লাভ করে তাকে সম্পত্তি বলে.
এলাহবাদ হাই র্কোটরে মতে, সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র বস্তুগত পর্দাথ সমূহকইে বুঝায় এবং পর্দাথরে উপর হতে লব্ধ সকল প্রকার অধকিার ও স্বত্বকে এইমত অনুযায়ী সম্পত্তি শব্দটি দ্বারা বন্ধকী দায় মোচনরে ন্যায় সংগত অধকিার কায়মেী স্বাথ প্রভৃতি মামলাযোগ্য অধকিার সমূহকওে অন্তভূক্ত কর।েবষিয়রে ব্যাপকতার কারণে সম্ভবত ১৮৮২ সালরে সম্পত্তি হসবতান্তর আইনে সম্পত্তরি সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি তবে এটা স্পষ্টযে ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য বা অইন্দ্রীয়গ্রাহ্য সকল বস্তু যার উপর কোন ব্যক্তি তার নজিরে সুবিধার্থে র্পূণ অধকিার ও কতৃত্ব প্রয়োগ করতে পারে তা হচ্ছে ঐ ব্যক্তরি সম্প্তি
সম্পত্তির প্রকারভেদ:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে সম্পত্তি কোন সংজ্ঞা শ্রেণীবিভাগ করা হয় নাই। তবে বিভিন্ন দিক হইতে  সম্পত্তির নিম্ন রুপ শ্রেণী বিভাগ করা যায়।
১)বস্তুগত দিক হইতে দুই প্রকার; যেমন:
ক) ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য বা শরীরি
খ) ইন্দ্রীয়হীন বা অশরীরী
২) স্থানান্তরের দিক হইতে দুই প্রকার;যেমন:
ক)স্থাবর
খ) অস্থাবর
৩) বৃটিশ আইন অনুযায়ী দুই প্রকার;যেমন:
ক) প্রকৃত সম্পত্তি(Real Property)
খ) ব্যক্তিগত সম্পত্তি (Private Property)
৪) মালকিানা র্শতরে দৃষ্টভিঙ্গতিে দুই প্রকার-
ক)সরকারী সম্পত্তি
খ)বসেরকারী সম্পত্তি
কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাবে এবং কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাবে না:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনরে ৬ ধারার বধিান সাপক্ষেে যে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়। এই ধারায় বলা হয়ছেে যে এই আইনে বা বতমান বলবৎ অন্য আইনে ভন্নিরুপ কোন বধিান না থাকলে যে কোন প্রকার সম্পত্তি হস্তান্তর করা যতেে পারে তবে কতপিয় সম্পত্তরি কথা এ ধারায় উল্লখে করা হয়ছেে যগেুলি কোন অবস্থায় হস্থান্তরতি নয়-
১) ভবষ্যিৎ উত্তরাধকিাররে সম্ভবনা: সম্ভাব্য উত্তরাধকিারীর সম্পত্তি পাবার সম্ভবনা, আত্নীযরে মৃত্যুর পর তার ওছয়িতে র অনুসারে সম্পত্তি পাবার সম্ভাবনা র্অথাৎ সম্পত্তি লাভে কোন সম্ভাবনাকে হস্তান্তর করা যায় না।
২) পুন: প্রবশেরে অধকিার: পরর্বতীকালীন র্শতরে ভঙ্গরে জন্য দখল পাবার অধকিার সংশ্লষ্টি সম্পত্তরি মালকি ব্যতীত অন্য কারো নকিট হস্তান্তর করা যায়না।
৩) ব্যবহার স্বত্ব: এটা হচ্ছে একজনরে সম্পত্তি উপর আরকেব্যক্তরি অধকিার।যমেন ঊধংবসবহঃ জরমযঃ ব্যবহার স্বত্বরে অধকিার অন্যরে নকিট হস্তান্তর করা যায় না।
৪) ব্যক্তগিত স্বাথ: কোন সম্পত্তরি ভোগ দখলরে অধকিার মালকিরে মধ্যে ব্যক্তগিতভাবে সীমাবদ্ধ থাকলে তনিি তা হস্তান্তর করতে পারনে না।
৫) ভবষ্যিত খোরপোষরে অধকিার: ভবষ্যিৎ খোরপোষরে অধকিার জনর্স্বাথে হস্তান্তর অযোগ্য করা হয়ছে।ে
৬) কবেলমাত্র মামলা করার অধকিার:মামলা করার অধকিার যহেতেু ব্যক্তগিত অধকিার সহেতেু ইহা হস্তান্তর করা যায় না।
৭) সরকারীপদ বা বতেন: কোন সরকারী পদ বা বতেন পাওনা হবার আগে বা পরে হস্তান্তর করা যায় না।
৮) বৃত্তি বা পনেশন: বৃত্তি বা পনেশন হস্তান্তর যোগ নহ।ে
৯) সংশ্লষ্টি র্স্বাথরে প্রকৃতি বরিোধী কোন স্বাথ হস্তান্তর করা যায় না।
সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিধি-নিষেধগুলি ছাড়াও আরও দুইটি বাধা রহিয়াছে;যেমন:
১) মামলা চলাকালীন হস্তান্তর:১৯০৮ সালের হস্তান্তর আইনের ৫২ ধারা মোতাবেক মামলা চলাকালীন অবস্থায় মামলার বিষযবস্তু অর্থাৎ যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ সে সম্পত্তি আদালতের অনুমতি ছাড়া হস্তান্তর করা যাবে না।
২) ক্রোকাবদ্ধ সম্পত্তি: ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির ৬৪ ধারার বিধানানুসারে কোন সম্পত্তি আদালতের নির্দেশে ক্রোকাবদ্ধ থাকিলে তা হস্তান্তর করা যায় না।
উপরে বর্ণিত বিধি নিষেধ আরোপিত সম্পত্তিসমূহ ছাড়া অন্য সকল সম্পত্তি এই আইন অনুসারে হস্তান্তর করা যায়।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের আওতায় বিভিন্ন প্রকারের সম্পত্তি হস্তান্তর:
কেবলমাত্র পাঁচটি ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনটি প্রযোজ্য হইয়া থাকে। যাহা নি¤œরুপ:
    বিক্রয়,
    রেহেন,
    ইজারা,
    দান ও
    বিনিময়
১৮৮২ সালরে সম্পতি হস্তান্তর আইনের উদ্দশ্যে সমুহঃ
১৮৮২ সালরে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন প্রণয়নরে পছিনে কি কারণ ছিল, সে সর্ম্পকে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের প্রস্তাবনায় বা ভূমকিায় ই্গিতআছে,
এই আইনরে প্রস্তাবনায় বলা আছে পক্ষগণরে র্কায দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর সর্ম্পকতি আইনরে কছিু অংশরে সংজ্ঞা প্রদান এবং সংশোধন করার উদ্দশ্যেে এই আইন প্রণীত হয়েছে। প্রস্তাবনায় উল্লখেতি বষিয়টি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও গভীরভাবে র্পযালোচনা করলে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন প্রণয়নরে পছিনে আমরা নিম্নলিখিত উদ্দশ্যে সমূহ আমরা দখেতে পাই—-
১) হস্তান্তর আইনরে কিছু অংশের সংজ্ঞা প্রদান ও সংশোধন,
২) পরিপূরক হিসাব
৩) পাঁচ প্রকারে হস্তান্তর র্কাযকর করা,
৪) সমন্বয় ঘটানো,
৫) জীবতি ব্যক্তি র্কতৃক জীবতি ব্যক্তি বরাবর সম্পত্তি হস্তান্তর,
৬) স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর প্রভৃতি
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ পাশ করার অন্যতম একটি উদ্দশ্যে হচ্ছে পাঁচ প্রকাররে হস্তান্তর র্কাযকর করা
যথাঃ
১) বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তান্তর,
২) বন্ধকের মাধ্যমে হস্তান্তর,
৩) ইজারার মাধ্যমে হস্তান্তর,
৪) দানের মাধ্যমে হস্তান্তর,
৫) বিনিময়ের মাধ্যমে হস্তান্তর

প্রশ্ন-২ চিরস্থায়ীত্বের (জঁষব ধমধরহংঃ ঢ়বৎঢ়বঃঁরঃু) বিরুদ্ধ নীতিটি ব্যাখ্যা কর। এই নীতির ব্যতিক্রম সমূহ আলোচনা কর। এই নীতি কি স্থাবর ও অস্থাবর উভয় সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়? এর দ্বারা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধানের কোন পরিবর্তন হয় কি?
ভূমিকা:
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে যে ধারাগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকার অবতারন করেছে চিরস্থায়ীত্বের (জঁষব ধমধরহংঃ ঢ়বৎঢ়বঃঁরঃু) বিরুদ্ধ নীতিটি উহাদের মধ্যে অন্যতম। এই নীতিটি প্রবর্তনের সাথে সাথে সম্পত্তি অবিরাম বন্দোবস্তু অবৈধ বলে বিঘোষিত হয়েছে তথা একটি ঐতিহাসিক নীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
চিরস্থায়ীত্বের (জঁষব ধমধরহংঃ ঢ়বৎঢ়বঃঁরঃু) বিরুদ্ধ নীতি:
সম্পত্তি সব সময় হস্তান্তরযোগ্য থাকবে-এটাই সাধারণ নিয়ম। কোন সম্পত্তির হস্তান্তর গ্রহীতা ঐ সম্পত্তিটি পুন: হস্তান্তরের অধিকারসহ আইনত সবধরনের অধিকার ভোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। কোন সম্পত্তি অনির্ধারিত সময়ের জন্যে হস্তান্তরের অযোগ্য হয়ে থাকলে তা মানব জাতির অকল্যান বয়ে আনবে। কিন্তু অজাত ব্যক্তির বরাবরে ভবিষ্যতে সম্পত্তি সৃষ্টি যখন স্বীকৃতি লাভ করতে থাকে তখন একটা আশংকা দেখা গেল যে,এভাবে অজাত ব্যক্তির বরাবরে একটি হস্তান্তরের দ্বারাই সম্পত্তিটি চিরন্তনভাবে একস্থানে আটকা পড়তে পারে। ফলশ্রুতিতে জীবিত ব্যক্তির প্রয়োজনে জমি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে।এরপ চিরস্থায়ীত্বের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ আরোপের উদ্দেশ্যে ১৪ ধারায় যে প্রবর্তন করা হয়েছে তাকে চিরস্থায়ীত্বের বিরুদ্ধে বিধি বলা হয়।
এই ধারায় বলা হযেছে, কোন সম্পত্তি এমনভাবে হস্তান্তর করা যাবে না,যা হস্তান্তরের তারিখে জীবিত এক বা একাধিক ব্যক্তির জীবনকাল এবং এরুপ জীবনকালের অব্যবহিত পর হতে অপর কোন ব্যক্তির নাবালক অবস্থা অতিবাহিত হবার পরে বলবৎ হবে। জীবিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের জীবনকাল শেষ হবার সময় উক্ত নাবালকের অস্তিত্ব থাকতে হবে এবং উক্ত নাবালক সাবালকত্ব অর্জন করা মাত্রই সৃষ্ট স্বার্থ তার উপর বর্তাবে।
 এই বিধি অনুযায়ী কোন অস্তিত্বহীন ব্যক্তি বরাবরে সরাসরি কোন হস্তান্তরের অনুমতি দেয়া হয়নি। দুটি শর্তআরোপ করা হয়েছে-
১) প্রথমে এক বা একাধিক জীবিত ব্যক্তির অনুকূলে জীবন স্বত্ব সৃষ্টি করতে হবে।
২) এই জীবন স্বত্ব এক বা একাধিক ব্যক্তির শেষ জনের জীবনকাল শেষ হবার পূর্বেই অজাত ব্যক্তির জন্মলাভ করতে হবে,কমপক্ষে মাতৃগর্ভে থাকতে হবে। অন্যথায উক্ত অজাত ব্যক্তির বরাবরে কোন হস্তান্তর কার্যকর হবে না। এই নিয়মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, হস্তান্তরের মাধ্যমে সৃষ্ট স্বত্ব বলবৎকরণ চিরকালের জন্য স্থগিত করার সকল প্রচেষ্টা বাতিল বলে গণ্য হবে।
ব্যতিক্রম:
নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রে চিরস্থায়ীত্বের বিধি প্রযোজ্য হবে না:
১) ব্যক্তিগত চুক্তি:ব্যক্তিগত চুক্তির ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু চুক্তি দ্বারা সম্পত্তিতে কোন ইকুটেবল স্বার্থ সৃষ্টি করলে তবে অন্যরুপ হবে।
২) কল্যানমূখী হস্তান্তর:কল্যানমূখী কোন হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য হবে না। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, ধর্ম,জ্ঞান, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা মানবজাতির পক্ষে কল্যাণকর কোন কার্যের অগ্রগতির জন্য জনসাধারণের স্বার্থে সম্পত্তি হস্তান্তর করা হলে, সে ক্ষেত্রে চিরস্থায়ীত্বের বিরুদ্ধ নীতি হবে না।
৩) ন্যাস্ত স্বার্থ:ন্যাস্ত স্বার্থের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
৪) ইজারা ক্ষেত্রে:একটি ইজারাকে চিরস্থায়ী হিসাবে অখ্যায়িত করে এতে যদিএই শর্ত রাখা হয় যে, ইজারায় উল্লেখিত যে কোন সময় ইজারা দাতা ইজারার পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারবে তবে তা চিরস্থায়ীত্বের বিরুদ্ধবিধিকে ক্ষুন্ন করবে না।
অথবা,ইজারায় এই শর্ত থাকে যে ইজারা গ্রহীতার ইচ্ছানুযায়ী ইজারা সময়ে সময়ে  নবায়ন করা যাবে তবে তা চিরস্থায়ীত্বের  বিরুদ্ধবিধি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।
৫) হস্তান্তর যোগ্য নয় এমন স্বার্থ:কোন হস্তান্তরকারী হস্তান্তর যোগ্য নয় এমন কোন স্বার্থ নিজের জন্য এবং নিজের বংশধরদের জন্য যদি সংরক্ষিত রাখে এবং বংশধর না থাকলে তা তার নিজের কাছে ফিরে আসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬) কপোরেশনের হস্তান্তর:কর্পোরেশনের হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এ বিধি প্রযোজ্য হবে না।
৭) অগ্রক্রয়ের চুক্তির ক্ষেত্রে এ বিধি প্রযোজ্য নয়।
এই নীতির উদ্দেশ্য:
ভবিষ্যৎ সম্পত্তির সৃষ্টি বা অজাত ব্যক্তির বরাবরে ভবিষ্যৎ সম্পত্তি সৃষ্টি কখন স্বীকৃতি লাভ করতে থাকে তখন দেখা গেল যে এর বিরুদ্ধে যদি কোন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা না যায় তাহলে এইভাবে অজাত ব্যক্তির বরাবরে একটি হস্তান্তর দ্বারাই সম্পত্তি চিরন্ত্রনভাবে আটকা পড়ে যাবে ফলে জীবিত ব্যক্তির প্রয়োজনে জমি পাওয়া যাবে না এরুপ পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এই আইন ১৪ ধারায় চিরস্থায়ীত্বের বিধান করা হয়েছে।
স্থাবর ও অস্থাবর উভয় সম্পত্তির হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য কিনা:
ভারতীয় আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বিধি স্থাবর ও অস্থাবর  উভয় সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। [২০ বোম্বে ৫১১]
উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধানের কোন পরিবর্তন হবে কিনা:
উত্তরাধিকার আইন বা ঝঁপপবংংরড়হ ধপঃ এর ক্ষেত্রে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রেও এই বিধি সমভাবে প্রযোজ্য হবে প্রতীয়মান হয়।
১৯২৫ সালের ঝঁপপবংংরড়হ ধপঃ ১১৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, উইলকারীর মৃত্যুর পরে বা সময় জীবিত একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর পরও যদি উইলকৃত সম্পত্তিতে অধিকার অর্জন বিলম্বিত হয়ে থাকে তাহলে সে উইল বৈধ হবে না।
নজির-
ব্যক্তিগত চুক্তির ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। তবে এক্ষেত্রে ইকুটেবল স্বার্থ সৃষ্টি হলে অন্যরুপ হবে। ৫৪ ধারা মতে, ভূমি ক্রয়ের চুক্তি কিংবা অত্র খরিদের চুক্তি দ্বারা ভূমিতে কোন স্বার্থের সৃষ্টি হবে না। অন্যদিকে ,এই  ১৪ ধারাকে স্বার্থ সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা হয়েছে। তাই এই আইনের ৫৪ ধারা মতে চুক্তির বেলায়  ১৪ ধারায় বর্ণিত অবিরাম হস্তান্তর নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। (অনফঁষ কঁফফঁং াং অহরলঁসধহ কযধঃঁহ  উখজ ৩১২)
উপসংহার:
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, চিরস্থায়ীত্বের (জঁষব ধমধরহংঃ ঢ়বৎঢ়বঃঁরঃু) বিরুদ্ধ নীতিটি সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী বৈপ্লবিক ও বলিষ্ট পদক্ষেপ।
প্রশ্ন-৩ নালিশ যোগ্য দাবি কি? এরুপ দাবি কিভাবে হস্তান্তর করা যায়? কে এরুপ দাবির হস্তান্তর গ্রহীতা হতে পারে? কে পারে না? এরুপ দাবির হস্তান্তর গ্রহতিার অধিকার ও দায়দায়িত্ব আলোচনা কর।
ভূমিকা:
নালিশযোগ্যদাবী সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে  একটি  বিশেষ উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সুচনা করেছে। যে সকল ঋণের উপর কোন জামানত নেই ,তার উপরে দাবীকে সহজভাষায় নালিশযোগ্যদাবী হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই প্রকার দাবীকে মোকদ্দমাযোগ্য দাবীও বলা যায়। নালিশযোগ্য দাবীর হস্তান্তর কিভাবে করা হয় এবং হস্তান্তর করা হলে ইহা হস্তান্তরকারী, হস্তান্তর গ্রহীতা এবং সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির সাথে যুক্ত অন্য ব্যক্তির উপর কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে তা আলাচনা বিষয়।
নালিশ যোগ্য দাবি:
যে সকল অধিকার প্রয়োগ দ্বারা দাবী করা যায় কিন্তু নিজ দখলে নেওয়া যায় না অথচ মামলার মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া যায় তাকে নালিশ যোগ্য দাবী বলে। তবে ইহা দেওয়ানী আদালতে প্রতিকারের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত হয়।
সাধারণত মোকদ্দমাযোগ্য দাবীকেই নালিশ যোগ্য দাবী বলা যায়। সহজ ভাষায়, যে ঋণের পিছনে কোনরুপ জামানত বর্তমান নেই তার উপর দাবীকেই নালিশ যোগ্য দাবী বলে। আবার চুক্তির ভিত্তিতে যে বস্তু কোন ব্যক্তি পাবার অধিকারী হয় ,অনুরুপ চুক্তির সুবিধাকেও নালিশযোগ্য দাবী বলা যায়।
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৩ ধারায নালিশযোগ্য দাবীর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে,নালিশযোগ্য দাবী বলতে স্থাবর সম্পত্তির রেহেন দ্বারা বা অস্থাবর সম্পত্তি আটক রেখে প্রদত্ত ঋণ ব্যতীত অন্যান্য ঋণের প্রতি দাবী অথবা দাবিদারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দখল নেই এরুপ কোন অস্থাবর সম্পত্তির লাভ জনক স্বার্থের ক্ষতি বর্তমান ,ভবিষ্যৎ বা শর্তাধীন বা ঘটনাধীন দাবীকে বুঝায় যা দেওয়ানী আদালতে প্রতিকার যোগ্য।
উদাহরণ:
সাকিব সাফাতের কাছ থেকে ১লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করল। এই লেনদেনের ঋণের ক্ষেত্রে কোন জামানত গ্রহণ করা হয় নাই বলে ইহা নালিশযোগ্য দাবী বলে গণ্য হবে কিন্তু এই ১ লক্ষ টাকা যদি সাকিব তার একটি দোকান রেহেন রেখে গ্রহন করত তাহলে এই ঋণের জামানত থাকত বিধায় তা নালিশ যোগ্য দাবী বলে গন্য হতো না।
অতএব নালিশযোগ্য বলতে সে সকল দাবীকেই বুঝায় যা আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার যোগ্য এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে হস্তান্তরযোগ্য।
এরুপ দাবি কিভাবে হস্তান্তর করা যায়:
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের নালিশযোগ্য দাবীর হস্তান্তর সম্পর্কে ১৩০ ধারায় বিধিবিধান বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধারা মতে, শুধু লিখিত দলিল সম্পাদন দ্বারা ইহা হস্তান্তর করা যায়। মূল্যের বিনিমযে হোক বা বিনামূল্যে হোক এর জন্য লিখিত দলিল একান্ত প্রয়োজন। হস্তান্তর দলিলটিতে হস্তান্তরকারী নিজে বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক অবশ্যই স্বাক্ষরিত হতে হবে। নালিশযোগ্য দাবীর হস্তান্তর ব্যাপারে দেনাদারবেক কোন নোটিশ দেবার প্রয়োজন  হয় না।
ইদ্রিস আলম বনাম হাজী মোহাম্মদ আলী মামলায় বলা হয় যে, এই ধারা মতে প্রত্যেক নালিশ যোগ্যদাবী হস্তান্তর যোগ্য।{৪ বিসিআর(এডি)৩৯} তবে তা লিখিত দলিল দ্বারা হস্তান্তর করতে হবে।
আর নালিশযোগ্য দাবীর হস্তান্তর দলিলটি সম্পাদনের তারিখ হতেই কার্যকরী হবে, নোটিশ দেবার তারিখ হতে কার্যকরী হবে না। আবার যে ক্ষেত্রে নালিশ যোগ্যদাবী পর পর কয়েকবার হস্তান্তর করা হয়ে থাকে; সে ক্ষেত্রে হস্তান্তরের দলিল সম্পাদনের তারিখ অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে তা কার্যকরী হবে।
এছাড়া,১৩০(২) ধারা অনুযায়ী কোন নালিশ যোগ্য দাবীর হস্তান্তর গ্রহীতা,হস্তান্তর সম্পর্কে উপরে উল্লেখিত দলিল সম্পন্ন হবার পর উক্ত দাবী আদায়ের জন্য তার নিজ নামে মামলা দায়ের বা কর্মপন্থা গ্রহন করতে পারবে এবং হস্তান্তরকারীর নিকট হতে অনুরুপ মামলার জন্য সম্মতি গ্রহন না করেই বা তাকে এ ব্যাপারে পক্ষ না করেই তা করা হবে।
ব্যতিক্রম:
এ ধারার কোন বিধান জাহাজী বীমা পলিসি বা অগ্নিবীমা পলিসি (যা ১৯৩৮ সালের বীমা আইনের কোন ধারাকে বিঘিœত করে তৎসম্পর্কে) হস্তান্তর সম্পর্কে প্রযোজ্য হবে না।
উদাহরণ:ক,খ এর নিকট টাকা ঋণ করেছে। খ সেই ঋণ গ এর নিকট হস্তান্তর করেছে। খ অতপর ক এর নিকট বর্ণিত ঋণের টাকা দাবী করল এবং ক ১৩১ ধারায় বর্ণিত বিধি মোতাবেক উক্ত হস্তান্তর সম্পর্কে কোন প্রকার নোটিশ না পেয়ে খ কে ঋণের টাকা প্রদান করলে। উক্ত প্রদান বৈধ হবে এবং গ ঋণের জন্য কোন মামলা দায়ের করতে পারবে না।
নালিশযোগ্য দাবী হস্তান্তরের ফলাফল/হস্তান্তর গ্রহীতার দায়:
হস্তান্তর আইনের ১৩০ ধারা মোতাবেক নালিশযোগ্য দাবী হস্তান্তরের পর হস্তান্তর গ্রহীতা হস্তান্তরকারীর স্থলাবর্তী হয় এবং তার সমস্ত অধিকার ও প্রতিকার লাভ করে।এছাড়া হস্তান্তরকারীর বিনা অনুমতিতে এবং তাকে পক্ষ না করে সে নিজের নামে মামলা দায়ের করে উক্ত দাবীর টাকা আদায় করতে পারে।
এরুপ হস্তান্তরের ফলে হস্তান্তর গ্রহীতার কিছু কর্তব্য সৃষ্টি হয়। হস্তান্তরের সময় হস্তান্তরকারীর যে সব দায় ও ন্যায়নীতির অধীন ছিলেন হস্তান্তর গ্রহীতা সে সব দায় ও ন্যায়নীতির অধীন হবেন।
১৩৬ ধারার বিধান অনুসারে কোন বিচারক,আইনজীবী বা বিচারালয়ের কোন অফিসার কোন নালিশযোগ্যদাবী খরিদ করতে পারবেন না। এ বিধান লংঘন করে যদি উপরিউক্ত কোন ব্যক্তি নালিশযোগ্য দাবী খরিদ করে তবে আদালত এর প্রয়োগ বা কার্যকর করবে না।
এরুপ দাবির হস্তান্তর গ্রহীতার অধিকার ও দায়দায়িত্ব:
অধিকার:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১৩০ ধারা অনুযায়ী নালিশযোগ্য দাবীর হস্তান্তর গ্রহীতা হস্তান্তরের দলিল সম্পাদনের পর হস্তান্তরকারীর স্থলাবর্তী হয় এবং হস্তান্তরকারীর বিনা অনুমতিতে এবং তাকে পক্ষ না করে সে নিজের নামে মামলা দায়ের করে উক্ত দাবীর টাকা আদায় করতে পারে।
১) অধিকার ও প্রতিকার লাভ:এই প্রকার দাবী হস্তান্তরের ফলে হস্তান্তর গ্রহীতা হস্তান্তর দাতার স্থালাভিষিক্ত হন এবং উক্ত হস্তান্তরের মাধ্যমে হস্তান্তর কারীর সকল অধিকার ও প্রতিকার বা প্রতিবিধান, ক্ষতিপূরণের আকারে বা অন্য কোনভাবে হোক না কেন, হস্তান্তর গ্রহীতার উপর অর্পিত হবে।
২) জামিনদার দায়ী হয়:নালিশ যোগ্য দাবীর ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট ঋণের কেহ জামিনদার থাকলে ,ঐ জামিনদার হস্তান্তর গ্রহীতার নিকট দায়ী হয়।
৩) নোটিশ প্রদানের ক্ষেত্রে: ১৩০ ধারা অনুযায়ী হস্তান্তরের দলিল কার্যকরী হলেই হস্তান্তর গ্রহীতা স্বত্ব পেয়ে যাবে; এজন্য তাকে কোন নোটিশ প্রদান করতে হবে না।
৪) মামলা দায়ের ও অব্যাহতি দেবার অধিকার: হস্তান্তর গ্রহীতার নিজের নামে মামলা করার অধিকার রয়েছে। বৈধভাবে অব্যাহতি দেবার অধিকারও তার আছে।
৫) স্বত্বের ক্রটি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ না হবার অধিকার: নালিমযোগ্য দাবীর হস্তান্তর গ্রহীতা, হস্তান্তরকারীর স্বত্বের কোন ক্রটি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। তাই এ অধিকার বলে সে উহা মুক্তভাবে গ্রহন করে থাকেন।
এরুপ দাবির হস্তান্তর গ্রহীতার দায়-দায়িত্ব:
১৩০ ধারা অনুসারে হস্তান্তরের নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত খাতক যদি পূর্ব মহাজনের সহিত কোন লেনদেন করে তা হস্তান্তর গ্রহীতার উপর বাধ্যকর হবে।
১৩২ ধারায় বলা হয়েছে যে,নালিমযোগ্য দাবীর হস্তান্তরকারী হস্তান্তরের সময় যে সকল দায় ও ন্যায়নীতির দ্বারা বাধ্য ছিল এর হস্তান্তর গ্রহীতাও সে সকল দায় ও ন্যায়নীতির দ্বারা বাধ্য থাকবে।
অতএব আমরা বলতে পারি যে, হস্তান্তরের সময় হস্তান্তরকারীর যে সকল দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দাবীর সাথে সংযুক্ত ছিল উহা দাবী গ্রহন করার সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর গ্রহীতার উপর বর্তাবে।
উপসংহার:
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে,যে সকল ঋণের পিছনে কোন প্রকার জামানত নেই , উহার দাবীকে অত্র আইন মোতাবেক নালিশযোগ্য দাবী হিসাবেও অভিহিত করা হয়। হস্তান্তর দলির সম্পাদিত হবার পর হস্তান্তর দাতার সকল প্রকার অধিকার ও প্রতিকার হস্তান্তর গ্রহীতার বরাবরে অর্পিত হয়। সাথে সাথে হস্তান্তর দাতার সমস্ত দায় ও বাধ্যবাধকতাও হস্তান্তর গ্রহীতার অনুকূলে হস্তান্তরিত হয়।
নালিশযোগ্য দাবীর বৈশিষ্ট্য:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১৩০ ধারা অনুযায়ী কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নি¤œরুপ:
১) নালিমযোগ্য দাবীর জিনিস দাবীদারের দখলে থাকে না দেনাদারের দখলে থাকে।
২) নালিশ যোগ্য দাবীর কোন জামানত থাকে না।
৩) নালিশযোগ্য দাবী প্রয়োগ করা যায়।
৪) নালিশযোগ্য দাবী বর্তমানে বা ভবিষ্যতে জন্মলাভ করতে পারে।
৫) নালিশযোগ্য দাবী শর্তহীন বা কোন ঘটনার উপর নির্ভরশীল বলে গন্য হতে পারে।
৬) নালিশযোগ্য দাবী দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার যোগ্য।
৭) নালিশযোগ্য দাবী ১৮৭২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের আওতায় হস্তান্তর করা যায়।
৮) ১৩০ ধারা অনুযায়ী নালিশযোগ্য দাবী শুধুমাত্র লিখিত দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করা যায় এই লিখিত দলিলে হস্তান্তর কারী বা তার বৈধ প্রতিনিধি স্বাক্ষর করবেন।
৯) নালিশযোগ্য দাবী মূল্যের বিনিময়ে বা বিনামূল্যে হস্তান্তর করা যায়।
১০) নালিশযোগ্য দাবী হস্তান্তর কার্যকর হওয়ার জন্য দেনাদারকে নোটিশ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
১১) নালিশযোগ্য দাবীর হস্তান্তর গ্রহীতা নিজ নামে মামলা দায়ের করতে পারে।
১২) নালিশযোগ্য দাবীর হস্তান্তর দলিলের অধিকারী হস্তান্তর গ্রহীতা হস্তান্তর কারীর শর্তের কোন ক্রটি ক্ষতিগ্রস্থ হয় না।
১৩) বিপরীত প্রমানের অভাবে আদালত ধরে নিবে যে, নালিশ যোগ্য দাবীর হস্তান্তর দলিলটি প্রতিদানের বিনিময়ে তৈরী এবং গৃহীত হয়েছে।
১৪) নালিম যোগ্য দাবী ইংল্যান্ডের চুজেজ ইন এ্যাকশন থেকে অনেকাংশে সংকুচিত।


প্রশ্ন-৪
ক) ফিডিং দ্যা গ্রান্ট বাই এস্টোপেল(ঋববফরহম ঃযব মৎধহঃ নু ঊংঃড়ঢ়ঢ়বষ) নীতি উদাহরণ সহ আলোচনা কর। এই নীতি আদালত কর্তৃক হস্তান্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না ? ব্যাখ্যা কর।
খ) সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ৫৩(ক) ধারা একটি পরোক্ষইকুইটি প্রত্যক্ষ ইকুইটি নয় আলোচনা কর।
ফিডিং দ্যা গ্রান্ট বাই এস্টোপেল(ঋববফরহম ঃযব মৎধহঃ নু ঊংঃড়ঢ়ঢ়বষ)নীতি:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৩ ধারায় ফিডিং দ্যা গ্রান্ট বাই এস্টোপেল(ঋববফরহম ঃযব মৎধহঃ নু ঊংঃড়ঢ়ঢ়বষ) নীতিটি বর্ণিত রয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে,যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি প্রবঞ্চনামূলকভাবে অথবা ভুলক্রমে প্রকাশ করে যে, সে কোন একটি স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য ক্ষমতাবান এবং মূল্যের বিনিময়ে তা হস্তান্তর করে সে ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে এই চুক্তি বহাল থাকার সময় সে যদি উক্ত সম্পত্তির কোন স্বত্ব অর্জন করে থাকে, তাহলে গ্রহীতা দাবী করলে উক্ত হস্তান্তর তার এই পরবর্তী সময়ে অর্জিত স্বত্বের উপর বলবৎ হবে।
তবে গ্রহীতা তার উপযুক্ত দাবীর অধিকারের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত না থেকে সৎবিশ্বাসে মূল্য দিয়ে সম্পত্তি ক্রয করলে এই ধারার কোন বিধান তার অধিকারকে ক্ষুন্ন করবে না।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৩ ধারাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এই ধারায় হস্তান্তরের সময় স্বত্বহীন কিন্তু পরবর্তীকালে স্বত্ব অর্জনকারী ব্যক্তি কর্তৃক  হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধারাটি ফিডিং দ্যা গ্রান্ট বাই এস্টোপেল(ঋববফরহম ঃযব মৎধহঃ নু ঊংঃড়ঢ়ঢ়বষ) নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। উক্তনীতির মূলকথা হলো এই যে, কোন ব্যক্তির চুক্তি করার যোগ্যতা না থাকা স্বত্বেও যদি সে চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এবং পরবর্তী সময়ে উক্ত চুক্তি কার্যকরী করবার ক্ষমতা অর্জন করে তাহলে সে উক্ত চুক্তি কার্যকর করতে বাধ্য থাকবে। কারণ এরুপ চুক্তি করার পর হস্তান্তরকারী এ যুক্তি দেখাতে পারেন যে, যখন সে তার সম্পত্তিটি হস্তান্তর করেছিল তখন তার কোন স্বত্ব ছিল না, হস্তান্তরের পর সে হস্তান্তরিত সম্পত্তিতে স্বত্ব অর্জন করেছে।
এই নীতির মূখ্য উদ্দেশ্য এই যে, যেক্ষেত্রে হস্তান্তরদাতা সম্পত্তির হস্তান্তর করে থাকেন সেক্ষেত্রে হস্তান্তরদাতা হস্তান্তর গ্রহীতাকে উক্ত সম্পত্তির সেই পরিমান দিতে একান্তভাবে বাধ্য থাকবে যেই পরিমান সম্পত্তি তার বর্তমানে আছে ও যে পরিমান সম্পত্তি সে ভবিষ্যতে অর্জন করবে। সংক্ষেপে যে ব্যক্তির যে সম্পত্তি নেই তা সে হস্তান্তর করতে পারে না। আর হস্তান্তর দাতার স্বত্বধীনে তার না থাকা সম্পত্তি আসামাত্রই তা মূল্যবান হয় এবং কার্যকারিতা লাভ করে  থাকে।
এই নীতির উদাহরণ:
নারদ নামক জনৈক হিন্দু তার পিতা কৃষ্ণের কাছ হতে পৃথক হয়ে বাস করার সময় চ,ছ ও জ নামক তিনটি ক্ষেত ধীরেন এর কাছে বিক্রি করলো এবং বিক্রির পূর্বে প্রকাশ করলো যে, তার বিক্রি করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল যে নারদ জ ক্ষেতের মালিক নয় ,সম্পত্তি বাটোয়ার সময় তা নিতেশ এর ভাগে পড়েছে। কিন্তু নিতেশ এর মৃত্যুর পরেও নারদ উত্তরাধিকারী হিসাবে জ নামক ক্ষেতটি লাভ করে। তখন ধীরেন পূর্বের চুক্তিটি বাতিল না করায় তাকে দেবার জন্যে নারদকে বাধ্য করতে পারবে।
উল্লেখ্য যে, ইংল্যান্ডে এই নীতিটি ফিডিং দ্যা গ্রান্ট বাই এস্টোপেল(ঋববফরহম ঃযব মৎধহঃ নু ঊংঃড়ঢ়বষষ)নামে পরিচিত। অন্য কথায়, একেফিডিং এস্টোপেল বা ফরওয়াডিং অফ টাইটেল বাই এস্টোপেলও বলে। সাক্ষ্য আইনের এস্টোপেল নীতির উপর এটা প্রতিষ্ঠিত বলে এরুপ নামকরণ হয়েছে। এই নীতির মূল বক্তব্য হচ্ছেএই যে, হস্তান্তরকারী বলতে পারবে না যে, হস্তান্তরের সময় হস্তান্তরিত সম্পত্তিতে তার কোন স্বত্ব ছিল না যদিও পরবর্তীকালে সেই সম্পত্তিতে সে স্বত্ব লাভ করেছে। স্বত্বের এরুপ ক্রটির বিষয় উভয পক্ষের জানা থাকেলে এস্টোপেল নীতি প্রযোজ্য হবে না। কাজেই হস্তান্তরের কোন অধিকার নেই এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক হস্তান্তরের সম্পত্তিতে কোন স্বার্থ লাভ করলে তা হস্তান্তর গ্রহীতার স্বার্থে ব্যবহার করা যায়। আইনের নীতি হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নিকট কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করে সে একথা বলতে পারে না যে উক্ত সম্পত্তিতে হস্তান্তর গ্রহীতার কোন অধিকার নেই। এই নীতির সঙ্গে ১৮৭২ সনের সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারায় বর্ণিত এস্টোপল নীতির সাদৃশ্য রয়েছে।
মামলার সিন্ধান্ত:
ফিডিং দি গ্র্যান্ট বাই এস্টোপেল নীতি হইল, যদি কোন ব্রক্তি চুক্তি কার্যকর করার ক্ষমতা না থাকা স্বত্বেও কোন চুক্তি কওে এবং পরবর্তীতে যদি উক্ত চুক্তি কার্যকর করার ক্সমতা অজৃন কওে তবে সে চুক্তি কার্যকর করিতে বাধ্য থাকিবে। -গুরু নারায়ণ বনাম সেওলাল সিং ২৩ ঈডঘ ৫২১,৫২৩.
উপাদান:
এই নীতিটি প্রয়োগের জন্য নি¤œলিখিত উপাদানগুলো থাকা প্রয়োজন:
ক) হস্তান্তরকারী ভুলক্রমে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ধারণা দেয় যে, সে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হস্তান্তর করার অধিকার প্রাপ্ত।
খ) প্রতিদানের বিনিময়ে এই হস্তান্তর সম্পন্ন হযেছে। অর্থাৎ হস্তান্তর গ্রহীতা এই সম্পত্তির মূল্য হস্তান্তরকারীকে প্রদান করেছে।
গ) প্রকৃত অবস্থা অর্থাৎ হস্তান্তরকারীর স্বত্বেও ক্রটির কথা হস্তান্তর গ্রহীতার অজানা ছিল।
ঘ) হস্তান্তরের সময় ঐ সম্পত্তিতে হস্তান্তরকারীর স্বত্ব না থাকলেও পরবর্তীকালে তার স্বত্ব অর্জিত হয়েছে।
ঙ) স্বত্ব অর্জনের সময় বিক্রয় চুক্তিটি বলবৎ ছিল।
চ) হস্তান্তর গ্রহীতা ঐ সম্পত্তি পাবার জন্য দাবী করবে।
উপরোক্তভাবে এস্টোপেল নীতির উপাদানসমূহ আলোচনা করা যায়।
সীমাবদ্ধতা:
নি্নক্ত ক্ষেত্রে হস্তান্তর গ্রহীতা এই নীতিটি প্রয়োগ করতে পারবে না:
১) হস্তান্তরের সময় হস্তান্তকারীর স্বত্ব সম্পর্কে প্রকৃত অবস্থা হস্তান্তর গ্রহীতার জানা থাকলে এই নীতিটি প্রযোজ্য হবে না।
২) হস্তান্তরের সময় স্বত্ব না থাকলেও পরবর্তীকালে হস্তান্তরকারী তাতে স্বত্ব হতে হবে। পরবর্তীকালে ঐ সম্পত্তিতে হস্তান্তরকারীর কোন স্বার্থ অর্জিত না হলে এই নীতি প্রয়োগ করা যাবে না।
৩) হস্তান্তরকারীর সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে স্বত্ব অর্জিত হবার সময় হস্তান্তরের চুক্তিটি বলবৎ না থাকলে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না। আদালত কর্তৃক বা আপোষমূলে চুক্তিটি পরিসমাপ্তি ঘটলে এ নীতি অপ্রয়োগযোগ্য হয়। চুক্তিটি নাকচ হবার পর হস্তান্তরকারীর স্বত্ব অর্জিত হলেও হস্তান্তরগ্রহীতা আর সেই সম্পত্তি দাবী করতে পারবে না।
৪) হস্তান্তরটি যদি আইনদ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে থাকে কিংবা সরকারী নীতির বা জনস্বার্থের পরিপন্থি হয়ে থাকে তবে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না।
৫) হস্তান্তরটি প্রতিদানের বিনিময়ে হতে হবে। তাই দানের ক্ষেত্রে বা বিনামুল্যে সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই ধারাটি প্রযোজ্য হবে না।
৬) আদালত কর্তৃক বিক্রির ক্ষেত্রে এই ধারাটি প্রযোজ্য হবে না।
৭) এই ধারায় বর্ণিত প্রতিকার গ্রহীতার জন্য ঐচ্ছিক। সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির পরিবর্তে সে ক্ষতিপূরণ দাবী করতে পারে। সেক্ষেত্রে এই ধারাটি প্রযোজ্য হবে না।
 আদালত কর্তৃক হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতির প্রযোজ্যতা:
 আদালত কর্তৃক বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৩ ধারায় বর্ণিত ঋববফরহম ঃযব মৎধহঃ নু ঊংঃড়ঢ়ঢ়বষ নীতিটি প্রযোজ্য হইবে না।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪৩ ধারা ডিাক্র জারি কেইসে বাধ্যতামুলক বিক্রযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নহে। আদালত কর্তৃক ডিক্রিজারি মূলে কোন বিক্রি উক্ত ৪৩ ধারায় আওতায় আসে না।(প্রসন্ন কুমার বনাম শ্রীকান্ত ৪০ ঈধষ.১৪৩)
একটি মামলার সিদ্ধান্ত হয যে, কোন সম্পত্তি নিলাম খরিদ্দারের বিরুদ্ধে পুর্ববতী হস্তান্তরগ্রহনকারী কোন প্রতিকার পাবে না।(অলক মনি বনাম বানি মাধবওখজ,৪ ঈধষ.৬৭৭)
পরিশেেেষ উপরোক্ত আলোচনা হইতে বলা যায় যে, আদালত কর্তৃক হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতি প্রযোজ্য হইবে না।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ৫৩(ক) ধারা একটি পরোক্ষ ইকুইটি প্রত্যক্ষ ইকুইটি নয়:
৫৩(ক) ধারায় যে অংশিক সম্পাদন নীতির প্রবর্তন করা হয়েছে তা একটা আতœরক্ষামূলক ব্যবস্থা মাত্র।এই ধারা বলে বাদী হয়ে মামলা করা যায় না। কিন্তু উচ্ছেদের মামলায় বিবাদী হিসেবে দখল রক্ষা করা যায়।
ইংল্যান্ডের একটা ভূমি বিক্রীর চুক্তি সম্পূর্ণ হবার সাথে ক্রেতা ঐ সম্পত্তির উপর ইকুইটিগত স্বার্থ(ঊয়ঁরঃধনষব জরমযঃ)অর্জন করে এবং সুনির্দিষ্টভাবে চুক্তি পালনের জন্য অপর পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। কিন্তু ৫৩(ক) ধারাটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি থাকা এবং গ্রহীতা সম্পত্তির দখলে থাকা সত্বেও সম্পত্তিতে তার স্বত্ব অর্জিত হয় না। তবে এই ধারা বলে সে তার দখর বহাল রাখতে পারবে। বিক্রেতা যদি দখলে থাকে ,তবে শুধু বিক্রয় চুক্তির কারণে তাকে দখল চ্যুত করা যাবে না। ইংল্যান্ডের প্রত্যক্ষ ইকুইটির মত চুক্তিটি সুনির্দিষ্টভাবে পালন করার জন্য গ্রহীতা অত্র ধারায় মামলা করতে পারবে না। যদিও ইকুইটির নীতি মূলে তার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে কিন্তু ইকুইটির প্রত্যক্ষ তৎপরতা এখানে অনুপস্থিত। তাই নিজ অধিকার বলে গ্রহীতা মামলা করতে পারে না।
বিক্রেতার অধিকার:
ন্যয়পর অধিকার (ঊয়ঁরঃধনষব জরমযঃ)
আইনগত অধিকার (খবমধষ জরমযঃ)
বায়নানামা করলে ক্রেতার নিকট ইকুটেবল রাইট চলে যায়।
পরোক্ষ ইকুইটি প্রত্যক্ষ ইকুইটি নয়
এ ধারা ঢাল স্বরুপ তরবারী স্বরুপ নয়
এটা আক্রমনমূলক নয় বরং আতœরক্ষামূলক বা প্রতিরক্ষামূলক।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩ ক ধারায় যে আংশিক সম্পাদনের নীতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে তাকে প্রত্যক্ষ ইকুইটি হিসাবে গণ্য করা যায় না,কারণ তা পরোক্ষ ইকুইটির স্বরুপ মাত্র। এ নীতিটি একটি আত্নরক্ষমূলক ব্যবস্থার প্রবর্তণ করেছে। এ প্রসঙ্গে ঠববৎধ জধমযধাধ জধড় াং এড়ঢ়ধষ জধড় মামলার সিন্ধান্তটি উল্লেখযোগ্য।এই মামলার সিন্ধান্তে বলা হয়েছে যে,এই ধারা মতে বাদী হয়ে কোন মামলা দায়েরের সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্ছেদের মামলায় দখল রক্ষায় জন্যে বিবাদী হিসেবে মামলার অংশগ্রহন করা যায়।
ইংল্যান্ডের ইকুইটি আইনের বিধান মোতাবেক কোন ভূমি বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হওয়া মাত্রই ক্রেতা উক্ত ভূমিতে ইকুইটিগত স্বার্থ অর্জন করে থাকে। এমনটি উক্ত চুক্তিটি সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্যে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। অন্যদিকে,আমাদের দেশে ৫৩ ক ধারাটি প্রযোগের বেলায় সম্পত্তির বিক্রয চুক্তি এবং উক্ত সম্পত্তিতে গ্রহীতা কোন স্বত্ব লাভ করে না। তবে এ ক্ষেত্রে গ্রহীতা তার দখল বহাল রাখতে পারে।
কিন্তু উক্ত সম্পত্তির বিক্রেতা দখলে থাকলে শুধুমাত্র বিক্রি চুক্তির কারণে বিক্রেতাকে দখলচ্যুত করা যাবে না। এক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের প্রত্যক্ষ ইকুইটির বিধান মোতাবেক চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পদনের জন্য ৫৩ ক ধারা মতে মামলা দায়েরের সুযোগ গ্রহীতার নেই। কারণ এখানে গ্রহীতার ইকুইটিগত অধিকার আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে না। তবে গ্রহীতা যদি চুক্তিটির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন হবে এ প্রত্যাশায় সম্পত্তির মূল্য সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিশোধ পূর্বক সম্পত্তির দখল গ্রহন করে থাকে তাহলে কেবলমাত্র এরুপ ক্ষেত্রে ৫৩ ক ধারা মতে গ্রহীতা অনুরুপ অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে পারবে। এ প্রসঙ্গে এ হোসেন সর্দার বনাম বাংলাদেশ সরকার মামলায় হাইকোর্ট বলেন যে, আইনসম্মত চুক্তিমূলে সম্পত্তি দখল গ্রহন করেছেন এরুপ কোন সম্পত্তির দখল গ্রহীতাকে তার দখল বেআইনি না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ করা যাবে না।[১ বিবি ৪০৫]
ভবিষ্যতে চুক্তিটির সুনির্দিষ্ট সম্পাদন হবে এই প্রত্যাশায় যদি হস্তান্তর গ্রহীতা মূল্য সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিশোধ কওে এবং দখল নেয়,তবে এই ধারা বলে সে দখল বহাল রাখতে পারবে। মূল্য পরিশোধের জন্য নির্ধারিত তারিখে যদি হস্তান্তরকারী মূল্র গ্রহণ কওে এবং হস্তান্তর গ্রহতিা যদি পূর্বেও মত দখল অব্রাহত রাখে তবে এই ধারা বলে সে দখর সমুন্নত রাখার অধিকারহিয়। এ হোসেন সরদার বনাম বাংলাদেশ সরকার{১বিসিআর ১৯৮,৪০৬]  মামলায় আদালত এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, চুক্তির আংশিক সম্পাদনের পর বিক্রেতা বা তার উত্তরাধিকারীদেরকে উক্ত সম্পত্তি নিয়ে কারবার করতে দেয়া যায না, যদি ক্রেতা চুক্তিতে তার কর্তব্য পালন করে এবং চুক্তিমূলে দখল নেয়।
এমএ ইস্পাহানী লি: বনাম ডেপুটি কাস্টোডিয়ান অব এনিমি প্রপার্টি[২০ ডিএল আর (ঢাকা) ৪৯৩] মামলায় আদালত সিন্ধান্ত দেন যে,আইন সঙ্গত চুক্তিমূলে দখলে আছে এমন কোন দখলকারীকে উচ্ছেদ করা যাবে না,যতক্ষন না তার দখল বেআইনি হয়। অবশ্য যদি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় কিংবা চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটে তবে গ্রহীতা সম্পত্তির দখলে থাকলেও এই ধারার সুযোগ সে গ্রহ করতে পারবে না।চুক্তির পরিসমাপ্তির পর এবং এ চুক্তির কথা জেনেও যদি উক্ত সম্পত্তি খরিদ কওে তবে ৫৩(ক) ধারার অনুবিধির শর্ত সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
এসকল কারণে বলা যায় যে,৫৩(ক) ধারাটি  যদিও ইকুইটি নীতি হতে সংগ্রহীত হয়েছে তবুও এটা প্রত্যক্ষ ইকুইটি নয়,পরোক্ষ ইকুইটি মাত্র।
যেহেত’ এই নীতিটি একটা আতœরক্ষামূলক ব্যবস্থা মাত্র;সেহেতু বলা যায় যে,এটা ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তরবারী হিসেবে নয়।

প্রশ্ন-৫
ক) কভিনেন্ট কি? বিধিনিষেধ আরোপিত না সূচক কভিনেন্ট বলতে কি বুঝায়? ভূমির সাথে দৌড়ায় বা ধাপমান এমন কভিনেন্ট গুলো কি কি?
খ) অনারাস দান কি? কিভাবে অনারস দান গ্রহন ও বর্জন করা যায়?
কাভিন্যান্ট শব্দের অর্থ হইল শর্ত বা চুক্তি। ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১১ ধারা ও ৪০ ধারায় কাভিন্যান্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হইয়াছে।
কাভিন্যান্ট (ঈড়াবহধহঃং):
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের বিধান মোতাবেক চুক্তিভূক্ত পক্ষগনের মধ্যে কোন বিনিময় গ্রহনের মাধ্যমে যদি এমন মতৈক্য সৃষ্টি হয় যা আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য তাহলে তাকেই ক্যাভিন্যান্টস বলে। কিন্তু অনুরুপ মতৈক্য বে-আইনি বা নৈতিকতা বিরোধী হতে পারবে না। তাবে অনুরুপ মতৈক্য পক্ষদ্বয়ের প্রস্তাব প্রদান এবং গ্রহনের মাধ্যমে গড়ে উঠতে হবে।
কাভিন্যান্ট এর প্রকারভেদ:
কভিনেন্ট সাধারনত দুই প্রকার-
১) হ্যাঁ-সূচক  কাভিন্যান্ট; এবং
২) না-সূচক কাবিন্যান্ট
না-সূচক কাভিন্যান্ট:
হস্তান্তরকৃত স্থাবর সম্পত্তি ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপিত শর্তকে না-সূচক কভেন্যান্ট বলে। এই ধরনের শর্ত সম্পত্তির মালিকের সম্পত্তি ব্যবহারে বা ভোগের অধিকার সীমিত করতে পারে। না সূচক কাভিন্যান্ট আবার দুইভাগে বিভক্ত; যেমন:
ক) ভূমির সঙ্গে ধাবমান নহে এমন কাভিন্যান্ট;এবং
খ)ভূমির সঙ্গে ধাবমান কাভিন্যান্টস;

ক) ভূমির সঙ্গে ধাবমান নয় এমন: বিধি নিষেধ আরোপিত না সূচক ক্যাভিন্যান্ট বা ভূমির সঙ্গে ধাপমান হয় না এরুপ কভিনেন্ট দুই প্রকার হতে পারে।
১) ন্যায়পরতা অনুযায়ী
২) আইনের বিধান অনুযায়ী।
আইন অনুসারে নৈতিক শর্ত ব্যবহারের উপর এটা অর্পিত হয়। একে বিধি নিষেধ আরোপিত না সূচক শর্ত বলে। এরুপ শর্ত সম্পত্তির ব্যবহার বা ভোগের অধিকার সীমিত তাই এগুলি নেতিবাচকভাবে সম্পত্তির সাথে ধাবমান হয়। এই নেতিবাচক ধাবমান কভিনেন্ট গুলো সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৪০ ধারায় বিবৃত হয়েছে। এই কভিনেন্ট গুলি সকল ক্ষেত্রে ভূমির সাথে ধাবমান হয় না এবং সকল ক্ষেত্রে পরবর্তী ক্রেতার উপর বাধ্যকর হয় না। বাধাসূচক এই শর্তগুলি সকলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায় না। অন্যান্য শর্তের ন্যায় বাধাসূচক শর্তগুলি তত গুরুত্বপূণ নয় কাজেই ইহা ন্যায়পর বলে বিবেচিত হয়েছে যে ,এগুলিকে শুধুমাত্র জ্ঞাত ক্রেতা বা বিনামূল্যে হস্তান্তর গ্রহীতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা উচিৎ। এই শর্ত বা কভিনেন্ট গুলি সম্পত্তির উন্নয়ন ও সম্পত্তির সুবিধাজনক ভোগের জন্য প্রয়োজনীয় বলে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে বিধায় এগুলিকে রক্ষায় ৪০ ধারার উদ্দেশ্য। বাধাসূচক কভিনেন্ট ভূমির ব্যবহারের উপর বাধা আরোপকারী কভিনেন্ট ৪০ ধারার ১ম অনুচ্ছেদে আলোচিত শর্ত বা চুক্তি কভিনেন্ট বাধাসূচক এবং ইহা তৃতীয় ব্যক্তির নিজের স্থাবর সম্পত্তি উপভোগ করার জন্য অন্যের স্থাবর সম্পত্তিতে যাতে তার কোন স্বার্থ নেই বা যার উপর তার কোন ব্যবহার শর্ত নেই তৃতীয় ব্যক্তি কর্তৃক নির্দিষ্টভাবে ভোগের উপর বাধা আরোপ করা হয়। স্থাবর সম্পত্তির উপর এরুপ বাধা আরোপের অধিকার শুধু মাত্র জ্ঞাত ক্রেতা এবং বিনামূল্যে হস্তান্তর গ্রহীতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায়। ৪০ ধারার শেষ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, উক্ত অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞাত মূল্যের হস্তান্তর গ্রহীতার বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করা যাবে না।
উদাহরণ:
ক ২৯,৩০ নম্বর দাগের মালিক সে ২৯ দাগ নম্বরের জমি এই শর্তে খ এর নিকট বিক্রি করল এই ভূমির ২৯ দাগ নম্বরের কিছু জমি খোলা রাখবে এবং কোন দালান কোঠা নির্মান করতে পারবে না। খ ২৯ দাগ নম্বরের জমি গ এবং ৩০ দাগ নম্বরের জমি ঙ এর নিকট বিক্রি করল খ বা গ উক্ত ভূমিতে দালান নির্মানের উদ্যোগ নিলে ক বা ঙ তা প্রতিরোধ করতে পারবে কিনা তা এখন বিবেচ্য বিষয়।
সমাধান:
২৯ দাগের কিছু অংশ খোলা রাখার জন্য ক,খ এর উপর যে শর্ত আরোপ করেছিল তা সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে ১১ ও ৪০ ধারা অনুসারে সিদ্ধ ছিল কাজেই ক, খ কে উক্ত নির্মান কার্য হতে বিরত রাখতে পারে। এই শর্তের কথা জেনেও যদি গ ২৯ দাগের জমি কেনে তবে ক,গ কেও নির্মান কার্য হতে বিরত রাখতে পারে। এরপর ক ৩০ নম্বর দাগের জমি ঙ এর নিকট বিক্রয় করলে ঙ ও এ অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। কিন্তু এরুপ শর্তের কথা না জেনে এবং মূল্যের বিনিময়ে গ ২৯ দাগের জমি কিনে থাকলে ক বা ঙ কেই গ কে নির্মান কার্য হতে বিরত রাখতে পারবে না। কারণ ৪০ ধারা অনুসারে এ ধরনের শর্ত সকল ক্ষেত্রে ভূমির সঙ্গে দৌড়ায় না। ইহা আইনগত শর্ত নহে ন্যায়পর শর্ত কাজেই এই ধরনের শর্ত জ্ঞাতসারে বা বিনা মূল্যে গ্রহীতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায়। অন অবগতিতে ও মূল্যের বিনিময়ে ক্রেতার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায় না।
ধাপমান কভিন্যান্ট বা ভূমির সাথে দৌড়ায় এমন কভিনেন্ট:
ভূমির সঙ্গে ধাবমান ক্যাভিন্যান্ট বা শর্তসমূহ তাদের গুরুত্বগতকারণে যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরোপ করা যায়। এই অধিকার সমূহ রাইট ইন রেম নামে পরিচিত।
সকল চুক্তির ন্যায় সম্পত্তি হস্তান্তর চুক্তিতেও কতিপয় শর্ত থাকে ব্যক্ত বা স্পষ্ট আর কতিপয় শর্ত থাকে অব্যক্ত বা মৌন। আইনে স্বীকৃত মৌন শর্তগুলি পক্ষগনের উপর অবশ্যই কার্যকর হবে এবং এগুলি সম্পত্তির সাথে ধাবমান হবে।
উদাহরণ-
ক) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে ৫৫(২) ধারা অনুযায়ী এটা ধরে নেওয়া হয় যে, বিক্রয়ের সময় বিক্রেতার ঐ সম্পত্তি বিক্রয়ের অধিকার ছিল।
খ) রেহেন এর ক্ষেত্রে ৬৫ ধারা অনুসারে ধরে নেওয়া হয় যে রেহেন দাতা রেহেন সম্পত্তির মালিক।
গ) তেমনি ইজারার ক্ষেত্রেও ইজারা দাতা ও ইজারাগ্রহীতার উপর কতিপয় দায় দায়িত্ব থাকে যেগুলি চুক্তিতে উল্লেখ না থাকলেও উভয় পক্ষই তা অনুসরণ করতে বাধ্য এগুলি সব সম্পত্তির সাথে ধাবমান।[ধারা-১০৮(গ)]
জমির স্বত্ব বা লাভ প্রাপ্তির অধিকার গ্রহতিার উপর বর্তায়,আর সেই স্বত্ব নির্বিঘœ করার দায়িত্ব দাতা পক্ষের উপর বর্তায়। বিক্রয়, রেহেন,ইজারা করা হলে এর সুবিধা গ্রহনের অধিকার ভূমির হস্তান্তর গ্রহীতার কাচে ধাবিত হয়। তখন বরা হয় যে,শর্ত বা চুক্তি ভূমির সাথে দৌড়ায়।
ভুমির সাথে ধাবমান শর্তগুলি আবার দুই ভাগে বিভক্ত
ক) আইনগত শর্ত
খ) নৈতিক শর্ত
ক) আইনগত শর্ত:
যেসব ভূমির শর্ত বা ঞরঃষব বা লাভ প্রাপ্তির অধিকার হস্তান্তর গ্রহীতার উপর বর্তায়। এইশর্ত বা লাভ নির্বিঘœ করার দায়িত্ব হস্তান্তরকারীর উপর বর্তায়। বিক্রয়,রেহেন বা ইজারা যখন করা হয় তখন এর সুযোগ গ্রহনের অধিকার ভূমির হস্তান্তর গ্রহীতার নিকট ধাবিত হয়,তখন বলা হয় যে,শর্ত বা চুক্তি ভূমির সঙ্গে দৌড়ায়।
খ) নৈতিক শর্ত:
ব্যবহারের অধিকারকে অর্জিত শর্ত বা চুক্তিকে বিধি নিষেধ আরোপিত না সূচক শর্ত বলা হয়।
টাল্ক বনাম মকহে মামলায় ইংল্যান্ডে এইনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্রেতা চুক্তি করেছিল যে, কৃত জমিতে সে কোন বাড়ী নির্মান করবে না, কিছুদিন পর সে ঐ জমিতে বাড়ী নির্মান করতে চাইলে আদালতে তাকে বাধা দেয় একে এক প্রকারের স্টোপেল বলা যেতে পারে। এরুপ শর্ত বা চুক্তি সকল ক্ষেত্রে সম্পত্তির সাথে ধাবমান হয় না বা দৌড়ায় না।


খ) অনারাস দান:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৭ ধারা মোতাবেক, যদি একই সময়ে একই দলিলে একই ব্যক্তির অনুকূলে বিভিন্ন সম্পত্তি দানসূত্রে হস্তান্তর করা হয় এবং সেগুলোর মধ্যে কোন একটি দায়বদ্ধ থাকে,তাহলে দানগ্রহীতা উক্তদানটি সম্পূর্ণ গ্রহণ না করলে অনুরুপ দানের কিছুই সে পাবে না। আর একেই অনারাস দান বা দায়যুক্ত দান বলে।
এই ধারাটির মূলকথা হলো, দানমূলে একই হস্তান্তরের কিছু গ্রহণ আর কিছু বর্জন করা চলবে না। দানটি সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে হবে। নতুবা সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে।
গ্রহীতা দানকৃত যে সম্পত্তি লাভজনক তা গ্রহন করবে আর যে সম্পত্তি ক্ষতিকর তা বর্জণ করবে,এটা আইনত মেনে নেওয়া যায় না। যেমন-রহিম তার সম্পত্তিটি করিমের অনুকূলে দান করে এবং এ সম্পত্তিটি বন্ধক রেখে রহিম জমিরের কাছ থেকে দশহাজার (১০০০০) টাকা এক বছরপূর্বে ঋণ নিয়েছিল। এক্ষেত্রে রহিমের ঋণ নেওয়া দশ হাজার টাকার দায়ও করিমকে গ্রহণ করতে হবে।
কিন্তু একই ব্যক্তির বরাবরে ভিন্ন ভিন্ন দলিলে ভিন্ন ভিন্ন সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়, তাহলে দান গ্রহীতা নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী ঐগুলির মধ্যে যে কোনটি গ্রহন কওে অন্যগুলি বজৃন করতে পারে।
যদি চুক্তিতে আবদ্ধ হবার অযোগ্য কোন ব্যক্তি দায়যুক্ত দ্রব্যের দান গ্রহন করে, তাহলে সে উক্ত গ্রহনের ফলে দায়বদ্ধ দ্রব্যের দায়-দায়িত্ব দ্বারা বাধ্য থাকবে না। তবে চুক্তি করার যোগ্যতা অর্জনের পর উক্ত ব্যক্তি যদি অনুরুপ দায়মুক্ত দানের দায় দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত হয়ে দানটি গ্রহন করে থাকেন তাহলে দায়বদ্ধ দ্রব্যের দায়-দায়িত্ব বহনে তিনি বাধ্য থাকবেন।















প্রশ্ন-৬ মার্শালিং এবং কন্ট্রিবউশন এর সংজ্ঞা দাও ও ব্যাখ্যা কর। মার্শালিং এবং কন্ট্রিবউশন এর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে কোনটি বলবৎ থাকে? আলোচনা কর।
মার্শালিং:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে মার্শালিং নীতি বা বিন্যাসের নীতি বলতে পরবর্তী কোন ক্রেতা বা রেহেন গ্রহীতা কর্তৃক প্রাপ্ত অধিকারকে বুঝায়। এই নীতিটি একমাত্র বিক্রয় বা রেহেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৬ ধারায় বিক্রযের ক্ষেত্রে এবং ৮১ ধারায় রেহেনের ক্ষেত্রে বিন্যাসের নীতি বর্ণনা করা হয়েছে।
৫৬ ধারায় বলা হয়েছে যে,যদি দুই বা ততোধিক সম্পত্তির মালিক এগুলি কোন এক ব্যক্তির নিকট রেহেন দেয় এবং পরে এ সম্পত্তি হতে এক বা একাধিক সম্পত্তি অন্য কারো নিকট বিক্রি করে,তবে বিপরীত চুক্তির অবর্তমানে ক্রেতা যে সম্পত্তি তার নিকট বিক্রি করা হয়নি, তা হতে যতদুর সম্ভব রেহেনের টাকা আদায় করার জন্য রেহেন গ্রহীতাকে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু শর্ত থাকে যে,তা দ্বারা কোন রেহেন গ্রহীতা বা তার মাধ্যমে দাবিদার অন্য কোন লোকের অধিকার অথবা মূল্যের বিনিময়ে উক্ত সম্পত্তির কোন একটিতে কোন ব্যক্তির অর্জিত স্বার্থ ক্ষুন্ন করা যাবে না।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৮১ ধারায় মার্শালিং এর নীতির ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে যে,দুই বা ততোধিক সংখ্যক সম্পত্তির মালিক যদি এগুলি একজনের নিকট রেহেন দেন এবং পরে সেগুলির মধ্য হতে কোন সম্পত্তি অপর একজনের নিকট রেহেন দেয়, তবে বিপরীত চুক্তির অবর্তমানে দ্বিতীয় রেহেন গ্রহীতা তার নিকট যে সম্পত্তি রেহেন দেয়া হয়নি,তা হতে প্রথম রেহেন গ্রহীতার পাওনা যতদূর সম্ভব আদায়  করে নেয়ার দাবী করতে পারে। কিন্তু এরুপ দাবী প্রথম রেহেন গ্রহীতা বা উক্ত সম্পত্তিগুলির কোন একটিতে মূল্যের বিনিময়ে স্বার্থপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না।
উদাহরণ: ক তার দুটি সম্পত্তি চও ছ খ এর নিকট রেহেন দিল। তার পর আবার টাকার প্রযোজনে তার ছ সম্পত্তিটি গ এর নিকট রেহেন দিল।এমতাবস্থায় ক যদি খ ও গ এর পাওনা পরিশোধ না করে তবে তারা কোর্টের মাধ্যমে ফোরক্লোজ করে সম্পত্তিগুলি বিক্রি করতে পারে।
ধরাযাক,খ তার পাওনা আদায়ের জন্য মামলা করলো এবং ডিক্রি পেল, খ এর নিকট জামানত রয়েছে চ ও ছ সম্পত্তি। এই দু’টি সম্পত্তির মধ্যে একটি বিক্রি তার টাকা উদ্ধার করার জন্য আদালতের নিকট আবেদন করলো। কিন্তু গ এর নিকট রেহেনের একমাত্র জামানত ছ সম্পত্তি।
এমতাবস্থায় যদি ক কে ছ সম্পত্তিটি বিক্রি করে তার টাকা উদ্ধার করতে অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে গ এর নিকট কোন জামানত থাকে না, অথচ ক এর নিকট চ সম্পত্তিটি তখনো থেকে যায়। এরুপ করা হলে দ্বিতীয় রেহেন গ্রহীতা গ এর স্বার্থের ক্ষতি হয়। এসকল অবস্থা দুর করার উদ্দেশ্যে মার্শালিং নীতির প্রবর্তন করা হয়েছে। এই নীতির বলে গ প্রথমে চ সম্পত্তিটি বিক্রি করার ব্যাপারে প্রথম রেহেন গ্রহীতা খ কে বাধ্য করতে পারে। ঐ সম্পত্তি বিক্রি করে খ এর পাওনা আদায় হয়ে গেলে ছ সম্পত্তিটি গ এর নিকট থেকে যাবে। আর পাওনা পরিশোধ হলে খ তখন ছ সম্পত্তিটি বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারবে। এটা বিক্রি করে খ এর পাওনা পরিশোধের পর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তা গ এর পাওনা পরিশোধে ব্যবহার করা হবে। একে বলে মার্শালিং বা জামানত বিন্যাস।
কন্ট্রিবিউশন:
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৮২ ধারায় বলা হয়েছে যে,
যে ক্ষেত্রে রেহেন সম্পত্তি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মালিকানাধীন থাকে এবং ঐ সম্পত্তিতে শরীকগনের পৃথক পৃথক স্পষ্ট স্বত্ব থাকে, সেক্ষেত্রে তারা আনুপাতিক হারে রেহেন দেনা পরিশোধের জন্য দায়ী হয় এবং বিপরীত কোন চুক্তি না থাকলে এবং কি হারে তারা নিজ নিজ অংশ আদায় করবে সে সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে,পরবর্তী সকল দায় পরিশোধের পর রেহেনর তারিখে প্রত্যকটি অংশের যে মুল্য হবে তার ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে শরীকগনের অংশ নির্ধারিত হবে।
আরো বলা হয়েছে যে,
যখন দুই সম্পত্তির মালিক একই ব্যক্তি, একটি সম্পত্তি একজনের কাছে রেহেন দেয় এবং পরে দুইটি সম্পত্তি অন্য একজনের কাছে রেহেন দেয় এবং প্রথম দেনা প্রথম সম্পত্তি হতে পরিশোধ করা হয় তখন বিপরীত কোন চুক্তি না থাকলে উভয় সম্পত্তি হারাহারিভাবে দ্বিতীয় দেনা পরিশোধ করবার জন্য দায়ী হবে, তবে প্রথম সম্পত্তি মূল্য নির্ণয়ে তার উপর হতে যে টাকা প্রথম দেনা শোধ করতে ব্যয় হয়েছে তা বাদ দিতে হবে।
৮১ ধারা অনুসারে যে সম্পত্তিতে পরবর্তী রেহেন গ্রহীতার দাবী থাকবে তার প্রতি এই ধারার কোন বিধান প্রযোজ্য হবে না।
উদাহরণ:ক ও খ এর দু’টি সম্পত্তি প্রত্যেকটির জন্য সমপরিমান ঋণের জন্য চ এর নিকট রেহেন দেয়। পরে আবার ছও জ এর নিকট দেয়। এ পরিস্থিতিতে খ এর দেনা পরিশোধ না করে ক এর সমূদয় সম্পত্তি চ গ্রহন করে অর্থ প্রদান করলে ছ ও জ এর অসুবিধা জনক হবে। চ এর এরুপ নির্বাচন আইনের দৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য নয়। এরুপ ক্ষেত্রে ক ও খ এর দুটি সম্পত্তি হতে চ কে তার দায় গ্রহন করতে হবে।
মার্শালিং ও কন্ট্রিবিউশনের মধ্যে বিরোধ:
উপরোক্ত মতবাদের মধ্যে বিরোধ বাধলে কি পরিনতি হবে- সে সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে কন্ট্রিবিউশন নীতি সম্পর্কে অলোচনা করা প্রয়োজন। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৮২ ধারায় কন্ট্রিবিউশন এর নীতি আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ক্ষেত্রে কোন এজমালী সম্পত্তি রেহেন দেয়া হয় এবং উহাতে শরীকগণ পৃথক পৃথক স্বত্ব থাকে, তখন তারা আনুপাতিক হারে রেহেন এর জন্য দায়ী হয় এবং সেক্ষেত্রে বিপরীত কোন চুক্তি না থাকলে এবং কিহারে তারা নিজ নিজ দায় পরিশোধ করবে সে সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে, পূর্ববর্তী সকল দায় পরিশোধের পর রেহেনের তারিখে প্রত্যেকটি অংশের যে মূল্য হবে, তার ভিত্তিতেই ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে শরিকগনের অংশ নির্ধারিত হবে।
যে ক্ষেত্রে দুই সম্পত্তির মালিক একটি সম্পত্তি একজনের নিকট রেহেন দেয় এবং পরে দুইটি সম্পত্তি অপর একজনের নিকট রেহেন দেয় এবং প্রথম দেনা প্রথম সম্পত্তি হতে পরিশোধ করা হয়, তখন বিপরীত কোন চুক্তি না থাকলে প্রথম সম্পত্তি হতে প্রথম দেনা পরিশোধের পর উভয় সম্পত্তি হতেই আনুপাতিক হারে দ্বিতীয় দেনা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু অত্র আইনের ৮১ ধারা অনুসারে যে সম্পত্তিতে পরবর্তী রেহেন দাতার দাবী থাকবে তার প্রতি এই ধারার কোন বিধান প্রযোজ্য হবে না।
মার্শালিং ও কন্ট্রিবিউশনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে মার্শালিং নীতি বলবৎ থাকবে, কেনানা ৮২ ধারায় বলা হয়েছে যে, কন্ট্রিবিউশনের অধিকার মার্শালিং নীতির শর্তাধীন।
ডযবৎব গধৎংযধষষরহম ধহফ ঈড়হঃৎরনঁঃরড়হ সরমযঃ পড়হভষরপঃ রিঃয বধপয ড়ঃযবৎ, গধৎংযধষষধরহম রং ঃড় ঢ়ৎবাধরষ.অর্থাৎ কোন ক্ষেত্রে মার্শালিং নীতি এবং কন্ট্রিবিউশন নীতির মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে ,মার্শালিং নীতি প্রধান্য লাভ করবে।
উপসংহার:
মার্শালিং মতবাদের সংজ্ঞা, বিশ্লেষন, উপাদান এবং কন্ট্রিবিউশন নীতির সাথে সংঘাত তথা ইহার পরিনতি আলোচনা করে উপসংহারে আমারা বলতে পারি যে, মার্শেলিং নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে পরবর্তী ক্রেতা ও পরবর্তী রেহেন গ্রহীতার অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং কন্ট্রিবিউশন নীতির সাথে ইহারা বিরোধের ক্ষেত্রে ইহার অর্থাৎ মার্শালিং মতবাদের প্রধান্য প্রকাশ পেয়েছে।

প্রশ্ন-৭ রিডেমশন বা রেহেন মুক্ত করার অধিকারের প্রকৃতি কি? কে রেহেন মুক্তকরণ করতে পারেন? কখন রেহেন মুক্ত করার অধিকার প্রয়োগ করা যায়? বাংলাদেশী রেহেন মুক্তকরণ আইনের সাথে ইংলিশ রেহেনমুক্ত আইনের পার্থক্য নির্দেশ কর।
রেহেন মুক্ত করার অধিকারের প্রকৃতি কি:
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের রেহেন সম্পর্কীয় বিধানাবলীর মধ্যে রেহেন মুক্তকরণ সম্পর্কীয় বিধানাবরী অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ। রেহেন মুক্ত করার অধিকার আছে আছে বলেই রেহেন দাতা তার রেহেন সম্পত্তি মুক্ত করতে পারেন।যতদিন রেহেন থাকবে,ততদিন সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি উদ্ধারের অধিকার থাকবে।এই মূল তত্ত্বটি ” ঙহবং ধ সড়ৎঃমধমব, ধষধিুং ধ সড়ৎঃমধমব ”মতবাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
রেহেনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ঋণ এবং এ ঋণ পরিশোধের জন্য জামানত হিসেবে ঋণগ্রহীতা তার কোন স্থাবর সম্পত্তি ঋণদাতাকে প্রদান করে। তাই ঋণগ্রহীতা বা রেহেন দাতা তার ঋণ পরিশোধ করলেই রেহেন সম্পত্তি ফেরত পায়। সম্পত্তি ফিরে পাবার এ অধিকারকে রেহের মুক্তির অধিকার বলে।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬০ ধারায় বর্ণিত আছে যে, রেহেনের টাকা পরিশোধযোগ্য হবার পর যে কোন সময় রেহেন মুক্তির অধিকার প্রয়োগ করা যায়। কাজেই নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলেও এই অধিকার বিলুপ্ত হয় না।
যেহেতু রেহেন একটা ঋণের ব্যাপার, ঋণ পরিশোধ করতে না পারলেই তা অপনা আপনি বিক্রিতে পরিণত হয় না। সুদসহ পরিশোধ করে রেহেন দাতার সম্পত্তি উদ্ধারের অধিকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পরও অক্ষুন্ন থাকবে। তাই বলা হয়েছে ঙহবং ধ সড়ৎঃমধমব, ধষধিুং ধ সড়ৎঃমধমব অর্থাৎ একটা যা রেহেন, সর্বদায় তা রেহেন।
এই নীতি হতে বোঝা যায় যে, রেহেন ঋণের টাকা পরিশোধের জামানত বিধায় ইহাকে মালিকানার চুড়ান্ত হস্তান্তর বলা যায় না। এই নীতির উপর ভিত্তি করে রিডেম্পশন অধিকারকে নষ্ট করার অনুমতি ইকুইটি আদালত দেয় না।
এই প্রসঙ্গে নবিন চন্দ্র মোড়ল বনাম মোহন দাস মামলায়১৯ উখজ ৩৩৮[ঘধনরহ ঈযধহফৎধ গড়ৎড়ষ াং খধষরঃ  গড়যধহ উধং ১৯ উখজ ৩৩৮] হাইকোর্ট বলেন যে,রেহেনের টাকা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করা স্বত্বেও রেহেন গ্রহীতা যদি রেহেনী সম্পত্তি ফেরত দিতে অস্বীকার করে, তবে সেক্ষেত্রে জরমযঃ ড়ভ ৎবফবসঢ়ঃরড়হ এর মামলার কারণ উদ্ভব হয়ে থাকে।
গবৃশেষে বরা যায় যে, রেহেন সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার অধিকার একটি রেহেনের সার কথা বিধায় রেহেন উদ্ধার করার অধিকারের উপর বাধার সৃষ্টি যে কোন শর্ত বাতিল বলে গণ্র হবে। তবে পক্সগনের কার্যদ্বারা বা াাদালতের ডিক্রি দ্বারা নষ্ট হলে রেহেন মুক্ত করার অধিকার আর বলবৎ থাকবে না।
কে রেহেন মুক্তকরণ করতে পারেন:
রেহেনদাতাই রেহেনী সম্পত্তি মুক্ত করার প্রধান দাবিদার। ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের  ৫৯ (ক) ধারা অনুসাওে রেহেন দাতার নিকট হতে সকল হস্তান্তর গ্রহীতাগণও রেহেনী সম্পত্তি রেহেনমুক্ত করতে পারেন।
 এত্র আইনের ৯১ ধারার বিধান মতে,রেহেন দাতা ব্যতীতও চার শ্রেণীর ব্যক্তি প্রয়োজন বোধে সম্পত্তি রেহেনমুক্ত করতে পারেন। যেমন:
ক) যে ব্যক্তির রেহেন সম্পত্তির উপর স্বার্থ আছে ।
খ) রেহেনমুক্তির অধিকারে উপর যে ব্যক্তির রয়েছে।
গ) যে ব্যক্তি রেহেনের অর্থ বা তার অংশ বিশেষ পরিশোধের নিশ্চয়তা দান করেছির বা যে গ্রান্টর ছিল।
ঘ) রেহেন সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য রেহেন দাতার যে পাওনাদার আদালতের কাছ থেকে ডিক্রি পেয়েছেন।

কখন রেহেন মুক্ত করার অধিকার প্রয়োগ করা যায়:
রেহেনের টাকা পরিশোধের জন্য নির্ধারিত তারিখে বা তারপরে কোন রেহেন মুক্ত করার অধিকারের উদ্ভব হয় তথা-অধিকার প্রয়োগ করা যায়।কিন্তু রেহেনের টাকা পরিশোধের নির্ধারিত তারিখের পূর্বে এই অধিকার প্রয়োগ করা যায় না।
গম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬০ ধারার বিধান মোতাবেক,রেহেনের টাকা পরিধোদেও নির্ধারিত তারিখে বা তার পওে এবং রেহেন গ্রহীতা কর্তৃক রেহেন দাতার রেহেন উদ্ধারের অধিকার আদালতের মাধ্যমে ফোরক্লজ না করা পর্যন্ত যে কোন সময় রেহেন দাতা তার রেহেন মুক্ত করার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

তামাদি াাইন দ্বারা বারিত হলে বা অন্য কোন কারণে এ অধিকার বিনষ্ট হলে রেহেনমুক্তি াধিকার প্রয়োগ করা যায না। কিন্তু খাই খালাসী রেহেনের ক্ষেত্রে এই নীতিটি প্রযোজ্য হবে না।

সাধারণত রেহেন দাতাকে পূর্ণ রেহেনী সম্পত্তি মুক্ত করতে হবে, আংশিক রেহেন মুক্ত করতে পারবে না। কিন্তু এই আইনের ৬০ ধারার ৫ম অনুচ্ছেদে এর ব্যতিক্রমী বিধান বর্ণিত হয়েছে। যে ক্ষেত্রে কোন রেহেন গ্রহীতা উত্তরাধিকার সূত্রে বা ক্রয়মূল্যে অথবা অন্য কোনভাবে সম্পত্তি লাভ করে থাকে সেক্ষেত্রে আংশিক রেহেনমূক্ত বা আংশিক রিডেমশন এর অধিকার প্রয়োগ করা যায়।
আংশিক রেহেনমুক্তিকরণ আইন সিদ্ধ কিনা:
সাধারণত রেহেন দাতা আংশিকভাবে রেহেন মুক্ত করতে পারে না। কেননা একটি রেহেনের জন্য রেহেন সম্পত্তিটি একটি একক বা অবিভাজ্য জামানত। যে ক্ষেত্রে একাধিক রেহেন দাতা আছে,সে ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য। একাধিক রেহেনদাতার ক্ষেত্রে কোন একজন রেহেন দাতা যদি রেহেন সম্পত্তিটির অংশ বিশেষ মুক্ত করতে চায়, তবে তাকে সমগ্র রেহেন সম্পত্তিটি মুক্ত করতে হবে, আংশিক মুক্ত করা যাবে না। তবে একটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম আছে যে ক্ষেত্রে আংশিক মুক্ত আইন সিদ্ধ।
ব্যতিক্রম:
৬০ ধারার ৫ম অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, যদি রেহেন গ্রহীতা রেহেন সম্পত্তিতে ওয়ারিশসূত্রে বা ক্রয়মূলে বা অন্য কোন প্রকারে কোন অংশ লাভ করে, তবে আংশিক রিডেমশন করা যায়।
উদাহরণ:
ক তার সম্পত্তি খ এর নিকট রেহেন রাখির। খ,গকে একমাত্র ওয়ারিশ রেখে মারা গেল। এর পর রেহেন দাতা ক,গ সহ ১০ জন ওয়ারিশ রেখে মারা গেল। এই ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের নিজ নিজ অংশের টাকা পরিশোধ করে নিজ নিজ অংশ রেহেন মুক্ত করতে চায়। এমতাবস্থায় তারা তা করতে পারবে। কারণ গ রেহেন সম্পত্তির অংশ বিশেষ ওয়ারিশ হিসেবে পাওয়ায় রেহেনের অবিভাজ্যতা নষ্ট হয়েছে।[ ৩১ এলাহাবাদ ,৩৩৫]

বাংলাদেশী রেহেন মুক্তকরণ আইনের সাথে ইংলিশ রেহেনমুক্ত আইনের পার্থক্য:
রেহেনমুক্ত করণের অধিকারের বিষয়ে বর্তমানে আমাদের দেশ এবং ইংলিশ আইনের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু পূর্বে নির্দিষ্ট সময়ে রেহেনের ঋণের টাকা পরিশোধ না করলে রেহেনী সম্পত্তি মুক্ত করার অধিকার রেহেন দাতার ছিল না। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের ন্যঅয়পরতা আদালত রেহেন দাতাকে এহেন অসুবিধা বা বন্ধুকী সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রতিকার প্রদানের জন্যে এগিয়ে আসে এবং বিধান করে যে, রেহেনের ঋণের টাকা পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিবাহিত হয়ে গেলেও রেহেন দাতা তার রেহেনী সম্পত্তি রেহেনমুক্ত করতে পারবে।
কাজেই এ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ইংল্যান্ডে প্রথমত রেহেনদাতা আইনগত অধিকার বলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণের টাকা পরিশোধ পূর্বক রেহেনী সম্পত্তি মুক্ত করতে পারে এবং দ্বিতীয়ত ঋণের টাকা পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হয়ে যাবার পরেও ইকুইটিগত অধিকার বলে রেহেনদাতা ঋণের টাকা পরিশোধ করে রেহেনী সম্পত্তি মুক্ত করে দিতে পারেন।
তবে আমাদের দেশে ইংল্যান্ডের উক্ত রেহেনমুক্ত করণের দুটো অধিকারকে বিধিবদ্ধ আকারে একটি আইনগত অধিকারে স্বীকৃতিদানপূর্বক ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬০ ধারায় রিডেমশনের অধিকার নামে একটি বিধানের প্রবর্তন করেছে । এই বিধান প্রবর্তনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল রেহেনদাতাকে ইকুইটির অধিকার প্রদান করা।



ক)লসিপনেডন্টে নীতটিি ব্যাখ্যা কর।এ নীতরি উদ্দশ্যে ক? মামলা চলাকালে সম্পত্তি হস্তন্তর করা যায় কিনা? নোটশিরে নীতি দ্বারা এ নীতরি প্রয়োগ কি ক্ষতগ্রিস্থ হব? আলোচনা কর।
খ)মামলা চালতি অবস্থায় কৃত কোনো হস্তান্তর কি বতিল?
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনরে ৫২ ধারায় লসিপনেডসে নীতি র্বণনা করা হয়ছে।ে এ নীতরি মূল বক্তব্য হলো, আদালতে মামলা বচিারাধীন থাকলে উক্ত মামলার কোনো পক্ষই মামলার ফলাফলকে প্রভাবতি করার জন্য বরিোধীয় সম্পত্তটিি হস্তান্তর করতে পারবে না।
র্অথাৎ এ নীতি অনুযায়ী মামলার বরিোধীয় সম্পত্তি কোনো পক্ষ হস্তান্তর করে থাকলে তার দ্বারা মামলার ফলাফল কোনোভাবইে প্রভাবতি হবে না।
সংক্ষপে, মামলা আদালতে বচিারাধীন থাকাকালীন পক্ষগণ নতুন কােনো অবস্থা সৃষ্টি করতে পারবে না।
ব্রটিশি কমন ল’ থকেে এ নীতটিরি উৎপত্ত।ি
এ ধারায় মূলত মামলা চলাকালে মামলার বষিয়বস্তু স্থতিাবস্থায় রাখার নর্দিশে প্রদান করা হয়ছে।ে
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনরে ৫২ ধারায় বলা হয়ছেে যে বাংলাদশেরে ভতেরে বা বাইরে এখতয়িারাধীন আদালতে স্থাবর সম্পত্তি সর্ম্পকে মামলা অথবা র্কাযক্রম চলার সময় মামলাটি ষড়য্ন্ত্রমূলক না হলে এবং তাতে সম্পত্তরি কোন স্বত্ব সর্ম্পকে প্রত্যক্ষ ও সুস্পষ্টভাবে প্রশ্ন উত্থাপতি হয়ে থাকলে আদালতরে অনুমতি এবং কোন র্শত আরোপ করলে সে মোতাবকে ব্যততি আর কোনো পক্ষ এরূপভাবে উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবনো যার ফলে আদালতরে সম্ভাব্য ডক্রিি বা আদশেরে ফলে অন্যপক্ষ যে অধকিার পতেে পারে তা কোনোভাবে ক্ষতগ্রিস্ত বা ব্যহত হতে পার।ে
মামলা চলাকালীন বষিয় বলতে কি বোঝায় সে সর্ম্পকে এ ধারার ব্যাখ্যায় র্বণতি আছ।ে বলা হযছে,ে এ ধারার উদ্দশ্যেে আরজি দাখলি বা র্কাযক্রম রুজু হবার তারখি হত,ে আদালতরে সৃষ্টি চুরান্ত ডক্রিি জারী হয়ে সর্ম্পূণ দায় পরশিোধ না হওয়া র্পযন্ত মামলা বা র্কাযক্রম চলছে বলে গণ্য করতে হব।ে
এ নীতটিি প্রয়ােগ করতে হলে মামলাটি যথাযথ এখতয়িার সম্পন্ন আদালতে দায়রে করতে হব।ে
কোনো ষড়যন্তমূলক মামলার ক্ষত্রেে এ নীতটিি প্রযোজ্য হবে না ।
আর মামলার বষিয়বস্তু হস্তান্তর হলওে তাতে চলমান মামলার ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়বে না।
লসিপনেডসে নীতরি উপাদান:
১। স্থাবর সম্পত্তি সর্ম্পকে কোনো মামলা বা র্কাযক্রম আদালতে বচিারাধীন থাকতে হব।ে
২। যে আদালতে মামলাটি বচিারাধীন থাকবে সে আদালতরে উক্ত মামলাটি বচিার করার এখতয়িার থাকতে হব।ে
৩। অনুরূপ মামলা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়রে থাকতে হব।ে
৪। আদালতরে অনুমতক্রিমে বা আদালত প্রদত্ত র্শত মোতাবকে সম্পত্তি হস্তান্তর স্বত্ব বা মালকিানা।
৫। আদালতরে বচিারাধীন থাকার সময় মামলার বষিয়বস্তু র্অথাৎ স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবে না এবং করলওে তার দ্বারা মামলার কোনো পক্ষরে অধকিার প্রভাবতি হবে না।
কাজইে, আইনরে বধিান মনেে সবারই উচৎি মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার বষিয় বস্তুর কোনো রকম হস্তান্তর না করা। এতে অহতেুক জটলিতা বাড়।ে কন্তিু মামলার রায়রে কোনো পরর্বিতন হয় না।
বায়নানামা বহাল থাকাবস্থায় সম্পত্তি অন্য কারো কাছে কোন প্রকাররে হস্তান্তর করা যাবে কি না?
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনরে ধারা- ৫৩(খ) অনুযায়ী,বায়না নামা দললি বহাল থাকাবস্থায় কোন স্থাবর সম্পত্তি বায়না গ্রহীতা ব্যততি অন্য কারো কাছে কোন  প্রকার বক্রিয়, দান, হবো ইত্যাদি  র্অথাৎ কোন প্রকাররে হস্তান্তর করা যাবে না। যদি কোন প্রকাররে হস্থান্তর করা হয় তাহলে যে দললিরে মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে সটেি বাতলি হয়ে যাব।ে
যদি আইনানুগ ভাবে বায়না নামাটি বাতলি করা হয় তাহলে ভন্নি যে কারো কাছে হস্তান্তর করতে
পারব।ে
কোন ব্যক্তি সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পার?ে
চুক্তি সম্পাদনরে যোগ্য এবং হস্তান্তর যোগ্য সম্পত্তরি স্বত্বাধকিারি অথবা যে সম্পত্তি তার নজিরে না কন্তিু তা হস্তান্তর করার ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রত্যক ব্যক্তি র্বতমান আইনরে অধনিে সম্পত্তরি হস্তান্তর করতে পারব।ে।।