Wednesday 24 February 2016

Land Law

’ক’ বিভাগ
প্রশ্ন-১ ১৭৯৩ সনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পেছনে কি কি অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল? তুমি কি মনে কর যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল জমিদারদের জন্য মহাসনদ? রাষ্ট্র, জমিদার ও তালুকদারের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল অলোচনা কর।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত [ঞযব চবৎসধহবহঃ ঝবঃঃষবসবহঃ- ১৭৯৩]:
 ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যয়ভার বহন করার জন্য তাঁরা রাজত্বের সূচনা থেকেই বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহের দিকে মনোনিবেশ করে। ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ ও সর্বাধিক রাজস্ব আদায়ের জন্য বোর্ডের অধীনে একটি ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করেন । এই কমিটি জেলায় জেলায় ঘুরে জমি নিলামে ডেকে সর্বোচ্চ মূল্যদাতাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি ইজারা দিতেন । একে পাঁচশালা বন্দোবস্ত বলা হত । অনেক সময় প্রকৃত জমিদারদের পরিবর্তে দালালরা অধিক দর দিয়ে জমিদারি নিলামে ডেকে নিতেন ও পরে দেয় রাজস্ব পরিশোধ করতেন না । ফলে সরকারি কোষাগারে তেমন আয় হত না । অগত্যা হেস্টিংস পাঁচশালা বন্দোবস্তের পরিবর্তে এক্শালা বন্দোবস্ত চালু করেন । এতেও সরকারের আশানুরূপ রাজস্ব আদায় হত না । কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক বছরের ইজারার শেষে জমিদাররা সরকারি রাজস্ব শোধ না করে জমিজমা ছেড়ে পালাতেন । এই অবস্থার অবসানকল্পে কাউন্সিলের জনৈক সদস্য স্যার ফিলিপ ফ্রান্সিস হেস্টিংসকে সর্বপ্রথম জমিতে জমিদারদের স্থায়ী ভোগদখলের স্বীকৃতি দিয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রস্তাব দেন । হেস্টিংস এই ব্যবস্থার পক্ষপাতী থাকলেও তাঁর আমলে এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয় নি । তাঁর পরবর্তী বড়লাট লর্ড কর্ণওয়ালিশ ভারতে এসে জমিদারদের জমির মালিকানা দিয়ে জমির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঠিক করেন ও এই প্রস্তাব ইংল্যান্ডে কোম্পানির পরিচালক সমিতি এবং প্রধানমন্ত্রী পিট-র অনুমোদন লাভ করে । কর্ণওয়ালিশ প্রথম দশ বছরের জন্য জমিদারদের জমির মালিকানা দিয়েছিলেন । তিনি এর নাম দেন দশশালা বন্দোবস্ত । এই ব্যবস্থাই পরবর্তীকালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রুপান্তরিত হয় । ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ২২ মার্চ লর্ড কর্ণওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন । বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও বেনারসে এই ব্যবস্থা চালু হয় । এই ব্যবস্থা অনুযায়ী জমিদার বাংশানুক্রমে জমির স্বত্ব ভোগ করবেন এবং তাঁকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব কোম্পানির কোষাগারে জমা দিতে হবে । নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তকালের মধ্যে খাজনা জমা দিতে না পারলে জমিদার জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন । বছরের নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে রাজস্ব পরিশোধ করতে হত বলে একে সূর্যাস্ত আইন ও বলা হয় ।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভূমি ও সমাজব্যবস্থা উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছিল । ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র দত্তের ভাষায় দেড়শো বছরের ব্রিটিশ শাসনের এটাই একমাত্র ব্যবস্থা যা ভারতীয় জনসাধারণের আর্থিক কল্যাণ সাধন করেছে । ঐতিহাসিক মার্শম্যানের ভাষায় কর্ণওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল একটি সাহসিকতাপূর্ণ বিজ্ঞ পদক্ষেপ । তিনি বলেছেন  ‘ওঃ ধিং ধ নড়ষফ, নৎধাব ধহফ রিংব সবধংঁৎব’ ।

১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ এই আইনটি প্রচলন করে। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক তার আয়তা¡ধীনে যে ভূমি গুলো নির্ধারিত খাজনার বিনিময়ে জমিদারদের উপর চিরস্থায়ীভাবে হস্তান্তর করা হয় একেই বলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তু।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য:
১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তনের পূর্বে গ্রামীন বাংলার অধিকাংশ এলাকা স্বয়ং সম্পূর্ণ ছিল। জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত ভূমি ছিল এবং বহু ভূমি অনাবাদী থাকা সত্বেও গ্রামবাসীদের খাওয়া পরার কোন সমস্যা ছিল না। নামমাত্র খাজনার বিনিময়ে ভূমির মালিক হওয়া যেত। দেশের সমুদয় ভূ- সম্পত্তি কতিপয় ভূ-স্বামী জমিদার বা তালুকদারদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়েছিল। তারা আবার অধিনস্থ রাযত বা প্রজাদের মধ্যে চাষাবাদের জন্য বন্দোবস্ত দিত। এ সকল জমিদার বা তালুকদার সরকারের রাজস্ব আদায়কারী এজেন্ড হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু এসকল ভু-সম্পত্তিতে জমিদার বা তালুকদারদের কোন মালিকানা স্বত্ব ছিল না। ফলে কারো নিকট বিক্রি বা অন্যভাবে হস্তান্তর করতে পারত না। রেহেন বা বন্ধক রেখে ঋণ করতে হলে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হতো। এছাড়া শুধু খাজনা আদান প্রদান ব্যতীত প্রজাদের সাথে জমিদারদের কোনরুপ সম্পর্ক ছিল না। এছাড়া অসন্তষ্টু প্রজাগন প্রায়ই জমিদারদের বিরুদ্ধে সরকারের নিকট অভিযোগ করত এবং তাদের অপসারণ চাইত। জনগনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার প্রায়ই অপসারন করতেন এবং নতুন জমিদার বন্দোবস্ত দিতেন। এর ফলে ভূমির উর্বরতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়। এই অবস্থার উন্নতিকল্পে ব্রিটিশ সরকার চিন্তা ভাবনা করেন এবং ১৭৯৩ সালে গর্ভণর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিশ চিরস্থায়ী ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। ইংল্যান্ডের অবিজাত শ্রেণীর সম্প্রদায়ের অনুরুপ এদেশে একটি শ্রেণী সৃষ্টি করাই ছিল তার মূখ্য উদ্দেশ্য যারা একদিকে সরকারের অনুগত থাকবে এবং নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ করবে; অপরদিকে ভূমির মালিক হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে আগ্রাহান্বিত হবে। দেখা যায় চিরস্থায়াী বন্দোবস্তের উদ্দেশ্য গুলি নি¤œরুপ।

প্রথমত,নিদিষ্ট হারে নিয়মিতভাবে সরকারী রাজস্বের নিশ্চয়তা বিধান করা। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সামরিক ও বেসামরিক ব্যয় বহন এবং কোম্পানির শেযার হোল্ডাদের লভ্যাংশ প্রদানের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। নিযমিত নির্দিষ্ট পরিমান ভূমি রাজস্ব আদায় করে এ প্রয়োজন মেটানোই ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অন্যতম উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয়ত,জমিদারগন ধনী ও বিত্তশালী হয়ে উঠলে বিলাসবহুল জীবনে আকৃষ্ট হবে এবং বৈদেশিক বিলাস সামগ্রী কিনতে শুরু করবে। ফলে সরকারকে পরোক্ষ ট্যাক্স প্রদান করতে তারা বাধ্য থাকবে।অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ লাভ করা
তৃতীয়ত, সর্বোপরি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পূর্বে রাজস্ব ব্যবস্থার অনিশ্চয়তা ও তারতম্য বিরাজ করতো। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এরুপ অনিশ্চয়তা দুর করাই হচ্ছে এই বন্দোবস্তের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল জমিদারদের জন্য মহাসনদ:
১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পূর্বে জমিদারদের আইনগত অবস্থা ও মর্যাদা ছিল ভূমি রাজস্ব আদায়কারীর ন্যায়। তারা রাষ্ট্রের পক্ষে রায়ত বা অধস্তন রায়তদের নিকট হতে ভূমি রাজস্ব আদায় করতেন। যদিও বংশানুক্রমে তারা এ দায়িত্ব পালন করতেন তবুও ভূমিতে তাদের কোন মালিকানা স্বত্ব ছিল না। ইচ্ছামত বিক্রি দান বা অন্যভাবে হস্তান্তর করতে পারতেন না। অবশ্য প্রথম শ্রেণীর জমিদারদের নিজস্ব ভূ-সম্পদ ছিল।
চিরস্তায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে বাংলার জমিদারদের সামাজিক অবস্থান ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত ও সুদৃঢ় হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কিত আইনটি ১৭৯৩ সালের ১ নং রেগুলেশন হিসেবে জমিদারদের স্বার্থ রক্ষার্থে একটি বিধিবদ্ধ আইনে রুপ লাভ করে। এই আইনের দ্বারা জমিদারগন নি¤œলিখিত অধিকারসমূহ লাভ করেন:
১) নির্দিষ্ট ও নিয়মিত রাজস্ব প্রদানের বিনিময়ে জমিদারগন তাদের দখলস্থিতর্ভূ-সম্পত্তিতেমালিকানা স্বত্ব লাভ করেন। এ অধিকার বংশানুক্রমে ভোগ করার অধিকারী হন।
২) প্রচলিত আইনের কোন বিধানের পরিপন্থি না হলে জমিদারগন এ সম্পত্তি বিক্রি বা দান বা রেহেন বা অন্য কোন পন্থায় হস্তান্তর করার অধিকারী হন।
৩) এই আইনের দ্বারা জমিদারগন ব্যক্তিগতভাবে নি¤œলিখিত অধিকারসমূহ ভোগ করার অধিকারী হন:
ক) জলকর অর্থাৎ মৎস্য শিকারের অধিকার; খ) বনকর অর্থাৎ বনজ সম্পদ আহরণের অধিকার;গ) খনিজ সম্পদ আহরণের অধিকার; ঘ) ফলকর অর্থাৎ ফলমূল সংগ্রহের অধিকার ঙ) ঘাসকর অর্থাৎ গোচারণের অধিকার ইত্যাদি।
বাংলাদেশের ভূমি আইনের ইতিহাসে এই দুটো আইন যথা:১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন এতই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ যে, এগুলোকে ইংল্যান্ডের ম্যাগনাকাটা বা মহাসনদের সঙ্গে তুলনা করা হয়।গ্রেট ব্রিটেনে দীর্ঘকাল রাজার সাথে জনগনের অধিকার নিয়ে বিরোধ চলে। অবশেষে ১২১৫ সালে রাজা জন অঙ্গীকার করতে বাধ্য হন যে, ম্যাগনাম কনসিলিয়াম এর সম্মতি ছাড়া রাজা উল্লেখিত ক্ষেত্রে কর আদায় করতে পারবেন না। যে দলিলে এগুলি লিপিবদ্ধ হয় তাকে ম্যাগনাকাটা বলে। এক জনগণের অধিকারের মহাসনদ বলা হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থায় জমিদারদের স্বার্থরক্ষার যে অপূর্ব ব্যবস্থা করা হয় তা এতই তাৎপর্যপূর্ন যে, এটিকে ম্যাগনাকার্টা বা মহাসনদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
রাষ্ট্রের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল:
১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পূর্বে ভূমি রাজস্ব নির্দিষ্ট ছিল না এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তা যথারীতি জমা পড়তো না। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থায় জমিদারদের উপর খাজনা নির্দিষ্ট করা হয় এবং এবং নিয়মিত তা প্রদানের ব্যবস্থা করা নিশ্চিত করা হয়। ফলে অল্প খরচে নির্দিষ্ট হারে জমিদারদের নিকট হতে সরকারী রাজস্ব আদায়ের নিশ্চয়তা অর্জিত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রেগুলেশননের ৬(৭) ধারায় সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করা হয় যে, ভবিষ্যতে কোন জমিদার খরা,বন্যা, মহামারী বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অজুহাতে রাজস্ব লাঘব করা বা মওকুফ করার দাবী করতে পারবে না। যদি কোন জমিদার কোন বিশেষ অজুহাত প্রদর্শন করে তার রাজস্ব যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারে, তবে সে ক্ষেত্রে সরকার উক্ত জমিদারের সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক জমিদারী নিলামে বিক্রি করে বকেয়া রাজস্ব সংগ্রহ করতে বাধ্য থাকবে।
এতে প্রতীয়মান হয় যে,সরকার রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং সেই উদ্দেশ্য যথেষ্ট পরিমানে সাধিত হয়। কিন্তু সরকারের ব্যয় প্রতি বছর বাড়তে থাকে অথচ ভূমি রাজস্ব নির্দিষ্ট করে দেয়ায় সরকারের আয় আর বৃদ্ধি পায় না। এতে তাৎক্ষনিক সরকারের সুবিধা হলেও জমিদারগন ভূসম্পত্তির মালিক হওয়ায় আর্থিক দিক দিয়ে যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় জমিদারগন খুব সন্তুষ্ট ছিলেন,ফলে তারা সরকারের তাবেদার ও অনুগত শ্রেণীতে পরিনত হন। পক্ষান্তরে কৃষক প্রজাদের সাথে সরকারের কোন প্রত্যক্ষ যোগসূত্র ছিল না, জমিদারেদের মাধ্যমে নীতির বাস্তবায়নে বা সরকারী কার্যক্রমে জমিদারগন নিরঙ্কুশ ও শর্তহীন সমর্থন দিতেন। এভাবে ব্রিটিশ সরকারের যথেষ্ট পরিমানে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জিত হয়।
জমিদারদের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল:
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তনের পূর্বে জমিদারগন রাষ্ট্রের পক্ষে শুধু রাজস্ব আদায় করতেন। তারা কোন ভূ-সম্পত্তি বিক্রি,দান বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করতে পারতেন না এমন কি রেহেন বা বন্ধক রেখে অর্থ কর্জ হতে হলে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হতো। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে তাদের এ সকল অসুবিধাসমূহ দূর হয়। তারা তাদের নিজ জমিদারী ভূক্ত ভূ-সম্পত্তির মালিক হন এবং বংশানুক্রমে সে অধিকার ভোগ করতে থাকেন। এ জন্য অবশ্য নির্দিষ্ট পরিমান রাজস্ব নিয়মিতভাবে পরিশোধ করতে হতো।
এই ব্যবস্থার অধীনে জমিদারগনকে তাদের স্ব স্ব জমিদারী ভূক্ত ভু-সম্পত্তি হতে জলকর( মৎস শিকারের অধিকার) ,বনকর(কাঠ এবং অন্যান্য বনজ সম্পদ সংগ্রহের অধিকার) ,ফলকর( ফল সংগ্রহের অধিকার) এবং ঘাসকর(গো চারনের অধিকার) প্রভৃতি বিষয়গুলির উপর আইন সঙ্গত ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার প্রদান করা হয।
একটি স্থায়ী সুবিধা ভোগী কিংবা অনুগত শ্রেনী সৃষ্টি করে নিয়মিতভাবে এবং সহজপন্থায় রাজস্ব আদায় করাই ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তনের মূল উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য অনেকাংশে সফল হয়েছিল। কিন্তু সূর্যাস্ত আইনের প্রয়োগ দ্বারা অনেক জমিদারকে উচ্ছেদ করা হতো। সময়মত রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হলে উচ্চহারে সুদ দিতে হতো এবং সুদসহ নির্ধারিত সমযের মধ্যে সূর্য়াস্তের পূর্বে রাজস্ব প্রদান করতে ব্যর্থ হলে জমিদারী নিলামে বিক্রি করা হতো। এতে জমিদারদের মধ্যে অসন্তোষ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। বন্যা , অনাবৃষ্টি, অজ¤œা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দর্যোগ এ দেশে বরাবরই ছিল এবং এখনো আছে। কিন্তু এতদসত্বেও জমিদারদের উপর প্রদত্ত রাজস্ব মওকুফ করার বিধান রহিত দাবি করলে ক্ষেত্র বিশেষে জমিদারদের অপসারণ করা হতো। কাজেই পর্যাপ্ত ধন সম্পদের মালিক হয়েও জমিদারগন চিন্তামূক্ত হতে পারেনি। পরিশেষে তারা তাদের ব্যবস্থা আরো সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে সরকারী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেন।
তালুকদারের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল:
তালুক শব্দের অর্থ নির্ভরশীল। মোঘল আমলে জমিদারগনের ন্যায় তালুকদারও ছিল সরকারের রাজস্ব আদায়কারী এজেন্ট য বংশানুক্রমে চলতো। জমিদারদের তুলনায় তাদের ভূ-কর্তৃত্ব ছিল আকারে ছোট,আর সামাজিক মর্যাদাও ছিল জমিদারদের চেয়ে কম। অন্যান্য সকল ব্যাপারে জমিদার ও তালুকদার একই শ্রেণীভুক্ত হিসেবে গণ্য হতো। দশ শালা বন্দোবস্তের সময় মোটামুটি দুই ধরণের তালুক ছিল যেমন-হুজুরু তালুক ও মফম্বল তালুক। যারা সরকারকে রাজস্ব দিত তারা হুজুরু তালুকদার। হুজুরী তালুকদারদের সরাসরি জমিদারদের শ্রেণীবূক্ত করা হয। কিন্তু মাফম্বল তালুক নিয়ে সরকার চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। অনেক আলাপ আলোচনার পর নি¤œবর্ণিত তালুকদারকে জমিদার অধীন হতে মুক্ত করে জমিদার হিসেবে গণ্য করা হয়।
১) যে সকল তালুকদার তাদের ভূ-সম্পত্তি সরকারী ভাবে বা বেসরকারীভাবে খরিদ করেছে কিংবা জমিদাদের নিকট হতে দান হিসেবে অর্জন করেছ্
ে২) যে সকল তালুক অনেক প্রাচীন।
৩) যে সকল তালুকদারের জমি কখনো সরকারের খাস দখলে ছিল না।
৪) যে সকল তালুক সরকারের বিশেষ অনুদানে সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের এই নীতির ফলে বড় বড়  জমিদারীগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কেননা এগুলি তালুককের সংখ্যা ছিল বেশী। এসকল জমিদারগন প্রতিবাদ জানান, কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেননি। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বড় বড় জমিদারীগুলি খন্ড বিখন্ড করা। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হবার পর সরকারের এই উদ্দেশ্য অনেকাংেশে সফল হয। বড় জমিদারী গুলি খন্ড খন্ড হয়ে অনেক জমিদারীতে পরিনত হয় এবং তালুকদারগুলি জমিদার শ্রেনীতে উন্নীত হয়।

কৃষকদের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তোর ফলাফল:
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর জমিদারগণ চিরস্থায়ীভাবে ভূমির মালিক হন এবং নির্ধারিত হারে সরকারকে খাজনা প্রদান করতে বাধ্য থাকেন। কিন্তু তাদের অধিনস্থ প্রজা বা কৃষককূলের জন্য পরিস্থিতি বিরুপ হয়। জমিদারগণ ইচ্ছামত খাজনা বৃদ্ধি করতে থাকেন এবং কঠোরভাবে তা আদায় করেন। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আইন প্রণয়ণ করার অধিকার সরকারের ছিল বটে, কিন্তু ১৮৫৯ সনের ১০ নং ভূমি রাজস্ব আইন প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদেরকে তাদের আবাদি ভূমি দখলের অধিকার প্রদান করা। এ আইন প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত কৃষকদের উপর জমিদারদের নিপীড়ন পুরামাত্রায় চলতে থাকে। কাজেই বলা যায় যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত জমিদারদের জন্য আশীবাদস্বরুপ হলেও কৃষকদের জন্য তা ছিল অভিশাপ স্বরুপ।




















প্রশ্ন-২  খাজনার সংজ্ঞা দাও। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনে কি কি কারণে একজন রায়ত অথবা অকৃষি প্রজার খাজনা বৃদ্ধি অথবা হ্রাস করা যায় তা বর্ণনা কর। খাজনা বৃদ্ধির কোন সীমা রেখা আছে? কিভাবে খাজনা আদায়  করা হয়?
খাজনা কি:
খাজনা হলো সরকার কর্তৃক আদায়যোগ্য অর্থ যা রায়ত বা অকৃষি প্রজা তার জমিজোত ভোগ দখল করার জন্য বার্ষিক একটি নির্দিষ্ট হারে সরকারকে দিতে বাধ্য থাকেন। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ এর ৮২ ধারায় জমির জন্য ’খাজনা’ শব্দটি বাতিল করে ’ভূমি রাজস্ব’ শব্দটি গ্রহন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কৃষি জমির জন্য খাজনা শব্দটি আইনের যেখানেই উল্লেখ থাকুক না কেন তা ’ভূমি রাজস্ব’ হিসেবে পড়তে হবে। তাহলে বলা যায় খাজনা শব্দটিকে আইনে বাতিল করা হয়েছে যা কৃষি জমির জন্য প্রযোজ্য হবে না। তবে তা অকৃষি জমির জন্য প্রযোজ্য হবে। কেননা, অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৪৯ এ খাজনা শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ১৯৭৬ সালে ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ জারি করার পর ভূমি রাজস্বের সাথে সাথে  ভূমি উন্নযন কর রায়ত বা অকৃষি প্রজাকে পরিশোধ করতে হবে। তবে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৫১ সি ধারায় বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে বসবাসকারী কোন পরিবারের ভূ-সম্পত্তির পরিমান ২৫ বিঘার কম হয় তাহলে তাকে ভূমি রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে না তবে শর্ত থাকে যে, ভূমি রাজস্ব পরিশোধ করতে না হলেও আর্থিক (তৃতীয়)অধ্যাদেশ ,১৯৫৮ ও আর্থিক অধ্যাদেশ ,১৯৭০ অনুযায়ী তিনি ভূমি উন্নযন কর, বেঙ্গল(রুরাল) প্রাইমারী এডুকেশন এ্যাক্ট,১৯৩০ অনুযায়ী শিক্ষা সেস এবং বেসিক ডেমোক্রাসি অর্ডার,১৯৫৯ অনুযায়ী স্থানীয় কর এবং অন্যান্য আইন অনুযায়ী পরিশোধ যোগ্য যে কোন কর ও সেস পরিশোধ করতে হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, পরিবারের ২৫ বিঘার বেশী জমি থাকবে তাকে ভূমি রাজস্ব এবং ভূমি উন্নয়ন কর উভয়ই পরিশোধ করতে হবে।
ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা:
কোনো জমি ভোগ দখলের সুবিধা গ্রহণের জন্য সরকারকে প্রতি শতাংশ জমির জন্য প্রতি বছর যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করতে হয় তাকেই ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা বলে । ভূমি উন্নয়ন কর দেয়ার পর দাতা দাখিলা পাওয়ার অধিকার লাভ করেন। দাখিলা দেয়া না হলে তা অধ্যাদেশের লংঘন হবে। এই দাখিলা জমির মালিকানা প্রমাণের গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২(২২) ধারায খাজনা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রজার দখলে রাখা কোন জমি ব্যবহার বা দখল বাবদ প্রজা কর্তৃক তার ভূ-স্বামীকে নগদ অর্থে বা দ্রব্য সামগ্রীর মাধ্যমে যা কিছু আইনত প্রদানযোগ্য অথবা হস্তান্তরযোগ্য তাই হচ্ছে খাজনা।
এই সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে খাজনার নি¤েœাক্ত উপাদানগুলি পরিলক্ষিত হয়:
ক) নগদ অর্থ বা দ্রব্য সামগ্রী;
খ) ঐ অর্থ বা দ্রব্য সামগ্রী প্রজা কর্তৃক ভূ-স্বামীকে দেয়া হয;
গ) প্রজা কর্তৃক ভূমি ব্যবহার বা দখল বাবদ এটা প্রদত্ত হয়;
ঘ) উহা অবশ্যই আইনসম্মত হবে।
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে খাজনা আদায়,খাজনা বাড়ানো ও কমানোর পদ্ধতি:
রাষ্ট্রীয় াধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ানুসাওে খাজনা াাদায়,খাজনা বাড়ানো ও কমানোর পদ্দতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো:
খাজনা আদায়ের পদ্ধতি:
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৬২,৬৩ ও ৬৪ ধারাতে খাজনা আদায় সম্পর্কিত বিধান সমুহ বর্ণিত হয়েছে।;যা নি¤েœ আলাচনা করা হলো:
৬২ ধারা মতে,সরকারের উপর ন্যাস্ত হয়েছে এমন সমস্ত বকেয়া খাজনা,কর ও সুদ সরকারকে পরিশোধ করতে হবে।অন্র কাহাকেও নহে।ধারা-৬২(১)
অন্য কোন পদ্ধতিতে আদায়ের জন্য বর্তমানের কোন অধিকার ক্ষুন্ন না করে অত্র আইনের ৬৩,৬৪,ও ৬৫ ধারা সমূহের বিধান সাপেক্ষে এরুপ সমস্ত রাজস্ব ,কর এবং সুদ ১৩১৩ সালের সরকারী দাবী আদায় আইনের বিধান অনুযায়ী রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক আদায়যোগ্য হবে। [ধারা ৬২(২)]
৬৩ ধারা মতে,যখন সরকার কোন খাজনা প্রাপকের স্বার্থ অধিগ্রহন করেন এবং যদি কোন বকেয়া খাজনা আদায়ের জন্য কোন মামলা বা কোন ডিক্রি জারির কার্যক্রম খাজনা প্রাপকের স্বার্থ অধিগ্রহনের তারিখে কোন দেওয়ানী আদালতে রুজু থাকে তবে এই মামলা বা মামলার কার্যক্রম আর অগ্রসর করা যাবে না। এরুপ ক্ষেত্রে উহা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে। এই রকম কোন ডিক্রি ১৯১৩ সালের সরকারী দাবী আদায় আইন মোতাবেক দাখিলকৃত কোন সার্টিফিকেটের মত কার্যকর কারা যাবে। ধারা-৬৩
৬৪ ধারা মতে:যে ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট খাতক বা সাব্যস্থ খাতক সরকারের অধিনস্থ প্রজা ও যে ক্ষেত্রে এরুপ বকেয়া খাজনা আদায়ের সার্টিফিকেট অথবা ডিক্রি উক্ত সার্টিফিকেট খাতক বা সাব্যস্ত দেনাদারকে গ্রেপ্তার ও দেওয়ানী কারাগারে আটক রেখে বা বকেয়ার সাথে সম্পর্ক যুক্ত নহে এরুপ স্থাবর বা অস্থাব সম্পত্তি বিক্রয়ের দ্বারা আদায় করে কার্যকর করা যাবে।
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৩৯ ধারায় বলা হয়েছে যে,একজন রায়ত বা অকৃষি প্রজা জমিজমার বকেয়া খাজনা আদায়ে সরকারী দাবী আদায় আইন ,১৯১৩ এর অধীন সার্টিফিকেট মামলার মাধ্যমে বিক্রয়পূর্বক আদায় করা যাবে।
১৪০ ধারা মতে, বকেয়া খাজনার উপর  বার্ষিক ৭% হারে সুদ হবে এবং যা সরকারী দাবী আদায় আইন ১৯১৩ এর অধীনে সার্টি ফিকেট মামলার মাধ্যমে আদায় হবে।
১৪১ ধারা মতে,বকেয়া খাজনা সরকারী পাওনা আদায আইন ১৯১৩ এর বিধিবিধান মোতাবেক আদায়যোগ্য হবে। অন্য কোন ভাবে নয়।
১৪২ ধারা মতে:খাজনা বকেয়ার তারিখ হতে ৩ বৎসরের মধ্যে সরকার কর্তৃক উহা আদায় না হলে তা তামাদিতে পরিনত হবে।
১০১ ধারা অনুযায়ী ২০ বছর অতিবাহিত না হলে পরিবর্তন করা যাবে না।
কি কি কারণে একজন রাযত অথবা অকৃষি প্রজার খাজনা হ্রাস বৃদ্ধি করা যায়:
খাজনা বৃদ্ধির কারণ ও সীমা:
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ,১৯৫০ এর ১০৫ ধারায় বলা হযেছে কোন কোন কারণে ভূমি রাজস্ব বাড়ানো যাবে। সেখানে বলা হয়েছে যে,
এ) কোন রায়ত বা অকৃষি প্রজার জমির খাজনা বৃদ্ধি করা যাবে তখন যখন একই এলাকায় অবস্থিত অন্য জমির খাজনার তুলনায় তিনি যে খজনা দেন তা একবারেই কম।
বি) যেখানে খাজনা বৃদ্ধির হার তার পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় শতকরা বার্ষিক ৫০ ভাগের বেশী হয় সেখানে রাজস্ব কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে,এরুপ বৃদ্ধি কষ্টের কারণ হতে পারে তাহলে তিনি এরুপ খাজনার বৃদ্ধি কয়েক বৎসর ধরে আংশিকভাবে বার্ষিক বৃদ্ধি মাধ্যেমে বাড়াতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, খাজনা বৃদ্ধি কোন অবস্থাতেই পূর্ববতী বৎসরের তুলনায় শতকরা বার্ষিক ৫০ ভাগের বেশী হবে না।
ধরা যাক একবিঘা ভাল জমির বার্ষিক খাজনা ১ টাকা ধার্য আছে। যে ছকে এই জমি অবস্থিত সেই ছকের ভাল জমির খাজনা, খাজনার হার নির্ধারণী তালিকানুযায়ী বিঘা প্রতি ৩ টাকা ধার্য় আছে। তদবস্থায় রাজস্ব অফিসার উক্ত বিঘার খাজনা ১ টাকা হতে বৃদ্ধি করে ৩ টাকা পর্যন্ত নিতে পারবেন। এবং ৩ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হলে প্রতি বৎসর ০.৫০ টাকা হারে বৃদ্ধি করে ৪ বৎসরের কিস্তিতে ৩ টাকায় নিতে হবে।
তবে শর্ত থাকে যে,খাজনা বৃদ্ধি কোন অবস্থাতেই পূর্ববর্তী বৎসরের তুলনায় শতকরা বার্ষিক ৫০ ভাগের বেশী হবে না।
খাজনার হার হ্রাসের কারণ:
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ এর ১০৬ ধারায় বলা হযেছে যে কোন কোন অবস্থায় খাজনার হার হ্রাস করা যাবে। সেখানে বলা হয়েছে যে,একজন রাযত কর্তৃক জোতের খাজনা নি¤œলিখিত এক বা একাধিক কারণের জন্য হ্রাস করা যেতে পারে।
এ) প্রজা কর্তৃক একই এলাকায় অবস্থিত এবং একই সুবিধা সম্বলিত জমির জন্য প্রদেয় খাজনা পার্শ্ববতী জমির তুলনায় যদি অধিক হয়।
বি) আকস্মিক বা ধীরগতিতে বালু পড়ে বা অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে জোত জমির গুনাগুন কমে যায়।
সি) সেচ ব্যবস্থা,নালা অথবা বাঁধ বা বিদ্যমান অন্য কোন ব্যবস্থা যদি ভেঙ্গে পড়ে যার জন্য জমির গুনাগুন ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে খাজনা হ্রাস করা যেতে পারে।


খাজনা বৃদ্ধির সীমা রেখা:
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১০৫ ধারার বিধান মোতাবেক, কোন নির্দিষ্ট বৎসরের খাজনার নতুন নির্ধারিত হার উহার পূর্ববর্তী বৎসরের চেযে ৫০% এর অধিক হবে না। প্রয়োজনবোধে রাজস্ব অফিসার প্রজার কষ্ট লাঘবের জন্য কয়েকটি কিস্তিতে এই বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে পারবেন।
ধরা যাক একবিঘা ভাল জমির বার্ষিক খাজনা ১ টাকা ধার্য আছে। যে ছকে এই জমি অবস্থিত সেই ছকের ভাল জমির খাজনা, খাজনার হার নির্ধারণী তালিকানুযায়ী বিঘা প্রতি ৩ টাকা ধার্য় আছে। তদবস্থায় রাজস্ব অফিসার উক্ত বিঘার খাজনা ১ টাকা হতে বৃদ্ধি করে ৩ টাকা পর্যন্ত নিতে পারবেন। এবং ৩ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হলে প্রতি বৎসর ০.৫০ টাকা হারে বৃদ্ধি করে ৪ বৎসরের কিস্তিতে ৩ টাকায় নিতে হবে।
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনার হতে বলা যায় যে, খাজনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সীমা রেখা আছে,যা প্রতি বৎসর ৫০% এর অধিক হবে না।
খাজনা বৃদ্ধির সীমা: পূর্ববর্তী বছরের দেয় খাজনা অপেক্ষা পঞ্চাশভাগের বেশি বৃদ্ধি করা যাবে না।

খাজনার হার নির্ধারণ:
খাজনার হার কিভাবে বৃদ্ধি করতে হবে তা বলা হয়েছে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজা স্বত্ব আইন,১৯৫০ এর ১০০ ধারায়। সেখানে বলা হয়েছে যে, কৃষি জমি খাজনা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ১০০ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী  রাজস্ব কর্মকর্তা নি¤œলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিবেন। যেমন-
এ) খাজনা নির্ধারণ করতে গিয়ে কৃষি জমির প্রকৃতি এবং উহার উৎপাদনশীলতা বিবেচনায় নিতে হবে।
বি) প্রতি একরে উৎপাদিত ফসলের মূল্য বিবেচনা করতে হবে;
সি) খাজনা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উৎপাদিত ফসলের মূল্য বিবেচনার ক্ষেত্রে পুর্ববর্তী বছরের গড় মূল্য বিবেচনা করতে হবে। তবে কোন বছরের উৎপাদিত ফসলের অস্বাভাবিক মুল্য বিবেচনায় নেয়া যাবে না।
ডি) সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরাসরি খরচে কৃষি উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। তবে খাজনার হার বৃদ্ধি উৎপাদিত ফসলের বিক্রিত মূল্যের  এক-দশমাংশের বেশী হবে না।
একই ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে অকৃষি জমির খাজনার হার বৃদ্ধি করতে হবে কিভাবে। সেখানে অকৃষি জমির খাজনা হার নির্ধারণের জন্য নি¤œলিখিত বিষযসমূহ বিবেচনায় নিতে হবে:
এ) একই এলাকায় অবস্থিত একই সুবিধা সম্বলিত অন্যান্য অকৃষি জমির জন্য যেরুপ স্বাভাবিক খাজনা দেয়া হয় খাজনার হার নির্ধারণে তা বিবেচনায় নিতে হবে।
বি) একই সুবিধা সম্বলিত একই এলাকায় অবস্থিত পাশ্ববর্তী জমির বিক্রয়মূল্য খাজনার হার নির্ধারণে বিবেচনায় নিতে হবে।
সি) প্রজাস্বত্বের জন্য বিশেষ কোন শর্ত বা ঘটনা যদি থাকে তাও বিবেচনায় নিতে হবে।
ডি) সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরকারি খরচে গৃহীত কোন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা বিবেচনায় নিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, অকৃষি জমির খাজনার হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতি একরে কোন অবস্থাতেই খাজনা বৃদ্ধির বার্ষিক হার আবাসিক জমির ক্ষেত্রে তা বাজার মূল্যের এক চতুর্থাশের বেশী হবে না এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বার্ষিক বৃদ্ধি বাজার মূল্যের অর্ধেকের বেশী হবে না।
খাজনা সংক্রান্ত অন্যান্য বিধানাবলী:
খাজনা পরিশোধের পদ্ধতি:
খাজনা কি পদ্ধতিতে কিভাবে পরিশোধ করতে হবে তা রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ,১৯৫০ এর ১৩৫ ধারায় বলা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে যে,
ক) চুক্তি বা প্রচলিত প্রথার বিধান সাপেক্ষে একজন প্রজাকে খাজনা বকেয়া হওয়ার তারিখের পূর্বে কমপক্ষে দুটি সমান কিস্তিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিশোধ করতে হবে।
খ) চুক্তির বিধানাবলী সাপেক্ষে একজন অকৃষি প্রজাকে বার্ষিক ১ টি মাত্র কিস্তিতে বকেয়া হওয়ার পূর্বে কৃষি বৎসরের শেষ দিনের মধ্যে খাজনা পরিশোধ করতে হবে।
খাজনা পরিশোধের সময় ও স্থান:
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ এর ১৩৬ ধারায় খাজনা পরিশোধের স্থান ও সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,
এ) প্রত্যেক রায়তকে অথবা অকৃষি প্রজাকে খাজনা বকেয়া হওয়ার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্বে খাজনা পরিশোধ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে,বছরের যে কোন সময় বকেয়া হওয়ার পূর্বে খাজনা পরিশোধ করা যাবে।
বি) খাজনা গ্রাম্য তহশীল অফিসে অথবা কালেক্টর কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন জায়গায় তা পরিশোধ করা যাবে।
সি) পোস্টাল মানি অর্ডারের মাধ্যমে নির্ধারিত পন্থায় খাজনা পরিশোধ করা যাবে।

যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায় সঙ্গত খাজনা নির্ধারণ:
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২৩ ধারায় খাস জমির ২৪ ধারায় রায়ত ও অধিনস্থ রায়ত এবং ২৫ ধারায় অকৃষি রায়তের যথাযথ ও ন্যায় সঙ্গত খাজনা নির্ধারণের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
খাস জমির খাজনা নির্ধারণ:
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৫ ধারায় খাজনা গ্রহীতাদের খাস দখলী জমির খাজনা নির্ধারণের বিধান প্রদত্ত হয়েছ্ েউক্ত ধারা মোতাবেক ,অত্র আইনের ৩(১) ধারা অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে রাজস্ব কর্মকর্তা এই আইনের ২৩-২৮ ধারায় বর্ণিত নীতিমালা অনুযায়ী নোটিফিকেশনে বর্ণিত ও নোটিফিকেশনের সাথে সম্পর্কিত এস্টট ,তালুক,মধ্যস্বত্ব,জোত প্রজাস্বত্বে অবস্থিত খাজনা গ্রহীতার খাস দখলীভুক্ত প্রতিখন্ড জমির খাজনা নির্ধারণ করবেন।
অর্থাৎ খাজনা নির্ধারণ করতে গিয়ে এই আইনের ২৩-২৮ ধারার খাজনা নির্ধারণের যে নীতিমালা দেওয়া আছে এখানে তাই অনুসরণ করা হবে। খাজনা গ্রহীতার খাসজমির খাজনা নির্ধারণ করবার আদেশ জারি করার পূর্বে রাজস্ব কর্মকর্তা ঐ খাজনাগ্রহীতাকে শুনানীর সুযোগ দিবেন। যখন খাজনা নির্ধারিত হবে তখন রাজস্ব কর্মকর্তা খাজনাগ্রহীতাকে ব্যক্তিগতভাবে নোটিশ প্রদান করবেন,না হয় যে গ্রামে খাস জমি অবস্থিত সেই গ্রামে সাধারণ নোটিশ প্রদান করবেন। রাজস্ব কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে খাজনা গ্রহীতা উর্ধ্বতন রাজস্ব কর্মকর্তার নিকট ১ মাসের মধ্যে আপীল করতে পারবেন। এবং সে ক্ষেত্রে ঐ উর্ধ্বতন রাজস্ব কর্মকর্তার সিন্ধান্তই চুড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
রায়ত ও অধীনস্থ রায়তের যুক্তি সঙ্গত খাজনা নির্ধারণ:
রায়ত ও অধীনস্থ রায়তের যুক্তি সঙ্গত খাজনা নির্ধারণ সম্পর্কে ২৪(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, রায়ত ও অধীনস্থ রায়ত কর্তৃক প্রদত্ত খাজনাকে রাজস্ব কর্মকর্তা যথাযথ বা ন্যায়সঙ্গত  বলে ধরে নিবেন।
২ নং উপধারায় বলা হয়েছে যে, যদি রায়ত কর্তৃক প্রদত্ত খাজনার পরিমান যথাযথ ও ন্যায় সঙ্গত প্রতীয়মান না হয় তাহলে রাজস্ব কর্মকর্তা খাজনার পরিমান কমাতে পারেন এবং একই গ্রামের বা পার্শ্ববতী গ্রামের একই বর্ণনার ও একই সুবিধা সম্বলিত দখলী রায়ত কর্তৃক অধিকৃত জমির খাজনার পরিমান বিবেচনা করে যথাযথ ও ন্যায় সঙ্গত খাজনা নির্ধারণ করবেন।
৩ উপধারায় বলা হয়েছে যে, যদি অধিনস্ত রায়ত কর্তৃক প্রদত্ত খাজনা যথাযথ ও ন্যায় সঙ্গত প্রতীয়মান না হয় তাহলে রাজস্ব কর্মকর্তা খাজনার পরিমান কমাতে পারেন, তবে এ কমানোর পরিমান শতকরা ৫০ ভাগের বেশী হবে না।
৪ উপধারায় বলা হয়েছে যে, একজন রায়ত বা অধীনস্ত রায়ত কর্তৃক দ্রব্যের মাধ্যমে প্রদত্ত খাজনা ঐ রাজস্ব কর্মকর্তা যথাযথ ও ন্যায় সঙ্গত আর্থিক খাজনায় রুপান্তরিত করতে পারেন। তবে এই খাজনার পরিমান ঐ জমিতে উৎপাদিত ফসলের দামের এক দশমাংশের বেশী হবে না।
অকৃষি প্রজার যথাযথ ও ন্যায় সঙ্গত খাজনা নির্ধারণ:
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয অধিগ্রহন ও প্রজা স্বত্ব আইনের ২৫ ধারানুযায়ী  স্বত্ব লিপি প্রণয়ন ও পরিমার্জনের সময় অকৃষি প্রজা কর্তৃক অধিকৃত সকল অকৃষি জমির জন্য রাজস্ব কর্মকর্তা অত্র আইনের , ২৩ ধারা বিধান অনুসারে কোন জোতদার ব্যতীত একজন অকৃষি প্রজার সকল প্রকার অকৃষি জমির খাজনা রাজস্ব কর্মকর্তা অবশ্যই ন্যায় ও যুক্তি সঙ্গতভাবে নির্ধারণ কররেন।
তবে শর্ত থাকে যে,যখন ঐ প্রজা কোন মালিক বা রায়তী স্বত্বের অধিকারী ব্যতীত কোন ব্যক্তির অধীনে কোন জমি অধিকারে রাখে তখন রাজস্ব কর্মকর্তা ঐ জমির জন্য ঐ প্রজা কর্তৃক প্রদত্ত প্রচলিত খাজনাকে যথাযথ ও ন্যায় সঙ্গত বলে ধরে নিবে যদি তা প্রদান যোগ্য  খাজনার চেয়ে শতকরা ৫০ ভাগ বেশী না হয়। বেশী হলে তা কমায়ে শতকরা ৫০ ভাগের সীমার মধ্যে খাজনা নির্ধারণ করবেন।
কৃষি জমি সম্পর্কিত ভূমি রাজস্ব মওকুফ:
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৫১ সি ধারায় বলা হযেছে যে, যে ক্ষেত্রে কোন পরিবারের বাংলাদেশ অধিকৃত মোট কৃষি ভূমির পরিমান ২৫ বিঘার বেশি না হয় সে ক্ষেত্রে উক্ত পরিবার ১৩৭৯ বাংলা সনের ১ লা বৈশাখ হতে উক্ত ভূমি সম্পর্কিত জমির রাজস্ব আদায় হতে অব্যাহতি পাবে।
তবে যে পরিবারের অধিকৃত ভূমির পরিমান ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে ২৫ বিঘা অতিক্রম করিয়া ছিল, সেক্ষেত্রে উক্ত পরিবার ভূমি মওকুফ দাবি করতে পারবে না।
আরও শর্ত থাকে যে, ভূমি রাজস্ব পরিশোধ করতে না হলেও আর্থিক (তৃতীয়) অধ্যাদেশ ,১৯৫৮ ও আর্থিক অধ্যাদেশ ,১৯৭০ অনুযায়ী তিনি ভূমি উন্নয়ন কর, বেঙ্গল(রুরাল) প্রাইমারী এডুকেশন এ্যাক্ট,১৯৩০ অনুযায়ী শিক্ষা সেস এবং বেসিক ডেমোক্রাসি অর্ডার,১৯৫৯ অনুযায়ী স্থানীয় কর এবং অন্যান্য আইন অনুযায়ী পরিশোধ যোগ্য যে কোন কর ও সেস পরিশোধ করতে হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, পরিবারের ২৫ বিঘার বেশী জমি থাকবে তাকে ভূমি রাজস্ব এবং ভূমি উন্নয়ন কর উভয়ই পরিশোধ করতে হবে।
ধর্মীয় বা সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত জমির খাজনা মওকুফ:
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৫১ এ ধারায় বলা হয়েছে যে,এই আইনে ভিন্নরুপ কিছু থাকা স্বত্বেও ,যে ক্ষেত্রে মালিক অকৃষি প্রজা এরুপ ভূমি অধিকারে রাখে যা গণপ্রার্থনা বা পূজা,কবর স্থান বা শ্মশানের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফরমে উক্ত জমির খাজনা কওকুপের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট দরখাস্ত করা যায়।
জেলা প্রশাসক উক্ত দরখাস্ত প্রাপ্তির তারিখ হতে ৩ মাসের মধ্যে অনুসন্ধান করে এটা নিশ্চিত হবেন যে, দরখাস্তে বর্ণিত ভূমি উল্লেখিত উদ্দেশ্যে ববহৃত হয়। জেলা প্রশাসক সন্তুষ্ট হলে নির্ধারিত নিয়মে ব্যবহৃত ভূমির এলাকা নির্ধারণ করবেন এবং উক্ত এলাকার খাজনা মওকুফের নির্দেশ দিবেন। জেলা প্রশাসক সন্তুষ্ট না হলে তিনি দরখাস্ত প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। উক্ত এলাকা যদি কোন জোত বা প্রজা স্বত্বের অংশ হয় তবে তা সে জোত বা প্রজাস্বত্ব হতে আলাদা করে নিস্কর প্রজাস্বত্ব সৃষ্টির ব্যবস্থা করবেন।
জেলা প্রশাসকের আদেশে কেউ অসন্তুষ্ট হলে আদেশ প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে  বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আপীল করতে পারেন এবং বিভাগীয় কমিশনারের আদেশে অস্তুষ্ট হলে আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে ভূমি প্রশাসন বোর্ডের নিকট রিভিউ এর নিমিত্তে আবেদন জানাতে পারেন। বিভাগীয কমিশনার বা জেলা প্রশাসক কর্তৃক এই ধারা অনুযায়ী প্রদত্ত যে কোন আদেশ ভূমি প্রশাসন বোর্ড যে কোন সমযে স্বেচ্ছায় রিভিশন করতে পারবেন।
 খাজনা কওকুফের আদেশ প্রদানের তারিখের পরবর্তী কৃষি বছর হতে কার্যকরী হবে।

ভূমি উন্নয়ণ করের সংজ্ঞা:
ভূমি উন্নয়ণ করার ফলে যে ঞধী দেওয়া হয় সেটাই ভূমি উন্নয়ণ কর। সাধারণত সরকার কর্তৃক ভূমি উন্নয়ণ সাধিত হয়ে থাকে তাই ভূমি উন্নয়ণ বলতে সরকার কর্তৃক ভূমি উন্নয়ণ করাকেই বুঝানো হয়ে থাকে।
১৯৭৫ সালের ভূমি উন্নয়ণ কর অধ্যাদেশের ২(৩) ধারায় ভূমি উন্নয়ণ করের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হযেছে যে, চা ,কপি,রাবার কিংবা বাগানচাষ করা ব্যতীত অন্যান্য ভূমি উন্নয়ণ করার জন্য যে  ঞধী দেওযা হয় তাকে ভুমি উন্নয়ণ কর বলে।



প্রশ্ন-৩ রেকর্ড অব রাইটস কি?,১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন  অনুযায়ী  রেকর্ড অব রাইটস বা খতিয়ান কিভাবে প্রস্তুত ও চুড়ান্ত ভাবে প্রকাশিত হয়? কখন এবং কোন কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে”রেকড অব রাইটস” বা খতিয়ান পরিমার্জন করা হয? স্বত্বলিপি রিভিশনের বিধান কি? রেকর্ড অব রাইটস এর বিভিন্ন স্তরগুলি কি কি?
রেকর্ড অব রাইটস কি:
খতিয়ান হলো দখল স্বত্বের প্রামাণ্য দলিল। এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা রাজস্ব অফিসার কর্তৃক যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। প্রতি খতিয়ানের একটি পৃথক পরিচিতি নম্বর থাকে। খতিয়ানকে “রেকর্ড অব রাইটস” বা “স্বত্বলিপি” বলা হয়। খতিয়ান হচ্ছে নিখুঁত মালিকানা স্বত্ব ও দখলী স্বত্বের প্রমাণ্য দলিল। খতিয়ানে তৌজী নম্বর, জে. এল. নম্বর, স্বত্বের বিবরণ, মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা থাকে। খতিয়ানের অপর পৃষ্ঠায় দাগ নম্বর, প্রত্যেক দাগের উত্তর সীমা (উত্তর দাগ), ভূমির শ্রেণী দখলকারের নাম, ভূমির পরিমাণ, হিস্যা, হিস্যা মতে পরিমাণ লেখা থাকে। উপযুক্ত আদালত কর্তৃক ভুল প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত খতিয়ান নির্ভূল হিসাবে গণ্য হতে থাকে।
যেমন ঈঝ খতিয়ান,ঝঅখতিয়ান, জঝ খতিয়ান ঈঞখতিয়ান,

১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনা ৪র্থ খন্ড অনুযায়ী  রেকড অব রাইটস প্রস্তুত ও চুড়ান্তভাবে প্রকাশের  পদ্ধতি:
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অর্জন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৪র্থ খন্ডের ১৭,১৮,১৯ ধারায় রেকর্ড অব রাইটস বা খতিয়ানের প্রস্তুতও চুড়ান্তভাবে প্রকাশের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে;যা নি¤œরুপ:
১) খতিয়ান প্রস্তত ও সংশোধনের ক্ষমতা: ১৭ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারা অনুযায়ী সরকারকে কোন জেলা, জেলার অংশ অথবা স্থানীয় এলাকার ক্ষেত্রে খতিয়ান প্রস্তুত করার জন্য অথবা ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে প্রস্তুতকৃত ও চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান পরিমার্জন করার জন্য ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
২) খতিয়ান প্রস্তুতের কার্যক্রম স্থগিত ও নতুন করে আরম্ভ: ২নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে যে, যদি ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন অথবা ১৯৩৬ সালের সিলেট প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী খতিয়ান প্রস্ততের জন্য আদেশ প্রদান করা হয়ে থাকে কিন্তু খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়নি কিংবা ঐ খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়নি তাহলে ঐ কার্যক্রম স্থগিত থাকবে এবং এ আইনের বিধান অনুযায়ী প্রস্তুত করতে হবে। আরও একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে যে, ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনে আমরা ১৯৩৬ সালের সিলেট প্রজাস্বত্ব আইনে যদি খতিয়ান প্রস্তুতকরণের কোন কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়ে থাকে তাহলে এ অধ্যায় অনুসারে আরম্ভ করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে।
৩) চুড়ান্ত প্রমান:সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের গেজেট বিজ্ঞপ্তি চুড়ান্ত সাক্ষ্য হিসেবে গন্য হবে অর্থাৎ খতিয়ান প্রস্তুত করণ এবং সংশোধনের জন্য এই আদেশই চুড়ান্ত প্রমান বলে হবে।[ধারা-১৭(৩)]
৪) নির্ধারিত বিবরণী:উপরোক্ত বর্ণনা মতে সরকার কর্তৃক কোন আদেশ প্রদান করা হলে সে ক্ষেত্রে রাজস্ব কর্মকর্তা উক্ত আদেশ অনুযায়ী খতিয়ানে নির্ধারিত বিবরণী লিপিবদ্ধ করবেন।[ধারা-১৮]
৫) রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৯ ধারানুযায়ী-
    প্রস্তুতকৃত ও সংশোধিত খসড়া পর্চা/খসড়া খতিয়ান বিষয়ে কারো ও কোন আপত্তি থাকলে রাজস্ব অফিসার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য শুনে উক্ত আপত্তি নিস্পত্তি করবেন।[ধারা-১৯(১)]
    এই আদেশের দ্বারা কেহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন মনে করলে তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সহকারী সেটেনমেন্ট অফিসারের নিকট আপীল করতে পারেন। তার সিদ্ধান্তেও সন্তুষ্ট না হলে ৫৩ ধারা অনুযায়ী বিশেষ জজের নিকট আপিল করা যাবে এবং সেখান থেকে দেওয়ানী কার্যবিধির ১১৫ ধারা অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যাবে। [ধারা-১৯(২)]
    সকল প্রকার আপীল ও অভিযোগসমূহ নিস্পত্তি হওয়ার পর রাজস্ব কর্মকর্তা  সুনিদিষ্ট নিয়মে খতিয়ান সমূহ চুড়ান্তভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন।[ধারা-১৯(৩)]
    চুড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ানের ক্ষেত্রে,প্রকাশের তারিখ উল্লেখ কওে রাজস্ব কর্মকর্তা একটি সার্টিফিকেট প্রদান করবেন এবং উহাতে তারিখ ও স্বাক্ষর সহ পদমর্যাদ উল্লেখ করবেন।[ধারা-১৯(৪)]

রাষ্ট্রীয় অর্জন বিধিমালা ২৫ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে যে, রাজস্ব কর্মকর্তা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান বিনামূল্যে পরিদর্শনের জন্য সুবিধাজনক স্থানে কিছু দিনের জন্য উন্মুক্ত রাখবেন।
রেকর্ড অব রাইটস এর পরিমার্জনের ক্ষেত্র:
রেকর্ড অব রাইটস যখন এবং যে সকল ক্সেত্রে পরিমার্জন বা রিভিশন বা খতিয়ান লিপিবদ্ধ ভুল সংশোধনের বিধান ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজা স্বত্ব আইনের ১৪৪ ধারায় বর্ণিত হয়েছে, উক্ত ধারানুযায়ী রেকর্ড অব রাইটস পরিমার্জনের পদ্ধতি নি¤œরুপ:
১) আদেশ প্রদান:সরকার কোন জেলা,জেলার অংশে অথবা স্থানীয় এলাকার খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধন করবার জন্য রাজস্ব কর্মকর্তাকে আদেশ দিতে পারেন। ধারা-১৪৪(১)
২) রাজস্ব কর্মকর্তার করণীয়:রাজস্ব কর্মকর্তা সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হইয়া ,আদেশে উল্লেখিত বিবরণাদি খতিয়ান অন্তভূক্ত করবেন। ধারা-১৪৪(৪)
৩) আপত্তি উত্থাপন ও নিস্পত্তি: প্রণীত ও সংশোধিত খসড়া খতিয়ান সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশিত হলে , যদি কেহ কোন আপত্তি উত্থাপন করে,তবে রাজস্ব কর্মকর্তা উক্ত আপত্তি নিস্পত্তি করবেন। ধারা১৪৪(৫)
৪) আপীলের বিধান:রাজস্ব কর্মকর্তার প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে সহকারি সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার পদের নিচে নয় এমন কোন নির্ধারিত রাজস্ব কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল করা যাবে। ধারা-১৪৪(৬)
৫) চুড়ান্ত প্রকাশ: সকল প্রকার আপীল এবং আপত্তিসমূহ নিস্পত্তির পর রাজস্ব কর্মকর্তা খতিয়ান চুড়ান্তভাবে তৈরী করবেন এবং সুনির্দিষ্ট নিয়মে খতিয়ান সমূহ চুড়ান্তভাবে প্রকাশ করবেন। ধারা-১৪৪(৭)
৬) সার্টিফিকেট প্রদান:চুড়ান্তবাবে প্রকাশিত খতিয়ানের ক্ষেত্রে, প্রকাশের তারিখ উল্লেখ করে রাজস্ব কর্মকর্তা একটি সার্টিফিকেট প্রদান করবেন এবং তাতে  তারিখ ও স্বাক্ষর সহ পদমর্যাদ উল্লেখ করবেন। ধারা-১৪৪(৮)
যে সকল অবস্থার প্রেক্ষিতে রেকর্ড-অব-রাইটস পরিমার্জন করা হয়:
নি¤œলিখিত অবস্তার প্রেক্ষিতে সরকার রেকর্ড অব  রাইটস পরিমার্জনের আদেশ দিতে পারেন: যেমন;
ক) যে ক্ষেত্রে মোট রায়তের অর্ধেকের কম নহে এমন সংখ্যক রায়ত রেকর্ড অব রাইটস পরিমার্জনের জন্য আবেদন করলে;
খ) যে ক্ষেত্রে রেকর্ড অব রাইটস এর পরিমার্জন রায়তগণের মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ নিস্পত্তির জন্য অতবা ভবিষ্যতে কোন বিবাদেও আশংকার ক্ষেত্রে উক্ত বিবাদ নিস্পত্তির জন্য প্রয়োজন মনে করা হলে;
গ) যেক্ষেত্রে কোন জেলা ,জেলার অংশে অথবা স্থানীয় এলাকার খাজনা স্থিরীকরণ করা হইতেছে,ইত্যাদি।
উপরোক্তভাবে রাষ্ট্রী াধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে রেকর্ড অব রাইটস পরিমার্জনের সময় ও ক্ষেত্র আলোচনা করা যায়।

 রেকর্ড অব রাইটস এর বিভিন্ন স্তরগুলি কি কি:




























প্রশ্ন-৪ নামজারী কি ? নামজারী দরখাস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলি কি কি? নামজারীর দরখাস্তের কারণগুলি কি ? নামজারির আইনগত মূল্য কি? নামজারি দরখাস্তকালে ,নামজারি মামলা চলাকালে এবং নামজারি মামলার সিন্ধান্ত হলে যেসব আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় তা বর্ণনা কর।  নামজারির পদ্ধতিগলি বর্ণনা কর। ২০০৬ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্তত্ব(সংশোধন) আইন নামজারীর ক্ষেত্রে কি সংস্কার এনেছে? তুমি কি মনে কর এসব সংস্কার সঠিক লক্ষ্যে করা হয়েছে? নামজারি মামলার বিরুদ্ধে আপীল,রিভিউ ও রিভিশনের বিধানাবলী আলোচনা কর।
নামজারী কি:
ভূমি ব্যবস্থাপনায় মিউটেশন বা নামজারী একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। জমি ক্রয় বা অন্য কোন উপায়ে জমির মালিক হয়ে থাকলে হাল নাগাদ রেকর্ড সংশোধন করার ক্ষেত্রে মিউটেশন একটি অপরিহার্য নাম।
নামজারি শব্দের ইংরেজী প্রতি শব্দ হিসেবে ’মিউটেশন (গঁঃধঃরড়হ)’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। উহার অর্থ হচ্ছে কর্তন করা। নামজারি শব্দের আর একটি বাংলা প্রতি শব্দ হলো জমা খারিজ। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে বা খরিদা সম্পতিতে নিজ অংশের পরিমান মত ভূমি রাজস্ব পরিশোধ করতে চাইলে ঐ সম্পত্তির যৌথ খতিয়ান থেকে শরিকানা মূলে প্রাপ্ত অংশ বা খরিদামূলে প্রাপ্ত অংশ জমির জন্য ভিন্ন খতিয়ান প্রস্তুতির জন্য সহকারি কমিশনারের (এসিল্যান্ড) অফিসে যে দরখাস্ত দাখিল করে নিজ নাম জারি করা হয তাকেই বলে নামজারি বা মিউটেশন। এই নামজারি বা জমা খারিজের দরখাস্ত করতে হয় রাষ্ট্রীয অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ এর ১১৭ ধারার’সি’ ক্লজ অনুযায়ী সহকারি ভূমি অফিসে। এই ধারাতে বলা হয়েছে যে, যৌথ প্রজা স্বত্ব থেকে ভূমি রাজস্ব পৃথক পৃথকভাবে বন্টনের জন্য এক বা একাধিক সহ-অংশীদার প্রজা রেভিনিউ অফিসারের নিকট লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে উপ-প্রজাস্বত্বে বিভক্ত(মূল খতিয়ান মিউটেশন করার জন্য বা জমা খারিজ করার জন্য) করার জন্য আবেদন জানাতে পারে এবং রেভিনিউ অফিসার মূল খতিয়ান থেকে পৃথক খতিয়ান সৃষ্টি করে ভূমি রাজস্ব ন্যায় সংগত এবং যথাযথভাবে নির্ধারণ করে খতিয়ানের অপরাপর অংশিদারকে শুনানী করে লিখিতভাবে যে আদেশ দেন তাকে নামজারি বলে।

নামজারির প্রয়োজনীয়তা:
একটি খতিয়ান হলো ভূমির পরিচয়। একখন্ড ভূমির মালিক কে বা কাহারা এবং সেই ভূমি বাবদ কত পরিমান রাজস্ব পরিশোধ করতে হয় ইত্যাদি তথ্য সহ আরও তথ্য খতিয়ানে লেখা থাকে। কোন একখন্ড ভূমি বা একটি দাগের কোন ভূমির যদি কেউ খরিদ সূত্রে বা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হয় তাহলে মালিককে সেই সম্পত্তি বাবদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হবে। ওয়ারিশ সূত্রে মালিক বা খরিদামূলে প্রাপ্ত সম্পত্তি নিজ নামে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার জন্য তাকে মূল জমা খারিজ করে নিজের নামে একটি নতুন জমা সৃষ্টি করতে হবে। ভূমি রেকর্ডে নিজ নাম অর্ন্তভুক্ত করার জন্য অবশ্যই নতুন খতিয়ান সৃষ্টি তথা মিউটেশন বা নামজারি করতে হবে। নইলে একজন ব্যক্তি ভূমির মালিক হলেও সরকারি রেকর্ডে তথা রেভিনিউ অফিসারের রেকর্ডে তার নামে আলাদাভাবে রেকর্ডস থাকবে না। আর এই রেকর্ডস না থাকার কারণে তিনি নিজ নামে ঐ সম্পত্তির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবে না তাকে যৌথভাবে কর পরিশোধ করতে হবে। জমির মালিক চাইলেও তার সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারবে না। কেননা, তার নামে ভূমির রেভিনিউ রেকর্ডস নেই। তাই যে কোন ধরণের হস্তান্তরের মাধ্যমে বা উত্তরাধিকারের মাধ্যমে নতুন কোন ব্যক্তি সম্পত্তি মালিক হলে তাকে অবশ্যই সেই সম্পত্তির জমা খারিজ করে নিজ নামে জমা চালু করতে হবে। কেউ যদি সরকারি খাস জমি সম্পত্তি বন্দোবস্ত নেন তাহলে ঐ সম্পত্তিতে তাকে অবশ্যই নামজারি করে ভূমি উন্নয়ন কর দিয়ে তবেই দখল নিতে হবে। নদী ভাঙ্গনের কারণে তীরবর্তী জমি নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার কারণে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ থেকে মওকুফ চেয়ে দরখাস্ত করার জন্য কিংবা নদীতীরে চর জাগার কারণে নতুন ভূমির উদ্ভব হলে উহা বন্দোবস্ত নেওয়ার পরেও নতুন খতিয়ানের জন্য নামজারি করতে হয়।





নতুন খতিয়ান সৃষ্টি:
ওয়ারিশান মূলে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে নিজ নামে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য কিংবা ক্রয়কৃত সম্পত্তির রেভিনিউ রেকর্ডে নিজ নাম জারির জন্য বা প্রচলিত জমা খারিজ করে নতুন জমা চালু করার জন্য প্রচলিত জমার অপরাপর শরিকদের প্রতিপক্ষ করে সহকারি কমিশনার,ভূমির নিকট একটি মিস কেইস দাখিল করতে হয় এবং সহকারি কমিশনার ভূমি প্রতিপক্ষকে নোটিশ দিয়ে তাদের কোন আপত্তি থাকলে উহা নিস্পত্তি করে লিখিত আদেশের মাধ্যমে প্রচলিত খতিয়ান বিভক্ত করে নতুন খতিয়ান সৃজনের আদেশ প্রচারিত করে নামজারির আদেশ দেন। এই আদেশে প্রচলিত খতিয়ান থেকে একটি নতুন খতিয়ান নম্বর খোলার বা চালু করার আদেশ তিনি দিয়ে থাকেন। ওয়ারিশ মূলে প্রাপ্ত সম্পত্তির জন্য প্রচলিত খতিয়ান নম্বরের বাই নম্বরে একটি নতুন খতিযান চালু করা হয়ে থাকে। যেমন- প্রচলিত মূল খতিয়ানটি যদি বেলাবাড়ি মৌজার ৩৭০ নম্বর খতিয়ান হয়ে থাকে তাহলে নতুন খতিয়ান নম্বর হবে ৩৭০/১,বা ৩৭০/২ বা ৩৭০/৩ ইত্যাদি। কতটি বাই খতিয়ান হবে তা নির্ভর করে ওয়ারেশদের সংখ্যার উপর। তবে কোন ক্রেতা যদি ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে প্রচলিত খতিয়ান কর্তন করে নতুন খতিয়ান চালু করতে চান সেক্ষেত্রেও একই কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করে সহকারি কমিশনার,ভূমি একটি নতুন খতিয়ান চালু করবেন। সেক্ষেত্রে তিনি বাই নম্বর না দিয়ে একটি সম্পূর্ণ খতিয়ান চালু করবেন। যেমন,৩৭০ খতিয়ানের জমা খারিজ করে ক্রেতার জন্য তিনি ভিন্ন একটি নম্বর যেমন ৪৮০ খতিয়ান চালু করতে পারেন। তাই প্রচলিত খতিয়ান কখনই নতুন খতিয়ান নম্বরের সাথে মিলবে না।
নামজারি দরখাস্তের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ:
ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়াগেলে তিন মাসের মধ্যে প্রাপ্ত ওয়ারিশ পত্রের ফটোকপি;
    মূল দলিলের ফটোকপি বা সই মোহরি নকল;
    সর্বশেষ জরিপের পরে রেজিষ্ট্রি দলিলের বায়া বা পিষ্ঠ দলিলের ফটোকপি বা সহি মোহরী নকল;
    খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের চলতি বছরের রশিদের ফটোকপি;
    প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আদালতের রায়-ডিক্রি বা আদেশের সহি মোহরি নকল।

নামজারির দরখাস্তের কারণগুলি:
তাই দেখা যায় যে,মালিকানার পরিবর্তন হলেই নামজারির প্রশ্ন আসে। নি¤েœাক্ত কারণে মালিকানার পরিবর্তন ঘটে:
১)    মালিকের মৃত্যুতে তার বৈধ উত্তরাধিকারীগণ জমির মালিক হন।
২)    বিক্রি ,দান,ইজারা.রেহেন ইত্যাদির মাধ্যমে জমি হস্তান্তর করলে হস্তান্তরগ্রহীতা জমির মালিক হন।
৩)    খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হলে বন্দোবস্তী প্রাপক ঐ খাস জমির মালিক হন।
৪)    সরকার কারো সম্পত্তি অধিগ্রহন করলে সরকার ঐ সম্পত্তির মালিক হন।
৫)    নিলাম বিক্রি হলে নিলাম ক্রেতা ঐ সম্পত্তির মালিক হন।
৬)    কোর্টে ডিক্রী জারির মাধ্যমে ডিক্রী প্রাপক ঐ জমির মালিক হন।
৭)     সিলিং এর অতিরিক্ত কারো জমি থাকলে ঐ অতিরিক্ত জমির মালিক সরকার হবেন।



নামজারির সাক্ষ্যগত মূল্য:
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ধারানুসারে নামজারির আবেদন মঞ্জুর করে রেকর্ড সংশোধনের যে আদেশ দেওয়া হয় তার সাক্ষ্য মূল্য অনেক। যেমন:
১) নামজারির আদেশের ভিত্তিতে সংশোধিত খতিয়ানের সৃষ্টি হয়। সরকারি রেকর্ডে মালিকের নাম প্রতিষ্ঠাপিত হয়। সর্বোপরি মালিকানা হালনাগাদ হয়।
২) নামজারির আদেশ ভূক্ত জমিটুকু পূর্বের জোতজমা হতে খারিজ হয়ে আবেদনকারীর নামে নতুন হোল্ডিং এর সৃষ্টি হয়। কোন জমি ক্রয় বা অন্য কোনভাবে জমি প্রাপ্ত হবার পর নামজারি না করা বা জরিপ না হওয়া পর্যন্ত তা পূর্ব মালিকের নামেই থেকে যায়। ইহার ফলে পূর্ব মালিক ইচ্ছা করলে প্রতারণামূলক ভাবে জমিটি একাধিক বার বিক্রয় বা হস্তান্তরের সুয়োগ নিতে পারে।
৩) নামজারি মূলে পৃথক হোল্ডিং খুলিলে খাজনাদি পরিশোধ করা সহজ হয়।
৪) ব্যাংক ঋণ, গৃহ নির্মাণ ঋণ ইত্যাতি ঋন নেওয়ার জন্য নামজারি একান্ত প্রয়োজন হয়।
৫) নামজারির আদেশ মূলে সৃষ্ট সংশোধিত খতিয়ানের কপি সহকারি কমিশনার (৯ভূমি) এর মাধ্যমে বা ভূমি মালিকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সেটেলমেন্ট অফিসার বা জরিপকালে বুঝারত/তসদিক/আপত্তি আপীল স্তরে জরিপ কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করা হলে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ এর ৩২০ অনুচ্ছেদ অনুসারে জরিপ কর্তৃপক্ষ সংশোধিত খতিয়ানের ভিত্তিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে থাকেন।
৬) নামজারি ব্যতীত জমি কেনা বেচা করা যাবে না।
৭) নগদ টাকার যেমন নিরাপদ স্থান হচ্ছে ব্যাংক একাউন্ট তেমনি জমিজমার নিরাপত্তার একাউন্ট হচ্ছে নামজারির মাধ্যমে নিজ নামে হোল্ডিং।

নামজারি মামলার আনুষ্ঠানিকতা:
নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা, উপজেলা,রাজস্ব অফিসারকে প্রদান করা হয়েছে। নামজারির জন্য তার কাছে দরখাস্ত পেশ করতে হবে। তিনি অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট তহসিলদারের নিকট পাঠাবেন। তহসিলদার সরেজমিনে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট পেশ করলে উপজেলা রাজস্ব অফিসার মিউটেশন কেস চালু করবেন। আরো অনুসন্ধানের নিমিত্তে তিনি তহসিল অফিসে, ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে ও জন সমাবেশে এ সম্পর্কে নোটিশ জারি করবেন এবং নির্দিষ্ট তারিখে উভয় পক্ষের শুনানী গ্রহন করে তা মঞ্জুর বা না মঞ্জুর করবেন।
নামজারির পূর্বে যে সকল বিষয় তদন্ত করা প্রযোজন তা নি¤œরুপ:
১)    জমিটি সরকারী সম্পত্তি কিনা;
২)    ব্যক্তি মালিকানধীন হলে হস্তান্তর গ্রহীতা কতটুকু জমি দখল প্রাপ্ত হয়েছেন;
৩)    বিক্রেতার ভূমি বিক্রয়ের অধিকার ছিল কিনা;
৪)    উত্তাধিকারসূত্রে মালিক হয়ে থাকলে অন্য কোন বৈধ উত্তরাধিকারীকে অন্যায়ভাবে বাদ দেয়া হয়েছে কিনা;
৫)    নামজারিতে কারো কোন আপত্তি আছে কিনা;
৬)    জমিটির ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া আছে কিনা কিংবা অন্য কোন ঋণের দায়ে আবদ্ধ কিনা;
৭)     আবেদনকারীর পরিবারের মোট জমির পরিমান কত এবং বর্তমানে প্রাপ্ত জমিটি যুক্ত হলে তা সিলিং অতিক্রম করবে কিনা;
৮)    উক্ত জমি অর্পিত বা পরিত্যক্ত বা খাস জমির তালিকাভুক্ত কিনা।

২০০৬ সালের স্টেট এ্যাকুজিশন এন্ড টেনান্সি এ্যাক্টের সংশোধন করা হয়েছে এবং ১৪৩ গ ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এই ধারায় নামজারির পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, রাজস্ব কর্মকর্তা ৮৯ ধারা অনুযায়ী নোটিশ পাবার পর একটি ফাইল খুলবেন এবং জোতের সহ অংশীদারগনকে নোটিশ দিবেন। কোন আপত্তি থাকলে তা উপস্থাপনের জন্য দিন নির্ধারণ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষদের শুনানী অন্তে যা যথার্থ মনে করবেন সে মর্মে আদেশ প্রদান করবেন। আপত্তি উত্থাপণ না করা হলে আবেদন অনুযায়ী খতিয়ান সংশোধন করে দিবেন।
ইহা খারিজ হবার সাথে সাথে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যাকে মিউটেশন খতিয়ান বা খারিজ খতিয়ান বলে। এগুলি ৯ নং রেজিষ্টারে সংরক্ষিত করা হয় যাকে বলে খারিজ রেজিস্টার।
নামজারীর বিভিন্ন পদ্ধতি:
ভূমির মালিকানা যেমন বিভিন্ন ভাবে অর্জিতত হয় তেমনি নামজারীর ধরনও বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে।
যেমন:
১) হস্তান্তর দলিল মূলে নামজারী
২) উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারী
৩) আবেদনের ভিত্তিতে নামজারী
৪) সার্টিফিকেট মূলে নামজারী
৫) আদালতের ডিক্রি মূলে নামজারী
১) হস্তান্তর দলিল মূলে নামজারী: দলিল রেজিস্ট্রির পর হস্তান্তর নোটিস সহকারী ভূমি কমিশনারের অফিসে পাঠাতে হবে। উক্ত নোটিস পাবার পর সহকারী ভূমি কমিশনার তার অফিসে একটি নামজারী কেস নথি খুলে তা তদন্তের জন্য তহসিল অফিসে পাঠাবেন। তহসীলদার সরেজমিনে ও রেকর্ড যাচাই করে বাংলাদেশ ফরম নং ১০৭৮ এ প্রতিবেদন দিবেন।
২) উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারী: কোন হোল্ডিং এর মালিকের মৃত্যুতে (যদি তিনি তার সম্পত্তি নিজ নামে আলাদা হোল্ডিং করে গিয়ে থাকেন) তার উত্তরাধিকারীগণ নিজেদের নাম ঐ হোল্ডিং ভূক্ত করার জন্য সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট দরখাস্ত করতে হবে এবং উক্ত দরখাস্তের সাথে সাকশেসন সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গণের বরাবরে প্রেরিত ভূমি প্রশাসন বোর্ডের ১৮-৭-১৯৮৪ ইং তারিখের ২০-এ.এস-১৭/৮৪ (১৪০) নং স্মারকের ৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দরখাস্তকারীকে ম্যাজিষ্ট্রেট/প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/সংসদ সদস্যের মত জন প্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত সাকশেসন সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে
৩) আবেদনের ভিত্তিতে নামজারী: জমি ক্রয়ের পর ক্রেতার প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো নিজ নামে কেনা জমির নামজারী করে রেকর্ড সংশোধন করা৷
৪) সার্টিফিকেট মূলে নামজারী:সার্টিফিকেট মূলে কোন খবর সম্পত্তির নিলাম ক্রেতা নামজারীর আবেদন করলে নিলামের বায়না ও দখলনামার ভিত্তিতে নামজারী আবেদন মঞ্জুর করা যাবে। নিলামক্রেতা সরকার হলে রেজিষ্ট্রার সংশোধন করতে হবে।
৫) আদালতের ডিক্রিমূলে নামজারী: আদালতের ডিক্রি মূলে সরকারী খাস জমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নামজারী করা যায় এরূপ ডিক্রির (একতরফা/দোতরফা) এরপর উক্ত জমি পুনরায় রেজিস্ট্রির প্রয়োজন।(ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল এর ৩২১ অনুচ্ছেদ)
তবে এরূপ ডিক্রি মূলে প্রাপ্ত খাস জমির নাম জারীর আবেদন পাওয়া গেলে একটি নামজারী মোকদ্দমা চালু করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মতামতের জন্য তা কালেক্টরের (ডি.সি) এর নিকট প্রেরণ করতে হবে।

 নামজারির পদ্ধতি:
ক) দরখাস্ত দাখিল করণ;
খ) সহ অংশীদারদের নোটিশকরণ;
গ) লিখিত আপত্তি দাখিল;
ঘ) তদন্তকরণ
ঙ) উভয়পক্ষের শুনানী;
চ) আদেশ প্রদান;
ক) দরখাস্ত দাখিলকরণ: নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে (বর্তমানে ২৫ টাকা) সহকারী ভূমি কমিশনারের বরাবরে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে জমির মালিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড পত্রের সত্যায়িত কপি/নকল সংযুক্ত করে দিতে হবে।
খ) সহ-অংশীদারদের নোটিশকরণ:প্রসেসফিস ইত্যাদি দাখিল করলে সহকারী কমিশনার ভূমি সহ-অংশীদারদের নোটিশ করবেন যাতে তাদের কোন আপত্তি থাকলে তা উত্থাপন করতে পারেন।
গ) লিখিত আপত্তি দাখিল:সহ-অংশীদার নোটিশ পাওয়ার পর কোন আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে সহকারী কমিশনার ভূমির নিকট উত্থাপন করতে পারেন।
ঘ) তদন্তকরণ:দরখাস্ত ও আপত্তি পাওয়ার পর বিষয়টি অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) সংশ্লিষ্ট ভূমি সহকারী অফিসারের নিকট প্রেরণ করবেন। তিনি উহা প্রাপ্তির পর শুনানীর দিনধার্য করবেন।
ঙ)) উভয়পক্ষের শুনানী:সহকারী কমিশনার বিষয়টির উপর উভয়পক্ষের শুনানী গ্রহন করবেন। নোটিশ প্রাপ্তির পর সহ অংশীদার বা প্রতিপক্ষ যদি না আসেন তবে তিনি একতরফাভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
চ) আদেশ প্রদান:দাখিলী কাগজপত্র সহকারী ভূমি কর্মকর্তার প্রতিবেদন লিখিত আপত্তি শুনানী ইত্যাদি বিবেচনা করে সহকারী কমিশনার ভূমি নামজারীর আদেশ দিবেন অথবা আদেশ দিতে অঙ্গীকার করবেন।
নামজারির কাজগুলি:
নামজারীর জন্য আবেদনকারীর কি কি করনীয়:
জমি ক্রয়ের পর ক্রেতার প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো নিজ নামে কেনা জমির নামজারী করে রেকর্ড সংশোধন করা৷ এজন্য যা যা করনীয় তা হলো:
নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে (বর্তমানে ২৫ টাকা) সহকারী ভূমি কমিশনারের বরাবরে আবেদন করতে হবে
আবেদনের সাথে জমির মালিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড পত্রের সত্যায়িত কপি/নকল সংযুক্ত করে দিতে হবে।
নামজারীর জন্য কমপক্ষে ২ মাস সময় হাতে নিয়ে নামজারীর আবেদন করতে হবে।
আবেদনকারীকে উক্ত জমির ভূমি উন্নয়ন কর বাকী থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে।
 তহসীলদার কর্তৃক আবেদনের উপর তদন্তকালে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
সহকারী ভূমি কমিশনার কর্তৃক নামজারীর উপর শুনানী কালে জমির মূল কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়ে শুনানীতে অংশ গ্রহণ করতে হবে।
বড় এবং জটিল নামজারীর ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগ করলে ভালো হয়।
নামজারীর আবেদন মঞ্জুর হলে ডি.সি. আর এবং সংশোধিত খতিয়ান সংগ্রহ করে ৯নং রেজিস্টারে নিজ নামে খোলা হোল্ডিং এর নম্বর জেনে নিতে হবে ।
নামজারীর খতিয়ান ডি. সি. আর. দাখিলা যতœ সহকারে সংরক্ষণ করতে হবে প্রয়োজন বোধে লেমিনেটিং করে রাখতে হবে।
নামজারী সহ যে কোন ভূমি ও রাজস্ব বিষয় সংক্রান্ত আদেশে কোন ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হলে তার প্রতিকার:
নামজারি মামলার বিরুদ্ধে আপীল, রিভিউ ও রিভিশনের বিধানগুলি:
কোন রাজস্ব কর্মকর্তার মিউটেশনসহ যে কোন ভূমি ও রাজস্ব বিষয়সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপীল ,রিভিউ ও রিভিশনের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারে। াার এই আপীল ,রিভিশন এবং রিভিউ সংক্রান্ত বিধানাবলী ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৭ ধারা হতে ১৫১ ধারায় বর্ণিত হয়েছে। যা নি¤েœ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো:
আপীল সংক্রান্ত বিধানাবলী:
আপীল সংক্রান্ত বিধানাবলী রাষ্ট্রীয় াধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৭ ও ১৪৮ ধারায় বর্ণিত হয়েছে।
নামজারী, জমাভাগ বা জমা একত্রীকরণ একটি বিচারিক কার্যক্রম বিষয় সংক্রান্ত মামলার আদেশ/রায়ে কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে তিনি প্রতিকারের জন্য উক্ত আদেশ/রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন ৷
১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ৫ম অংশের ১৪৭ ধারায় রাজস্ব অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিটি আদি(ঙৎরমরহধষ) বা আপিলের আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তিকে নিম্নলিখিত ভাবে আপিল করার অধিকার প্রদান করা হয়েছে -
১) রাজস্ব অফিসারের দেওয়া মূল আদেশের বিরুদ্ধে সংশ্লিস্ট জেলা কালেক্টরের নিকট;
২) জেলা কালেক্টরের আদেশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের নিকট এবং
৩) বিভাগীয় কমিশনারের আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি প্রশাসন বোর্ডের নিকট আপীল করতে হবে।
আপীলের সময় সীমা: ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট এর ১৪৮ ধারায় বলা আছে-
নামজারী মোকদ্দমার কোন আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডি.সি) অথবা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর বরাবরে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আপিল দায়ের করতে পারবে ৷
যদি কোন ব্যক্তি, কালেক্টর বা জেলা প্রশাসক বা ডি.সি কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি রায়ের দিন হতে ৬০ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার এর নিকট আপিল দায়ের করতে পারবেন ৷
যদি কোন ব্যক্তি বিভাগীয় কমিশনারের রায়েও সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে ভূমি আপিল বোর্ডে পুনরায়, আপিল করতে পারবেন ৷ তবে ভূমি আপিল বোর্ডের রায়ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে ৷
রিভিশণ সংক্রান্ত বিধানাবলী: রিভিশন সংক্রান্ত বিধানাবলী রাষ্ট্রীয় াধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৯ ধারায় বর্ণিত হয়েছে, যা নি¤œরুপ:
যদি নামজারী সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো রাজস্ব কর্মকর্তার রায়ের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর বা ডি.সি এর বরাবরে কোনো আপিল করা না হয় কেবলমাত্র সেক্ষেত্রেই  জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর বা ডি.সি. সাহেব স্ব উদ্যোগে কিংবা কোনো সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে উক্ত প্রদত্ত রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ১ মাসের মধ্যে ঐ আদেশটি পুনঃনিরীক্ষন বা পরিমার্জনবা সংশোধন করতে পারেন ৷
 জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩ মাসের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার তার নিজ উদ্যোগে বা কোন আবেদনের ভিত্তিতে কালেক্টরের আদেশ পরিমার্জন বা সংশোধন করতে পারবেন ৷
এমনকি ভূমি প্রশাসন বোর্ড তার নিজ উদ্যোগে বা কোন আবেদনের ভিত্তিতে বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারবেন।
রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনা:
১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৫০ ধারায় রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনা বিষয়ে বলা হয়েছে ৷ উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো রাজস্ব অফিসার কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দরখাস্তকারীর দরখাস্তের ভিত্তিতে অথবা নিজ উদ্যোগে তার পূর্ববর্তী রাজস্ব অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো আদেশ রিভিউ বা পুনঃবিবেচনা করতে পারবেন এবং উক্ত আদেশটিকে সংশোধন বা পরিবর্তন বা বহাল রাখতে পারবেন ৷ তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সময়ের সীমাবদ্ধতাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হলো পূর্ববর্তী আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যেই রিভিউ পিটিশনের জন্য আবেদন পেশ করতে হবে ৷
তবে উল্লেখ্য যে, কোন আদেশের বিরুদ্ধে যদি পূর্বে আপিল বা রিভিশন করা হয়ে থাকে তাহলে রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনার জন্য আবেদন করা যাবে না।
২০০৬ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্তত্ব(সংশোধন) আইন নামজারীর ক্ষেত্রে কি সংস্কার এনেছে? তুমি কি মনে কর এসব সংস্কার সঠিক লক্ষ্যে করা হয়েছে:
২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের সংশোধন করা হয়েছে। ১৪৩ ক ধারার পর ১৪৩ খ এবং ১৪৩ গ ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে।
১৪৩ খ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে খতিয়ান সংশোধন করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। জোতের সহ-অংশীদারদের আপত্তি শুনার পর নামজারিকরণ করা যাবে বলা হয়েছে ১৪৩(গ) ধারায়। এসকল সংস্কারের উদ্দেশ্য ভালই বলা যায়, তবে এটা খুব অপর্যাপ্ত হয়েছে। সংঅংশীদার ছাড়াও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকলকে তা জানানো এবং আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ দেয়া বাঞ্চনীয়।



২০০৬ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব(সংশোধন) আইন দ্বারা নামজারির ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্য:
২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা নামজারির ক্ষেত্রে যে সংস্কার করা হয়েছে তা সঠিক লক্ষ্যেই করা হয়েছে;কারণ এই সংশোধনের পূর্বে উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানার ক্ষেত্রে কোন বন্টননামার বিধান ছিল না।ফলে কোন একজন শরীক অন্য শরীককে বাদ দিয়ে নিজ নামে মিউটেমন করতে পারত। ইহার ফলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হত। উক্ত সংশোধনের ফলে এই ধরণের জটিলতা অনেকাংশে লোপ পেয়েছে।
তাছাড়া হোল্ডিং এর সহ-শরীকদের নোটিশ প্রদান পূর্বক শুনানীর পর খতিয়ান সংশোধনের ব্যবস্থা রাখায় কোন শরীক অন্য শরীককে বাদ দিয়ে নিজ নামে মিউটেশন করতে পারবে না।

সুতরাং ২০০৬ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব(সংশোধন) আইন দ্বারা নামজারির ক্ষেত্রে যে সংস্কার করা হয়েছে তা সঠিক লক্ষ্যেই করা হয়েছে।




প্রশ্ন:৫
ক) ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী নদী তীরবর্তী প্রজা ও চাকরাণ প্রজাগনের অধিকার ও দায় দায়িত্ব আলোচনা কর।
খ) মৎস্য নদীকে অনুসরণ করে এবং মৎসশিকারী মৎসকে অনুসরণ করে” -এই উক্তিটির ব্যাখ্যা কর।
নদী তীরবর্তী প্রজাদের অধিকার ও দায়-দায়িত্ব:
নদী পাড় সবসময় ভাঙ্গে আর গড়ে। তাই তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের সকল সময় জমি হারানোর ভয় থাকে আবার তাদের জমি বৃদ্ধির সম্ভাবনাও থাকে। এ সম্পর্কে অতীতেও আইনের বিধান ছিল বর্তমানেও আছে।
১৮২৫ সালের বেঙ্গল এলুভিয়ন ও ডাইলিয়ান রেগুলেশন এবং ১৯৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা এগুলো নিয়ন্ত্রিত হতো।
বর্তমানে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৮৬ ও ৮৭ ধারায় এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
৮৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, জোত জমা বা যদি কোন জমি বা ভূমি ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় তবে তাকে সিকস্তি বলে। সিকস্তি বা নদী গর্ভে জমি বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ২০ বছরের মধ্যে জমি জেগে উঠলে বা পয়স্তি হলে জমির মালিক বা মালিকের উত্তরাধিকারীগণ জমি দাবী করতে পারবে। উক্ত রায়ত তা পুন দখল লাভ করার অধিকারী হবে এবং অনধিক ৪ বছর পর্যন্ত বকেয়া খাজনা আদায়ে এতে স্বত্ববান দখলকার আইনানুগ অধিকার লাভ করবে।
 এ আইনের ৮৭ ধারায় বলা হয়েছে যে,কোন জমি সাগর বা নদীর গতিপথের পরিবর্তনের কারণে কিংবা নদীর পানি সরে যাওয়ার ফলে জেগে উঠলে অথবা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া জমি পুনরায় ভেসে উঠলে তাকে পয়োস্তি বলা হয়। তবে সে ক্ষেত্রে উক্তরুপ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জমি নদী তীরবর্তী মালিকের জমি বলে গন্য হবে এবং বর্ধিত হারে খাজনা দিতে বাধ্য থাকবে।
১৯৭২ সালে এ সম্পর্কে একটি সংশোধনী জারি করা হয়েছে। পি.ও ১৩৫/৭২ আদেশে বলা হয়েছে যে, অন্য আইনে যাহাই থাকুক না কেন সিকস্তি জমিতে সিকস্তির পর প্রকৃত মালিকের সকল অধিকার ও স্বত্ব বিলুপ্ত হবে এবং পুনগঠিত ভূমি সর্বপ্রকার দায় হীন অবস্থায় সরকারের উপর ন্যস্ত হবে। এক্ষেত্রে জমির মালিকানা দাবী করা যাবে না  কারণ উক্ত জমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের হাতে অর্পিত হবে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে সিকস্তির ২০ বছরের মধ্যে যদি পূর্বতন মালিকের জমি জেগে উঠে,তবে সরকার কর্তৃক পুনরায় বন্দোবস্ত দেয়ার সময় পূর্বতন মালিকের দাবি অগ্রগণ্য হবে যদি সে পরিবারের সর্বোমোট জমির পরিমান ২৫ বিঘার কম হয়। ১৯৮৪ সালের ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ অনুসারে কোন ব্যক্তির সর্বোচ্চ জমির পরিমান ৬০ বিঘা বা তার বেশী হতে পারবে না।
পয়স্তি সম্পর্কে সংশোধনী জারি করা হয়েছে যে, সমূদ্র বা নদী ক্রমশ সরে যায় এবং সে কারণে উল্লেখিত সমূদ্র বা নদী তীরবর্তী ভূমি যদি মন্থর গতিতে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়, তবে সেক্ষেত্রে এরুপ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোন জমি সমূদ্র বা নদী তীরবর্তী মালিকের  অন্তভূক্ত বলে গন্য হবে না। এরুপ বৃদ্ধি প্রাপ্ত সকল জমি সরকারের খাসভূমি হিসেবে গণ্য হবে।
পয়োস্তি জমির জন্য ১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্টের আদেশ নং ১৩৭ বলবৎ হওয়ার পূর্বে যদি কোন ব্যক্তি দাবী করে মামলা থাকে তাহলে আদেশ বলবৎ হওয়ার পর থেকে উক্ত দাবীকৃত মামলার কোন কার্যক্রম চলবে না এবং সাগর বা নদী সরে যাওয়ার ফলে জেগে ওঠা জমি নিয়ে আর নতুন করে কোন আদালতে মামলা করা যাবে না।
চাকরান প্রজাদের অধিকার ও দায় দায়িত্ব:
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ চালুর পূর্বে এই দেশের জমিদারদের এবং বিত্তবান মধ্য স্বত্বভোগীদের অধীনে অনেক চাকরান অথবা নানকার প্রজা ছিল। চাকর হিসেবে তাদের শ্রমের বিনিময়ে পারিতোষিক হিসেবে বিনা করে মালিকদের খাস জমি ভোগ দখল করতে বলে তাদের চাকরান বলা হতো।
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন,১৯৫০ পাশের পর তাদের এ বিশেষ সুবিধা রহিত করা হয় এবং তাদের জন্য ন্যায্যা ও যুক্তিসঙ্গত খাজনা ধার্য করা হয়। অত্র আইনের ১১ থেকে ১৬ ধারা পর্যন্ত চাকরান প্রজাদের অধিকার ও দায় দায়িত্ব সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।
১১(১) ধারা মতে,কোন বিশেষ সময়ের জন্য অন্য কোন চুক্তির আবর্তমানে এবং এ আইনের কার্যকারিতা শুরু হওয়ার তারিখ হতে যে কোন ব্যক্তি যিনি অন্য কোন ব্যক্তি জমিতে কতিপয় নিদিষ্ট ফরমের পারিতোষিক হিসেবে তার কৃষি,বাগান বা বসতবাটি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তার জমির অধিকার লাভ করে,যাকে স্থানীয়ভাবে চাকরাণ বলা হয এরুপ  চাকরান জমিতে বিদায়ী দমিদারের রায়তি স্থিতিবান প্রজা হিসেবে উক্ত চাকরান প্রজা ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন বা ১৯৩৬ সালের সিলেট প্রজাস্বত্ব আইনের বিধান সাপেক্ষে জমিদারকে ন্যায্যা ও যুক্তি সংগত খাজনা প্রদানের বিনিময়ে অধিকার ভোগ করবে।
এআইনের ১২ ধারায় চাকরান প্রজাকে বসতবাটি হতে উচ্ছেদ সম্পর্কিত বিধি বিধান রয়েছে।
১২ ধারার ১ উপধারা মতে, কোন মালিকের সীমানার মধ্যে যদি কোন চাকরান প্রজার বসতবাটি অবস্থিত হয়, তাহলে মালিক এ আইন কার্যকরী হবার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে ভূমির দখল উদ্ধারের জন্য এরুপ প্রজার বিরুদ্ধে উপযুক্ত দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
২ উপধারায় বলা হয়েছে যে, ১ উপধারা মতে আবেদন করা হলে আদালত উভয়ের বক্তব্য শোনার যা যথাযথ মনে করেন সেরুপ আদেশ দিবেন। তবে শর্ত এই যে, আদালত যদি দেখেন যে, চাকরাণ প্রজার বর্ণিত বসতবাটি ব্যতীত চাষাবাদের জন্য ৫ বিঘার কম জমি রয়েছে ,তাহলে যথাযথ ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনকারীর নির্দেশ দিবেন। নতুন স্থানের বসতবাটি স্থানান্তরের খরচ,বসতবাটি ও জমি সংস্কারের খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ বিবেচনা করে এবং উক্ত টাকা আদালতে জমা অথবা সংশ্লিষ্ট প্রজাকে না দেয়া পর্যন্ত আদালত তাকে উচ্ছেদের আদেশ দিবেন না।
৩ উপধারায় বলা হয়েছে যে, ২ উপধারা অনুযায়ী প্রদত্ত আদেশ সেই প্রজার বিরুদ্ধে উচ্ছেদের ডিক্রি বলে বিবেচিত হবে এবং সেই আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপীল চলবে না।
খ) উত্তর:
যেখানে মৎস্য থাকবে সেখানে মৎস্য জীবীর আনাগোনা হবে হবে এটাই স্বাভাবিক। মৎস্যের বাস নদী,পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে। জোয়ারভাটা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে নদীর ¯্রােত পরিবর্তিত হয় ও শাখা প্রশাখা প্রসারিত হয়।এর সাথে সাথে মৎস্যেরও গতিবিধি পরিবর্তন ঘটে এবং তার সাথে মৎস্যজীবীর গতিবিধিরও পরিবর্তিত হয়। তাই বলা হয় মৎস্যনদীকে অনুসরণ করে এবং মৎস্যজীবী মৎস্যকে অনুসরণ করে। জলকর সংক্রান্ত এই প্রবাদটি এদশের আদালতে দীর্ঘদিন যাবৎ স্বীকৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ হয় না। যে সকল নদী নব্য ও নৌ চলাচলের উপযোগী সে সকল নদীতে এই নীতিটি প্রযোজ্য হয়।
অনব্য নদীতে মাছ ধরার অধিকারের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র বিধান প্রচলিত রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারই যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এ অধিকার প্রদান করে থাকেন। নদীর গতি পরিবর্তিত হলেও এ অধিকার নষ্ট হয না। প্রাকৃতিক নিয়মে নদীরগতি সর্বদা পরিবর্তশীর বিধায় গতিপথ পরিবর্তনের সাথে সাথে মাছ ধারার অধিকার নষ্ট হলে অধিকারটি মূল্যহীন হয়ে পড়ে। তাই মাছ ধরার অধিকার সরকার কর্তৃক প্রদত্ত হলে নদীর গতি পরিবর্তনের সাথে সাথে অধিকারের কোন পরিবর্তন হয় না। এমকি কোন ব্যক্তি মালিকানার ভূমির উপর দিয়ে সেই নদীর ¯্রােত প্রবাহিত হলেও সেখানে উক্ত অধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তির মাছ ধরার অধিকার অক্ষুন্ন থাকবে এবং তীরবর্তী ভূমির মালিককে উক্ত স্থান হতে মাছ ধরা হতে বিরত রাখা যাবে ।
এই নীতিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮৯৭ সালে শ্রীনাথ রায় বণাম  দীনবন্ধু সেন  মামলায প্রিভিকাউন্সিলের সিন্ধান্তে।
এ মামলার ঘটনায প্রকাশ বাদী সরকার প্রদত্ত অধিকার বলে দীর্ঘকাল যাবৎ বলবন্ত নদীতে মৎস্য শিকারের অধিকার ভোগ করে আসছিলেন। বাদী দাবী করেন যে তার এ অধিকার শুধু জমিদারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এ অধিকার অনুমোদিত জলপ্রবাহের সঙ্গে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। উক্ত নদী ছিল জোয়ার ভাটা বিশিষ্ট।
অত:পর উক্ত নদীর একটি শাখা অর্থাৎ নতুন একটি ¯্রােত বিবাদীর ভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং জোয়ারের প্রভাবে এটাও প্রসারিত হয এবং ছোট ছোট নৌযান চলাচলের উপযোগী হয়। এ অঞ্চলে বিবাদী জলকর মহলের স্বত্ব দাবি করেন এবং মৎস্য ধারার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চান। সকল কিছু বিবেচনা করে আদালত বাদীর অনুকূলে রায দেন। বিবাদী কলকাতা হাইকোর্টে আপীল করেন উক্ত রায়টি বাতিল বলে ঘোষনা করা হয়। অবশেষে বাদীপক্ষ প্রিভিকাউন্সিলে আপীল পেশ করেন। প্রিভিকাউন্সিল এই সিন্ধান্তে উপনীত হন যে বাদী পক্ষ সঠিক ভাবে প্রমান করেছেন যে, বিরোধীয় জলকরটি সরকারের নিকট হতে স্বত্ব লাভ করেরেছেন তারা দীঘদিন ধরে মাছ ধরার অধিকার ভোগ করে আসছেন। তাই এই জলাশয়ে মাছ ধরার অধিকার একচ্ছত্র অধিকার একমাত্র বাদী পক্ষের
 প্রশ্ন-২ যে সকল উদ্দেশ্য একজন অকৃষি প্রজা জমি দখলে রাখতে পারে তা আলোচনা কর। বারো বছর বা বারো বছরের কম সময়ের জন্য অধিকৃত অকৃষি প্রজাস্বত্বের পরিনতি সমূহের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। উক্ত আইনে অকৃষি প্রজা কে? কখন ও কিভাবে একজন অকৃষি প্রজাকে অকৃষি ভূমি হতে উচ্ছেদ করা যায়?
আইনের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের ভূমিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়; কৃষি জমি এবং অকৃষি জমি। গ্রামাঞ্চলের সকল জমিই প্রায় কৃষি জমি এবং ঐ সকল জমি রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের আওতাধীন। পক্ষান্তরে, শহরাঞ্চলের অকৃষি জমি ১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের আওতাধীন। শহরাঞ্চল ক্রমশ বাড়ছে। ফলে শহরের কৃষি জমি ক্রমশ অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের আওতায় আসছে।
অকৃষি প্রজা বলতে সেই ব্যক্তিকেই বুঝায় যে অপর কোন ব্যক্তির জমি দখলে রাখেন তিনিই অকৃষি প্রজা।
১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের ২(৫) ধারানুযায়ী  'অকৃষি প্রজা' বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যিনি অপর কোনো ব্যক্তির সম্মতি অথবা অনুমোদনক্রমে তার অকৃষি ভূমি খাজনার বিনিময়ে দখল করেন এবং ঐ ভূমির খাজনা প্রদানে দায়ী থাকেন বা যিনি বিশেষ চুক্তি না থাকলে উক্ত ভূমির খাজনা প্রদানে দায়ী থাকবেন এবং তার উত্তরাধিকারীগণের স্বার্থও অন্তর্ভুক্ত করবে; কিন্তু তা এমন ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করবে না যিনি এরূপ ভূমি দখল করেন যাতে অপর ব্যক্তি এরূপ কিছু নির্মাণ করেছেন যার জন্য তাকে খাজনা প্রদান করতে হবে ।
১৯৪৯ সনের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, নিম্নলিখিত প্রয়োজনে একজন অকৃষি প্রজা অকৃষি জমি ধারণ করতে পারে।
 নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যে অকৃষি প্রজা অকৃষি ভূমির অধিকারী হতে পারে-
ক) বসতবাড়ি অথবা আবাসিক বাসস্থানের উদ্দেশ্যে;
খ) শিল্পদ্রব্য উৎপাদন বা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে;
গ) ধর্মীয় বা অন্যান্য উদ্দেশ্যে;
এক বৎসরের অধিক কিন্তু ১২ বৎসরের কম সময় যাবৎ যে অকৃষি প্রজাস্বত্ব প্রচলিত আছে তার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরুপ:
এই প্রকার অকৃষি প্রজার বৈশিষ্ট্য এবং অধিকার নিম্নে দেওয়া হলো-
অত্র আইনের ৬(৩) ধারানুযায়ী একজন অকৃষি প্রজা তার দখলীয় অকৃষি ভূমিতে নি¤েœাক্ত অধিকারগুলো ভোগ করতে পারবে-সে জমিতে
১) পাকা নির্মান ব্যতীত অন্য যে কোন প্রকারের গৃহাদি নির্মাণ করতে পারবে।
২) বৃক্ষাদি রোপন এবং এইগুলির ফল ও ফুল ভোগ করতে পারবে এবং
৩) তার রোপিত বৃক্ষাদি কর্তন করতে বা বিক্রয় করতে পারবে।
৯ ধারা অনুযায়ী নিম্নলিখিত কোন একটি কারণ ব্যতীত এই রকম অকৃষি প্রজাকে তার জমি হতে উচ্ছেদ করা যাবে না।
১) অকৃষি প্রজা যদি তার দখলীয় জমি এমনভাবে দখল করে থাকে যাতে ৪ ধারায় বর্ণিত উপায়ে  অর্থাৎ আবাসিক,বাণিজ্যিক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে;
২) লিখিত ইজারার মাধ্যমে জমিতে দখলদার থাকলে সেই ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে;
৩) লিখিত ইজারা ব্যতীত অন্যভাবে দখলদার থাকলে তাকে উচ্ছেদের পুর্বে ৬ মাসের নোটিশ দিতে হবে।
তবে শর্ত থাকে যে গৃহাদি অন্যত্র সরিয়ে পুননির্মাণ এবং জমিতে উন্নয়নমূলক কোন কাজ করে থাকলে সে বাবদ কালেক্টর কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে মালিকের নিকট হতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে হকদার হবে।
৪) এই রকম অকৃষি প্রজার অকৃষি জমি তার অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তির ন্যায় তার ইচ্ছানুযায়ী হস্তান্তরযোগ্য হবে;
৫) এইরকম অকৃষি প্রজার মৃত্যু হলে অকৃষি জমিতে তার স্বত্ব স্বার্থ তার উত্তরাধিকারীর উপর ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী বর্তাইবে;
৬) ৭০ ধারা অনুযায়ী আদালতের ডিক্রি ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে এরকম অকৃষি প্রজাকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

বার বৎসর অথবা ইহার অধিককাল যাবৎ যে অকৃষি প্রজাস্বত্ব প্রচলিত আছে তার বৈশিষ্ট্য:
এই প্রকার অকৃষি প্রজার বৈশিষ্ট্য এবং অধিকার নিম্নে দেওয়া হলো-
অত্র আইনের ৬(২) ধারা অনুযায়ী সে জমিতে
 ১) পাকা নির্মাণসহ যে কোন গৃহাদি নির্মাণ করতে পারবে;
২) মসজিদ মন্দির বা অন্য যে কোন প্রকার উপাসনার স্থান নির্মাণ করতে পারবে;
৩) যে কোনো পুকুর খনন করতে পারবে;
৪) বৃক্ষাদির চারা রোপন, তাদের ফুল, ফল ও অন্যান্য উৎপাদিত দ্রব্য উপভোগ করতে এবং ঐ ভূমির উপরস্থ যে কোনো বৃক্ষ কর্তন, ব্যবহার ও বিক্রয় করতে পারবে।
৫) ৭ ধারানুযায়ী এইরুপ অকৃষি প্রজা উচ্ছেদ যোগ্য হবে না যদি সে তার দখলীয় জমি এরকমভাবে ব্যবহার না করে থাকে যাতে ৪ ধারায় বর্ণিত উপায়ে জমি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
৬) এরকম অকৃষি প্রজার মৃত্যু হলে অকৃষিজমিতে তার স্বত্ব স্বার্থ তার উত্তরাধিকারীর উপর ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী বর্তাইবে;
৭) এরকম অকৃষি প্রজার অকৃষি জমি তার অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তির ন্যায় তার ইচ্ছানুযায়ী হস্তান্তরযোগ্য হবে।
৮) ৮ ধারানুযায়ী ১২ বৎসরের অধিককার লিখিত ইজারা দলিলমূলে অকৃষি জমিতে দখলকার থাকলে মেয়াদঅন্তে সে বিনা সেলামীতে চিরস্থায়ীভাবে পুনরায় ইজারা পাওয়ার অধিকারী হবে এবং রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের বিধান অনুযায়ী ধার্য খাজনা দিতে বাধ্য থাকবে।
৯) ৭০ ধারানুযায়ী এরকম অকৃষি প্রজা আদালতের ডিক্রি ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে উচ্ছেদযোগ্য হবে না।

প্রশ্ন-৪ ১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনে উন্নয়নমূলক কাজ কি? কে উন্নয়ন করতে পারে? মালিক ও প্রজার মধ্যে এই বিষয়ে বিরোধ কিভাবে মীমাংসীত হয়? উক্ত আইন অনুযায়ী অগ্রক্রয় সংক্রান্ত বিধানাবলী বিস্তারিত আলোচনা কর।
ভূমিকা:
আইনের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের ভূমিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়; কৃষি জমি এবং অকৃষি জমি। গ্রামাঞ্চলের সকল জমিই প্রায় কৃষি জমি এবং ঐ সকল জমি রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইনের আওতাধীন। পক্ষান্তরে, শহরাঞ্চলের অকৃষি জমি ১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের আওতাধীন। শহরাঞ্চল ক্রমশ বাড়ছে। ফলে শহরের কৃষি জমি ক্রমশ অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের আওতায় আসছে।
উন্নয়নমূলক কাজ কি:
১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনে ৬৪ ধারানুযায়ী উন্নয়নমূলক কার্য বলতে অকৃষি প্রজা কর্তৃক এমন ধরনের কার্যকে বুঝায়, যা কোনো অকৃষি ভূমির মূল্যকে বর্ধিত করে, এবং এই ভূমিকে বাসস্থান, কারখানা বা ধর্মীয় কাজে ব্যবহারের জন্যে উপযোগী করে । ইহা ব্যতীত নিম্নবর্ণিত কাজগুলিএবং ইহাদের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যগুলিও উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত-
(ক) রাস্তা বা উপরাস্তাার সুবিধা;
(খ) আলো বাতাস চলাচলের জন্য খোলা স্থানের ব্যবস্থা;
(গ) পানীয় জলের জন্য সুবিধা থাকার শর্ত;
(ঘ) নর্দমা স্থাপনের ব্যবস্থা;
তবে শর্ত থাকে যে, এই সমস্ত কাজ যদি মালিকের জমির মূল্যের যথেষ্ট ক্ষতির কারণ হয়, তবে তা উন্নয়ন হিসাবে গণ্য হবে না।
কে উন্নয়ন করতে পারে:
১৯৪৯ সলের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনে ৬৫ ধারাতে বলা আছে
প্রজা এবং মালিক একে অপরকে বাধা দিতে পারবে না।
প্রজা এবং মলিকের মধ্যে মতবিরোধ ঘটলে উন্নয়নমূলক কাজে অকৃষিপ্রজার দাবি অগ্রগণ্য হবে,
তবে এই অকৃষি প্রজা যখন উন্নযন করবে তখন ঐ অকৃষি প্রজা ঐ ভূমির কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না যা মালিকের অধীনে অন্যান্য অকৃষি প্রজার ক্ষতির করণ হয়।
মালিক ও প্রজার মধ্যে এই বিষয়ে বিরোধ কিভাবে মীমাংসীত হয়:
১৯৪৯ সলের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনে ৬৬ ধারাতে বলা আছে,
কোন কাজ উন্নয়নমূলক কিনা এবং সেই কাজে কার দাবি অগ্রাধিকার পাবে, এই বিষয়ে উভয পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ উপস্থিত হলে,যে কোন পক্ষের আবেদনে ডেপুটি কমিশনার ইহা নিস্পত্তি করবেন এবং তার আদেশের অসম্মতিতে ক্ষুব্ধ পক্ষ আদেশের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আপিল করতে পারবে এবং ঔড়রহঃ ঝবপৎবঃধৎু এর আদেশ চুড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

এই আইন অনুযায়ী অগ্রক্রয় সংক্রান্ত বিধিবিধান:
১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন এর ২৪ ধারায় অগ্রক্রযের বিধান করা হয়েছ্ েএই ধারার বিধান শুধুমাত্র অকৃষি জমির অগ্রক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হবে। এথন আমরা ২৪ ধারায় প্রদত্ত অগ্রক্রযের বিদানগুলো আলোচনা করবো-
কারা অগ্রক্রয়ের দরখাস্ত করতে পারবে:
শুধুমাত্র ওয়ারিশ সূত্রে শরীক প্রজারাই অগ্রক্রযের দরখাস্ত করতে পারবে। অন্য কোন ধরণের প্রজা বা ব্যক্তিরা অগ্রক্রযের দরখাস্ত করতে পারবে না।
 যেমন-৩৭০ আরএস খতিয়ানে জামাল, কামাল দুইভাই ৫০ শতক সম্পত্তিতে ওয়ারিশসূত্রে অংশীদার। এই সম্পত্তি একটি শহরের মধ্যে অবস্থিত। এই দুইভাইয়ের মধ্যে জামাল তার অংশের ২৫ শতক সম্পত্তি কামালর কাছে বিক্রয় না কওে তার প্রতিবেশী নবাবের কাজে বিক্রয় করলো। তখন ৩৭০ আরএস খতিয়ানের রেকডেড ওয়ারিশ সূত্রে উত্তরাধিকার হিসেবে বিক্রিত সম্পত্তি অগ্রক্রয় করার জন্য অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৪৯ এর ২৪ ধারার বিধান অনুযায়ী দরখাস্ত করতে পারবে অন্যকেউ নহে।
কতদিনের মধ্যে দরখাস্ত করতে হবে:
ইালিশি সম্পত্তি বিক্রয়ের নোটিশ অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের ২৩ ধারার বিধান অনুযায়ী সহ অংশীদারকে দেওয়া হলে নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ খেথকে ৪ মাসের মধ্যে আর নোটিশ দেওয়া না হলে বিক্রয় বিষয়ে জানার তারিখ থেকে ৪ মাসের মধ্যে উত্তরাদিকার সূত্রে সহঅংশীদার বিক্রিত সম্পত্তি অগ্রক্রয়ের দরখাস্ত করতে পারবে।
কত টাকা দিয়ে দরখাস্ত করতে হবে:অকৃসি প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৪৯ এর ২৪ ধারায় অগ্রক্রয়ের দরকাস্ত দাখিল করতে হলে প্রিয়েমটর কে বিক্রয়মূল্য অর্থাৎ দলিলের যা বিক্রয়মূল্য হিসেবে উল্লেখ আছে সেই পরিমান অর্থ এবং দলিলের বিক্রয় মূল্রের উপর ৫% হাওে ক্ষতিপূরণ আদালতে জমা দিতে হবে।
আদালত এই উভয় ধরণের টাকা দাখিল ফেলে বিক্রিত জমির খরিদ্দারকে নোটিশ দিবেন যে, তিনি ঐ সম্পত্তি খরিদ কওে বা উহার উন্নয়ন সাধনে বা খাজনা খারিজ করতে আর কোন টাকা পয়সা খরচ করেছেন কিনা সিভিল কোর্ট কমিশনার নিয়োগ করবেন।
 আকৃষি প্রজা স্বত্ব আইন ১৯৪৯ এর ২৪ ধারার ১০ উপধারা ানুসাওে নি¤œলিখিত হস্তান্তরের ক্ষেত্রে অগ্রক্রযের মামলা করা যাবে না। যেমন-
১)    উত্তরাধিকার সূত্রে সহঅংশীদার এর বরাবর হস্তান্তর কোন সম্পত্তির জন্য অগ্রক্রয় এর দরখাস্ত করা যাবে না।
২) বিনিময় বা বন্টনের মাধ্যমে কোন হস্তান্তরের বিরুদ্ধে অগ্রক্রয়ের দাবী প্রয়োজ্য হবে।
৩) অছিয়তের মাধ্যমে বা দানের মাধ্যমে কোন হস্তান্তরের বিরুদ্ধে অগ্রক্রয়ের দাবী জানানো যাবে না, তবে হেবা বিল এওয়াজের ক্ষেত্রে প্রিয়েমশন চলবে।
৪) সাধারণ বা খাইখালাসী বন্ধকের মাধ্যমে কোন হস্তান্তর।
৫) মুসলিম আইন অনুযায়ী ওয়াকফ এর মাধ্যমে কোন হস্তান্তর।
৬) ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে কোন হস্তান্তর যেমন -দেবোত্তর সম্পত্তির বিরুদ্ধে অগ্রক্রয়ের দাবী করা যাবে না।

2 comments:

  1. অকৃষি পুকুর শেণির জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোন আইনগত ব্যবস্থা আছে কি?

    ReplyDelete
  2. পাবলিক ডকুমেন্ট এবং প্রাইভেট ডকুমেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য কি? কি পদ্ধতিতে পাবলিক ডকুমেন্টকে প্রদর্শণীতে গণ্য করা যাইতে পারে? আরজি বা বর্ণনার সহিমোরী নকল পাবলিক না প্রাইভেট ডকুমন্টে? রেজিষ্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক ইস্যুকৃত কবলা দলিলের জাবেদা নকল কি সরকারী দলিল?---- এই প্রশ্নের উত্তর দিলে অনেক উপকৃত হব।

    ReplyDelete