Thursday 18 February 2016

ফৌজদারী কার্যবিধি,1898

প্রশ্ন-১ 
গ্রেফতার কি? গ্রেফতারী পরোয়ানা ব্যতীত কখন একজন পুলিশ অফিসার কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে? পুলিশ ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি কি এভাবে গ্রেফতার করতে পারে? যদি পারে তবে কখন? ফৌজদারী আদালত কর্তৃক কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে হাজিরায় বাধ্য করার জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়ে থাকে তা আলোচনা কর।
যে আইনগত কার্যক্রমের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে আটক করে বিচারের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয় তাকে গ্রেফতার বলে। আমল-অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালতের গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট ছাড়া কোন আসামীকে গ্রেফতার করা যায়না[ধারা১৫৫] এবং আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা বলে পুলিশ অফিসার অপরাধীকে গ্রেফতার করে বিচারের জন্য আদালতে উপস্থিত করেন।
কিভাবে গ্রেফতার করা হয় :
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬/১ ধারায় গ্রেফতারের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। কোন একটি গ্রেফতার করতে, গ্রেফতারকারী পুলিশ কর্মচারি বা অন্য ব্যাক্তি, যাকে গ্রেফতার করবেন সেই ব্যাক্তির প্রকৃতপক্ষে দেহ স্পর্শ করবেন বা বন্দী করবেন যদি না সে কথায় বা কাজে আতœসমর্পণ করে কয়েদ স্বীকার করে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬/২ ধারা অনুযায়ী গ্রেফতারে বাধা প্রদান করলে বা গ্রেফতার এড়াতে চেষ্টা করলে পুলিশ কর্মকর্তা বা অন্য ব্যাক্তি গ্রেফতার কার্যকর করার লক্ষে প্রয়োজনীয় সকল পন্থা অবলম্বন করতে পারবেন।
সুতরাং কোন অপরাধীকে বিচারের জন্য বা আদালতে হাজির করার জন্য তার ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করে পুলিশের হেফাজতে আনাকে গ্রেফতার বলা হয়।
গ্রেফতারী পরোয়ানা ব্যতীত কখন একজন পুলিশ অফিসার কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে:
সাধারণত ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে প্রাপ্ত গ্রেফতারী ওযারেন্ট ছাড়া একজন পুরিশ অফিসার আমর অযোগ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে তার অপরাধের জন্য গ্রেফতার করতে পারে না। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ আমল অযোগ্য অপরাধের জন্য অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারে, ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশ কোন ব্যক্তিকে  গ্রেফতার করতে পারে-
কেউ আমলযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকলে বা জড়িত থাকার যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ বা সন্দেহ থাকলে;
আইন সঙ্গত কারণ ছাড়া কারও কাছে ঘর ভাঙার সরঞ্জাম থাকলে;
আইন অনুযায়ী বা সরকার আদেশ দ্বারা কাউকে অপরাধী বলে ঘোষণা করলে;
যে ব্যক্তি কাছে চোরাই মাল আছে বলে সন্দেহ করা হয;
পুলিশের কাজে বাধা দিলে, বা কেউ আইনগত হেফাজত থেকে পলায়ন করলে বা করার চেষ্টা করলে;
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী হতে পলায়ন করেছেন এই মর্মে যৌক্তিক সন্দেহ থাকলে;
যে কাজ বাংলাদেশে করা হলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচনা করা হত তা বাংলাদেশের বাইরে করে থাকলে;
গুরুতর অপরাধে দন্ডিত ব্যক্তিরা খালাস পাওয়ার পরও তাদের কিছু নিযম মেনে চলতে হয় ,সেই নিযম যারা ভঙ্গ করে;
যেসব আসামী বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের জন্য অন্য থানা থেকে অনুরোধ করা হলে।

একজন সাধারণ নাগরিক কি একজন অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারেন:
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুযায়ী একজন সাধারণ নাগরিক একজন অপরাধিকে গ্রেফতার করতে পারে। ৫৯ ধারা অনুযায়ী একজন সাধারণ নাগরিক তার মতে জামিন অযোগ্য ও আমলযোগ্য অপরাধকারী ব্যাক্তিকে অথবা অপরাধী মর্মে ঘোষিত কোন ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন এবং অযথা বিলম্ব না করে তাকে পুলিশ অফিসারের নিকট অর্পণ করবেন বা নিকটস্থ থানা হেফাজতে নিয়ে যাবেন। পুলিশ অফিসার যদি তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করার কারণ আছে বলে মানে করেন তাহলে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করবেন।
গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ কখন আসামীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে:
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬ ধারার ৩ উপধারা এবং পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল,১৯৪৩ এর নিয়ম-১৫৩ অনুযায়ী, যেক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন আসামীকে গ্রেফতার করার সময় উক্ত আসামী গ্রেফতাররত পুলিশকে আক্রমণ বা বলপ্রয়োগ করে গ্রেফতার প্রতিরোধ করে বা প্রতিরধের চেষ্টাকরে, সেক্ষেতে পুলিশ উক্ত আসামীকে গ্রেফতার করারজন্য গুলি করতে পারে এবং তাতে আসামীর মৃত্যু হলে উক্ত কর্তব্যরত পুলিশের কোন অপরাধ হবেনা।

গ্রেফতারের নিয়মাবলী বা পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা হলোঃ
১। ফৌঃ কাঃ আইনের ৪৬ ধারা মোতাবেক কোন ব্যক্তিকে কথা বা কার্য দ্বারা গ্রেফতার করা সম্ভব না হলে তার দেহ স্পর্শ করা যাবে। উক্ত ব্যক্তি যদি মৃত্যুদন্ড বা যাবতজীবন কারাদন্ডে দন্ডিত আসামী বা শাস্তি যোগ্য অভিযুক্ত হয় তবে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যাবে। পিআরবি-১৫৩ বিধি।
২। ফৌঃ কাঃ বিধি আইনের ৪৭ ধারা মোতাবেক যাহাকে গ্রেপ্তার করা সে ব্যক্তি যে স্থানে প্রবেশ করেছ সে বাড়ীর মালিকের অনুমতি নিয়ে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা যাবে।
৩। ফৌঃ কাঃ বিধি আইনের ৪৮ ধারা মোতাবেক বাড়ীর মালিকের অনুমতি পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে বাড়ীর দরজা জানলা ভেঙ্গে প্রবেশ করা যাবে ।
৪। ফৌঃ কাঃ বিধি আইনের ৪৯ ধারা মোতাবেক কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে বাড়ীর ভিতরে আটকা পড়লে সে ক্ষেত্রে মুক্তি লাভের জন্য বাড়ীর দরজা জানলা ভেঙ্গে বাহির হওয়া যাবে ।
৫। ফৌঃ কাঃ বিধি আইনের ৫০ ধারা মোতাবেক কোন
৬। পুলিশ হেফাজতে হতে কোন আসামী পলায়ন করলে ফৌঃকাঃ আইনের ৫৮, ৬৬ ধারা মোতাবেক পুলিশ অফিসার উক্ত আসামীকে বাংলাদেশের যে কোন স্থান হতে গ্রেফতার করতে পারবে।
৭। ফৌঃ কাঃ আইনের ৫১ ধারা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির জামিনের ব্যবস্থা না থাকলে তার দেহ তল্লশী করে পরিধেয় বস্ত্র ব্যতীত যা পাওয়া যাবে তা হেফাজতে নিতে হবে।
৮। ফৌঃ কাঃ ৫২ ধারা।
৯।ফৌঃ কাঃ ৫৩ ধারা।
১০। বিশেষ পরিস্থিতিতে আসামীকে গ্রেফতার করার জন্য ফৌঃ কাঃ আইনের ৪২ ধারা মোতাবেক জনসাধারণের সাহায্য নিয়ে আসামীকে গ্রেফতার করা যাবে। পিআরবি-৩১৬ বিধি।

ফৌজদারী আদালত কর্তৃক কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে হাজিরায় বাধ্য করার জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়ে থাকে তা আলোচনা:
১ম পদক্ষেপ:ফৌজদারী কার্যবিধির ৬৮ ধারা মতে,আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করে পুলিশ কর্তৃক তা জারি করা হবে।
২য় পদক্ষেপ:ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৫ ধারা মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালত গেফতারী পরোয়ানা জারি করে পুলিশ কর্তৃক তা কার্যকর করবেন।
৩য় পদক্ষেপ: ফৌজদারী কার্যবিধির ৮৭ ধারা মতে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালত হুলিয়া জারি করবেন,আদালত চাইলে তার সম্পত্তিও ক্রোক করতে পারে (ধারা-৮৮)।
৪র্থ পদক্ষেপ: অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি দেশের বাইরে পালায়ন করে সে ক্ষেত্রে আদালত ৯৩(খ) ধারা অনুযায়ী ঐ দেশের সংশ্লিষ্ট আদালতে ডাকযোগ ওয়ারেন্ট কার্যকরী করার অনুরোধ জানিয়ে প্রেরণ করবেন।
হুলিয়া বা ক্রোক কি? হুলিয়া বা ক্রোক সংক্রান্ত ফৌজদারী কার্যবিধির বিধানাবলী আলোচনা কর।
হুলিয়া কাকে বলে ?( ডযধঃ রং ঢ়ৎড়পষধসধঃরড়হ? )
হুলিয়া ইংরেজী শব্দ চৎড়পষধসধঃরড়হ বা ঘোষনা। যখন কোন আসামীকে সমন দেয়া হয় বা আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয় অতপর আদালতে হাজির করার জন্য বাধ্য করা হয় তাকে হুলিয়া বলে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৮৭ ধারা অনুযায়ী, কোন আদালতের যদি এইরুপ বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, উক্ত আদালত যার বিরুদ্ধে সমন প্রদান করেছেন সেই ব্যক্তি (সাক্ষ্য গ্রহণের পুর্বে বা পরে) পলাতক রয়েছেন বা সমন যাতে কার্যকর না হতে পারে সে জন্য আতœগোপন করে আছেন, তাহলে আদালত উক্ত ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট স্থানে ৩০ দিনের মধ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে একটি লিখিত ঘোষণা প্রকাশ করতে পারেন। এই ঘোষণা কে হুলিয়া বলা হয়।
উক্ত হুলিয়া যাতে সর্বসাধারণের গোচরে আসে সেই জন্য নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করতে হবেঃ
ক) উক্ত ব্যক্তি যেখানে বাস করে সেই শহর বা গ্রামের প্রকাশ্য স্থানে হুলিয়া পড়ে শুনাতে হবে।
খ) যে গৃহে উক্ত ব্যক্তি সাধারণত বাস করে সেই গৃহের কোন প্রকাশ্য স্থানে উক্ত হুলিয়া টাঙ্গাইয়া দিতে হবে।
গ) সংশ্লিষ্ট আদালতের কোন প্রকাশ্য স্থানে উক্ত হুলিয়া পত্রটির নকল টাঙ্গাইয়া দিতে হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৮৭ ধারাঃ হুলিয়া জারি (পলাতক ব্যক্তি সম্পর্কে ঘোষণা)
(১) যদি কোন আদালতের এমন বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে , উক্ত আদালত যার বিরুদ্ধে পরোয়ানা প্রদান করেছেন সে ব্যক্তি পলাতক হয়েছে, তাহলে উক্ত আদালত তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ঘোষণা প্রকাশের তারিখ হতে ৩০ দিনের কম নয়, হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে একটি লিখিত ঘোষণাপত্র (হুলিয়া) জারি করতে পারেন।
(২) হুলিয়া নিম্নলিখিত ভাবে প্রকাশ করতে হবেঃ
(ক) উক্ত ব্যক্তির বাসস্থানের শহরে বা গ্রামের কোন প্রকাশ্য স্থানে হুলিয়াটি পাঠ করতে হবে।
(খ) উক্ত ব্যক্তির বাসস্থানের প্রকাশ্য স্থানে হুলিয়াটি লটকিয়ে দিতে হবে।
(গ) হুলিয়ার একটি কপি আদালতের কোন প্রকাশ্য স্থানে লটকিয়ে দিতে হবে।
(৩) ঘোষণা প্রদানকারী আদালত যদি এই মর্মে একটি লিখিত বিবৃতি দেন যে হুলিয়াটি একটি নির্দিষ্ট দিনে যথাযথভাবে জারি হয়েছে তবে বিবৃতিটি চুড়ান্ত প্রমান্য বলে গণ্য হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৮৮ ধারাঃ ক্রোক (পলাতক ব্যক্তির সম্পত্তি ক্রোক)
(১) ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৮৭ ধারা অনুসারে ঘোষণা প্রদাণকারী আদালত যেকোন সময়ই ঘোষিত ব্যক্তির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দিতে পারেন।
(২) এইরূপ আদেশ যে জেলায় দেয়া হবে সেই জেলার মধ্যে অবস্থিত উক্ত ব্যক্তির যেকোন সম্পত্তি ক্রোক করা যাবে।
এবং অন্য জেলায় উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তি থাকলে সেখানকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদনক্রমে একই আদেশ দ্বারা উক্ত সম্পত্তিও ক্রোক করা যাবে।
(৩) যেই সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দেয়া হয়েছে তা ঋণ বা অস্থাবর সম্পত্তি হলে নিম্নলিখিত ভাবে ক্রোক করতে হবেঃ
(ক) আটক করে
(খ) রিসিভার নিয়োগ করে
(গ) অথবা লিখিত আদেশ দ্বারা ঘোষিত ব্যক্তি বা তার পক্ষে অপর কোন ব্যক্তিকে উক্ত সম্পত্তি প্রদান নিষিদ্ধ করে।
(ঘ) আদালতের ইচ্ছানুসারে এইরূপ সকল ব্যবস্থা বা যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকঃ
(৪) যে সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়েছে তা স্থাবর হলে এই ধারানুসারে ক্রোক, সরকারকে রাজস্ব দেয়া জমি হলে সংশ্লিষ্ট জেলার কালেক্টরের মারফত করতে হবে এবং অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত রূপে করতে হবেঃ
(ঙ) দখল করে
(চ) রিসিভার নিয়োগ করে
(ছ) লিখিত আদেশ দ্বারা ঘোষিত ব্যক্তি বা তার পক্ষে অপর কোন ব্যক্তিকে খাজনা প্রদাণ অথবা সম্পত্তি হস্তান্তর নিষিদ্ধ করে
(জ) আদালতের ইচ্ছানুসারে এইরূপ সকল ব্যবস্থা বা যেকোন ০২ (দুই) টি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
(৫) যে সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দেয়া হয়েছে তা যদি জীবন্ত প্রাণী বা পচনশীল দ্রব্য হয় তাহলে আদালত প্রয়োজন মনে করলে অবিলম্বে তা বিক্রয়ের আদেশ দিতে পারেন, এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ আদালতের আদেশ অনুসারে ব্যবহৃত হবে।
(৬) এই ধারা অনুসারে নিযুক্ত রিসিভারের ক্ষমতা, কর্তব্য ও দায়িত্ব, ১৯৮০ সালের দেওয়ানী কার্যকিধির প্রথম তফসিলের চল্লিশ আদেশ অনুসারে নিযুক্ত রিসিভারের ক্ষমতা, কর্তব্য ও দায়িত্বের অনুরূপ হবে।
(৬-ক) ক্রোকের তারিখ হতে ০৬ মাসের মধ্যে ঘোসিত ব্যক্তি ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তি এই ভিত্তিতে ক্রোককৃত কোন সম্পত্তি দাবী করে অথবা ক্রোকের বিরুদ্ধে দাবি উত্থাপন করে যে উক্ত সম্পত্তিতে তার স্বত্ব আছে এবং উক্ত স্বত্ব ক্রোকযোগ্য হয় তাহলে এইরূপ দাবি বা আপত্তি সম্পর্কে তদন্ত করতে হবে এবং উহা সম্পূর্ণ বা আংশিক মেনে নেয়া বা অগ্রাহ্য করা যেতে পারে। তবে শর্ত থাকে যে, এই উপধারায় বর্ণিত সময়ের মধ্যে কোন দাবি বা আপত্তি করা হয়ে থাকলে দাবিদার বা আপত্তিকারীর মৃত্যুর পর তার আইনসঙ্গত প্রতিনিধি উক্ত দাবি বা আপত্তি পরিচালনা করতে পারেন।
(৬-খ) যে আদালত ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন (৬-ক) উপধারা অনুসারে দাবি বা আপত্তি সেই আদালতে করতে হবে।
(৬-গ) এইরূপ প্রত্যেকটি দাবি বা আপত্তি যে আদালতে করা হয়েছে সেই আদালত এই বিষয়ে তদন্ত করবেন।
(৬-ঘ) যার দাবি বা আপত্তি (৬-ক) উপধারা মোতাবেক প্রদত্ত আদেশ দ্বারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে তিনি বিরোধীয় সম্পত্তিতে তার দাবিকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উক্ত আদেশের তারিখ হতে ০১ বৎসরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে পারবেন, এবং এই মামলার ফলাফল সাপেক্ষে উক্ত আদেশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
(৬-ঙ) ঘোষণাধীন ব্যক্তি যদি ঘোষণায় উল্লেখিত সময়ের মধ্যে হাজির হয়, তাহলে আদালত আদেশ দ্বারা সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি ক্রোক হতে মুক্ত করে দিবেন।
(৭) ঘোষণাধীন ব্যক্তি যদি ঘোষণায় উল্লেখিত সময়ের মধ্যে হাজির না হয়, তাহলে ক্রোককৃত সম্পত্তি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত হবে, কিন্তু ক্রোকের তারিখ হতে ০৬ মাস অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত এবং (৬-ক) উপধারা অনুসারে কোন দাবি বা আপত্তি করা হয়ে থাকলে তা উক্ত উপধারা অনুসারে নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবেনা। অবশ্য সম্পত্তি যদি দ্রুত ও স্বাভাবিক ধ্বংসশীল হয়, অথবা আদালত যদি মনে করেন বিক্রয় করা মালিকের জন্য লাভজনক হবে তাহলে আদালত যখন উপযুক্ত বলে মনে করবেন তা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
৮৯ ধারাঃ অত্র আইনের ৮৮ ধারা মোতাবেক যে সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে সেই সম্পত্তি যে আদালতের এখতিয়াধীন রয়েছে সেই আদালত বা সেই আদালত যে আদালতে অধীনে আছে সেই আদালতে হাজির হয়ে ক্রোককৃত ব্যক্তি ক্রোকের তারিখ হতে ২ বছরের মধ্যে হাজির হয়ে যদি এই মর্মে আদালতের সন্তোষ্টি বিধান করতে পারেন যে, সে পলাতক ছিল না বা আতœগোপন করে নাই বা সে কোন প্রকার হুলিয়া নোটিশ পায় নাই তাহলে আদালত তাকে উক্ত ক্রোককৃত সম্পত্তি ফেরত প্রদান করবেন।


প্রশ্ন-২
এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (ঋওজ)বলতে কি বুঝ? কে ইহা দায়ের করতে পারে? এজাহারের সাক্ষ্যগত মূল্য আলোচনা কর।এজাহার প্রাপ্তির পর তদন্তকারী অফিসার ফৌজদারী কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন তা আলোচনা কর।এজাহারের বিষয়বস্তু বা বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। এজাহার ও নালিশের মধ্যে পার্থক্য কি? এজাহার দায়েরের কোন সময়গত বাধা আছে কি না?
অপরাধ বা অপরাদমূলক কোনো কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য থানায় যে সংবাদ দেওয়া বা জানানো হয়,তাকে এজাহার বা (ঋওজ) বলে।
এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলতে আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে থানায় প্রদত্ত প্রথম বিবরণকে বুঝায় যার উপর ভিত্তি করে তদন্ত কার্য শুরু হয়। সময়ের দিক দিয়ে এ বিবরণটা প্রথম দেয়া হয় বলে একে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলা হয় (ঋরৎংঃ রহভড়ৎসধঃরড়হ ৎবঢ়ড়ৎঃ)। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় কিভাবে এজাহার লিপিবদ্ধ করতে হয় তা বর্ণনা করা আছে। এই ধারা মতে, কোন থানার ভারপ্রাাপ্ত কর্মকর্তার নিকট আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে কোন সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে তিনি তা লিখে তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন ও তার স্বাক্ষর নিবেন এবং লিখিতভাবে প্রদান করা হলে প্রদান কারীর স্বাক্ষর নিয়ে তার সারমর্ম সরকারের ফরম মোতাবেক রক্ষিত বইয়ে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
কে এজাহার করতে পারে:
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি নিজে;
তাঁর পরিবারের সদস্য ;
অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন;
যে কোন ব্যক্তি,যিনি ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন;
ভার প্রাপ্ত পুলিশ অফিসার,যিনি ঘটনা সম্পর্কে জেনেছেন;
কোর্ট এর আদেশক্রমে।
এজাহার করার নিয়মকানুনঃ
কোনো অপরাধ সম্পর্কে নিকটস্থ থানায় এজাহার দায়ের করতে হবে। এজাহারের আবেদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর লিখতে হবে। লিখিত আকারে দেওয়া হলে সাদা কাগজের এক পিঠে লিখতে হবে। কম্পোজ করেও দেওয়া যাবে। ঘটনার পূর্ণ বিবরণ, ঘটনার স্থান, সময় ও কীভাবে ঘটনা ঘটল, আসামির নাম ঠিকানা জানা থাকলে তার বিবরণ স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। এজাহারকারীর পূর্ণ ঠিকানা ও সই থাকতে হবে। যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেওয়া হয়, তাহলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক বা তার নির্দেশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা লিখবেন এবং এজাহার দায়ের কারীর স্বাক্ষর নিবেন।
এজাহারে (ঋওজ) উল্লেখিত বিষয় সমূহঃ
১) সুস্পষ্টভাবে অপরাধীর নাম ও ঠিকানা (জানা থাকলে) উল্লেখ করা;
(২) অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা যৌক্তিকভাবে লিপিবদ্ধ করা;
(৩) অপরাধ সংঘটনের তারিখ ও সময় উল্লেখ করা;
(৪) অপরাধের সংঘটনস্থল উল্লেখ করা;
(৫) অপরাধ সংঘটনের কোনো পূর্বসূত্র বা কারণ থেকে থাকলে তার বর্ণনা তুলে ধরা;
(৬) সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা দেওয়া;
(৭) অপরাধ-পরবর্তী অবস্থা, যেমন-সাক্ষীদের আগমন, আহত ব্যক্তির চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা;
(৮) সাক্ষীদের নাম, ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করা;
(৯) অপরাধীদের কেউ বাধা দিয়ে থাকলে তার ধারাবাহিক বর্ণনা করা;
(১০) কোনো বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে লেখা সম্ভব না হলে পরবর্তী সময়ে সে বিষয়টি সংযোজন করা হবে এবং একটি কৈফিয়ত রাখা।
জিডি (এউ) ও এজাহারের (ঋওজ) পার্থক্য:
১। জিডি করা হয় অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থেকে এবং এজাহার করতে হয় অপরাধ সংঘটনের পরপর।
২। এজাহার কেবলমাত্র আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেই দায়ের করা যায়, কিন্তু জিডি যেকোনো অপরাধ, এমনকি কোনো কিছু হারিয়ে গেলেও করা যায়।
৩। এজাহার মানে মামলা দায়ের, কিন্তু জিডি কোনো মামলা নয়।
এজাহারের সাক্ষ্যগত মূল্য:
আইনে প্রাথমিক তথ্য বিবরনীর কোন সাক্ষ্যগত মূল্য নেই। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট মূল্য রয়েছে।
এজাহার এজমামলার ভিত্তি বিধায় এজাহার যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে।
এজাহারের সাক্ষ্যগত মূল্য হলো- এজাহারে বর্ণিত ঘটনাই রাষ্ট্র পক্ষকে প্রমাণ করতে হয়। পক্ষান্তরে আসামি পক্ষ এজাহারে বর্ণিত ঘটনার অসত্যতা প্রমাণ করতে সদা প্রচেষ্টা চালায়। একটি মামলার এজাহারের ঘটনার ওপরই নির্ভর করে ওই মামলার আসামির জামিন এবং পরবর্তী ধাপে আসামির খালাস বা অব্যাহতি।
সাক্ষ্য আইনের ১৪৫ ধারার বিধান মতে , সাক্ষীর বিবৃতির অসঙ্গতি প্রমানের জন্য এজাহার সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয এবং ১৫৭ ধারার বিধান মতে এজাহারকারীর সাক্ষ্য প্রদানকালে বক্তব্যের সমর্থন লাভের জন্য এজাহারকে ব্যবহার করা যায়। সাক্ষ্র আইনের ৬ ও ৮ ধারা অনুযায়ী এজাহার প্রাসঙ্গিক হলে ইহা তখন মৌখিক সাক্ষ্য হয়ে দাড়ায়।
পরিশেষে যে কথাটি বলা হয়, এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী একটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। একই সঙ্গে এজাহারে বর্ণিত ঘটনার কোনো উপাদান যদি অন্য কোনো ব্যক্তি বা আসামির সম্মানের ক্ষতি করে, তাহলে তা মানহানিকর হবে এবং এজন্য মানহানির মামলাও করা যাবে। তাই এজাহার লিপিবদ্ধ করার সময় প্রত্যেক ডিউটি অফিসার যাতে উপরোক্ত নির্দেশনাগুলো মেনে চলেন তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আইনজীবী-সাংবাদিক এমনকি জনসাধারণকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কেননা জনগণ সচেতন হলেই আইনের অপব্যবহার অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হবে।
এজাহার প্রাপ্তির পর তদন্তকারী অফিসার ফৌজদারী কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন:
এজাহার প্রাপ্তির পর তদন্তকারী অফিসার ফৌজদারী কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী নি¤œলিখিত পদক্ষেপ গ্রহন করবেন-
১)আমলযোগ্য
এজাহার করবার পর যদি উল্লেখিত অপরাধ আমলযোগ্য কিংবা এমন কোনো ঘটনা সংক্রান্ত হয় যা তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিলে আসামীদের ধরা যাবে বা শনাক্ত করা যাবে,বা করা উচিত,সেক্ষেত্রে পুলিশ/তদন্তকারী অফিসার তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিবে এবং ঘটনার তদন্ত করবে ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই[ধারা-১৫৬]। আর যদিএজাহারে বর্ণিত অপরাধ বা বিষয়টি আমলযোগ্য না হয়,তবে পুলিশ/তদন্তকারী অফিসার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নেবে [ধারা-১৫৫]।
তদন্ত অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিয়োজিত কোন ব্যক্তি নি¤েœাক্ত ধাপগুলো সাধারণত পালন করে থাকেন-
ঘটনা স্থলে যাওয়া;
মামলার ঘটনা বা অবস্থা ধংপবৎঃধরহ করা বা অবগত হওয়া।
সন্দেহভাজন অপরাধী বা অপরাধীদের বের করা এবং গ্রেফতার করা।
অভিযুক্ত অপরাধ সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করা যেমন-
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি নেয়া বা জিগ্নাসাবাদ করা,জব্দ তালিকা তৈরী করা; কেস ডায়েরি তৈরী করা,১৭৩ ধারা অনুযায়ী চার্জশিট তৈরীর ব্যবস্থা করা।
এজাহার ও নালিশের মধ্যে পার্থক্য:
১) অপরাধ বা অপরাধমূলক কোনো কিছু ঘটার পর সে বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে থানায় যে সংবাদ দেওয়া বা জানানো হয়,তাকে এজাহার বা (ঋওজ) বলে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহারের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,কোন থানার ভারপ্রাাপ্ত কর্মকর্তার নিকট আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে কোন সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে তিনি তা লিখে তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন ও তার স্বাক্ষর নিবেন এবং লিখিতভাবে প্রদান করা হলে প্রদান কারীর স্বাক্ষর নিয়ে তার সারমর্ম সরকারের ফরম মোতাবেক নির্ধারিত বইয়ে লিপিবদ্ধ করবেন।

 নালিশ বলতে কোন কারণে পুলিশ যদি কখনো থানায় মামলা নিতে না চায় তাহলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আদালতে নালিশি অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিচার চেয়ে যে মামলা দায়ের করা হয় তাকে নালিশি (ঈজ) মামলা বলে।
এই কার্যবিধির ২(জ) ধারায় নালিশের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, একজন লোক,পরিচিত হোক বা অপরিচিত হোক একি ট অপরাধ সংঘটিত করেছে এই মর্মে ফৌজদারী কার্যবিধির অওতায় ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্দেশ্যে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট লিখিত বা মৌখিকভাবে অবহিত করলে তাকে নালিশ বলে।
২) কেবলমাত্র কোন আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রেই ঋওজ দায়ের করা হয়। পক্ষান্তরে আমলযোগ্য ও আমল অযোগ্য যে কোন অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে বা থানায় মামলা গ্রহন করা না করলে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নালিশি মামলা দায়ের করা হয়।
৩) এজাহার পেশ করতে হয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট কিন্তু নালিশ পেশ করতে হয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে।
এজাহারকারী এজাহার দেয়ার সময় কোন শপথ বাক্য পাঠ করেন না। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নালিশ প্রদান কালে সত্যবলবে, মিথ্যা বলবে না এই মর্মে শপথ বাক্য পাঠ করবে।
৪) থানার ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত ফরমে এজাহার লিপিবদ্ধ করেন কিন্তু নালিশের মূল বক্তব্য ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের নোটশীটে লিপিবদ্ধ করেন।
৫) এজাহারের মাধ্যমে মামলা শুরু হলে তদন্তকারী অফিসারের তদন্তে অসন্তুষ্ট হলে এক্ষেত্রে এজাহারকারী নারাজি পিটিশন দাযের করতে পারে পক্ষান্তওে নালিশি মামলা খারিজ হলে দায়রা জজ আদালতে বা হাইকোর্টে উক্ত আদেশ ঘোষনার ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশনের আবেদন করতে পারেন।
৬) এজাহারের ভিত্তিতে তদন্ত করার পর যদি দেখা যায় যে, অপরাধীর বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রদান না করে তদন্ত পুলিশ অফিসার চুড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন। পক্ষান্তওে নালিশের ক্ষেত্রে আসামরি বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমান না পাওয়া গেলে আসামীকে অব্যাহতি খালাশ দেয়া হয়।
এজাহার গ্রহণের কোন সময়গত বাধা আছে কিনা:
মূলত এজাহার গ্রহণের কোন সময়গত বাধা নেই। যে কোন ফৌজদারী অপরাধ সংক্রান্ত বিচার তামাদি আইন দ্বারা বারিত হয না। ফৌজদারী অপরাধের বিচার রাষ্ট্র চাইলে যে কোন সময় যেকোন মুহূর্তে করতে পারবেন। এক্ষেত্রে যেহেতু ফৌজদারী কোন আমলযোগ্য অপরাধ গ্রহনের মাধ্যমে মামলা শুরু হয় এজন্য এজাহার গ্রহনের কোন সময়গত বাধা নেই।
চার্জশীট:আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী পাবার পর থানা হতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনা স্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত (ওহাবংঃরমধঃরড়হ) করেন এবং সাক্ষ্য দ্বারা ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করবে এবং তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ এনে বিচারের জন্য সুপারিশ করবেন। এটাই হচ্ছে চার্জশীট।
ফাইনাল রিপোর্ট:প্রাথমিক তথ্য বিবরণী পাবার পর থানা পুলিশ সরেজমিনে তদন্ত কওে যদি দেখেন যে, আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়নি  কিংবা সংঘটিত হলেও তা সাক্ষ্য, প্রমান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না কিংবা আইন বা ঘটনার ভুল হয়েছে তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়ার সুপারিশ কওে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিবেন।
প্রশ্ন-৩ সংক্ষিপ্ত বিচার কি? কোন কোন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার করা যায় এবং কার দ্বারা? সংক্ষিপ্ত বিচারের পদ্ধতি আলোচনা কর। ঐ সমস্ত ক্ষেত্রে সর্বেচ্চ কত শাস্তি দেয়া যেতে পারে উল্লেখ কর। সংক্ষিপ্ত বিচার প্রদত্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল চলে কি?
সংক্ষিপ্ত বিচারের কোন সংজ্ঞা ফৌজদারী কার্যবিধিতে দেওয়া হয়নি।এই কার্যবিধির ২২ তম অধ্যায়ে ২৬০ থেকে ২৬৩ ধারায় এ সম্পর্কে বিধি বিধান রয়েছে।
যেসকল অপরাধের সাজা ২ বৎসরের কম, যে সকল অপরাধ মারাতœক নয়, গুরুতর নয় এমন অপরাধ,যে অপরাধের জন্য লঘু শাস্তি হবে স্বল্প সময়ের মধ্যে ঐ সকল অপরাধের বিচার সংক্ষিপ্ত সময়ে করাকেই সংক্ষিপ্ত বিচার বলে।
একটি ফৌজদারী মামলা বিচারের জন্য যে ধারাবাহিক পদ্ধতি রয়েছে ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা কওে এ ধরণের বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কে/ কোন ধরনের ম্যাজিস্ট্রেট সংক্ষিপ্ত বিচার করতে পারে:
১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কাযবিধির ২৬০ ধারা অনুযায়ী
ক) যে কোন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট; অথবা
খ) কোন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট; এবং
গ) প্রথম শ্রেণীর ক্ষমতা সম্পন্ন কোন ম্যাজিস্ট্রেট বেঞ্চ।
কোন কোন অপরাধের বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে করা যায়:
নিম্ন বর্ণিত অপরাধ সমূহের সবগুলির অথবা যে কোন একটি সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করবেন:
ক) মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় নয়, যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় নয় বা দুই বৎসরের অধিক মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডনীয় নয় এরুপ অপরাধ।
খ) দন্ডবিধি ( ১৮৬০ সনের ৪৫ নং আইন) এর ধারা ২৬৪, ২৬৫ এবং ২৬৬ এর অধীন ওজন ও পরিমাপ সম্পর্কিত অপরাধ।
গ) দন্ডবিধির ৩২৩ ধারা অনুসারে আঘাত;
ঘ) ১৮৬০ সালেরর দন্ড বিধির ধারা ৩৭৯,৩৮০,৩৮১ এর অধীন চুরি, যে ক্ষেত্রে  চোরাই মালের মূল্য ১০০০০ টাকার অধীক নয়।
ঙ) দন্ড বিধির ধারা ৪০৩ এর অধীন অসৎভাবে সম্পত্তি আতœসাৎ, যে ক্ষেত্রে আতœসাৎকৃত সম্পত্তির মূল্য ১০০০০ টাকার অধীক নয়।
চ) ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ধারা ৪১১ এর অধীর চোরাই মাল গ্রহন বা রাখা, যে ক্ষেত্রে উক্ত মালের মূল্য ১০০০০ টাকার অধীক নয়।
ছ) ১৮৬০ সালের দন্ড বিধির ৪১৪ এর অধীন চোরাইমাল গোপন বা হস্তান্তর করতে সাহায্য করা, যে ক্ষেত্রে উক্ত মালের মূল্য ১০০০০ টাকার অধিক নয়।
জ) দন্ডবিধির ৪২৬ এবং ৪২৭ এর অধীন ক্ষতিসাধন।
ঝ) দন্ডবিধির ৪৪৭ ধারা অনুসাওে গৃহে অনধিকার প্রবেশ ;
ঞ) দন্ডবিধির ৫০৪ও ৫০৬ ধারা অনুসারে শান্তিভঙ্গে উস্কানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে অপমান করা ও অপরাধ জনকভীতি প্রদর্শন;
ট) কোন নির্বাচনে ঘুষ নেওয়ার এবং এক ব্যক্তির পরিবর্তে অন্য ব্যক্তি ব্যবহার করণের অপরাধ।
ঠ) ১৮৭১ সালের গো মহিষাদি পশুর অনধিকার প্রবেশ আইনের ধারা ২র এর অধীর অপরাধ
উপযুক্ত অপরাধ সমূহের যে কোন একটি করার চেষ্টা করা ,যখন এরুপ চেষ্টা অপরাধ বলে গন্য হয়,তবে শত থাকে যে, যে সকল ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট ৩৩ক ধারায় প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, সে সকল মোকদ্দমার বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে হবে না।
বিচার পদ্ধতি:
সংক্ষিপ্ত বিচারে ২ বছরের বেশী কারাদন্ড দেয়া যায় না। নি¤েœাক্ত কতিপয় পদক্ষেপ ব্যতীত অন্যান্য ফৌজদারী মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এ ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৩ ধারায় বলা হয়েছে যে,
যে সকল মোকদ্দমা আপীলযোগ্য নয় সে সকল মোকদ্দমায় ম্যাজিস্ট্রেটের বা ম্যাজিস্ট্রেট এর বেঞ্চের সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার বা আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন করার প্রয়োজন নাই, তবে তিনি বা তাঁর সরকার কর্তৃক নির্দেশিত ফরমে নি¤œলিখিত তথ্য লিপিবদ্ধ করবেন-
ক) ক্রমিক নম্বর;
খ) অপরাধ সংঘটনের তারিখ;
গ) এজাহার বা নালিশের তারিখ;
ঘ) ফরিয়াদির নাম (যদি থাকে)
ঙ) আসামীর নাম,পিতার নাম ও বাসস্থান;
চ) অভিযোগ কৃত অপরাধ ও প্রমানিত অপরাধ;
ছ) চুরি,অপরাধমূলক আতœসাৎ,চোরাইমাল গ্রহন এবং চোরাই মাল গোপনে সহায়তা করা ইত্যাদি অপরাধের ক্ষেত্রে মালের মূল্য;
জ) আসামীর বক্তব্য ও তার জবানবন্দী (যদি থাকে)
ঝ) ম্যাজিস্ট্রেটের সিন্ধান্ত এবং এজন্য সংক্ষিপ্ত কারণ;
ঞ) দন্ড ও অন্য চুড়ান্ত আদেশ;
ট) বিচার শেষ হওয়ার তারিখ।
২৬৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, ম্যাজিস্ট্রেট বা বেঞ্চ কর্তৃপক্ষ যে সমস্ত আপীল যোগ্য মোকদ্দমার বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে করেন তার প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উক্ত ম্যাজিস্ট্রেট বা বেঞ্চ দন্ডদানের পূর্বে সাক্ষ্যের সংক্ষিপ্ত সার ও ২৬৩ ধারায় বর্ণিত তথ্যাবলী সম্বলিত রায় লিপিবদ্ধ করবেন।
বেঞ্চে মতবিরোধ সৃষ্টি হলে বিরুদ্ধমত পোষনকারী বিচারক পৃথক রায় দিতে পারেন। এ ধরণের বিচার পদ্ধতিতে বিচারকালে এরুপ বোঝা যায় যে, মামলাটি এমন প্রকৃতির যে ঐ সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি হওয়া উচিত নয়, তবে সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা বেঞ্চ এ আইনে বর্ণিত পদ্ধতিতে মামলাটি পুনরায় বিচার করতে পারবেন।
সংক্ষিপ্ত বিচারে সর্বোচ্চ কতদূর সাজা দেওয়া যায়:
১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কাযবিধির ২৬২ ধারায সংক্ষিপ্ত বিচারের কাযবিধি,কারাদন্ডে সীমা উল্লেখ করা হয়েছে।
১) অত:পর বর্ণিত ব্যতিক্রম সাপেক্ষে এই অধ্যায় অনুসারে বিচারে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসৃত হবে।
২) সংক্ষিপ্ত বিচারের দন্ডাদেশের ক্ষেত্রে দুই বৎসরের অধিক কারাদন্ডে আদেশ দেওয়া যাবে না।
সংক্ষিপ্ত বিচারের বিরুদ্ধে আপীল চলে কি:
সংক্ষিপ্তভাবে বিচারকৃত কোন মোকদ্দমায় ২৬০ ধারা অনুসারে কার্য করতে ক্ষমতাবান কোন ম্যাজিস্ট্রেট অনধিক দুইশত টাকা মাত্র জরিমানা করলে দন্ডিত ব্যক্তি কোন আপলি করতে পারবে না।
প্রশ্ন-৪ জামিন কাকে বলে? কোন কোন অবস্থায় আসামী জামিনে মুক্তি পেতে পারে? জামিনের অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিনের কিরুপ ব্যবস্থা রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর। জামিন মঞ্জুর বা না মঞ্জুরের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় বিবেচনা করা উচিত? জামিনের আইনগত ভিত্তি কি? আগাম জামিন কি? কে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে? জামিনের আইনগত ভিত্তি কি? জামিন বাতিলের ক্ষেত্রে আদালতের কোন নীতিগুলো বিবেচনা করা উচিত? জামিন নামা কি?
জামিন কি:
সাধারণত কোনো ব্যক্তিকে আটকের পর আদালত তার আইন ও সুবিবেচনামূলক এখতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে আটক কোন ব্যক্তিকে আদালতের আদেশ মতো নির্দিষ্ট স্থানে এবং নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে সাময়িক মুক্তির ব্যবস্থা করাকে আইনের চোখে ‘জামিন’ বলা হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, সংশ্লিষ্ট আদালতে সময়মত হাজির হওয়ার শর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে আইনগত হেফাজত থেকে মুক্তি প্রদান করে জামিনদারের নিকট সমর্পন করাকে জামিন বলে। মামলার যেকোন পর্যায়ে জামিন মঞ্জুর করা যায়।এমনকি বিচার শুরু হবার পরও জামিন মঞ্জুর করা যায়। উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধিতে জামিনের কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি।
জামিন লাভের উপায়
সাধারণতঃ জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া আসামীর অধিকার, আর জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন প্রদান কর আদালতের এখতিয়ার। তবে জামিন অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে আদালতকে সূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনার ওপর নির্ভর করতে হয়। এরূপ বিচার-বিবেচনার বেশ কিছু নির্ধারক উপাদান (উবভরহরহম ঋধপঃড়ৎ) আছে।
 জামিন অযোগ্য মামলায় জামিন লাভে বিবেচ্য উপাদান সমূহ :
১। আসামী শিশু, বৃদ্ধ, নারী কিংবা হীনবল কিনা।
২। আসামীর দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তান আছে কিনা।
৩। আসামী দাগী, দূর্ধষ বা অভ্যাসগত অপরাধীর দূর্নামবিহীন কিনা।
৪। ডাক্তারী সনদ মতে আসামী রোগাক্রান্ত বা জখমপ্রাপ্ত কিনা।
৫। আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যুক্তিসঙ্গত কিনা।
৬। আসামী হাজতে থাকলে মামলা পরিচালনা কঠিন হবে কিনা।
৭। আসামী ছাত্র বা পরীক্ষার্থী কিনা।
৮। আসামী স্বনাক্তকরণ মহড়ায় (ঞ.ও.চ) স্বাক্ষী আসামীকে স্বনাক্ত করেছে কিনা।
৯। বাদী/আসামী উভয়পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা বা পূর্ব শক্রতা আছে কিনা।
১০। আসামী দীর্ঘদিন হাজতে আছে কিনা।
১১। আসামী ফৌঃকাঃবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিয়েছে কিনা।
১২। আসামী জেল হাজতে থাকায় তার পরিবারের লোকজন অর্থাভাবে বা অনাহারে আছে কিনা।
১৩। আসামী এজাহারনামীয় না হয়ে সন্ধিগ্ন কিনা।
১৪। জামিন পেলে তদন্তে বিঘ্ন বা স্বাক্ষ্য নষ্ট হবে কিনা।
১৫। আসামী জামিন পাইলে পলাতক হবে কিনা।
১৬। আসামী স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণকারী বা পূলিশ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত কিনা।
১৭। মামলার সহযোগী আসামী জামিনে আছে কিনা।
১৮। মামলায় আপোষ-মিমাংশার সম্ভাবনা আছে কিনা।

কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অপরাধের অভিযোগ থাকলেই তাকে দোষী বলা যায় না। আদালতে দোষী প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ ধরতে হবে এটাই আইনের নীতি। তাই দোষী প্রমানিত হবার পুর্বে কাউকে আটকে রাখা হলে তা ন্যায় বিচারের পরিপন্থি হবে। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যাক্তি আটক থাকলে তার সামাজিক,পারিবারিক,শারিরিক,মানসিক নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। তাই অহেতুক তাকে আটক রাখা আইনে সমর্থনীয় নয়। আবার বিচারের সময় অপরাধীকে আদালতে থাকা প্রয়োজন, তাই বিচারের সময় তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিতে জামিনের বিধান রাখা হয়েছে।

ফৌজদারি আইনে অপরাধগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক) জামিন যোগ্য (নধরষধনষব) এবং খ) জামিন-অযোগ্য (ঘড়হ নধরষধনষব)। ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে আসামী যে অবস্থায় মুক্তি পেতে পারে তা নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
জামিন যোগ্য অপরাধঃ ধারা ৪৯৬। জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তি কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে, বা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে, সে যদি উক্ত অফিসারের হেফাজতে থাকার সময় বা উক্ত আদালতের কার্যক্রমের কোন পর্যায়ে জামানত দিতে প্রস্তুত থাকে তা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে।
তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত অফিসার বা আদালত উপযুক্ত মনে করলে তার নিকট হতে জামানত গ্রহণের পরিবর্তে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন।
তবে আরও শর্ত থাকে যে, এই ধারার কোন বিধান ১০৭ ধারার (৪) উপধারা বা ১১৭ ধারার (৩) উপধারার কোন বিধানকে প্রভাবিত করবে বলে গণ্য হবে না।
জামিন-অযোগ্য অপরাধঃ ধারা ৪৯৭। যখন জামিনের অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা যাবেঃ
(১) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে অথবা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে; কিন্তু সে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দোষী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে উক্তরূপে দেওয়া যাবে নাঃ
তবে শর্ত থাকে যে, আদালত এইরূপ অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি ষোল বৎসরের কম বয়স্ক বা স্ত্রীলোক বা পীড়িত বা অক্ষম হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
(২) ক্ষেত্রমতে তদন্ত, ইনকোয়ারী বা বিচারের কোন পর্যায়ে উক্ত অফিসার বা আদলতের নিকট যদি প্রতিয়মান হয় যে, আসামী জামিনের অযোগ্য কোন অপরাধ করেছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই, কিন্তু তার অপরাধ-সম্পর্কে আরও ইনকোয়ারির পর্যাপ্ত হেতু রহয়েছে, তাহলে এইরূপ ইনকোয়ারী সাপেক্ষে আসামীকে জামিনে, অথবা উক্ত অফিসার বা আদলত বা আদালতের ইচ্ছানুযাসারে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন।
(৩) কোন অফিসার বা আদালত (১) উপধারা বা (২) উপধারা অনুসারে কোন ব্যক্তিকে মুক্তি দিলে তার ঐরূপ করার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন।
(৪) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার সমাপ্ত হবার পর এবং রায় দানের পূর্বে কোন সময় আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী উক্ত অপরাধে দোষী নয় বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে, তা হলে আসামী হাজতে থাকলে রায় শ্রবণের উদ্দেশ্যে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদনের পর তাকে মুক্তি দিবেন।
(৫) হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা আদালত এবং নিজে মুক্তি দিয়ে থাকলে অন্য কোন আদালত এই ধারা অনুসারে মুক্তিপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে ও তাকে হাজতে প্রেরণ করতে পারবেন।
আগাম জামিন (অহঃরপরঢ়ধঃড়ৎু ইধরষ) কাকে বলে ?
যখন গ্রেপ্তার হবার সম্ভাবনায় বা গ্রেপ্তার হবার অনুমানে কোন ব্যাক্তিকে জামিন প্রদান করা হয়, তখন তাকে অহঃরপরঢ়ধঃড়ৎু ইধরষ বা আগাম জামিন বলে। অভিযুক্ত ব্যক্তি অনেক সময় গ্রেপ্তারের আগেই আদালত থেকে জামিন গ্রহণ করতে পারেন। এ ধরণের জামিন সাধারণতঃ দেয়া হয় না। জামিনের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম হিসাবে এ ধরণের জামিন দেয়া হয়। যখন কোন ব্যক্তির নিকট বিশ্বাস করার এমন কারণ থাকে যে, তিনি কোন জামিন অযোগ্য অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে পারেন, তখন তিনি হাইকোর্ট বিভাগে বা দায়রা আদালতে নির্দেশের জন্য আবেদন করলে আদালত যদি যথাযথ মনে করেন তাহলে ঐ মুহুর্তে উক্ত ব্যক্তিকে ভবিষ্যৎ গ্রেপ্তারের উপর আগাম জামিন নির্দেশ করবেন।

আগাম জামিন অনুমোদন করার জন্য আইনের বিধানে কোন নির্দিষ্ট ধারা নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারাকে ব্যাখ্যা করে পরবর্তীতে 'আগাম জামিন' দেয়া অব্যাহত রাখেন আদালত। তাই আগাম জামিনের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। এই ধারার শব্দাবলী “হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা আদালত যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুর করার নির্দেশ প্রদান করতে পারেন” এই অংশের ব্যাখ্যা প্রদান করে কেবল মাত্র হাইকোর্ট বিভাগ ও দায়রা আদালত আগাম জামিন প্রদান করতে পারেন যে কোন ক্ষেত্রে এবং কোন রকম সীমাবদ্ধতা ছাড়া।
'আগাম জামিন' পেতে আবেদনকারীকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি সরকারের বিরাগভাজন হয়ে আশু গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন। তাকে দেখাতে হবে যে, রাষ্ট্রপক্ষ অসদুদ্দেশ্যে তাকে গ্রেপ্তার করতে চায় এবং এতে করে তার সুনাম এবং স্বাধীনতায় অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। পিএলডি ১৯৮৩-এর একটি মামলায় বলা হয়েছে, পুলিশ যে তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে গ্রেপ্তার করতে চাইছে, আদালতের সামনে তা প্রমাণ করতে হবে।
৫ বিএলডি ১৯৮৫'র একটি মামলায় আপিল বিভাগের পূর্ণ বেঞ্চের এক সিদ্ধান্তে বলা হয়, কাউকে খাটো করার উদ্দেশ্যে বিদ্বেষমূলক মামলায় জড়ানোর আশঙ্কা থাকলে একজন ব্যক্তি 'আগাম জামিন' পেতে পারেন। তবে আসামি যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে এবং আদালতের নির্দেশমাত্র হাজির হতে পারে, আগাম জামিন মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে আসামী মুক্তি পেতে পারে;
(ক),জামিন যোগ্য অপরাধঃ
ধারা ৪৯৬। জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তি কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে, বা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে, সে যদি উক্ত অফিসারের হেফাজতে থাকার সময় বা উক্ত আদালতের কার্যক্রমের কোন পর্যায়ে জামানত দিতে প্রস্তুত থাকে তা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেয় তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত অফিসার বা আদালত উপযুক্ত মনে করলে তার নিকট হতে জামানত গ্রহণের পরিবর্তে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন।
তবে আরও শর্ত থাকে যে, এই ধারার
কোন বিধান ১০৭ ধারার (৪) উপধারা বা ১১৭ ধারার (৩) উপধারার কোন বিধানকে প্রভাবিত করবে বলে গণ্য হবে না।
(খ),জামিন-অযোগ্য অপরাধঃ
ধারা ৪৯৭। যখন জামিনের অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা যাবেঃ
(১) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক
বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে অথবা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া কিন্তু সে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দোষী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে উক্তরূপে দেওয়া যাবে নাঃ তবে শর্ত থাকে যে, আদালত এইরূপ অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি ষোল বৎসরের কম বয়স্ক বা স্ত্রীলোক বা পীড়িত বা অক্ষম হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
(২) ক্ষেত্রমতে তদন্ত, ইনকোয়ারী বা বিচারের কোন পর্যায়ে উক্ত অফিসার বা আদলতের নিকট যদি প্রতিয়মান হয় যে, আসামী জামিনের অযোগ্য কোন অপরাধ করেছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই, কিন্তু তার অপরাধ-সম্পর্কে আরও ইনকোয়ারির পর্যাপ্ত হেতু রহয়েছে, তাহলে এইরূপ ইনকোয়ারী সাপেক্ষে আসামীকে জামি অথবা উক্ত অফিসার বা আদলত বা আদালতের ইচ্ছানুযাসারে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন। (৩) কোন অফিসার বা আদালত (১) উপধারা বা (২) উপধারা অনুসারে কোনব্যক্তিকে মুক্তি দিলে তার ঐরূপ করার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন।
(৪) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার সমাপ্ত হবার পর এবং রায় দানের পূর্বে কোন সময় আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী উক্ত অপরাধে দোষী নয় বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে, তা হলে আসামী হাজতে থাকলে রায় শ্রবণের উদ্দেশ্যে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদনের পর তাকে মুক্তি দিবেন।
(৫) হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা আদালত এবং নিজে মুক্তি দিয়ে থাকলে অন্য কোন আদালত এই ধারা অনুসারে মুক্তিপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে ও তাকে হাজতে প্রেরণ করতে পারবেন।
খ) রিভিউ:দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় মামলার বিচারকার্যে রিভিউ প্রযোজ্য।রিভিউ (জবারব)ি কিছু নির্দিষ্ট এবং নির্দেশিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার পুন:নিরীক্ষণকে রিভিউ বলে। বিচার বিভাগীয় প্রত্যেক অঙ্গে রিভিউ সম্ভব।রিভিউ হলো কোন আদালত কোন অপরাধীকে একবার শাস্তি দিয়েছেন, এখন ওই একই আদালতে যদি অপরাধী তার শাস্তি কমানোর জন্য আবেদন করেন তাহলে সেটি হলো রিভিউ। মানে হল যে আদালত প্রথম রায় দিয়েছেন,রিভিউ সেই আদালতই শুনানি করবেন।


প্রশ্ন-৫ চার্জ কি? ফৌজদারী মামলায় আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠনের উদ্দেশ্য কি? একটি চার্জে কি কি বিষয় অন্তভূক্ত থাকে? কথন বিভিন্ন অপরাধ একত্রে চার্জভূক্ত করা যায়? চার্জ গঠন ব্যতিরেকে বিচার কি বৈধ? আলোচনা কর।চার্জ গঠনের অপরাধের সীমা আছে কি? যদি থাকে তবে কখন?
অভিযোগ (ঈযধৎমব):
ফৌজদারী বিচার কার্যক্রমে চার্জ একটি গুরুত্বপুর্ণ স্তর যা অনুসন্ধান এবং বিচার কে পৃথক করে। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি কি ধরণের অপরাধ করেছে এবং কার বিরুদ্ধে অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে তা চার্জ থেকে জানা যায়। ফৌজদারী কার্যবিধিতে চার্জের কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। তবে বিচার বিভাগীয় ব্যাখ্যা হতে এর অর্থ অনুধাবন করা যায়।
ভারতীয় আদালতের অভিমতে, চার্জ হচ্ছে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ যার প্রকৃতি সম্পর্কে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাথমিক স্তরেই জানার অধিকারী।
বাংলাদেশের আদালতের অভিমত অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি যে অপরাধ সংঘটন করেছে তা চার্জে উল্লেখ করা থাকবে এবং আইনে যদি সেই অপরাধের নির্দিষ্ট নাম থাকে তবে চার্জে তা ও উল্লেখ থাকতে হবে। নাম না থাকলে অপরাধের বিবরণ থাকতে হবে যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি বুঝতে সক্ষম হয় যে, তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ২২১ থেকে ২৪০ ধারা পর্যন্ত অভিযোগ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অভিযোগ ইংরেজিতে বা আদালতের ভাষায় লিখিত হতে হবে। অভিযোগে সংঘটিত অপরাধের সময়, স্থান এবং যার বিরুদ্ধে বা যে বস্তুর বিরুদ্ধে অপরাধ করা হয়েছে তার বর্ননা এমন ভাবে থাকতে হবে যাতে, আসামী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে পুর্নভাবে অবগত থাকে। রায় ঘোষণার পুর্বে আদালত যে কোন সময় অভিযোগ পরিবর্তন বা নতুন অভিযোগ করতে পারেন। তবে, এরুপ প্রতিটি পরিবর্তন বা সংযোজন আসামীকে পড়ে শুনাতে ও বুঝাতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, চার্জ হচ্ছে একটি লিখিত বিবরণ যাতে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক কৃত অপরাধের সময়, স্থান, প্রকৃতি এবং যে ব্যক্তি বা বস্তুর বিরুদ্ধে অপরাধ করা হয়েছে তার বর্ননা ও আইনের যে ধারার অধীনে আসামীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তার উল্লেখ থাকে।
ফৌজদারী মামলায় চার্জের উদ্দেশ্য কি:
চার্জ হচ্ছে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ যার প্রকৃতি সম্পর্কে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাথমিক স্তরেই জানার অধিকারী।চার্জের উদ্দেশ্য হচ্ছে-
অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে সেটা সম্পর্কে তাকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করানো যেন অতœপক্ষ সমর্থনে সে ব্যক্তি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে।
সুস্পষ্টভাবে চার্জগঠন করা হয় যাতে অপরাধের প্রয়োজনীয় উপাদান অবর্তমান থাকলে সে চার্জ ক্রুটিমুক্ত হবে মর্মে আদালত অভিমত প্রকাশ করেন।
একত্রে কি অনেকগুলো অপরাধের চার্জ গঠন হতে পারে:
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩৩ ধারা অনুযায়ী
কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রত্যেক স্বতন্ত্র অপরাধের জন্য আলাদা অভিযোগ প্রস্তুত করতে হবে এবং প্রত্যেক অভিযোগের জন্য আলাদা বিচার অনুষ্ঠান করতে হবে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি একাধিক অভিযোগ থাকে তবে প্রত্যেকটি অভিযোগ সম্পর্কে তাকে অবহিত করতে হবে এবং দেখতে হবে যেন একটি অভিযোগের সাথে সম্পর্কহীন অপর অভিযোগের দ্বারা তাকে অযথা হয়রানী না করা হয়।
উদাহরণ:ক একটি ক্ষেত্রে চুরি এবং অপর ক্ষেত্রে গুরুতর রুপে আহত করার জন্য অভিযুক্ত হয়েছে। এখন চুরি ও গুরুতর আঘাতের জন্য তার বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগ বা চার্জ গঠর করতে হবে এবং পৃথকভাবে বিচার করতে হবে।
ব্যতিক্রম:
উপরিউক্ত বিধির ব্যতিক্রম রয়েছে ২৩৪,২৩৫ ও ২৩৬ ধারায়।
১) ২৩৪ ধারার বিধান মতে,যখন কোন ব্যক্তি একই রকমের একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়,এবং অপরাধগুলি প্রথম অপরাধ হতে শেষ অপরাধ পর্যন্ত ১২ মাস সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়, তখন অপরাধগুলি একই ব্যক্তি সম্পর্কিত হোক বা না হোক, তার বিরুদ্ধে তিনটি অপরাধের জন্য চার্জ গঠন ও একটিমাত্র মোকদ্দমায় বিচার করা যেতে পারে।
২) যদি কতগুলি কার্য এমনভাবে পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয় এবং ঐগুলি সমষ্ঠিগতভাবে একটিমাত্র দেনদেনের পর্যায়ভূক্ত হয় এবং একই ব্যক্তি যদি একাধিক অপরাধ করে তাহলে ২৩৫(১) ধারানুসারে প্রত্যেকটি অপরাদের জন্য অভিযোগ গঠন করে একই বিচারে তার বিচার করা যায়।
৩) যদি কথিত কার্যগুলি দ্বারা এমন একটি অপরাধ সংঘটিত হয় যা প্রচলিত আইনের দুই বা তথোধিক সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে তবে প্রতিটি সংজ্ঞায় বর্ণিত অপরাধের জন্য  অভিযোগ গঠন করে ২৩৫(২) ধারা অনুসারে একই বিচারে তার বিচার করা যেতে পারে।
৪) যদি কতিপয় কার্যের মধ্যে একটি বা একাধিক কার্য এককভাবে বা মিলিতভাবে একটি অপরাধ গঠন করে এবং সেই কার্যগুলি যদি একত্রে সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে তাহলে ২৩৫(৩) ধারা অনুসারে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে উক্ত কার্যসমূহের একত্রিত অপরাধ কিংবা একটা কার্যের একক অপরাধ বা একাধিক কার্যের একত্রিত অপরাধের জন্য অভিযোগ গঠন করা যেতে পারে এবং একই মামলায় তার বিচার হতে পারে।
৫) ২৩৬ ধারা মোতাবেক যদি একটি কার্য কিংবা ধারাবাহিক কতিপয় কার্য এরুপ প্রকৃতির হয় যে, সকল তথ্য প্রমানিত হলে তার দ্বারা কি কি অপরাধ সংঘটিত হয বওে সন্দেহ থাকে, তাহলে অপরাধরি বিরুদ্ধে সকল প্রকার অপরাধের জন্য অভিযোগ গঠন করা যাবে এবং একই বিচারে বিচার করা যাবে।
চার্জ কি পরিবর্তন করা যায়:
ফৌজদারী কার্যবিধির ২২৭ ধারার বিধান অনুযায়ী-
১) রায় ঘোষনার পূর্বে যে কোন সময় যে কোন আদালত অভিযোগ পরিবর্তন বা নতুন অভিযোগ করতে পারেন,।
২) এরুপ প্রত্যেকটি পরিবর্তন বা সংযোগ আসামীকে পড়ে শুনাতে বা বুঝাতে  হবে।
ধারা ২২৮: ২২৭ ধারা অনুসারে প্রণীত বা পরিবর্তিত বা সংযোজিত চার্জ যদি এরুপ হয় যে, আদালতের অভিমতে অবিলম্বে বিচার আরম্ভ করলে আসামীর আতœপক্ষ সমর্থন বা সরকার পক্ষের মামলা পরিচালনা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নাই. তাহলে আদালত ইচ্ছা করলে চার্জ প্রণয়ন,পরিবর্তন বা সংযোজনের পর নতুন বা পরিবর্তিত চার্জ মূল চার্জ হিসাবে গন্য করে বিচার আরম্ভ করতে পারেন।
ধারা -২২৯: যদি নতুন,পরিবর্তিত বা সংযোজিত চার্জ এরুপ হয় যে, আদারতের মতে অবিলম্ভে বিচার আরম্ভ করলে আসামী বা সরকার পক্ষের ক্ষতি হতে পারে, তাহলে আদালত নতুন বিচারের নির্দেশ দিতে পারেন অথবা প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য বিচার মুলতবী রাখার নির্দেশ দিতে পারেন।
ধারা ২৩০: নতুন,পরিবর্তিত বা সংযোজিত চার্জে বর্নিত অপরাধ যদি এরুপ হয যে, মোকদ্দমা চলার জন্য পূর্ব অনুমতি প্রয়োজন , তাহলে উক্ত অনুমতি গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত উহা চালানো যাবে না; তবে নতুন বা পরিবর্তিত চার্জের ভিত্তি যে ঘটনার উপর প্রতিষ্ঠিত, সে ঘটনার ভিত্তিতে মামলা চলার পূর্ব অনুমতি গ্রহন করা হয়ে থাকলে পুনরায় অনুমতি গ্রহনের প্রয়োজন নাই।
ফৌজদারি কার্য়বিধির ২৩১ ধারা মোতাবেক বিচার আরম্ভ হওয়ার পর আদালত চার্জ পরিবর্তন বা নতুন চার্জ সংযোজন করলে সরকার পক্ষে ও আসামী পক্ষে ইতোপুর্বে যে সকল সাক্ষীর জবারবন্দী গ্রহন করা হয়েছে , তাদের পুনরায় ডেকে উক্ত পরিবর্তন বা সংযোজন সম্পর্কে জবানবন্দী পেশ করতে দিতে হবে এবং আদালতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করলে অতিরিক্ত কোন সাক্ষী তলবেরও অনুমতি দিবেন।
চার্জের বিষয়বস্তু: চার্জের বিষয়বস্তু যা সম্পর্কে ফৌজদারী কা: বি: ২২১ থেকে ২২৩ ধারায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
ধারা-২২১:
১) চার্জে অপরাধের বিবরণ থাকতে হবে:
২) অপরাধের নির্দিষ্ট নাম উল্লেখই যথেষ্ট বিবরণ;
৩) যে ক্ষেত্রে অপরাধের কোন নির্দিষ্ট নাম নেই সেক্ষেত্রে যেভাবে উল্লেখ করতে হবে:
৪) যে আইন এবং যে ধারা অনুসারে অপরাধ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে,চার্জে তার উল্লেখ করতে হবে।
৫) চার্জ দ্বরা কি বুঝায়;
৬) চার্জের ভাষা;
৭) পূর্ববর্তী দন্ডের বিষয় যখন উল্লেখ করতে হবে:
ধারা-২২২:সময স্থান ও লোক সম্পর্কে বিবরণ:
১) চার্জের মধ্যে অবিযোগকৃত অপরাধের সময় ও স্থান এবং যার বিরুদ্ধে অপরাধ করা হয়েছে সে ব্যক্তি অথবা যে বস্তু সম্পর্কে অপরাধ করা হয়েছে সে বস্তু সম্পন্ধে এরুপ তথ্য থাকবে, যার ফলে আসামী তার বিরুদ্ধে আনীত চার্জের বিষয়বস্তু সম্পর্কে যুক্তিসঙ্গত ভাবে ও পর্যাপ্তরুপে জ্ঞাত হতে পারে।
২) আসামীকে যখন অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অথবা অসাধুভাবে অর্থ আতœসাতের অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়, তখন সম্পূর্ণদফা বা সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না করে যে পরিমান টাকা সম্পর্কে অপরাধ করা হয়েছে,মোটামুটিভাবে তা এবং যে তারিখ সমূহের মধ্যে অপরাধ করা হয়েছে তা উল্লেখ করলেই যথেষ্ট হবে।

ধারা-২২৩: যখনঘটনার প্রকৃতি এরুপ যে,২২১ও ২২২ ধারায় উল্লেখিত তথ্যাবলী দ্বারা আসামীকে তার বিরুদ্ধে আনীত চার্জ সম্পর্কে পর্যাপ্তরুপে জ্ঞাত করা যায় না,তখন যেভাবে অভিযোগকৃত অপরাধটি করা হয়েছিল,চার্জে সে সম্পর্কে এরুপ তথ্য দিতে হবে যে তা জ্ঞাত করার উদ্দেশ্যে পর্যাপ্তরুপে সাধিত হতে পারে।
প্রশ্ন-৬ রিভিশন এখতিয়ার বলতে কি বুঝ? ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত হাইকোর্ট বিভাগ এবং দায়রা জজ আদালতের রিভিশন এখতিয়ার বর্ণনা কর। আপীল ও রিভিশনের মধ্যে পার্থক্য কি? ফৌজদারী কার্যবিধিতে পূর্বের বিচার ঘোষিত দন্ড বা খালাসের কখন নতুন বিচার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধা বলে গণ্য হয়?
রিভিশন এখতিয়ার:
রিভিশন বলতে ভুলক্রটি সংশোধনের জন্য পুনরায় দেখা বুঝায়।নি¤œ আদালতের ভুলক্রটি সংশোধনের জন্য উচ্চ আদালতের যে এখতিয়ার রয়েছে তাকে রিভিশনের এখতিয়ার বলে।বিচার কার্যক্রমে নানাবিধ ভুলক্রটি হতে পারে।আইন সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যার অভাবপদ্ধতিগত অনিয়ম,যথাযথ সাবধানতার অভাবএবং রুঢ়ভাবে মামলা পরিচালনার ফলে এরুপ ভুলক্রটি হয়ে যেতে পারে।এগুলি সংশোধনের ব্যবস্থা না থাকলে ন্যায় বিচারের পরিবর্তে অবিচার হয়ে দাঁড়াবে। তাই উচ্চতর আদালত নি¤œ আদালতের নথি তলব করে এগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সংশোধনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৫ ধারা মতে, নি¤œলিখিত আদালতগুলির তাদের অধিনস্ত আদালতের বিচার কার্যক্রমের উপর রিভিশনের এখতিয়ার রয়েছে:
১) সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ;
২) দায়রা জজ,
৩) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
৪) সরকার কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত যে কোন ম্যাজিস্ট্রেট,
৫) প্রধান মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
রিভিশন (জবারংরড়হ) হলো উচ্চতর আদালতের পূর্নবিবেচনামূলক প্রতিকার। উচ্চতর আদালত কর্তৃক ব্যবহৃত নিম্ন আদালতের তদারকি ক্ষমতা হলো রিভিশন। দেওয়ানী ও ফৌজদারী ও উভয় মামলার বিচারকার্য রিভিশন প্রযোজ্য।

হাইকোর্ট বিভাগ এবং দায়রা জজ আদালতের রিভিশন এখতিয়ার:
হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশনাল এখতিয়ার:

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৯ ধারায় হাইকোট বিভাগের রিভিশনের ক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে। বিচার প্রশাসন তদারকি ও নিয়ন্ত্রন করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই আইনের অপব্যাখ্যার কারণে কিংবা পদ্ধতিগত কোন কারণেকিংবা যথার্থ সতর্কতার অভাবে বিচারের পরিবর্তে অবিচার হবার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই নি¤œ আদালত কোন বিচার কার্যে কি পেয়েছেন, কি রায় বা আদেশ দিয়েছেন সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য নথি তলব করে এবং প্রয়োজন বোধে সংশোধন করে দেওয়ার এখতিয়ার হাইকোর্ট বিভাগের রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশন এখতিযার চুড়ান্ত এবং এর পরে আর রিভিশনের সুযোগ থাকে না। হাইকোর্ট বিভাগের রিভিশনের এখতিয়ার যদিও খুব ব্যাপক ও বিস্তৃত ইহা অধিকার হিসেবে দাবী করা যায় না কেননা ইহা আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। ইহা উচ্চ আদালতের একটি অসাধারণ ক্ষমতা যা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। পরিস্থিতি এরুপ হস্তক্ষেপের দায়ী না করলে সাধারণত হাইকোট বিভাগ তার রিভিশনের এখতিয়ার প্রয়োগ করেন না।
দায়রা জজের রিভিশন ক্ষমতা:
৪৩৯-এ ধারায় বলা হয়েছে যে,
১) দায়রা জজ নিজে কোন কার্যক্রমের নথি তলব করে থাকলে বা অন্য কোনভাবে বিষয়টি তার গোচরীভুত হলে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৯ ধারা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের যাবতীয় বা যে কোন ক্ষমতা তিনি প্রয়োগ করতে পাববেন।
২) কোন ব্যক্তি কর্তৃক বা তার পক্ষহতে দায়রা জজের নিকট কোন রিভিশনের আবেদন করা হইলে সেই বিষয়ে দায়রা জজের সিন্ধান্তই চুড়ান্ত বলে গন্য হবে।
৩) দায়রা জজের আদেশক্রমে কোন মোকদ্দমা অতিরিক্ত দায়রা জজের নিকট হস্তান্তরিত হলে সেই মোকদ্দমা প্রসঙ্গে তিনি এই অধ্যায়ের প্রদত্ত দায়রা জজের যাবতীয় বা যে কোন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
আপীল ও রিভিশনের মধ্যে পার্থক্য:
আপীল ও রিভিশনের মধ্যে নি¤েœাক্ত পার্থক্য বিদ্যমান:
১) আপীল একটি অধিকার হিসেবে আপীল আদালতে দায়ের করা হয। কিন্তু রিভিশনের বিষয়টি একটি সুযোগমাত্র,আইনগত অধিকার নয়।
২) আপীল আইনের প্রশ্ন ও ঘটনার প্রশ্ন উভয় বিষযের উপরই শুনানী হয়।কিন্তু রিভিশনের ক্ষেত্রে শুধু আইনের প্রশ্ন উত্থাপিত হয় ও শুনানী দন্ডাজ্ঞা বৃদ্ধি করা যায়।
৩) আপীল এখতিয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে দন্ডাজ্ঞা বৃদ্ধি করা যায় না। কিন্তু রিভিশনের এখতিয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নি¤œ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত দন্ডাজ্ঞা বৃদ্ধি করা যায়।
৪) মামলা পরিচালনায় কোন অনিয়ম বা ভুলক্রটি পরিলক্ষিত হলে আপীল আদালতে তা সংশোধন করা যায় না। কিন্ত হাইকোর্ট বিভাগ যখন রিভিশন এখতিয়ার প্রয়োগ করেন তখন সেগুলো সংশোধন করে থাকেন।
৫) আপীলের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে ব্যাপক নয়,কিছুটা সীমিত। কিন্তু রিভিশনের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা বেশ ব্যাপক।
৬) আপীলে হাইকোর্ট বিভাগ আসামীকে ক্ষমা করতে পারেন না। অপরদিকে, রিভিশনে হাইকোর্ট বিভাগ আসামীকে ক্ষমা করতে পারেন।
ফৌজদারী কার্যবিধিতে পূর্বের বিচার ঘোষিত দন্ড বা খালাসের কখন নতুন বিচার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধা বলে গণ্য হয়:
চুড়ান্ত বিচারের পর বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত আসামীকে একই অপরাধের অভিযোগে পুনরায় বিচার করা যায় না কারণ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, একবার দন্ডিত হলে বা খালাস পেলে একই অপরাধের জন্য পুনরায় কাহারও বিচার করা যাবে না। ৪০৩(১) ধরায় বলা হযেে যে, উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে অপরাধের জন্য কাহারও একবার বিচার হইলে এবং তাহাকে উক্ত অপরাধের জন্য দন্ডিত বা অপরাধ হইতে খালাস দেওয়া হইলে উক্ত খালাস বা দন্ডাদেশ বলবৎ থাকাকালে একই অপরাধের জন্য পুনরায় তাহার বিচার করা যাবে না অথবা একই ঘটনা হতে উদ্ভুত অপর কোন অপরাদের জন্যও সেই অপরাধের জন্য তাহার বিরুদ্ধে ২৩৬ ধারা অনুসারে একটি পৃথক চার্জ প্রণয়ন করা যাইত সেই অপরাধে পুনরায় তাহার বিচার করা যাবে না।
  প্রশ্ন-৭ সমন কি? সমন প্রদান ও জারির নিয়মাবলী বর্ণনা কর। সমন ও পরোয়ানার মধ্যে পার্থক্য কি? পুলিশী তদন্তের বিভিন্ন স্তরগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর।
আসামী এবং সাক্ষীকে আদালতে হাজির করার লক্ষে আদালতের বিচারক কর্তৃক সাক্ষর ও সীলমোহর যুক্ত যে আদেশ নামা প্রদান করা হয় তাকে সমন বলে।
কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ড বা অন্য কোন তথ্য সম্পর্কে জানে এমন কোন ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসাবে ঐ তথ্য বর্ণনা করতে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বা কোন আসামীকে আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের জবাব দেবার জন্য সমন প্রদান করা হয়। অর্থাৎ সমন যেমন আসামীর উপর জারী করা হয় তেমনি সাক্ষীর উপর ও জারী করা হয়।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৬৮ ধারা অনুযায়ী সমন লিখিত ফরমে দেওয়া হয়। ফরমের উপরে আসামীর প্রতি সমন বা সাক্ষী হলে সাক্ষীর প্রতি সমন লেখা থাকে। সমনের দুই কপি থাকে। স্থানীয় থানা পূলিশের মাধ্যমে সমন জারি করা হয়। যাকে সমন দেওয়া হয় তাকে এক কপি দেওয়া হয়। অন্য কপিতে যার উপর সমন জারি হলো তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। সমন যথা সম্ভব ব্যাক্তিগত ভাবে জারী করতে হয়। তা সম্ভব না হলে ফৌজদারী কার্যবিধির ৭০ ধারায় বলা হয়েছে, যার ওপর সমন জারি করা হয় তাকে পাওয়া না গেলে তার পরিবারের বয়স্ক কোনো পুরুষের কাছে সমন বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হবে।
আসামীর প্রতি সমন হলে আসামী আদালতে ব্যাক্তিগত ভাবে বা উকিল মারফত আদালতে হাজির হতে হবে। কোন সাক্ষী সমন পেলে তাকে অবশ্যই আদালতে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা বর্ণনা করে সাক্ষ্য দেওয়া উচিত। সমন পেয়ে আদালতে কীভাবে হাজির হতে হয় তা অনেক সাক্ষীই জানে না। আবার সমন পেয়ে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির হতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সাক্ষী আদালতের কাছে বা আইনের চোখে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি।
সাক্ষীর প্রতি সমন জারী হলে সাক্ষীকে সমনটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের কোর্ট সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে হয়। কোর্ট সাব-ইন্সপেক্টর তার সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
অন্যদিকে জজ বা দায়রা আদালতে বা কোন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে হলে সমন নিয়ে সাক্ষীকে সরকারী কৌঁশুলি বা পিপি অফিসে হাজির হতে হয়। সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সাক্ষীকে সংশ্লিষ্ট পিপির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। একটা কথা মনে রাখা দরকার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালত সংশ্লিষ্ট কাউকে টাকা পয়সা বা ফি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আসামী বা সাক্ষী সমন পেয়ে আদালতে হাজির না হলে আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা হয়। অথবা আসামী বা সাক্ষীর প্রতি হুলিয়া বা সম্পত্তি ক্রোক করার মত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করবে। সেক্ষেত্রে সাক্ষীকে আরো হয়রানি হতে হবে। তাই সাক্ষীর প্রতি সমন জারী হলে সাক্ষী আদালতে হাজির হয়ে প্রকৃত ঘটনা বর্ণনা করে সাক্ষ্য দেওয়া উচিত।
সমন পাওয়ার পর কেউ আদালতে হাজির না হলে তিনি দন্ডবিধির ১৭৪ ধারা অনুযায়ী দন্ডযোগ্য অপরাধী সাব্যস্ত হবেন।
আদালত কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং আদালতের প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত নোটিশ যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয় অর্থাৎ আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য আসামীর প্রতি যে নোটিশ জারী করা হয় তাকেই সমন বলা হয়।
সমন সাধারণত লিখিত হতে হবে এবং দুই কপি সংযুক্ত করা হয়। এক কপি উক্ত ব্যক্তি উপর জারী করা হয় এবং অপর কপি জারি অন্তে আদালতে ফেরত পাঠানো হয়।
সমন কাকে বলে?
উত্তরঃ কাঃবি আইনের ৬৮(১) ধারা-পি, আর বি ৪৭১(ঘ) বিধি কোনো অভিযুক্ত আসামী অথবা কোনো মামলার বাদি বা সাক্ষীকে একটি নির্ধারিত দিন ও তারিখে কোর্টে বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট অথবা প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত সীলমোহরকৃত যে আদেশনামা লিখিতভাবে দুই কপিতে ইস্যু করা তাকেই সমন বলে।

সমন কে জারি করবেঃ
৬৮(২) সমন পুলিশ অফিসার দ্বারা অথবা সরকার কর্তৃক এ সম্পর্কে প্রণীত বিধি সাপেক্ষে সমন প্রদানকারী আদালতের অফিসার দ্বারা অথবা অন্য সরকারী কর্মচারী দ্বারা জারি করতে হবে। সাধারণত আসামীর উপর সমন জারী করা হয় অধিকন্তু আদালতের প্রয়োজনে যাকে আদালতে আসা আবশ্যক তাকেও সমন জারী করা হয়।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৬৯ ধারাঃ সমন জারির পদ্ধতিঃ
(১) যাকে সমন দেয়া হবে তাকে সমনের দুই কপির এক কপি তাকে প্রদান করে সমন জারি করতে হবে।
(২) যাদের উপর সমন জারি করা হবে তারা প্রত্যেকে দ্বিতীয় কপি সমনের অপর পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর করে প্রাপ্তি স্বীকার করবেন।
(৩) বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানের উপর সমন জারি করতে হলে তা উক্ত প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারী, স্থানীয় ম্যানেজার অথবা অন্য কোন প্রধান অফিসারের উপর জারি করতে হবে অথবা ডাকযোগে রেজিস্ট্রিকৃত চিঠি দিয়ে সমন প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিসারের নিকট পাঠাতে হবে এবং চিঠিটি যখন পৌঁছাবে তখনই সমন জারি হয়েছে বলে গন্য হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৭০ ধারাঃ সমনে তলবী ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া না গেলে, সেক্ষেত্রে সমন জারীর পদ্ধতি
যথাযথভাবে চেষ্টা করেও যদি সমনে তলবী ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে সমনের দুই কপির এক কপি তার পরিবারের যেকোন সাবালক পুরুষ সদস্যের কাছে দিয়ে অপর কপির অপর পৃষ্ঠায় তার প্রাপ্তি স্বীকার করে স্বাক্ষর নিয়ে সমন জারি করতে হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৭১ ধারাঃ পূর্বোক্ত পদ্ধতি অনুসারে সমন জারি করা না গেলে তখনকার পদ্ধতি
যথাযথভাবে চেষ্টা করা সত্ত্বেও ৬৯ এবং ৭০ ধারার পদ্ধতি অনুসারে যদি সমন জারি না করা যায়, তখন যে ব্যক্তির উপর সমন জারি করা হবে তিনি সচরাচর যে স্থানে বসবাস করেন সেই বাড়ি অথবা বাসস্থানের একটি প্রকাশ্য স্থানে সমনের দুই কপি ঝুলিয়ে দিয়ে সমন জারি করবেন।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৭২ ধারাঃ সরকারী কর্মচারীর উপর সমন জারির পদ্ধতি কোন সরকারী কর্মচারীর উপর সমন জারি করতে হলে, তিনি যে অফিসে কর্মরত আছেন সে অফিসের প্রধান কর্মকর্তাকে সমনের দুটি কপিই দিতে হবে এবং উক্ত কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৬৯ ধারায় বর্ণিত পদ্ধতিতে সমন জারি করবেন এবং উক্ত ধারায় বর্নিত প্রয়োজনীয় প্রত্যয়ন ও তাহার স্বাক্ষরসহ সমনের অপর কপি, সমন ইস্যুকারী আদালতে ফেরৎ পাঠাবেন।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৭৩ ধারাঃ স্থানীয় সীমানার বাইরে সমন জারি আদালতের এখতিয়ারের বাহিরে সমন জারী করার প্রয়োজন হলে সমনকৃত ব্যক্তি যে ম্যাজিষ্ট্রেট এর এখতিয়ারে আছে সেই ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট ২ কপি সমন প্রেরন করবেন এবং সেই ম্যাজিষ্ট্রেট তথায় উক্ত সমন নিময়ানুযায়ী জারী করিবেন।
ঘ) গ্রেফতার:
প্রশ্ন-৮ সদাচরনের মুচলেকা বলতে কি বুঝ? ফৌজদারী কাযবিধির ১০৬ ও ১০৭ ধারার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর। কোন কোন পরিস্থিতিতে সদাচরনের মুচলেকার আদেশ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে থাকেন? এর উদ্দেশ্য কি?
মুচলেকা কি (যিধঃ রং নড়হফ) :
কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে, এটা আইনের বিধান। তবে কোন অপরাধ সংঘটনের পুর্বেই যদি কোন ব্যক্তিকে তা থেকে বিরত রাখা যায় তা অবশ্যই মঙ্গলজনক। সেজন্যই অপরাধ প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থাস্বরূপ আইনে মুচলেকার বিধান রাখা হয়েছে। মুচলেকা বা বন্ডের অর্থ হচ্ছে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার আদায় করা, যেন সে ভবিষ্যতে আর ঐ ধরণের অন্যায় করবে না এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যদি প্রমাণিত হয় সে ঐ ধরণের অপরাধ করেছে, তাহলে সে আইনে নির্ধারিত দন্ডভোগ করবে। ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা-১০৬,১০৭,১০৮ ও ১০৯ ধারাতে বন্ড প্রদানের কারন ও বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
১০৮ ধারাঃ রাষ্ট্রদ্রোহ মূলক বিষয় প্রচারকের নিকট হতে আদালত ০১ বছরের অধিক সময়ের জন্য সদাচরনের মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারেন।
১০৯ ধারাঃ কোন প্রথম শ্রেণীর ম্যজিষ্ট্রেট যদি মনে করেন যে, কোন ব্যক্তি নিজের উপস্থিতি গোপন করে আমলযোগ্য অপরাধ করার জন্য সাবধানতা গ্রহণ করছে বা যার কোন প্রকাশ্য জীবিকা নাই অথবা নিজের সর্ম্পকে কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনা এমন ব্যক্তির কাছ থেকে উক্ত আদালত ০১(এক) বছরের অনধিক সময়ের জন্য সদাচরণের মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারেন। [ পিআরবি-২৮৮ বিধি]
ফৌজদারী কাযবিধির ১০৬ ও ১০৭ ধারার মধ্যে পার্থক্য:
ধারা  ১০৬ বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যদি আঘাত বা শান্তি ভঙ্গের সম্বলিত কোন অপরাধ করে বা অপরাধের সহায়তা করে অথবা কোন অপরাধ মূলক ভীতিপ্রদর্শনের অপরাধের অভিযুক্ত হয় সেক্ষেত্রে আদালত উক্ত ব্যক্তিকে ০৩ (তিন) বছরের অধিক সময়ের জন্য শান্তিরক্ষার মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারেন।
ধারা ১০৭ মতে,আদালত যদি মনে করেন যে কোন ব্যক্তির দ্বারা শান্তি ভঙ্গ হতে পারে বা জনসাধারনের প্রশান্তি বিনষ্ট হতে পারে তাহলে উক্ত আদালত ঐ ব্যক্তির নিকট হতে ০১ (এক) বছরের অধিক সময়ের জন্য শান্তি রক্ষার মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারেন। [পিআরবি-২৮৭ বিধি ]
দুটি ধারা মূলত: শান্তি রক্ষা করার জন্য করা হয়েছে। ১০৬ ধারাটি প্রযোজ্য হবে অভিযুক্ত ব্যক্তির অতীত আচরণের জন্য ভবিষ্যৎ শান্তি ভঙ্গেও আশংকা থাকলে এবং ধারা ১০৭ পি প্রযোজ্য হবে যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক জনশান্তি বিঘিœত হবার আশংকা থাকে সেক্ষেত্রে।
১০৬ ধারার উদ্দেশ্য হচ্ছে আসন্ন শান্তিভঙ্গ প্রতিরোধ করা যে শান্তিভঙ্গ ইতোপূর্বে অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক করা হয়েছে। কিন্তু অতীতের কোন কাযেৃও সাথে ১০৭ ধারা সংশ্লিষ্ট নয়। এছাড়া ১০৬ ধারাটি ব্যক্তিগত শান্তিভঙ্গেও ক্ষেত্রে এবং ১০৭ ধারাটি জনশান্তি ভঙ্গেন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে।

প্রশ্ন-৯ সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ:-
ক) হুলিয়া ও ক্রোক
হুলিয়া (ঢ়ৎড়পষধসধঃরড়হ):
হুলিয়া ইংরেজী শব্দ চৎড়পষধসধঃরড়হ বা ঘোষনা। যখন কোন আসামীকে সমন দেয়া হয় বা আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয় অতপর আদালতে হাজির করার জন্য বাধ্য করা হয় তাকে হুলিয়া বলে।
ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৮৭ ধারা অনুযায়ী হুলিয়া জারি (পলাতক ব্যক্তি সম্পর্কে ঘোষণা)
(১) যদি কোন আদালতের এমন বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে , উক্ত আদালত যার বিরুদ্ধে পরোয়ানা প্রদান করেছেন সে ব্যক্তি পলাতক হয়েছে, তাহলে উক্ত আদালত তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ঘোষণা প্রকাশের তারিখ হতে ৩০ দিনের কম নয়, হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে একটি লিখিত ঘোষণাপত্র (হুলিয়া) জারি করতে পারেন।
(২) হুলিয়া নিম্নলিখিত ভাবে প্রকাশ করতে হবেঃ
(ক) উক্ত ব্যক্তির বাসস্থানের শহরে বা গ্রামের কোন প্রকাশ্য স্থানে হুলিয়াটি পাঠ করতে হবে।
(খ) উক্ত ব্যক্তির বাসস্থানের প্রকাশ্য স্থানে হুলিয়াটি লটকিয়ে দিতে হবে।
(গ) হুলিয়ার একটি কপি আদালতের কোন প্রকাশ্য স্থানে লটকিয়ে দিতে হবে।
(৩) ঘোষণা প্রদানকারী আদালত যদি এই মর্মে একটি লিখিত বিবৃতি দেন যে হুলিয়াটি একটি নির্দিষ্ট দিনে যথাযথভাবে জারি হয়েছে তবে বিবৃতিটি চুড়ান্ত প্রমান্য বলে গণ্য হবে।
ক্রোক:
ক্রোক কখন,কেন ও কার উপর জারি করা হয় এ সম্পর্কে ফৌজদারী কার্যবিধির ৮৭ ও ৮৮ ধারায় বিধান রাখা আছে। উক্ত ধারা সমূহ অনুযায়ী ,যদি কোন পলাতক আসামরি বিরুদ্ধে হুলিয়া  জারি করা হয়, তাহলে যদি হুলিয়ার নিদিষ্ট দিন অতিবাহিত হবার পরও উক্ত আসামী আদালতে বা নিদিষ্ট স্থানে উপস্থিত না হন,সে ক্ষেত্রে আদালত উক্ত ব্যক্তির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আটকের লক্ষ্যে ক্রোকী পরোয়ানা জারি করার মাধ্যমে ক্রোক আদেশ প্রদান করতে পারেন। তদন্তকারী অফিসারের প্রতিবেদন মোতাবেক ,দোষী ব্যক্তিদের যে সম্পত্তির হিসাব পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে ক্রোকী পরোয়ানা জারি হয়।
৮৭ ধারা মোতাবেক হুলিয়া জারির পরও কোন ফল পাওয়া না গেলে ৮৮ ধারা মোতাবেক আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করতে পারেন। ।
নি¤œাক্ত পন্থায় ক্রোক করা যায়:
(ক) আটক করে
(খ) রিসিভার নিয়োগ করে
(গ) অথবা লিখিত আদেশ দ্বারা ঘোষিত ব্যক্তি বা তার পক্ষে অপর কোন ব্যক্তিকে উক্ত সম্পত্তি প্রদান নিষিদ্ধ করে।
(ঘ) আদালতের ইচ্ছানুসারে এইরূপ সকল ব্যবস্থা বা যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

খ) তদন্ত ও অনুসন্ধান ও বিচার
তদন্ত(ওহাবংঃরমধঃরড়হ):
তদন্ত বা ওহাবংঃরমধঃরড়হ এর আভিধানিক অর্থ হল পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে পরীক্ষা। ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪(১)(ঠ) অনুযায়ী, তদন্ত বলতে অত্র বিধির আওতায় পরিচালিত কোন মামলার সাক্ষ্য সংগ্রহের জন্য কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত অন্য কোন ব্যক্তি (যিনি ম্যাজিস্ট্রেট নন) কর্তৃক পরিচালিত সকল কার্যক্রমকে বুঝায়।
অর্থাৎ সাক্ষ্য প্রমান সংগ্রহের জন্য পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশিত কোন ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রমকে তদন্ত বলে।
অনুসন্ধান (ওহয়ঁরৎু):
বিচারের পুর্বে ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকেন তাকে অনুসন্ধান বলে। ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪(ট) অনুযায়ী, অত্র বিধির আওতায় ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত কর্তৃক বিচার ব্যতীত অন্যান্য কার্যক্রমকে বুঝায়।
অনুসন্ধান বা ওহয়ঁরৎু অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত কর্তৃক হতে হবে। অন্যদিকে তদন্ত পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশিত অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত হতে হবে।
গ) নারাজি পিটিশন:এজাহার বা নালিশের ভিত্তিতে থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ মামলাটির উপর তদন্ত করে। উক্তরুপ তদন্ত শেষে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারার বিধান অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তা যাদেও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয় তাদেও বিরুদ্ধে অভিযোগ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দাখিল করেন। আবার যাদেও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয় না তাদেও কে মামলা হতে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের বরাবর চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখির করেন। অভিযোগ কারী যদি মনে করেন যে, সঠিক তদন্ত না কওে চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে কিংবা তদন্তে পক্সপাতিত্ব কওে চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে তাহলে অভিযোগকারী উক্ত চুড়ান্ত রিপোর্টেও বিরুদ্ধে ম্যাজিস্টেটের বরাবওে দরখাস্ত বা আপত্তি দাখিল করতে পারেন। এরুপ দরখাস্তকে নারাজি পিটিশন বলে।
ঘ) গ্রেফতার ও তল্লাশী
গ্রেফতার :
যে আইনগত কার্যক্রমের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে আটক করে বিচারের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয় তাকে গ্রেফতার বলে। আমল-অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালতের গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট বলে এবং আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা বলে পুলিশ অফিসার অপরাধীকে গ্রেফতার করে বিচারের জন্য আদালতে উপস্থিত করেন।
কিভাবে গ্রেফতার করা হয় :
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬/১ ধারায় গ্রেফতারের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। কোন একটি গ্রেফতার করতে, গ্রেফতারকারী পুলিশ কর্মচারি বা অন্য ব্যাক্তি, যাকে গ্রেফতার করবেন সেই ব্যাক্তির প্রকৃতপক্ষে দেহ স্পর্শ করবেন বা বন্দী করবেন যদি না সে কথায় বা কাজে আতœসমর্পণ করে কয়েদ স্বীকার করে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬/২ ধারা অনুযায়ী গ্রেফতারে বাধা প্রদান করলে বা গ্রেফতার এড়াতে চেষ্টা করলে পুলিশ কর্মকর্তা বা অন্য ব্যাক্তি গ্রেফতার কার্যকর করার লক্ষে প্রয়োজনীয় সকল পন্থা অবলম্বন করতে পারবেন।
সুতরাং কোন অপরাধীকে বিচারের জন্য বা আদালতে হাজির করার জন্য তার ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করে পুলিশের হেফাজতে আনাকে গ্রেফতার বলা হয়।
১৮৯৮ সালে প্রনীত ফৌঃকাঃ আইনের ৪৬ ধারা মোতাবেক আইন সঙ্গত ভাবে যুক্তি সঙ্গত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন ব্যক্তিকে তার স্বাধীন ভাবে চলাচলের ক্ষমতাকে হরণ করে আইনের হেফাজতে নেওয়াকে গ্রেফতার বলে।
তল্লাশী পরোয়ানা(ঝবধৎপয ডধৎৎধহঃ):
তল্লাশি পরোয়ানা হচ্ছে কোন গৃহ বা স্থানে তল্লশি করার জন্য আদালতের হুকুম জারী। এ সম্পর্কে ফৌজদারী কার্যবিধির ৯৬ ধারায় বিধান রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে আদালতের এরুপ বিশ্বাস করার যুক্তি সঙ্গত কারণ রয়েছে যে, এই আইনের ৯৪ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে কোন বস্তু বা দলিল আদালতে উপস্থাপন করার জন্য সমন দেয়া হয় অথবা ৯৫ (১) ধারা অনুযায়ী রিকুইজিশন দেয়া হয় কিন্তু এতদসত্ত্বেও তা যথাযথভাবে পালিত হয় না সেক্ষেত্রে আদালত তল্লাশি পরোয়ানা জারি করতে পারেন এবং ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি সংশ্রিষ্ট স্থানে তল্লশি বা অনুসন্ধান করতে পারে।চোরাই পন্য বা জাল দলিল যেখানে রাখা আছে বলে আদালতের অবগতিতে থাকলে ৯৮ ধারা অনুযায়ী সেখানে তল্লশি চালানো যায়। তল্লশি পরোয়ানা জারি করার এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতের আঞ্চলিক সীমানার বাইরেও এরুপ তল্লশি চালানো যায়।
ঙ) আপীল:
আপীল হল কোন মামলার রায় যুক্তিযুক্ত হয়েছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য নিম্ন আদালত হতে মামলাটি উচ্চতর আদালতে স্থানান্তর করা।
আপীল বলতে বোঝায় নিম্ন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উর্ধ্বতন আদালতে যে লিখিত দরখাস্ত বা যে বিচার প্রার্থনা করে তাকেই আপীল বলা হয়।
অঢ়ঢ়বধষ সবধহং ঃড় পধৎৎু ধ ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ পধংব ভৎড়স ষড়বিৎ পড়ঁৎঃ ঃড় যরমযবৎ পড়ঁৎঃ ঃড় ধংপবৎঃধরহ যিবঃযবৎ ঃযব লঁফমবসবহঃ ড়ভ ঃযব ষড়বিৎ রং ংঁংঃধরহধনষব.
লাহোর হাইকোর্টের ভাষ্য অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের রায় যথার্থ কিনা তা নির্নয়ের লক্ষে কোন বিশেষ মোকদ্দমাকে নিম্ন আদালত হতে উচ্চ আদালতে স্থানান্তর করাই হচ্ছে আপীল।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের ভাষ্য অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের বিধানের ধারাবাহিকতাই হচ্ছে আপীল।
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪০৬ থেকে ৪৩১ ধারা পর্যন্ত আপীল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দেওয়ানী কার্যবিধির সপ্তম খন্ডে ধারা ৯৬ থেকে ১১২ ধারা পর্যন্ত এবং আদেশ ৪১ থেকে ৪৫ আদেশ পর্যন্ত দেওয়ানী আপীল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে যে কোন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি উচ্চ আদলতে আপীল করতে পারেন। তবে, আইনে যে সকল ক্ষেত্রে আপীল করার অধিকার নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে শুধু সে সকল ক্ষেত্রে আপীল করা যায়। আইনের প্রশ্নে বা ঘটনার প্রশ্নে বা উভয় ক্ষেত্রে ই আপীল করা যায়।
আমরা আপীল সম্পর্কে বলতে পারি যে, নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার পক্ষে যুক্তিসঙ্গত কারন উল্লেখ করে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি কর্তৃক যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন উচ্চ আদালতে পেশ করা লিখিত দরখাস্তই হলো আপীল।
চ) জামিনযোগ্য অপরাধ ও জামিন অযোগ্য অপরাধ:
 জামিনের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ফৌজদারী কার্যবিধিতে দেয়া হয়নি। তবে জামিন সংক্রান্ত বিধানাবলী এতে রয়েছে। সাধারণত কোনো ব্যক্তিকে আটকের পর আদালত তার আইন ও সুবিবেচনামূলক এখতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে আটক কোন ব্যক্তিকে আদালতের আদেশ মতো নির্দিষ্ট স্থানে এবং নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে সাময়িক মুক্তির ব্যবস্থা করাকে আইনের চোখে ‘জামিন’ বলা হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, সংশ্লিষ্ট আদালতে সময়মত হাজির হওয়ার শর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে আইনগত হেফাজত থেকে মুক্তি প্রদান করে জামিনদারের নিকট সমর্পন করাকে জামিন বলে। মামলার যেকোন পর্যায়ে জামিন মঞ্জুর করা যায়।এমনকি বিচার শুরু হবার পরও জামিন মঞ্জুর করা যায়। উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধিতে জামিনের কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি।
জামিন লাভের উপায়
সাধারণতঃ জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া আসামীর অধিকার, আর জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন প্রদান করা আদালতের এখতিয়ার। তবে জামিন অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে আদালতকে সূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনার ওপর নির্ভর করতে হয়।
কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অপরাধের অভিযোগ থাকলেই তাকে দোষী বলা যায় না। আদালতে দোষী প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ ধরতে হবে এটাই আইনের নীতি। তাই দোষী প্রমানিত হবার পুর্বে কাউকে আটকে রাখা হলে তা ন্যায় বিচারের পরিপন্থি হবে। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যাক্তি আটক থাকলে তার সামাজিক,পারিবারিক,শারিরিক,মানসিক নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। তাই অহেতুক তাকে আটক রাখা আইনে সমর্থনীয় নয়। আবার বিচারের সময় অপরাধীকে আদালতে থাকা প্রয়োজন, তাই বিচারের সময় তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিতে জামিনের বিধান রাখা হয়েছে।

জামিন যোগ্য অপরাধঃ
ধারা ৪৯৬। জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তি কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে, বা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে, সে যদি উক্ত অফিসারের হেফাজতে থাকার সময় বা উক্ত আদালতের কার্যক্রমের কোন পর্যায়ে জামানত দিতে প্রস্তুত থাকে তা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেয় তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত অফিসার বা আদালত উপযুক্ত মনে করলে তার নিকট হতে জামানত গ্রহণের পরিবর্তে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন।
তবে আরও শর্ত থাকে যে, এই ধারার
কোন বিধান ১০৭ ধারার (৪) উপধারা বা ১১৭ ধারার (৩) উপধারার কোন বিধানকে প্রভাবিত করবে বলে গণ্য হবে না।
জামিন-অযোগ্য অপরাধঃ
ধারা ৪৯৭। যখন জামিনের অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা যাবেঃ
(১) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে অথবা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া কিন্তু সে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দোষী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে উক্তরূপে দেওয়া যাবে নাঃ তবে শর্ত থাকে যে, আদালত এইরূপ অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি ষোল বৎসরের কম বয়স্ক বা স্ত্রীলোক বা পীড়িত বা অক্ষম হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
(২) ক্ষেত্রমতে তদন্ত, ইনকোয়ারী বা বিচারের কোন পর্যায়ে উক্ত অফিসার বা আদলতের নিকট যদি প্রতিয়মান হয় যে, আসামী জামিনের অযোগ্য কোন অপরাধ করেছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই, কিন্তু তার অপরাধ-সম্পর্কে আরও ইনকোয়ারির পর্যাপ্ত হেতু রহয়েছে, তাহলে এইরূপ ইনকোয়ারী সাপেক্ষে আসামীকে জামি অথবা উক্ত অফিসার বা আদলত বা আদালতের ইচ্ছানুযাসারে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন। (৩) কোন অফিসার বা আদালত (১) উপধারা বা (২) উপধারা অনুসারে কোনব্যক্তিকে মুক্তি দিলে তার ঐরূপ করার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন।
(৪) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার সমাপ্ত হবার পর এবং রায় দানের পূর্বে কোন সময় আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী উক্ত অপরাধে দোষী নয় বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে, তা হলে আসামী হাজতে থাকলে রায় শ্রবণের উদ্দেশ্যে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদনের পর তাকে মুক্তি দিবেন।
(৫) হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা আদালত এবং নিজে মুক্তি দিয়ে থাকলে অন্য কোন আদালত এই ধারা অনুসারে মুক্তিপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে ও তাকে হাজতে প্রেরণ করতে পারবেন।

ছ) আমলযোগ্য অপরাধ ও অ-আমলযোগ্য অপরাধ:
আমলযোগ্য অপরাধ:
আমলযোগ্য অপরাধ বলতে সেই সকল অপরাধকে বুঝায় যে অপরাধ সংঘটনের সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়াই ঘটনার তদন্ত শুরু করতে পারবেন এবং আসামীকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবেন। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারার বিধান মতে, আমলযোগ্য ঘটনার প্রত্যেক টি সংবাদ এজাহার হিসাবে গণ্য হবে এবং সরকারের নির্ধারিত ফরম মোতাবেক বইয়ে নথিভুক্ত হবে।
অ-আমলযোগ্য অপরাধঃ
অ-আমলযোগ্য অপরাধ বলতে সে সকল অপরাধকে বুঝায়, যে সকল অপরাধ সংঘটন হবার পর, প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন ঘটনার তদন্ত করতে পারেন না এবং বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারবেন না। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৫ ধারায় অ- আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন হলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার করনীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে।






অতিরিক্ত অংশ
জি, আর মামলা (ঘড়হ-এ.জ ঈধংব) এবং সি, আর মামলা (ঈ.জ ঈধংব) এর মধ্যে পার্থক্যঃ
১) ফরিয়াদি যখন এজাহারের মাধ্যমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট মামলা রুজু করে তখন এ সকল মামলাকে জি,আর মামলা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে।
 ২) অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪(য) ধারায় নালিশের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। নালিশ হল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর কোন অপরাধ সম্পর্কে ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ পত্র।
৩) জি,আর মামলা দায়ের করতে হয় থানায় আর সি,আর মামলা দায়ের করতে হয় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে।
৪) জি,আর মামলা দায়ের করার সময় দায়ের কারী কোন শপথ বাক্য পাট করতে হয়না। অন্যদিকে সি,আর মামলা দায়ের করার সময় ফরিয়াদি যা বলবে সত্য বলবে, কোন মিথ্যা বলবে না এই মর্মে শপথ বাক্য পাট করতে হয়।
৫) জি,আর মামলা দায়েরের পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজাহারের ভিত্তিতে অপরাধ সম্পর্কে তদন্তে অগ্রসর হয়ে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেন। অন্যদিকে সি,আর মামলা দায়েরের পর ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধ আমলে নিয়ে গেরপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন বা তদন্ত করার জন্য তিনি নিজে বা অন্য কাউকে নির্দেশ দিতে পারেন।
৬) জি,আর মামলার ক্ষেত্রে তদন্তে আসামীর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমান না পেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করতে পারেন। অন্যদিকে নালিশের ক্ষেত্রে আসামীর বিরুদ্দে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমান না পেলে আসামীকে অব্যাহতি বা খালাস প্রদান করা হয়।
৭) জি,আর মামলা শুধু আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে দায়ের করা হয়। অন্যদিকে সি,আর মামলা আমলযোগ্য বা আমল-অযোগ্য উভয় প্রকার মামলার ক্ষেত্রে দায়ের করা যায়।
চার্জসীট এবং ফাইনাল রিপোর্ট কি ?
যখন কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ কোন অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায় তখন পুলিশ তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে।
আর যখন পুলিশ তদন্তে কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অপরাধের প্রমান না পায় তাহলে চার্জসীটের পরিবর্তে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়।

ফাইনাল রিপোর্ট বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন কাকে বলে ?
কোন মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হবার পর, এজাহারে বর্নিত সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে সংিিশ্লষ্ট অপরাধ সংঘটনের সাথে জড়িত থাকার তথ্য প্রমান অপর্যাপ্ত হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন। পুলিশ রেগুলেশন এক্ট অনুযায়ী এটিকে বলা হয় চূড়ান্ত প্রতিবেদন, যদিও ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় শুধু পুলিশ রিপোর্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল এর প্রবিধান ২৭৫ অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঁচ (৫) প্রকার। যেমনঃ
ক) চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্যঃ এক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ঠিক কিন্তু কার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে এ সম্পর্কে কোন সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায়নি বা আসামীদের সম্পর্কে কোন তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
খ) চূড়ান্ত রিপোর্ট মিথ্যাঃ মুলত কোন অপরাধ সংঘটিত হয়নি।
গ) চূড়ান্ত রিপোর্টে তথ্যের ভুলঃ এইখানে তথ্যগত ভুলের বিষয় উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল একটি কিন্তু এজাহার দায়ের করা হয় অন্যটির।
ঘ) চূড়ান্ত রিপোর্টে আইনের ভুলঃ মামলায় আইনগত ত্রুটি রয়েছে।
ঙ) চূড়ান্ত রিপোর্ট বিচারের অযোগ্যঃ অর্থাৎ অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল আমল অযোগ্য কিন্তু আমল যোগ্য অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। তাই এই মামলা বিচারের যোগ্য নয়। অবশ্য এক্ষেত্রে পুলিশ অফিসার আদালতের পুর্ব অনুমতি নিয়ে আমল অযোগ্য মামলার রিপোর্ট দাখিল করতে পারেন।


অনেকেই বলে থাকেন ফৌজদারী কার্যবিধির কোথাও নাকি রিমান্ড (জবসধহফ) শব্দটির উল্লেখ নেই। কেউ কি বলতে পারবেন ফৌজদারী কার্যবিধির কোন ধারায় রিমান্ডের উল্লেখ আছে।
বিচার কার্যক্রম স্থগিত বা মুলতবী রাখার ক্ষমতাঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪৪ ধারা অনুযায়ী, সাক্ষীর অনুপস্থিতি বা অন্য কোন যুক্তিসঙ্গত কারণে যদি কোন অনুসন্ধান বা বিচার কাজ স্থগিত রাখা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তবে, আদালত তার কারণ উল্লেখ পুর্বক লিখিত আদেশ দ্বারা উপযুক্ত সময়ের জন্য তা স্থগিত বা মুলতবী করতে পারেন এবং আসামী হেফাজতে (পঁংঃড়ফু) থাকলে তাকে রিমান্ডে পাঠাতে পারেন।
রিমান্ডঃ(জবসধহফ) তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার অধীনে কোন ম্যাজিস্ট্রেট কোন আসামীকে এক সাথে ১৫ দিনের অধিক সময়ের জন্য রিমান্ডে প্রেরণ করতে পারবেন না।
ব্যাখ্যাঃ আসামী অপরাধ করে থাকতে পারে এই মর্মে যথেষ্ট সাক্ষ্য যদি থাকে এবং রিমান্ডে আর তথ্য উদঘাটন হতে পারে বলে মনে হলে, উক্ত আসামীকে রিমান্ডে দেবার একটি যুক্তি সঙ্গত কারণ হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৬১ অনুযায়ী আসামীকে ২৪ ঘণ্টার বেশী থানা হাজতে আটক রাখা যাবেনা এবং ধারা ১৬৭ অনুযায়ী উপযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আসামীকে পুলিশ হেফাজতে দিতে পারেন। তবে, একটানা ১৫ দিনের বেশী নয়।




জেনে নিন আগাম জামিনের খুঁটিনাটি:
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ প্রত্যেক নাগরিককে জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা সংরক্ষণের অধিকার প্রদান করেছে, উক্ত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনে বর্নিত বিধান ব্যতীত জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার থেকে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। আইনের আরেকটি সাধারণ নীতি হল- “ঊাবৎুড়হব ংযধষষ নব ঢ়ৎবংঁসবফ ঃড় নব রহহড়পবহঃ ঁহষবংং যব রং ভড়ঁহফ মঁরষঃু নু ধ পড়সঢ়বঃবহঃ পড়ঁৎঃ”. আইনের চোখে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী নয়, আসামী মাত্র। সুতরাং বিশেষ কোন হেতু ভিন্ন কোন ব্যক্তিকে আটকের পর আদালত আইন ও তার সু-বিবেচনা মূলক এখতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতের আদেশমত নির্দিষ্ট স্থানে এবং নিদিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে সাময়িক মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেন যাকে আইনের চোখে জামিন বলা হয়।ফৌজদারী কার্যবিধিতে জামিন প্রসঙ্গে ২ ধরনের অপরাধের কথা সু-স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে- ১) জামিনযোগ্য অপরাধ(৪৯৬ ধারা); এবং ২) জামিন অ-যোগ্য অপরাধ।(৪৯৭ ধারা)।এছাড়া, গ্রেফতার পূর্ব জামিন বা ধহঃরপরঢ়ধঃড়ৎু নধরষ নামীয় আরেক ধরনের জামিনের চর্চা হাইকোর্ট সহ দায়রা আদালতে হতে দেখা যায়।(ধারা-৪৯৮)
বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধি,১৮৯৮-এ আগাম জামিন সম্পর্কে সু-স্পষ্ট বিধান নেই। কিন্তু ৪৯৮ ধারায় উল্লেখিত “হাইকোর্ট বিভাগ ও দায়রা আদালত যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুর ---- নির্দেশ দিতে পারেন।“- শব্দগুলোর সম্প্রসারিত অর্থ দ্বারা আসামীকে ক্ষেত্রে বিশেষ জামিন প্রদান করে থাকেন। মূলতঃ আমাদের দেশের আগাম জামিন সম্পর্কিত ৪৯৮ ধারার শিরোনামের দিকে তাকালে দেখা যাবে, “৪৯৮। জামিন মঞ্জুর ও জামিনের অর্থের পরিমাণ হ্রাসের ক্ষমতা”-‘র কথা বলা হয়েছে।অর্থাৎ ওই ধারাতে আগাম জামিনের বিধানের চেয়ে ’জামিনের অর্থেও পরিমাণ হ্রাসের ক্ষমতা’-কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ এদিক থেকে অনেক এগিয়ে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ভারতীয় ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৮/৪৩৯ ধারায় আগাম জামিন সম্প্রর্কে সু-স্পষ্ট ও কমপ্রিহেন্সিভ বিধান রয়েছে।
আগাম জামিন
ফৌজদারী কার্যবিধির অধীনে দুই ধরনের জামিনের চর্চা আছে, সাধারণ জামিন(জবমঁষধৎ ইধরষ) যা আসামীর আটকের পর আদালত কর্তৃক মঞ্জুর হয়; আর আরেক ধরনের জামিন হল আগাম জামিন (অহঃরপরঢ়ধঃড়ৎু ইধরষ) যা আসামীর গ্রেফতারের পূর্বে আদলত মঞ্জুর করে থাকেন। আগাম জামিনের আভিধানিক অর্থ গ্রেফতারের পূর্বেই প্রাপ্ত জামিন। অর্থাৎ গ্রেফতারের পূর্বে উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় কোন ব্যাক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালত আটককৃত ব্যক্তিকে যে জামিন মঞ্জুর করে থাকেন তাকেই আগাম জামিন বলা হয়।
আগাম জামিনের প্রয়োজনীয়তা
পূর্বে শত্রু পক্ষের কাউকে দমিয়ে রাখার জন্য যাদু-টোনা করা হত বলে শুনেছি; বর্তমানে যাদু-টোনার সেই স্থান দখল করে আছে মিথ্যা মামলা। যদি কোন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে অপরাধী না হন তাহলে বিচারের পূর্বে গ্রেফতার ও কারাগারে দূর্বিসহ বন্দী জীবন কাটাতে বাধ্য করা ভিন্ন অর্থে অপরাধ প্রমানের আগেই শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করার নামান্তর। এবং এক্ষেত্রে আদালতই এ সকল নিরীহ মানুষগুলোর শেষ ভরসাস্থল। সুতরাং যে ক্ষেত্রে আসামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, যে ক্ষেত্রে আসামীর এরুপ অপরাধে জড়িত হবার কোন স্বাক্ষর নেই বা আসামীর জামিনে মুক্তির পর পলায়নের কোন সম্ভাবনা নেই বা তাঁকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপক কোন কারন নেই, সে ক্ষেত্রে আসামীকে গ্রেফতারের পূর্বেই জামিনে মুক্তি দিতে আদালত কার্পন্য করবেন না।
আগাম জামিনের আইনি বিধানের পরীক্ষা
মূলতঃ ‘আগাম জামিন’ প্রত্যয়টিকে কিছু ক্ষেত্রে সমালোচকগন গরংহড়সবৎ বা ভূল ভাবে সংজ্ঞায়িত একটি প্রত্যয় হিসাবে অনেকে ব্যখ্যা করেন। কারণ,তাদের প্রশ্ন হল জামিনের অধিকারের সূত্রপাত কখন ঘটবে? – আসামী যখন আইন শংখলা বাহিনীর আইনগত হেফাজতে(খধভিঁষ ঈঁংঃড়ফু) থাকবে তখন থেকে। সেই হিসাবে কোন ব্যক্তি গ্রেফতারের পূর্বেই যখন জামিনের আবেদন করেন তখন তাকে গরংহড়সবৎ না বলে পারা যায় না। তবে, আমার হিসাবে যখন কোন ব্যক্তি আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন তখন তিনি মূলত আদালতের কাছে নিজেকে সমর্পণ করছেন এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজের মুক্তির জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন যার কারণে গ্রেফতারের পূর্ব থেকেই জামিন অনুমোদনের হিসাবে তথাকথিত অর্থে গরংহড়সবৎ বলা অনেকাংশে সমীচীন নয়।
যাই হোক,ভারতীয় সংবিধান সর্বপ্রথম যখন বলবৎ হয়েছিল ফৌজদারী কার্যবিধিতে তখন আমাদের দেশের মত আগাম জামিনের কোন সুস্পষ্ট বিধান ছিল না। সুতরাং আইনের অনুপস্থিতিতে, গ্রেফতারের পূর্বে কোন ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া উচিৎ কিনা এ প্রশ্নে ঠধৎশবু চধরষু গধফঃযরশঁফরুরষ (১৯৬৭)- মামলায় কেরালা হাইকোর্ট মন্তব্য করেছিলেন,” যতক্ষন না কোন ব্যক্তিকে আটক আর্থাৎ লিগ্যাল কাস্টডিতে রাখা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জামিন মঞ্জুর করা যায় না।
কধৎঃধৎ ঝরহময া. ঝঃধঃব ড়ভ চধহলধন ,মামলায় পাঁচজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চে উত্তর প্রদেশের একটি আইনের বৈধতা যাচাই করা হয় এই মর্মে যে, আইনটিতে আগাম জামিনের প্রয়োগযোগ্যতার বিষয়ে কোন বিধান ছিল না। ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হধষ ইবহপয- উল্লেখ করেন যে, আগাম জামিনের বিধান বাতিল করা হয়েছে শুধু এই কারণে বলা যাবে না যে, উক্ত বাতিলের মাধ্যমে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের চর্চাকে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতে সংবিধানের সাথে সংগতি বজায় রেখে রাজ্য সমূহ কেন্দ্রীয় কার্যবিধিকে ভিত্তি ধরে তাদের নিজস্ব কার্যবিধি সংক্রান্ত আইন গ্রহণ করতে পারে।
আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আদালতের বিবেচ্য বিষয়াবলী
সাধারণভাবে, জামিন অযোগ্য মামলায় জামিন আবেদনের শুনানী প্রসঙ্গে আদালত যে সকল বিষয় বিবেচনা করবেন আগাম জামিনের ক্ষেত্রে ও আদালত একই বিষয় সমূহ বিবেচনা করবেন। [১৯ উখজ ৩৯ (ঝঈ)] যাই হোক,আগাম জামিনের বিষয় সাধারণ জামিনের বিষয় থেকে একটু হলেও ভিন্ন এবং আগাম জামিনের আবেদন বিবেচনাকালে আদালত মোটাদাগে নিন্ম লিখিত বিষয় সমূহ বিবেচনা করতে পারেনঃ
১। উত্থাপিত আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং তর্কিত অভিযোগের নিবিড় বিবেচনায় আদালতের কাছে যদি এটি প্রতীয়মান হয় যে, আসামীকে উক্ত মামলায় কোন খারাপ উদ্দেশ্যে জড়ানো হয়েছে এবং ওই মামলায় গ্রেফতারের মাধ্যমে তাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে অথবা আসামীকে উক্ত মামলার মাধ্যমে ক্ষতির মুখোমুখি করাই একমাত্র উদ্দেশ্য তাহলে আদালত তাঁকে গ্রেফতারের পূর্বেই নিজ বিবেচনায় জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।
২। আদালত আগাম জামিনের ক্ষেত্রে একটা অ-স্পষ্ট ও অ-নির্দিষ্ট(ইষধহশবঃ ঙৎফবৎ) মঞ্জুর নামা জারি করবেন না। আদালত এক্ষেত্রে সুনিদৃষ্ট অপরাধ ও অভিযোগ ও তৎপ্রসঙ্গে আবেদননামা বিবেচনা করতঃ শ্বুধুমাত্র তার ভিত্তিতেই জামিন মঞ্জুর করবেন। [ এ. ঠ. চৎধনযঁ া. ঝঃধঃব, (১৯৭৫) ঈৎষঔ ১৩৩৯-৪০ (মড়ধ)]
৩। আগাম জামিন মঞ্জুরের পূর্বে আদালত এটিই বিবেচনায় রাখবেন যে, উক্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ বা তথ্য উধঘাটনের জন্য আসামিকে পুলীশ হেফাজতে নেবার প্রয়োজন রয়েছে কিনা? যদি এরুপ প্রয়োজন বিবেচিত হয় তাহলে আদালত জামিন না-মঞ্জুর করতে পারেন।
৪। আদালতের আগাম জামিনের ক্ষমতাকে বলা হয় ‘চড়বিৎ ড়ভ ঊীঃৎধ ঙৎফরহধৎু ঘধঃঁৎব)। সুতরাং, এটি বিশেষ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ব্যবহার করা উচিৎ। যদি আদালত এটি উপলব্ধি করেন যে, আসামী তার জামিনের সুযোগের অপব্যবহার করবেন না বা মামলা প্রভাবিত করবেন না সে ক্ষেত্রে আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।
৫। আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আসামীকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। আগাম জামিনের আবেদন সাধারণত তাদের ক্ষেত্রে না-মঞ্জুর করা হয় যারা তদন্তকারী সংস্থাকে সহায়তা করেন না বা করার সম্ভাবনাও ক্ষীন, অথবা যাদেরকে ‘ঈঁংঃড়ফরধষ ওহঃবৎৎড়মধঃরড়হ’ প্রয়োজন অথবা যারা জামিনে মুক্ত থেকে মামলা প্রভাবিত করতে পারেন।
৬। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের আমল গ্রহণ করার পর এমন কি চার্জশীট দেওয়ার পরও আগাম জামিন মঞ্জুর করা যায় [জধারহফৎধ ঝধীবহধ’ং ঈধংব(২০১০) ১ ঝঈঈ ৬৮৪]। যদিও ভারতে ঐ.উ.ঋ.ঈ-মামলায় (২০০৯) জবঢ়ড়ৎঃবফ ধং ২০১০ ১ ঝঈঈ ৬৭৯ মামলায় ভিন্নমত পাওয়া যায়। এই মামলায় আদালত মন্তব্য করেন, “ঙহপব ঃযব ধপপঁংবফ রহ ঃযব ঈযধৎমব ঝযববঃ, যব যধং ঃড় ংঁৎৎবহফবৎ ঃড় ঃযব পঁংঃড়ফু ড়ভ ঃযব ঈড়ঁৎঃ ধহফ ঢ়ৎধু ভড়ৎ ৎবমঁষধৎ নধরষ.” অর্থাৎ, একবার আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দেওয়া হলে তাকে নিন্ম আদালতে আতœসমর্পন পূর্বক নিয়মিত জামিন চাইতে হবে। আমদের দেশে অবশ্য মামলার উভয় পর্যায়ে আদালত বিবেচনা প্রসূত আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।
৭। এজাহার দায়ের করা আগাম জামিনের পূর্ব শর্ত নয়। মামলায় চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে বা আসামীকে গ্রেফতারের জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে- শুধুমাত্র এই গ্রাউন্ডেই আসামীর আগাম জামিনের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলা যাবে না।
উপরোক্ত বিষয়সমূহ সহ অন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আদালত প্রধাণত নিন্মলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে থাকেন:
১। অভিযোগের প্রকৃতি ও ভয়াবহতা;
২। আবেদনকারীর পূর্বপরিচয় সেই সাথে আবেদনকারী পূর্বে কখনও আমলযোগ্য অপরাধে দন্ডিত হয়েছিল কিনা সে সম্পর্কে তথ্যাদি;
৩। জামিন পেলে আসামীর পলায়নের কোন সুযোগ ও সন্দেহ আছে কিনা?;
৪। আসামীর গ্রেফতারের মাধ্যমে তাকে সমাজের চোখে হেয় করা হবে- এমন উদ্দেশ্য নিয়ে উক্ত মামলায় তাকে জড়িত করা হয়েছে কিনা এ মর্মে অভিমত।
অন্যান্য বিষয়ের সাথে উপরোল্লিখিত নিয়ামক সমূহ বিবেচনা পূর্বক পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত কোন মামলায় আসামীর আগাম জামিন মঞ্জুর বা না- মঞ্জুর করে থাকেন। এবং যেক্ষেত্রে আসামীর আগাম জামিনের দরখাস্ত না-মঞ্জুর করেন সেক্ষত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসামীকে গ্রেফতার করতে পারবেন।
আগাম জামিন আদেশের বলবতযোগ্যতার মেয়াদকাল
আমাদের দেশে সাধারণত জামিন মঞ্জুর কালে আগাম জামিনের মেয়াদ উল্লেখ করে দেওয়া হয় উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ৪ বা ৬ সপ্তাহের জন্য ইত্যাদি। সুতরাং মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে জামিনের মেয়াদ আদালত কর্তৃক বৃদ্ধি করা না হলে উক্ত মেয়াদান্তে জামিন বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া, আদালত ইচ্ছা করলে এবং যুক্তি সঙ্গত মনে করলে মঞ্জুরকৃত জামিন আদেশ বাতিল করতে পারেন।
এক অপরাধের জন্য আগাম জামিন পেলে আসামীকে অন্য অপরাধের জন্য গ্রেফতার করা যাবে কিনা?
পূর্বেই বলা হয়েছে, আগাম জামিনের আবেদন করা হয় সু-নির্দিষ্ট কোন মামলা বা ঘটনা থেকে উদ্ভূত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতারের আশঙ্কা থেকে। সুতরাং, আগাম জামিন কোন এক বিশেষ ঘটনা বা মামলাকে সামনে রেখে আদালত কর্তৃক মঞ্জুর হয়। সুতরাং, সুস্পষ্টভাবে আসামীর যদি অন্য কোন আমল যোগ্য অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় যার জন্য তাকে জামিন মঞ্জুর করা হয় নি - এমন মামলায় তাকে গ্রেফতার করতে কোন আইনী বাঁধা নেই। এঁৎনধশংয ঝরহম ঝরনরধ া. ঝঃধঃব ড়ভ চধহলধন, অওজ (১৯৭৮) চ্ঐ ১ মামলায় আদালত বলেন যে, “ঞযব বীবৎপরংব ড়ভ ঢ়ড়বিৎ ঁহফবৎ ঃযরং ংবপঃরড়হ রং রিঃয ৎবমধৎফ ঃড় ধ ংঢ়বপরভরপ ধপপঁংধঃরড়হ ধহফ পধহহড়ঃ নব বীঃবহফবফ রহ নষধহশবঃ ভধংযরড়হ ঃড় পড়াবৎ ধষষ ড়ভভবহপবং যিরপয ঃযব ঢ়বঃরঃরড়হবৎ সধু পড়সব ঃড় নব পযধৎমবফ.”

সুপারিশঃ
১। ফৌজদারী কার্যবিধি সংশোধন করে এই আইনকে আরো যুগোপযোগী করা; এ লক্ষ্যে আগাম জামিন সম্পর্কে সু-স্পষ্ট আইন ফৌজদারী কার্যবিধিতে সন্নিবেশিত করা উচিৎ। উল্লেখ্য, ভারত ১৯৭৩ সালে নতুন করে তাদের ফৌজদারী কার্যবিধি গ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয় ২০০৫ সালে আগাম জামিন সম্পর্কে তাদের আইনে সংশোধনী ও আনয়ন করেছে যেখানে আমরা এখন ও ১৮৯৮ সালে পড়ে রয়েছি।

২। যত্রতত্র আগাম জামিন মঞ্জুর করা উচিৎ নয়; যদিও আমাদের আদালত সমূহ এ বিষয়ে বেশ সচেতন তার পরেও অনেক ক্ষেত্রে উদার ভাবে আগাম জামিনের ব্যবহারের ফলে পেশাদারী আসামীগন মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালত থেকে জামিন নেয় এবং অপরাধ কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
৩। আগাম জামিন সম্পর্কে এর অপব্যাবহার রোধকল্পে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ মর্মে আদালত প্রাথমিক শুনানিতেই আসামীর পক্ষে আগাম জামিন সম্পর্কে কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসা থেকে বিরত রাখার জন্য আইনী বিধান গ্রহণ প্রয়োজন। এ বিবেচনায় প্রসিকিউশনকে আগাম জামিনের বিরোধিতার জন্য তার কেস উপস্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান করা উচিৎ।
৪। রাষ্ট্র পক্ষকে শুনানির সুযোগ না দিয়ে আগাম জামিন মঞ্জুর করা উচিৎ নয়; এক্ষেত্রে আসামী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে হয়ত প্রাথমিক শুনানির দিন অন্তবর্তী কোন আদেশ দিতে পারেন কিন্তু উক্ত আদেশকে চূড়ান্ত করার পূর্বে অবশ্যই আদালত বাদী বা রাষ্ট্রপক্ষকে নোটিশ পূর্বক(যা কমপক্ষে সাত থেকে দশ দিনের কম হবে না) শুনানির সুযোগ দেওয়া উচিৎ।
৫। প্রাথমিক শুনানির পর নোটিশের মাধ্যমে আদালতের ধার্য্য তারিখে রাষ্ট্র বা বাদী পক্ষ যেদিন শুনানিতে অংশ গ্রহণ করবেন সেদিন আসামী হাজির থাকবেন যাতে করে আসামী আইনের আওতাভূক্ত থাকতে পারে। এর অন্যতম আরেকটি উদ্দেশ্য আছে সেটি হল আসামী যাতে করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জামিন নিয়ে পলায়ন না করতে পারে বা মামলার তদন্ত কাজে বাঁধা প্রদান না করতে পারে।
আপিল ও রিভিউ মানে কি?
আপিল, রিভিউ, রিভিশন :
আপীল (অঢ়ঢ়বধষ) ফৌজদারী বা দেওয়ানী কার্যবিধিতে আপীলের কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি।
আপীল হলো এক প্রকার আবেদন যা এক পক্ষ উচ্চ আদালতে পেশ করে নিন্ম আদালতের রায় বাতিল বা বদল করার জন্য।
রিভিশন (জবারংরড়হ) হলো উচ্চতর আদালতের পূর্নবিবেচনামূলক প্রতিকার। উচ্চতর আদালত কর্তৃক ব্যবহৃত নিম্ন আদালতের তদারকি ক্ষমতা হলো রিভিশন।
দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় মামলার বিচারকার্যে রিভিউ প্রযোজ্য।
রিভিউ (জবারব)ি কিছু নির্দিষ্ট এবং নির্দেশিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার পুন:নিরীক্ষণকে রিভিউ বলে।
বিচার বিভাগীয় প্রত্যেক অঙ্গে রিভিউ সম্ভব।
আপলি, রভিউি, রভিশিন
আপীল (অঢ়ঢ়বধষ)
ফৌজদারী বা দওেয়ানী র্কাযবধিতিে আপীলরে কোন সজ্ঞা প্রদান করা হয়ন।ি আপীল হলো এক প্রকার আবদেন যা এক পক্ষ উচ্চ আদালতে পশে করে নন্মি আদালতরে রায় বাতলি বা বদল করার জন্য।
রভিশিন (জরারংরড়হ)
রভিশিন হলো উচ্চতর আদালতরে র্পূনববিচেনামূলক প্রতকিার। উচ্চতর আদালত র্কতৃক ব্যবহৃত নম্নি আদালতরে তদারকি ক্ষমতা হলো রভিশিন। দওেয়ানী ও ফৌজদারী উভয় মামলার বচিারর্কাযে রভিউি প্রযোজ্য।
রভিউি (জবারব)ি
কছিু নর্দিষ্টি এবং নর্দিশেতি অবস্থার পরপ্রিক্ষেতিে বচিার পুন:নরিীক্ষণকে রভিউি বল।ে বচিার বভিাগীয় প্রত্যকে অঙ্গে রভিউি সম্ভব।
প্রশ্ন:১৪৪ ধারা কি? কোন কোন ক্ষেত্রে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়? কোন ধরনের ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারা জারি করে থাকেন? ১৪৪ ধারার মেয়াদ কাল উল্লেখ কর। কোথায় ১৪৪ ধারা প্রযোজ্য হয় না?
১৪৪ ধারা জারি:
যখন শান্তি শৃংখলা ভঙ্গ, দাঙ্গা, ঝগড়া বিবাদ ইত্যাদির জন্য মানুষের জীবন বিনাশ, সম্পদের ক্ষতি বা জনগণের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন আশুব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী কতিপয় নির্দেশ প্রদান করা হয় যা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৪ ধারার আওতায় জারি করা হয়। এই ধারার মাধ্যমে ব্যক্তি বা জনগণের জীবন যাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে জনজীবনে শৃংখলা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। নিম্নে ১৪৪ ধারা উল্লেখ করা হলঃ
ধারা ১৪৪- উপদ্রব বা বিপদ আশংকার জরুরী ক্ষেত্রসমূহে তৎক্ষণাৎ কার্যকর আদেশ জারির ক্ষমতা-
১) যে সকল ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, বা সরকার অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিশেষ ভাবে ক্ষমতাবান অন্য কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (তৃতীয় শ্রেণীর নয়) যদি মনে করেন যে অত্র ধারার আওতায় অগ্রসর হবার মত যথাযথ কারন রয়েছে এবং তাড়াতাড়ি প্রতিকার প্রদানের দরকার এবং তিনি মনে করেন যে তার নির্দেশ আইনত নিযুক্ত কোন ব্যক্তির প্রতি প্রতিবন্ধকতা, আঘাত বা মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তার প্রতি ঝুঁকি, দাঙ্গা হাঙ্গামা প্রতিরোধের সম্ভাবনা আছে বা বিস্তারে সহযোগিতা করবে, তাহলে সে সব ক্ষেত্রে তিনি লিখিত আদেশ দ্বারা কোন ব্যক্তিকে কোন কার্য করা হতে বিরত থাকার বা তার দখলীয় বা পরিচালনাধীন কোন সম্পত্তি সম্পর্কে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবেন। এই লিখিত আদেশে ঘটনার মূল বিষয়বস্তু বর্নিত থাকবে এবং তা ১৩৪ ধারায় বর্নিত পদ্ধতিতে জারি করতে হবে।
২) জরুরী পরিস্থিতিতে বা যে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর যথাযথ পদ্ধতিতে নোটিশ জারি সম্ভব নয়, সে সকল ক্ষেত্রে এই ধারার আদেশ একতরফাভাবে দেওয়া যাবে।
৩) এই ধারার আদেশ কোন বিশেষ স্থানে ঘন ঘন গমনকারী ব্যক্তি বা জনসাধারণের প্রতি সাধারণ ভাবে নির্দেশিত হতে পারে।
৪) কোন ম্যাজিস্ট্রেট স্বতঃপ্রবৃত হয়ে বা কোন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির আবেদনক্রমে তার নিজের বা তার অধীনস্থ কোন ম্যাজিস্ট্রেট বা তার স্থলাভিষিক্ত পুর্ববর্তি ম্যাজিস্ট্রেটের কোন আদেশ বাতিল বা পরিবর্তন করতে পারবেন।
৫) উক্তরুপ আবেদন পত্র পাওয়া গেলে ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনকারীকে শীঘ্র ব্যক্তিগতভাবে বা উকিল মারফত তার কাছে হাজির হয়ে আদেশের বিরুদ্ধে কারন প্রদর্শনের সুযোগ দিবেন এবং ম্যাজিস্ট্রেট যদি আবেদন পুরো বা আংশিক বাতিল করেন, তাহলে তিনি এরুপ করার কারন লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।
৬) মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তার প্রতি বিপদ অথবা দাঙ্গা বা মারপিটের আশংকার ক্ষেত্রে সরকার সরকারী গেজেটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভিন্ন কোন নির্দেশ না দিলে এই ধারা অনুসারে প্রদত্ত কোন আদেশ দুই মাসের বেশী কার্যকর থাকবে না।
৭) এই ধারার বিধান সমূহ মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রযোজ্য হবে না।

*১৪৪ ধারা কেন জারি করা হয় ?
** ১৪৪ ধারা কে জারী করতে পারে?
***১৪৪ ধারা ভঙ্গের শাস্তি কি?
সাধারণত কোথাও কোন গুরুতর পরিস্থিতিতে এই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
যদি দেখা যায় যে,
* আইনানুগভাবে কর্মরত কোন ব্যাক্তি বাধা,বিরোধ বা ক্ষতির আশংকা করছেন
* মানুষের জীবন,স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তা বিপন্ন হবার আশংকা দেখা দিলে
* মানুষের শান্তি শৃঙ্খলা বিঘিœত হয়
* দাঙ্গা-মারামারির বা জীবন বিনাশ ইত্যাদি আশংকা দেখা দিলে
* অন্য কোন গুরুতর পরিস্থিতি যেখানে তাৎকণিক প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরী
** ১৪৪ ধারা কে জারী করতে।পারে?
সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকার কর্তৃক বিশেষভাবে ক্ষমতাবান অন্য কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
*** ১৪৪ ধারা ভঙ্গের শাস্তি কি?
এই ধারা অমান্যকারীকে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবে। দন্ডবিধি অনুসারে যে কোন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই বৎসর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড, জরিমানা বা উভয় প্রকারের শাস্তি দিতে পারে।
প্রশ্নঃ ১৪৪ ধারা কেন জারি করা হয় ? ১৪৪ ধারা কে জারী করতে পারে? ১৪৪ ধারা ভঙ্গের শাস্তি কি?
উত্তর: সাধারণত কোথাও যে কোন গুরুতর পরিস্থিতিতে এই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
যদি দেখা যায় যে,
* আইনানুগভাবে কর্মরত কোন ব্যাক্তি বাধা,বিরোধ বা ক্ষতির আশংকা করছেন ।
* মানুষের জীবন,স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তা বিপন্ন হবার আশংকা দেখা দিলে মানুষের শান্তি শৃঙ্খলা বিঘিœত হয় দাঙ্গা - মারামারির বা জীবন বিনাশ ইত্যাদি আশংকা দেখা দিলে বা অন্য কোন গুরুতর পরিস্থিতি যেখানে তাৎকণিক  প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরী সেখানে ১৪৪ ধারা জারী করতে পারে ।
১৪৪ ধারা কে জারী করতে পারে?
সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকার কর্তৃক বিশেষভাবে ক্ষমতাবান অন্য কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারা জারী করতে পারে।
১৪৪ ধারা ভঙ্গের শাস্তি কি?
এই ধারা অমান্যকারীকে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবে।
দন্ডবিধি অনুসারে যে কোন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই বৎসর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড, জরিমানা বা উভয় প্রকারের শাস্তি দিতে পারে।

রায় কি? রায়ের বিষয়বস্তু/উপাদান/পদ্ধতি/বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর। রায কিভাবে ঘোষনা করা হয়? রায় পরিবর্তন করা যায় কি না?
রায় বলতে বোঝায় একটি ফৌজদারী আদালতের বিচারিক প্রক্রিযা শেষে আদালত চুড়ান্ত সিন্ধান্ত  গ্রহন করে তাকে রায় বলে।
ঔঁফমবসবহঃ সবধহং ঃযব ংঃধঃবসবহঃ মরাবহ নু ঃযব ঔঁফমব, বিচারক যে বিবৃতি দেয় তাকেই রায বলা হয়।
বিষয়বস্তু:ধারা-৩৬৭
১) আইনে কোন ভিন্ন বিধান না থাকলে আদালতের প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক লিখিত হতে হবে বা তার শ্রুত লিখন হতে আদালতের ভাষায় বা ইংরেজী ভাষায় লিখিত হবে। ইহাতে বিচারের বিষয় সমূহ, সে সম্পর্কে সিন্ধান্ত ও সিন্ধান্তের কারণ সমূহ উল্লেখিত থাকবে এবং প্রিজাইডিং অফিসার উক্ত রায ঘোষনার সময় প্রকাশ্য আদালতে উহাতে তারিখ দিবেন বা স্বাক্ষর করবেন এবং প্রিজাইডিং অফিসার যখন নিজ হাতে উহা না লিখেন, তখন রায়ের প্রত্যেকটি পৃষ্ঠায় তিনি স্বাক্ষর করবেন।
২) আসামী যে অপরাধে (যদি থাকে) ও দন্ডবিধি বা অন্য কোন আইনের যে ধারায় দন্ডিত হল এবং তাকে যে দন্ড দেওয়া হল, রায়ে তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে।
৩) দন্ড বিধি অনুসারে দন্ড দেওয়া হলে অপরাধ উক্ত বিধির দুইটি ধারার মধ্যে কোন ধারা অর্ন্তভূক্ত সে সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে আদালতে স্পষ্টরুপে উহা প্রকাশ করবেন এবং বিকল্প রায় প্রদান করবেন।
৪) রায়ে আসামীকে খালাস দেওয়া হলে, যে অপরাধ হতে আসামীকে খালাস দেওয়া হল , রায়ে তার উল্লেখ করতে হবে এবং নির্দেশ দিতে হবে যে, তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।
৫) আসামী যদি মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দন্ডিত হয় অথবা তৎপরিবর্তে তাকে যাবজ্জীবন কারদন্ড অথবা কয়েক বৎসর মেয়াদের কারাদন্ড দেওয়া হয়,তাহলে আদালত রায়ে দন্ডদানের কারন উল্লেখ করবেন।
৬) এই ধারার উদ্দেশ্যে ১১৮ ধারা বা ১২৩ ধারা (৩) উপধারা অনুসারে দেওয়া আদেশ রায় বলে গণ্য হবে।
রায় পরিবর্তন করা যায় কি না:
ফৌ:কা: বিধির ৩৬৯ ধারা অনুযায়ী এই বিধি বা বর্তমানে বলবৎ অপর কোন আইনে ভিন্নরুপ বিধান না থাকলে কোন আদালত রায়ে স্বাক্ষর করার পর কেরানীর ভুল সংশোধন করা ব্যতীত উহা পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা করবেন না।

ক) আপীল কি? কোথায় আপীল দায়ের করতে হয়? কে আপীল দায়ের করতে পারে?
খ) কোন কোন ক্ষেত্রে আপীলের বিধান নাই বা আপীল চলে না?
গ) খালাস এবং অপর্যাপ্ত দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল চলে কি?
ঘ) আপীল নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আপীল অদালতের ক্ষমতা বর্ণনা কর।
ঙ) আপীলকারীর মৃত্যু হলে আপীলের কি অবস্থা হয়?
 আপীল কি:
আপীল হল কোন মামলার রায় যুক্তিযুক্ত হয়েছে কিনা তা নির্নয়ের জন্য নিম্ন আদালত হতে মামলাটি উচ্চতর আদালতে স্থানান্তর করা।
আপীল বলতে বোঝায় নিম্ন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উর্ধ্বতন আদালতে যে লিখিত দরখাস্ত বা যে বিচার প্রার্থনা করে তাকেই আপীল বলা হয়।
অঢ়ঢ়বধষ সবধহং ঃড় পধৎৎু ধ ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ পধংব ভৎড়স ষড়বিৎ পড়ঁৎঃ ঃড় যরমযবৎ পড়ঁৎঃ ঃড় ধংপবৎঃধরহ যিবঃযবৎ ঃযব লঁফমবসবহঃ ড়ভ ঃযব ষড়বিৎ রং ংঁংঃধরহধনষব.
লাহোর হাইকোর্টের ভাষ্য অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের রায় যথার্থ কিনা তা নির্নয়ের লক্ষে কোন বিশেষ মোকদ্দমাকে নিম্ন আদালত হতে উচ্চ আদালতে স্থানান্তর করাই হচ্ছে আপীল।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের ভাষ্য অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের বিধানের ধারাবাহিকতাই হচ্ছে আপীল।
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪০৬ থেকে ৪৩১ ধারা পর্যন্ত আপীল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দেওয়ানী কার্যবিধির সপ্তম খন্ডে ধারা ৯৬ থেকে ১১২ ধারা পর্যন্ত এবং আদেশ ৪১ থেকে ৪৫ আদেশ পর্যন্ত দেওয়ানী আপীল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে যে কোন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি উচ্চ আদলতে আপীল করতে পারেন। তবে, আইনে যে সকল ক্ষেত্রে আপীল করার অধিকার নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে শুধু সে সকল ক্ষেত্রে আপীল করা যায়। আইনের প্রশ্নে বা ঘটনার প্রশ্নে বা উভয় ক্ষেত্রে ই আপীল করা যায়।
আমরা আপীল সম্পর্কে বলতে পারি যে, নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার পক্ষে যুক্তিসঙ্গত কারন উল্লেখ করে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি কর্তৃক যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন উচ্চ আদালতে পেশ করা লিখিত দরখাস্তই হলো আপীল।

কোথায় আপীল দায়ের করতে হয়/নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল কোন আদালতে দায়ের করতে হবে:
ফৌজদারী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীলঃ
ক) দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীলঃ- ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৭ ধারা অনুযায়ী, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর কোন ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারে দন্ডিত কোন ব্যক্তি চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আপীল করতে পারবে। তিনি নিজেই শুনানী করতে পারেন অথবা অতিরিক্ত চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দিতে পারেন।
খ) প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং যুগ্ম দায়রা জজের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীলঃ- ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৮ ধারা অনুযায়ী, যখন কোন ব্যক্তি কোন যুগ্ম দায়রা জজ, মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট বা কোন প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারে দন্ডিত হয়, তখন সেই ব্যক্তি দায়রা আদালতে আপীল করতে পারবে।
তবে শর্ত এই যে-
১) যুগ্ম দায়রা জজ পাঁচ বৎসরের অধিক সময়ের কারাদন্ডের আদেশ দিলে, হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে হবে।
২) যখন কোন ব্যক্তি কোন মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট বা কোন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক দন্ডবিধির ১২৪(ক) ধারায় বর্নিত অপরাধের (রাষ্ট্রদ্রোহিতা) বিচারে দন্ডিত হয়, তখন তাকে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে হবে।
গ) দায়রা আদালতের দন্ডের বিরুদ্ধে আপীলঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী, দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ কর্তৃক দন্ডিত ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারবে।
ঘ) হাইকোর্ট বিভাগের দন্ডের বিরুদ্ধে আপীলঃ- হাইকোর্ট বিভাগের আদি এখতিয়ারমূলে বিচারে দন্ডিত কোন ব্যক্তি আপীল বিভাগে আপীল দায়ের করতে পারবে।
দেওয়ানী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীলঃ
ক) সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ এবং যুগ্ম জেলা জজের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজের আদালতে আপীল দায়ের করতে পারবে। তবে যুগ্ম জেলা জজ যদি ৫০০০০০(পাঁচ লক্ষ) টাকার অধিক আর্থিক এখতিয়ারের কোন মামলায় রায় প্রদান করেন, তাহলে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে হবে।
খ) হাইকোর্ট বিভাগের আদি এখতিয়ারমূলে বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আপীল দায়ের করতে পারবে।
কে আপীল দায়ের করতে পারে:
নিম্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে যে কোন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি উচ্চ আদলতে আপীল করতে পারেন। তবে, আইনে যে সকল ক্ষেত্রে আপীল করার অধিকার নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে শুধু সে সকল ক্ষেত্রে আপীল করা যায়। আইনের প্রশ্নে বা ঘটনার প্রশ্নে বা উভয় ক্ষেত্রে ই আপীল করা যায়।
যে সকল ক্ষেত্রে আপীল চলে নাঃ
ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৪১২ ধারা মোতাবেক যে সকল ক্ষেত্রে অভিযুক্ত বা আসামী দোষ স্বীকার করলে কতিপয় ক্ষেত্রে আপীল চলবে না।
ফৌজদারি আইনের ৪১৩ ধারা মোতাবেক তুচ্ছ মামলার ক্ষেত্রে অর্থাৎ যে সব ক্ষেত্রে ৫০/- জরিমানা বা এক মাসের কারাদন্ড হয় সে ক্ষেত্রে আপীল চলবে না।
ফৌজদারি আইনের ৪১৪ ধারা মোতাবেক সংক্ষিপ্ত বিচারের কতিপয় দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল চলবে না।

নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর সংজ্ঞাসহ পার্থক্য নির্ণয় কর।
অব্যাহতি (উরংপযধৎমব) ও খালাস (অপয়ঁরঃঃধষ) এবং (ইধরষ) জামিন বা মুক্তি এর মধ্যে পার্থক্য কি?
অব্যাহতি (উরংপযধৎমব) ও খালাস (অপয়ঁরঃঃধষ) (ইধরষ) জামিন বা মুক্তিঃ
(উরংপযধৎমব) অব্যাহতিঃ মামলার নথি, দাখিল দলিলাদি এবং তৎসম্পর্কে আসামী ও অভিযোগকারী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে মামলা চালাবার যথেষ্ট কারণ নাই, তাহলে আদালত আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিবেন এবং তার কারণ লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।
(ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা- ২৬৫গ)
(অপয়ঁরঃঃধষ) খালাসঃ অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীর জবানবন্দি গ্রহণ এবং বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগকারী পক্ষ ও আসামী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী অপরাধ করেছে বলে কোন সাক্ষ্য প্রমান নাই, তাহলে আদালত আসামীকে খালাস দেবেন এবং তা লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।
(ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা- ২৬৫জ)
অব্যাহতির ক্ষেত্রে শুধু অনুসন্ধান করা হয়, বিচার কার্যক্রম শুরু করা হয় না। যদি অব্যাহতির পর নতুন সাক্ষ্য প্রমান উদঘাঁটিত হয়, তাহলে আসামীর বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ ঘটন করা যায়।অন্যদিকে কোন আসামীকে বিচারে খালাস প্রদান করলে, পুনরায় তার বিরুদ্ধে একি অপরাধের অভিযোগ ঘটন করা যায় না। অব্যাহতির আদেশ আদালতের কোন রায় নয়। কিন্তু খালাসের আদেশ আদালতের একটি রায়।
(ইধরষ) জামিন বা মুক্তিঃ জামিন বা মুক্তি আপনি যে কোন সময় পেতে পারেন । আসামী যদি আদালতকে বিশ্বাস যগ্য কারন দেখাতে পারে এবং আদালত যদি মনেকরে আসামী কে জামিন দেয়া যায় তাহলে মামলা চলা অবস্থায় আসামী কে কারাগারে না রেখে জামিন বা মুক্তি দিতে পারে । অনেক সময় আদালত আসামী কে শর্ত বা লিখিত বন্ডের মাধ্যমে জামিন বা মুক্তি দিয়ে থাকে ।
(ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা- ৪৯৬-৪৯৮) আলোচনা করা আছে ।
ক)অব্যাহতি (উরংপযধৎমব) ও খালাস (অপয়ঁরঃঃধষ)
মামলা থেকে অব্যাহতির ক্ষেত্রে শুধু অনুসন্ধান করা হয়, বিচার কার্যক্রম শুরু করা হয় না। যদি অব্যাহতির পর নতুন সাক্ষ্য প্রমান উদঘাঁটিত হয়, তাহলে আসামীর বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ ঘটন করা যায় ।
অন্যদিকে কোন আসামীকে বিচারে খালাস প্রদান করলে, পুনরায় তার বিরুদ্ধে একি অপরাধের অভিযোগ গঠন করা যায় না।
অব্যাহতির আদেশ আদালতের কোন রায় নয়। কিন্তু খালাসের আদেশ আদালতের একটি রায় ।
অব্যাহতি; ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা- ২৬৫ গ,ম্যাজিষ্ট্রেট কো্ট-ে২৪১ক অনুযায়ী মামলার নথি, দাখিল দলিলাদি এবং তৎসম্পর্কে আসামী ও অভিযোগকারী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে মামলা চালাবার যথেষ্ট কারণ নাই, তাহলে আদালত আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিবেন এবং তার কারণ লিপিবদ্ধ করে রাখবেন ।
খালাস: ফৌজদারী কার্যবিধি ধারা- ২৬৫জ, ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে-২৪৫ধারা অনুযায়ী অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীর জবানবন্দি গ্রহণ এবং বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগকারী পক্ষ ও আসামী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী অপরাধ করেছে বলে কোন সাক্ষ্য প্রমান নাই, তাহলে আদালত আসামীকে খালাস দেবেন এবং তা লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।

ক্রিমিনাল কেস বা ফৌজদারি মামলা কি
সাধারন ভাষায় কোন ব্যক্তিকে যখন মারামারি, চুরি,ডাকাতি,খুন, যখম, প্রতারনা, দস্যুতা, রেইপ, অপহরণ, বে-আইনি সমাবেশ, ইভ-টিজিং , জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্যদান প্রভুতি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় তাকে বলে ফৌজদারি মামলা ক্রিমিনাল কেস।
পেনাল কোডে অপরাধ এবং এর শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ আছে কিন্তু কিভাবে অপরাধিকে শাস্তি দেয়া হবে তার কথা উল্লেখ আছে কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ বা ফৌজদারি কার্যবিধিতে।
ব্যাপক ভাবে ক্রিমিনাল আদালত তিনভাগে বিভক্ত: (ধারা-৬)
১। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোট
২। দায়রা জাজ আদালত
৩। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
আবার দুই ধরনের অধস্তন আদালতের সারি আছে। যেমন:- দায়রা আদালত এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। জেলা পর্যায় যে বা যারা ক্রিমিনাল মামলা পরিচালনা করেন তাদের সেশন কোট বা দায়রা আদালত বলে। এই আদালতের বিচারকরা হলেন:-
১। দায়রা জাজ:- যিনি জেলায় পর্যায় ক্রিমিনাল মামলার প্রধান বিচারক।
২। অতিরিক্ত দায়রাজজ
৩। যুগ্ন দায়রাজজ।
দায়রা জাজ আইন আরোপিত সব ধরনের শাস্তি দিতে পারেন। শুধু ডেথ পেনাল্টির কার্যকর করার ক্ষেত্রে হাইকোটের অনুমতি লাগবে।
যুগ্ন দায়রাজজ ডেথ পেনাল্টি বা ১০ বছরের বেশি কারাদন্ড দিতে পারবেন না। (ধারা-৩১)
অপরদিকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই ভাবে পরিচিত । যেমন:- মেট্রোপলিটন এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন এলাকার বাহিরের ম্যাজিস্ট্রেট। মেট্রোপলিটন এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট এর শ্রেণিবিভাগ নিন্মরুপ:-
১। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএম এম)
২। অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
৩। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে গণ্য হবেন।
অপরদিকে মেট্রোপলিটন বা মহানগর এলাকার বাহিরের ম্যাজিস্ট্রেটরা বা জেলা আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা নিন্ম শ্রেনীতে বিভক্ত :-
১। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
২। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৩। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বলতে সেকেন্ড ক্লাস এবং থার্ডক্লাশ ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝানো হয়েছে।
বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নয়) এর এখতিয়ার ও ক্ষমতা:- (ধারা-৩২)
১। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট :- নির্জন কারাবস সহ ৫ বছরের অনধিক কারাদন্ড দিতে পারবেন এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন।
২। সেকেন্ড ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট :- নির্জন কারাবাস সহ ৩ বছরের কারাদন্ড এবং অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা।
৩। থার্ডক্লাশ ম্যাজিস্ট্রেট :- অনধিক ২ বছরের সাজা এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা।
কোন আসামি যদি জরিমানার টাকা দিতে না চান সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট টাকা অনাদায়ের জন্য আসামিকে দন্ডদানের তার যে ক্ষমতা আছে তার এক-চতুথাংশের বেশি হবে না। (ধারা-৩৩)


ছঁবংঃরড়হ ুবধৎ ঝড়ষঁঃরড়হ
ফৌজদারী কার্যবিধির পরিধি ও উদ্দেশ্য কি? এ কথা বলা যথার্থ হবে না - ফৌজদারী কার্যবিধি সম্পূর্ণরুপে একটি পদ্ধতিগত আইন? অনুসন্ধান ও তদন্তের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
এ কথা বলা যথার্থ হবে না - ফৌজদারী কার্যবিধি সম্পূর্ণরুপে একটি পদ্ধতিগত আইন:
স্বাভাবিকভাবে আমরা জানি, ফৌজদারী কার্যবিধি পদ্ধতিগত আইন। এতে ফৌজদারী আদালতের গঠন, শ্রেণী, ক্ষমতা. দন্ড বিধির আওতায় সংঘটিত কোন অপরাধের নালিশ এজাহার দায়ের,বিচার পদ্ধতি, সাক্ষ্য প্রমান গ্রহন, অভিযুক্তকে পরীক্ষাকরণ, সওয়াল জবাব শ্রবণ,রায লিখন ইত্যাদি কাযক্রমের পদ্ধতি বর্ণনা দেয়া আছে। তজ্জন্য ফৌজদারী কার্যবিধিকে পদ্ধতিগত আইন বলা হয়ে থাকে। কেহ কেহ একে গ্রেফতার ও সমনের আইন হিসেবে অখ্যায়িত করার প্রয়াস পাচ্ছেন। কারণ এতে আছে, অভিযুক্তকে খোঁজকরণ,ধৃতকরণ ও আদালতে হাজিরকরণ পদ্ধতি। আবার কেউ কেউ একে অপরাধ নিবারণমূলক আইনও বলে থাকেন। কারণ এতে অপরাধ নিবারণ বা প্রতিরোধের জন্য কতিপয় সুস্পষ্ট বিধান বর্ণিত রয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, ফৌজদারী কার্যবিধিকে যথার্থই মৌলিক আইন বলা যাবে না,যদিও এতে মৌলিক আইনের কতিপয় উপাদান নিহিত আছে। যেমন, দন্ডিত হবার পর বাংলাদেশে কার্যকর ১৮৯৮ সনের ফৌ:কা: বি: ১০৬ ধারায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত আসামীর মুচলেকা ,১০৭ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহমূলক প্রচারকের নিকট থেকে সদাচরনের জন্য মুচলেকা, ১০৯ ধারায় ভবঘুরে ও সন্দেহভাজন ব্যক্তির নিকট থেকে সদাচরণের মুচলেকা,১১০ ধারায় অভ্যাসগত অপরাধীরদের থেকে মুচলেকা, ১৩৩ ধারায় গনউপদ্রপ অপসারনের আদেশ, ১৪৩ ধারায় গণউপদ্রপ পুনরাবৃত্তি নিষিদ্ধকরণ, ১৪৪ ধারায় বিপদাশংকার জরুরী ক্ষেত্রে শান্তি শৃংখরা রক্ষার্থে তাৎক্ষণিক বলবৎ আদেশ, ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়েরকারীকে শাস্তি। ৪৮০ ধারায় আদালত অবমাননার কতিপয় ক্ষেত্রে কার্যক্রম গ্রহন ও শাস্তি,৪৮৫ ধারায় কেউ  জবাব দিতে বা দলিল দাখিল করতে অস্বীকার করলে শাস্তি প্রদান বা সোপর্দকরণ ৪৮৫ খ ধারায় নির্ধারিত সময়ে সাক্ষী আদালতে হাজির না হলে শাস্তি প্রদানের কার্যক্রম, ৫১৪ ধারায় জামিন প্রাপ্ত আসামী জামিনের শর্তভঙ্গ করলে জামিনদারের বিরুদ্ধে গৃহিতব্য কার্যক্রমের বিবরণ ও শাস্তি প্রদান ইত্যাদি সংক্রান্ত ধারা সমুহকে মৌলিক আইনের উপাদান বলা যায়। এতদসত্বেও ফৌজদারি কার্যবিধি এদেশে পদ্ধতিগত আইন হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার সারতত্বে বলা যায় যে, যে কোন মামলার যথাযথ পরিচালনা ও নিস্পত্তির প্রশ্নে মুল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের প্রয়োগ অস্বীকার্য।কেননা মুল আইন কোনো মামলার উদ্দেশ্যগত বিষয়বস্তুর সহিত যেমনি সম্পৃক্ত ,ঠিক তেমনি আবার পদ্ধতিগত আইনও কোন মামলার প্রক্রিয়ার সহিত সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধি পদ্ধতিগত আইনের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত বটে। আপাত দৃষ্টিতে ফৌজদারী কার্যবিধিকে নির্ভেজাল পদ্ধতিগত আইন হিসেবে মনে করা হলেও একে একটি নিছক পদ্ধতিগত আইন হিসেবে গ্রাহ্য করা হয় না। কারণ এ আইনে শুধুমাত্র অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের পদ্ধতি গৃহীত হয়নি বরঞ্চ অপরাধীর অপরাধ প্রমান করার বা এরুপ অপরাধ খন্ডনের অধিকার এবং সর্বশেষে আদালতের প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করার বিধিবিধান গৃহীত হয়েছে। এতদ আঙ্গিকে ফৌজদারী কার্যবিধিকে নিছক পদ্ধতিগত আইন বলা সাজে না বরং একে অনেকটা উভয় আইনের সংমিশ্রন বলা যুক্তিযুক্ত হতে পারে।
অনুসন্ধান ও তদন্তের মধ্যে পার্থক্য:
তদন্ত কাকে বলে ?
তদন্ত বা ওহাবংঃরমধঃরড়হ এর আভিধানিক অর্থ হল পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে পরীক্ষা। ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪(১)(ঠ) অনুযায়ী, তদন্ত বলতে অত্র বিধির আওতায় পরিচালিত কোন মামলার সাক্ষ্য সংগ্রহের জন্য কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত অন্য কোন ব্যক্তি (যিনি ম্যাজিস্ট্রেট নন) কর্তৃক পরিচালিত সকল কার্যক্রমকে বুঝায়।
অর্থাৎ সাক্ষ্য প্রমান সংগ্রহের জন্য পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশিত কোন ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রমকে তদন্ত বলে।
অনুসন্ধান কাকে বলে ?
বিচারের পুর্বে ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকেন তাকে অনুসন্ধান বলে। ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪(ট) অনুযায়ী, অত্র বিধির আওতায় ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত কর্তৃক বিচার ব্যতীত অন্যান্য কার্যক্রমকে বুঝায়।
অনুসন্ধান বা ওহয়ঁরৎু অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত কর্তৃক হতে হবে। অন্যদিকে তদন্ত পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশিত অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত হতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ফৌজদারী অপরাধ বিচারার্থে বিভিন্ন শ্রেণীর ফৌজদারী আদালতগুলি কি কি? প্রত্যেকটি আদালতের গঠন, ক্ষমতা ও সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা আলোচনা কর।
ফৌজদারী মামলার প্রকৃতিগত প্রকারভেদঃ
ফৌজদারী অপরাধ সম্পর্কে ফৌজদারী আদলতে যেসব মামলার বিচার হয় তা সবই ফৌজদারী মামলা হিসাবে গণ্য হয়। উদাহরণ স্বরূপ, খুন,আঘাত,চুরি,ডাকাতি,প্রতারণা ইত্যাদি ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গণ্য। এসকল অপরাধের শাস্তি দন্ডবিধি-১৮৬০ এ বলা হয়েছে। দন্ডবিধির মোট ৫১১ টি ধারার মধ্যে অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। দন্ডবিধি ছাড়া ও আর কতিপয় বিশেষ আইনে অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেমনঃ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন-২০০০, ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ইত্যাদি আইন অনুসারে অপরাধ সমূহের বিচার ফৌজদারি আদালতে হয়। ফৌজদারি বিচার ব্যাবস্থায় অরাধের গুরুত্ব, প্রকৃতি, মামলা দায়েরের পদ্ধতি এবং বিচারের এখতিয়ারের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরণের মামলা পরিলক্ষিত হয়।
অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় মামলার প্রকারভেদঃ
অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে মামলাকে দুভাগে ভাগ করাযায়, যথাঃ ক) আমলযোগ্য মামলা এং খ) আমল-অযোগ্য মামলা।
মামলা দায়ের পদ্ধতির ভিন্নতাভেদে প্রকারভেদঃ
মামলার উৎপত্তিস্থল হল থানা ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। তাই কোন কর্তৃপক্ষের নিকট মামলা দায়ের করা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে ফৌজদারি মামলাকে দুভাগে ভাগ করাযায়। যথাঃ ক) পুলিশি মামলা এবং খ) নালিশি মামলা।
বিচারের এখতিয়ারের ভিত্তিতে প্রকারভেদঃ
সকল প্রকার মামলা একই আদালতে বিচার্য নয়। অপরাধের গুরুত্ব ও প্রকৃতিভেদে বিভিন্ন মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচার করা হয়। তাই বিচারের এখতিয়ারের ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলাকে তিন ভাগে ভাগ করাযায়। যথাঃ
ক) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার্য মামলা (সকল শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত),
খ) দায়রা আদালতে বিচার্য মামলা এবং
গ) বিশেষ আদলতে বিচার্য মামলা।
মামলার প্রকৃতি ও প্রকারভেদ ভিন্ন রুপ হলেও মামলা দায়েরের পদ্ধতি নিম্নোক্ত তিন প্রকারের যথাঃ
ক) সি, আর মামলা (ঈ.জ ঈধংব)
খ) জি, আর মামলা (এ.জ ঈধংব)
 গ) নন-জি, আর মামলা (ঘড়হ-এ.জ ঈধংব)
ক) সি, আর মামলা (ঈ.জ ঈধংব)ঃ- কোন ঘটনা বা অপরাধের ভিত্তিতে অভিযোগকারী যখন সরাসরি আদালতে হাজির হয়ে উহার বিচার বা প্রতিকার প্রার্থনা করে অর্থাৎ দরখাস্তের মাধ্যমে মামলা দায়ের করে তখন সে মামলাকে সি,আর মামলা বলা হয়ে থাকে। সি,আর এর পুর্ন অর্থ হল ঈড়সঢ়ষধরহঃ জবমরংঃবৎ। যাকে নালিশি মামলা ও বলা হয়। নালিশ আকারে দায়ের কৃত মামলার কোন সাক্ষী থাকলে তখন ম্যাজিস্ট্রেট তাদের শপথ পাঠ করানোর পর জবানবন্দী গ্রহণপুর্বক যেই রুপ উপযুক্ত মনে করেন সে রুপ আদেশ প্রদান করেন। আমলযোগ্য মামলা হলে তিনি অপরাধটি আমলে গ্রহণ করে ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারেন বা তদন্তের জন্য তিনি নিজে অথবা অন্য যে কোন ব্যাক্তিকে নির্দেশ দিতে পারেন। আবার ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট যদি মনে হয় যে মামলার কোন ভিত্তি নেই তাহলে তিনি তা খারিজ করে দিতে পারেন অথবা মামলাটি গ্রহণের জন্য থানার পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে পারেন। এইক্ষেত্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট তার বিচারিক মন প্রয়োগ করে যেইরুপ ব্যাবস্থা গ্রহণকরা উচিৎ মনে করেন তিনি সেইরুপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আইন ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলা আমলে নেয়া বা না নেয়ার বিষয়ে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করেছে।
খ) জি, আর মামলা (এ.জ ঈধংব)ঃ- এ.জ ঈধংব শব্দের পুর্ন রুপ হল এবহবৎধষ জবমরংঃবৎ ঈধংব। আমালযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে থানায় কোন লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ দায়ের করা হলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারার বিধান অনুসারে উক্ত সংবাদকে তিনি লিপিবদ্ধ করে সংবাদ দাতার সাক্ষর গ্রহণ করার মাধ্যমে ঋ.ও.জ বা এজাহার হিসাবে গ্রহণ করবেন। আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে দায়েরকৃত মামলাকে জি, আর মামলা (এ.জ ঈধংব) বলে। এইপ্রকারের মামলা দায়েরের পর তদন্ত কর্মকর্তা কারও অনুমতি ছাড়া তদন্ত এবং আসামীকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করার জন্য অগ্রসর হয়ে থাকেন।
গ) নন-জি, আর মামলা (ঘড়হ-এ.জ ঈধংব)ঃ- থানায় আমল-অযোগ্য কোন অপরাধ সম্পর্কে কোন মামলা দায়ের করা হলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা সাধারণ ডায়েরী আকারে লিপিবদ্ধ করে রাখেন এবং ম্যাজিস্ট্রেট এর অনুমতি ছাড়া অগ্রসর হতে পারেন না। এই প্রকারের মামলাকে নন-জি, আর মামলা (ঘড়হ-এ.জ ঈধংব) বলে।
ফৌজদারী আদালত সমূহ এবং এর ক্ষমতা ও এখতিয়ারঃ
সংবিধানের ৯৪(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট নামে একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকবে। ইহার দুটি বিভাগঃ ক, হাইকোর্ট বিভাগ এবং খ,আপিল বিভাগ।
আপীল বিভাগঃ- বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ শুধু মাত্র আপীল এখতিয়ার ভোগ করে থাকেন। হাইকোর্ট বিভাগের রায় ডিক্রি আদেশ বা দন্ডাদেশর বিরুদ্ধে আপীল শুনানির ও তা সমাধান করার এখতিয়ার আপীল বিভাগ কে দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্ট বিভাগঃ- সংবিধানের ১০১ অনুচ্ছেদ মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ও এখতিয়ারের উৎস দুটিঃ যথা, সংবিধান এবং সাধারণ আইন। সুতরাং হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কে দু’ভাগে ভাগ করা যায়ঃ সাধারণ এখতিয়ার এবং সাংবিধানিক এখতিয়ার। দেশের সাধারণ আইন সমুহ হাইকোর্ট বিভাগ কে যে এখতিয়ার দিয়ে থাকে তাকে হাইকোর্ট বিভাগের সাধারণ এখতিয়ার বলে। কোন কোন বিষয়ের উপর হাইকোর্ট বিভাগ প্রাথমিকভাবেই (ধং ধ পড়ঁৎঃ ড়ভ ভরৎংঃ রহংঃধহপব) মামলা গ্রহণ করবে, কোন কোন বিষয়ের উপর আপীল শুনানী করবে ইত্যাদি বিষয় সংসদ কর্তৃক পাশকৃত সাধারণ আইনে বলা থাকে। হাইকোর্ট বিভাগ আইনে অনুমোদিত যেকোন প্রকারের শাস্তি  প্রদান করতে পারে। আর স্বয়ং সংবিধান হাইকোর্ট বিভাগকে যে এখতিয়ার দিয়েছে তাকে হাইকোর্টের সাংবিধানিক এখতিয়ার বলে। যেমনঃ রীট জারির এখতিয়ার, হাইকোর্ট বিভাগের তত্তাবধান ও নিয়ন্ত্রণমূলক এখতিয়ার, মামলা হস্তান্তরের ক্ষমতা।
অধঃস্তন ফৌজদারী আদালত সমুহঃ
১৮৯৮ সালের ঞযব ঈড়ফব ড়ভ ঈৎরসরহধষ চৎড়পবফঁৎব এর ৬ ধারা মোতাবেক সুপ্রিম কোর্ট ও এই আইন ছাড়া বর্তমানে বলবৎ অন্য কোন আইন দ্বারা গঠিত আদালত ব্যতিত বাংলাদেশে দুই (২) প্রকারের ফৌজদারী আদালত থাকবে, যথাঃ-
ক) দায়রা আদালত
খ) ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
* দুই শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন, যথাঃ-
ক) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
খ) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
* দায়রা আদালত তিন ধরনের বিচারক দ্বারা পরিচালিত হয়। যেমনঃ-
ক) দায়রা জজ
খ) অতিরিক্ত দায়রা জজ
গ) যুগ্ম দায়রা জজ।
* পাঁচ শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন, যথাঃ-
ক) মহানগর এলাকায় চীপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্য সব এলাকাতে থাকবেন চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
খ) অতিরিক্ত চীপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
গ) প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট যিনি মহানগর এলাকায় মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আখ্যায়িত হবেন।
ঘ) দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং
ঙ) তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট।
দায়রা আদালতঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ৭ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেকটি জেলায় বা কয়েকটি জেলা মিলে একটি করে দায়রা আদালত থাকবে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৯ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী সরকার প্রত্যেকটি দায়রা বিভাগের জন্য একটি করে দায়রা আদালত স্থাপন করবেন এবং এই আদালতের জন্য একজন জজ নিয়োগ করবেন।একটি দায়রা আদালত অবশ্যই কোন দায়রা জজ,অতিরিক্ত দায়রা জজ,কিংবা যুগ্ম দায়রা জজ দ্বারা পরিচালিত হবে। মেট্রোপলিটন এলাকার দায়রা আদালতকে মেট্রোপলিটন দায়রা আদালত বলা হবে। প্রত্যেক জেলার জেলা জজকেই দায়রা জজ হিসাবে, অতিরিক্ত জেলা জজকে অতিরিক্ত দায়রা জজের এবং যুগ্ম জেলা জজকে যুগ্ম দায়রা জজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দায়রা আদালতের এখতিয়ার ও ক্ষমতাঃ
* এখতিয়ারঃ- প্রত্যকটি দায়ারা আদালত দায়রা বিভাগের এলাকার মোকদ্দমার বিচার করবেন। দায়রা আদালত সেই সকল মামলার বিচার করবেন যা ফৌজদারী কার্যবিধির তফশীল-২ এ দায়রা আদালতে বিচার হবে মর্মে নির্ধারন করা হয়েছে।
ক্ষমতাঃ-
* দায়রা জজের ক্ষমতাঃ- ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৩১(২) অনুযায়ী দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ আইনে অনুমোদিত যেকোন প্রকারের দন্ড প্রদান করতে পারেন, তবে এরুপ কোন জজ যদি মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন তাহলে হাইকোর্ট বিভাগের পুর্বানুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হবে।
যুগ্ম দায়রা জজের ক্ষমতাঃ- ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৩১(৩) অনুযায়ী যুগ্ম দায়রা জজ মৃত্যুদন্ড বা দশ বৎসরের অধিক কারাদন্ড ছাড়া আইনে অনুমোদিত যেকোন প্রকারের দন্ড প্রদান করতে পারেন।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতঃ-
* মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতঃ- ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ১৮(১) অনুযায়ী সকল মেট্রোপলিটন এলাকায় চীপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত চীপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত ব্যাক্তিগনের মধ্য থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯ ধারা অনুযায়ী কোন দুজন বা ততধিক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চীপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের প্রনিত বিধিমালা সাপেক্ষে একটি বেঞ্জ হিসাবে একত্রে বসতে পারবেন।
* জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতঃ- ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ১১(১) উপধারায় বলাহয়েছে, সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের শর্তাংশের অধীনে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রনিত বিধি সাপেক্ষে প্রত্যেক মহানগরী বহির্ভুত জেলায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিযুক্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে থেকে চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিয়োজিত হবেন।
* অন্যান্য আদালত সমূহঃ- উপরে উল্লেখিত আদালত সমুহ ছাড়া ও বিভিন্ন আইন এবং অধ্যাদেশের বলে আরো কতিপয় ধরণের আদালত গটন করা হয়েছে। বিশেষ ধরণের মামলার বিচার করার জন্য এসব আদালত তৈরি করা হয়েছে। যেমনঃ- দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত, নারী ও শিশু নির্যাতন সম্পর্কীত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বলে গটিত স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল, শ্রম আদালত, শ্রম আপীলেট ট্রাইব্যুনাল, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল,জুভেনাইল কোর্ট, মেরিন কোর্ট ইত্যাদী।
* জাস্টিস অব দি পিস (ঔঁংঃরপব ড়ভ ঃযব চবধপব):- ফৌজদারী কার্যবিধির ২২ এবং ২৫ ধারায় জাস্টিস অব দি পিস এর কথা বলা হয়েছে। ২৫ ধারায় বিধান করা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ পদাধীকার বলে সমগ্র দেশের জন্য জাস্টিস অব দি পিস বলে গণ্য হবেন। দায়রা জজ চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণ তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে প্রত্যেকেই জাস্টিস অব দি পিস বলে গণ্য হবেন।
ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ার ও ক্ষমতাঃ-
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩২ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নিম্ন বর্ণিত দন্ড ক্ষমতা থাকবেঃ-
ক) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটগণ
- পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড দিতে পারবেন;
- আইন দ্বারা নির্ধারিত নির্জন কারাবাস দিতে পারবেন;
- দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন।
খ) দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটগণ
- তিন বছর পর্যন্ত কারাদন্ড দিতে পারবেন;
- আইন দ্বারা নির্ধারিত নির্জন কারাবাস দিতে পারবেন;
- পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন।
গ) তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটগণ
- দুই বছর পর্যন্ত কারাদন্ডদিতে পারবেন;
- দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩ ধারা অনুযায়ী জরিমানা অনাদায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কারাদন্ডের আদেশ দিতে পারেন। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত কারাদন্ড মুল কারাদন্ডের এক চতুর্থাংশের বেশী হবে না।
 




16 comments:

  1. যখনই বই পড়ে মজা পাইনা তখনই আপনার Post পড়ি, Thanks,

    ReplyDelete
  2. মুল বই এর কোন পিডিএফ থাকলে প্লিজ লিংক দিবেন ফৌজদারী কার্যবিধি,1898

    ReplyDelete
    Replies
    1. play store a app ashe via. check karen valo app

      Delete
  3. খুব ভাল লাগছে

    ReplyDelete
  4. পড়ে ভাল লাগল।

    ReplyDelete
  5. অনেক ভাল লাগল পড়ে, ধন্যবাদ।
    ফৌজদারী এর অনেক ধারা MCQ আকারে এই ওয়েব সাইটে দেওয়া আছে পড়তে পারেন।
    উপকারে আশবে ও নিজে কতটুকু জানেন তা বুজতে পারবেন।
    ফৌজদারী কার্যবিধি

    ReplyDelete
  6. পড়ে ভাল লাগল।

    ReplyDelete
  7. লেখা পড়ে আইন বিষয় অনেক কিছু জানলাম,ভালো লাগলো।আমার একটি প্রশ্ন:দায়েরকৃত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মাননীয় আদালত ওসি থানাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিল করা নির্দেশ প্রদান করেন।তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ এর বিষয় সত্য প্রমান পাওয়ার পরও আসামির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তথ্য ভুল রিপোর্ট দাখিল করেন।পুলিশ কর্মকর্তা জেনে ইচছাকৃত ভাবে যে রিপোর্ট দাখিল করে বাদীর ক্ষতি করিল তার বিচার কিভাবে বাদী পাবে।মামলা প্রমান করার দায়িত্ব বাদীর কিন্তুু পুলিশ মিথ্যা রিপোর্ট দেওয়ার কারনে ন্যায় বিচার পাওয়ার থেকে বন্চিত হয়।মিথ্যা রিপোর্ট দাখিল করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্হ গ্রহন করিলে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্টিত হবে এবং অপরাধ কবে যাবে।

    ReplyDelete
  8. লেখা পড়ে আইন বিষয় অনেক কিছু জানলাম,ভালো লাগলো।আমার একটি প্রশ্ন:দায়েরকৃত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মাননীয় আদালত ওসি থানাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিল করা নির্দেশ প্রদান করেন।তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ এর বিষয় সত্য প্রমান পাওয়ার পরও আসামির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তথ্য ভুল রিপোর্ট দাখিল করেন।পুলিশ কর্মকর্তা জেনে ইচছাকৃত ভাবে যে রিপোর্ট দাখিল করে বাদীর ক্ষতি করিলে তার বিচার কিভাবে বাদী পাবেন?।মামলা প্রমান করার দায়িত্ব বাদীর কিন্তুু পুলিশ মিথ্যা রিপোর্ট দেওয়ার কারনে ন্যায় বিচার পাওয়ার থেকে বন্চিত হয়।বাদী একবার আসামির দ্বারায় ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে আবার পুলিশকৃত ক্ষতিগ্রস্হ হল।মিথ্যা রিপোর্ট দাখিল করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্হ গ্রহন করিলে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্টিত হবে এবং অপরাধ কবে যাবে।সত্য গোপন করে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার ফলে অপরাধীরা আরো জঘন্য অপরাধ করার সুযোগ পাচ্ছে এবং সমাজ ধংস হচ্ছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. Aitar kono anws dawar opai tader kasa nai..

      Delete
  9. Very Excellent& very interesting so many many thanks for you .

    ReplyDelete
  10. ফৈাজদারী কার্যবিধি 1898 এর পুরোটা বাংলা দিতে পারবেন।

    ReplyDelete
  11. অনেক তথ্য জানতে পারলাম

    ReplyDelete
  12. পড়ে খুব ভাল লেগেছে।স

    ReplyDelete