Wednesday 17 February 2016

The Evidence Act,1872

প্রশ্ন-১
ক) সাক্ষ্য আইনে  ঘটনা, প্রমানিত,অপ্রমানিত ও প্রমানিত নয় বলতে কি বুঝ।
উত্তর:
ঘটনা বা বিষয় (ঋধপঃ):
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারার ঘটনার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে যে, ”ঘটনা বলতে বুঝায় যে কোন কিছু,কোন জিনিসের সঙ্গে অন্য জিনিসের সম্পর্ক,অবস্থা যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয় এবং মানসিক অবস্থা যা সম্পর্কে একজন ব্যক্তি সচেতন”।
তাহলে এই সংজ্ঞাকে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় যে, ঘটনা হল তা-যা দেখা যায়,শোনা যায়,অনুভব করা যায় এবং সরল বিশ্বাস।যেমন- কেই কোন কথা বলল,কেই কিছু শুনল বা কোন মানুষের সুনাম ইত্যাদি ঘটনার উদাহরণ।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়-
ক) কোন  নিদিষ্ট বস্তু কোন নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে সাজানো আছে,ইহা একটি বিষয়।
খ) কোন ব্যক্তি যখন কোন কিছু শোনে এবং দেখে ইহা একটি বিষয়; যেমন- আমি তাকে খুন করতে দেখেছি।
গ) কোন ব্যক্তি কতিপয় কথা বলেছে ইহা একটি বিষয়।
ঘ) কোন মানুষ কোন বিষয় সম্পর্কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরল বিশ্বাসে অথবা অসৎ উদ্দেশ্যে সচেতনভাবে বা অচেতনভাবে কোন নিদিষ্ট মতামত প্রকাশ করে তাহাই একটি ঘটনা বা ফ্যাক্ট।
ঙ) কোন মানুষের নিদিষ্ট একটি সম্মান আছে সেটাও একটা ঘটনা।
প্রমানিত, অপ্রমানিত, প্রমানিত নয় (ঘড়ঃ চৎড়াবফ).
প্রমান সাধারণভাবে বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। কতটুকু, কি প্রকারের এবং কোন প্রকৃতির সাক্ষ্য দ্বারা আদালতের মনে প্রমানের প্রতীতি জন্মিবে তা নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায় না। সাক্ষ্য আইনে সে সম্পর্কে কোন বিধান নেই। সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারার বিধান মতে প্রমানিত,অপ্রমানিত ও প্রমানিত নয় এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
প্রমানিত(চৎড়াবফ):
কোন একটি ঘটনা তখনই প্রমানিত বলে বোঝাবে যখন আদালত তার সামনে উপস্থাপিত বিষযগুলি দ্বারা ঐ ঘটনার অস্তিত্ব বিশ্বাস করে এবং যা একজন সাধারন জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ (চৎঁফবহঃ  গধহ)) নির্দিষ্ট কেসে প্রমানিত বলে বিশ্বাস করে তখনই ঘটনাটি প্রমানিত বলে গন্য হবে।
অপ্রমানিত বা মিথ্যা প্রমানিত (উরংঢ়ৎড়াবফ):
সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা অনুসারে কোন একটি ঘটনা তখনই অপ্রমানিত হিসাবে ধরে নেওয়া হবে যখন আদালতের সামনে উপস্থাপিত ঘটনা দ্বারা ঐ ঘটনাটির অস্তিত্ব নাই বলে বিশ্বাস করে এবং যা একজন সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষও বিশ্বাস করে যে  ঐ ঘটনাটির অস্তিত্ব নাই তখন সেটা অপ্রমানিত বলে গন্য হবে।
প্রমানিত নয় (ঘড়ঃ চৎড়াবফ):
সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা মতে, কোন ঘটনা যখন প্রমানিত বা মিথ্যা প্রমানিত কোনটাই হয় না ,তখন উহা প্রমাণিত নয় বলে গন্য হয়।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়যে,বিচার্য বিষয সম্পর্কে আদালতের দরবারে সাক্ষ্য প্রমান উপস্থিত করেন বিবদমান পক্ষবৃন্দ। আদালতেকে অত:পর সিন্ধান্ত গ্রহন করতে হয়। তাকে বলতে হয় বক্তব্যগুলি:
ক) প্রমানিত হয়েছে কিংবা
খ) মিথ্যা প্রমানিত হযেছে,কিংবা
গ) অপ্রমানিত হয়েছে।
প্রমানিত হয়েছে তখনই বলা যায় যখন তর্কিত বিষযের অস্তিত্ব নিশ্চিত বলে বিশ্বাস জন্মে কিংবা তর্কিত বিষয়ের অস্তিত্ব এতই সম্ভব মনে হয় যে,তাতে সন্দেহ করবার উপযুক্ত কারণ অবশিষ্ট থাকে না। মিথ্যা প্রমানিত হযেছে তখনই বলা যায় যখন তর্কিত বিষযের অনস্তিত্ব নিশ্চিত বলে বিশ্বাস জন্মে কিংবা তর্কিত বিষযের অনস্তিত্ব এতই সম্ভব মনে হয় যে,তাতে সন্দেহ করার উপযুক্ত কারণ অবশিষ্ট থাকে না। অপ্রমানিত হয়েছে তখনই বলা যায়,যখন তর্কিত বিষয় সত্য প্রমানিত হয় নাই ,আবার মিথ্যাও প্রমানিত হয় নাই।
খ) ফ্যাক্টস এবং ফ্যাক্টস ইন ইস্যু এর সংজ্ঞা দাও।
ঘটনা (ঋধপঃ):
ঘটনা বা বিষয় (ঋধপঃ):
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারার ঘটনার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে যে, ”ঘটনা বলতে বুঝায় যে কোন কিছু,কোন জিনিসের সঙ্গে অন্য জিনিসের সম্পর্ক,অবস্থা যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয় এবং মানসিক অবস্থা যা সম্পর্কে একজন ব্যক্তি সচেতন”।
তাহলে এই সংজ্ঞাকে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় যে, ঘটনা হল তা-যা দেখা যায়,শোনা যায়,অনুভব করা যায় এবং সরল বিশ্বাস।যেমন- কেই কোন কথা বলল,কেই কিছু শুনল বা কোন মানুষের সুনাম ইত্যাদি ঘটনার উদাহরণ।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়-
ক) কোন  নিদিষ্ট বস্তু কোন নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে সাজানো আছে,ইহা একটি বিষয়।
খ) কোন ব্যক্তি যখন কোন কিছু শোনে এবং দেখে ইহা একটি বিষয়; যেমন- আমি তাকে খুন করতে দেখেছি।
গ) কোন ব্যক্তি কতিপয় কথা বলেছে ইহা একটি বিষয়।
ঘ) কোন মানুষ কোন বিষয় সম্পর্কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরল বিশ্বাসে অথবা অসৎ উদ্দেশ্যে সচেতনভাবে বা অচেতনভাবে কোন নিদিষ্ট মতামত প্রকাশ করে তাহাই একটি ঘটনা বা ফ্যাক্ট।
ঙ) কোন মানুষের নিদিষ্ট একটি সম্মান আছে সেটাও একটা ঘটনা।
মূল বিচার্য বিষয়(ঋধপঃ রহ ওংংঁব):
ফ্যাক্টস ইন ইস্যু বা মূল বিচার্য বিষয় বলতে কি বুঝায় তা দ্য এভিযেন্স এ্যাক্ট ১৮৭২ এর ৩ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,ফ্যাক্টস ইন ইস্যু বা মূল বিচার্য বিষয় হলো তেমন ঘটনা যা নিজেই বা অন্য ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে মামলায় দাবীকৃত বা অস্বীকৃত কোন  অধিকার,দায় বা অক্ষমতার অস্তিত্বহীনতা,প্রকৃতি বা সীমা প্রকাশ করে।
উদাহরণ স্বরুপ বলা চলে-
ক) রহিম করিমকে ......... বাচ্চা বলে গালি দিয়েছিল  বলে করিম রহিমের তলপেটে সজোরে লাথি মারে বিধায় রহিম মারা যায় এই উত্তেজনার বিষয়টি ঋধপঃ রহ ওংংঁব হবে কারণ যদি উত্তেজনা বসত কোন কার্য করলে সে কার্যের দ্বারা যদি কারো মৃত্যু হয় তাহা দন্ডবিধি ৩০২ ধারার ব্যতিক্রম আছে তা সেই ব্যতিক্রমের মধ্যে পরে,
ঘটনার সময় রহিম পাগল ছিল কিনা নাবলক ছিল কিনা বা ঘটনার প্রকৃতি সম্পর্কে জানা বা বোঝার ক্ষমতা আছে কিনা।
দেওয়ানী কার্যবিধি সম্পর্কে বর্তমানে প্রচলিত কোন আইনের বিধান অনুসারে যখনই কোন আদালত কোন বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্ন লিপিবদ্ধ করেন,তখন অনুরুপ প্রশ্নের উত্তরে যে বিষয় সমর্থন বা অস্বীকার করা হয়,তাহা বিচার্য বিষয়।
উদাহরণ-
খ কে হত্যা করার অপরাধে ক অভিযুক্ত হল। বিচারকালে নি¤œলিখিত ঘটনাগুলি বিচার্য বিষয়ভুক্ত হতে পারে-
ক খ এর মৃত্যু ঘটিয়েছে,
ক খ এর মৃত্যু ঘটানোর ইচ্ছা করেছে,
ক খ এর নিকট হতে গুরুতর ও আকস্মিক উস্কানি পেয়েছে,
ক যে কার্যের দ্বারা খ এর মৃত্যু ঘটিয়েছে তা করার সময় মানসিক বিকারের দরুন ক উহাকে উপলব্ধি করতে সক্ষম ছিল।
বিচারের সময় পক্ষবৃন্দ তাদের আপন আপন বক্তব্য আদালত সমীপে উপস্থাপন করে। স্মরণ রাখতে হবে যে, এই বক্তব্য উপস্থাপনের ব্যাপারটি কার্যবিধি আইনসমূহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইহা এলোমেলো বা বিশৃঙ্খলভাবে করা যায় না। এইগুলিকে বিচার্য বিষয বলে।

গ) সাক্ষ্য বলতে কি বুঝ? অনুমান বলতে কি বুঝ? অনুমান করতে পারে,অনুমান করবে এবং চুড়ান্ত প্রমান এই কথাগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর। ৩০ বছরের পুরাতন দলিলকে আদালত কিভাবে প্রমান করবে?
সাক্ষ্য কি:
সাক্ষ্য বলতে বিচারাধীন বা অনুসন্ধানকালীন কোনো বিষয় প্রমাণ বা অপ্রমাণে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তির মৌখিক বিবৃতি বা দলিল উপস্থাপনকে বোঝায়। একজন বিচারক উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত রায় প্রদান করে থাকেন। তাই বিচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সাক্ষ্য বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ল্যাটিন শব্দ ঊারফবহং বা  ঊারফবৎধ শব্দ হতে ইংরেজী ঊারফবহপব শব্দটি এসেছে। যার শাব্দিক অর্থ ঞড় ফরংপড়াবৎ পষবধৎষু বা প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা।
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারার বিধান মতে,বিরোধীয় বিষয় সম্পর্কে সাক্ষীকে যে বিবৃতি দান বা তথ্য প্রকাশের জন্য আদালত অনুমতি প্রদান করেন এবং বিচার কার্যের জন্য তার যে বিবৃতি আদালত কর্তৃক প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয় এবং যে সকল দলিলপত্র আদালত কর্তৃক পরীক্ষর জন্য উত্থাপিত করা হয তাকে সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী সাক্ষ্য বলে।
এক কথায় বলাা যায় যে, সাক্ষ্য হলো  বিরোধীয় ঘটনার সেই অংশ যা বিরোধকে দালিলিক বা মৌখিকভাবে প্রমানে সাহায্য কবে তাকে সাক্ষ্য বলে।
মহামতি বেনথামের মতে, সাক্ষ্য হচ্ছে কোন ঘটনার বিষয় যার ফলাফল কিংবা অভিপ্রায় অন্য কোন ঘটনার বিষয়ের উপস্থিতি সম্বন্ধে হ্যাঁ সূচক বা না সূচক কোন দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি করা।
অধ্যাপক ঞধুষড়ৎ অনুরুপ মন্তব্য করেন যে, যার মাধ্যমে বিচার্য বিষয় এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়কে প্রমান করবার প্রয়াস করা হয়, তাকে সাক্ষ্য হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
অতএব আমরা বলতে পারি যে, যার মাধ্যমে বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক বিষয়কে প্রমান করার প্রয়াস পায় তাকে সাক্ষ্য বলে।

অনুমান (চৎবংঁসঢ়ঃরড়হ):
১৮৭২ সালের সাক্স্য আইনের ৪ ধারার বিধান মতে,
অনুমান হচ্ছে একটা প্রত্যয় যা কোন প্রমানিত ঘটনা বা জানা বিষযের উপর ভিত্তি করে আদালত কর্তৃক গ্রহন করা হয়।অথাৎ প্রমান ব্যতিরেকেই কোন বিষয়কে সত্য বলে ধরে নেয়াকেই অনুমান বলা যায়।
অন্যভাবে বলা যায় যে, অনুমান হচ্ছে একট বিধি, যা দ্বারা আদালত একটা ঘটনাকে সত্য বলে ধরে নিবেন বা ধরে নিতে পারেন যতক্ষণ পর্যন্ত ঘটনাটি অসত্য বলে প্রমানিত না হয়।
সাক্ষ্য আইনের ৪ ধারায় ৩ ধরণের অনুমান সম্পর্কে বলা আছে। যথা-
১) অনুমান করতে পারে (গধু চৎবংঁসব)
২)  অনুমান করবে (ঝযধষষ চৎবংঁসব)
৩) চুড়ান্ত প্রমাণ (ঈড়হপষঁংরাব চৎড়ড়ভ)

অনুমান করতে পারে (গধু চৎবংঁসব):
পক্ষগনের বিরোধীয় বিষয় সম্পর্কে  আদালত কোন ঘটনা মিথ্যা প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত উহা প্রমানিত বলে অনুমান করতে পারেন অথবা উহা প্রমান করার জন্য পক্ষগনকে আহবান জানাতে পারেন। এরুপ অনুমানের বিষয় আদালতের বিবেচনা প্রসুত ও খন্ডনীয। এর ধরা বাধা কোন নিযম নেই। এই অনুমান সাময়িক।
সাক্ষ্য আইনের  ৮৬,৮৭,৮৮ ,৯০ ও ১১৪ ধারায় গধু চৎবংঁসব সম্পর্কে বলা হয়েছে।
অনুমান করবে (ঝযধষষ চৎবংঁসব):
সাক্ষ্য আইনের নির্দেশ বলে আদালত মামলার কোন ঘটনাকে  মিথ্যা প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত উহা প্রমানিত বলে বিবেচিত করবেন।
অথবা আদালত অবশ্যই অনুমান করবেন যে,বিয়য়টি সঠিক বলে মেনে নিতে বাধ্য থাকবেন। তবে বিষয়টি মিথ্যা বলে প্রমানিত হলে অনুমানের প্রয়োজনীযতা বহাল থাকবে না। সুতরাং এই অনুমানটি খন্ডনীয়।
সাক্ষ্য আইনের ৭৯ হতে ৮৫ এবং ৮৯ ও ১০৫ ধারায় ঝযধষষ চৎবংঁসব সম্পর্কে বলা হযেছে।
চুড়ান্ত প্রমাণ (ঈড়হপষঁংরাব চৎড়ড়ভ):
সাক্ষ্য আইনে যখন একটি বিষয়কে অপর একটি বিষয়ের চুড়ান্ত প্রমান বলে ঘোষনা করা হয়, তখন আদালত প্রথমোক্ত বিষয় প্রমানিত হলে অপর বিষয়ও প্রমানিত বলে গণ্য করবেন এবং এটা মিথ্যা প্রমানিত করার জন্য সাক্ষ্য দানের অনুমতি দিবেন না। চুড়ান্ত প্রমানকে অখন্ডনীয় বলে পরিগনিত করা হয়েছে।
সাক্ষ্য আইনের  ৪১,১১২ ও ১১৩ ধারায় ঈড়হপষঁংরাব চৎড়ড়ভ  সম্পর্কে বলা হয়েছে।
৩০ বছরের পুরাতন দলিল:
১৮৭২ সালের সাক্স্য আইনের ৯০ ধারায় ত্রিশ বছরের পুরাতন দলিল কি এবং এর মুল্যায়ণ কি সে সম্পর্কে বলা আছে।
যখন কোন দলিল ৩০ বছরের পুরাতন বলে প্রতীয়মান হয় বা প্রমানিত হয় তখন স্বাভাবিক নিয়মে দলিলটি যার হেফাজতে(ঈঁংঃড়ফু)থাকার কথা তার নিকট হতে যদি উহা দাখিল হয়,তবে আদালত অনুমান করতে পারেন (গধু চৎবংঁসব)যে এই দলিলে স্বাক্ষর, হাতের লেখা এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষর যে যে ব্যক্তি করেছেন তা সঠিক।
কোন প্রাসঙ্গিক দলিল আদালতে দাখিল হলেই তা সাক্ষ্যরুপে গ্রহনীয় হয় না। সাক্ষী দ্বারা দলিলটি প্রমান করতে হয় এবং তৎপর সাক্স্যরুপে গ্রহীত হয়।
সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারা এই সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম।
৩০ বৎসরের পুরাতন দলিল আদালতে দাখিল হলে তা অন্যান্য দলিলের ন্যায় সাক্ষী দ্বারা প্রমান করতে হয় না। শুধু ৩০ বছরের পুরাতন মূল দলির যথাযথ হেফাজত চৎড়ঢ়বৎ পঁংঃড়ফু প্রমান করলেই হয়।
অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে ৩০ বৎসরের প্ররাতন দলিলটি যার দখলে থাকার কথা সেখান হতে দলিলটি আদালতে দাখিল হয়েছে মর্মে যার দখলে দলিল ছিল তা দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য দিলেই হেফাজত প্রমান হবে এবং তদবস্থায় দলিলটি সাক্ষ্যরুপে প্রমান গৃহীত হবে এবং আদালত এই বিষয়ে অনুমান করবেন যে দলিলের লেখা সম্পাদন এবং প্রত্যায়িত দলিল হলে প্রত্যায়ন অকৃত্তিম। এইগুলি ব্যতীত দলিলে বিষযবস্তু, বিষয়ে আদালত কিছুই অনুমান করবেন না। ৩০ বছরের পুরাতন আসল দলিলটি যদি হেফাজতকারীর নিকট হতে হারিয়ে গিযে থাকে এরুপ প্রমান থাকে,তবে উক্ত দলিলের সহিমোহরকৃত নকল গৌন সাক্ষ্যরুপে এই ধারা অনুযায়ী গৃহীত হবে। দলিলের তারিখ হতে দলিলটি যখন সাক্ষ্যরুপে ব্যবহার করতে চাওয়া হবে সেই সময় পর্যন্ত ৩০ বৎসরের পুরাতন হইলেও এই ধারা সামনে আসবে। দলির প্রমানের সাধারণ পদ্ধতি সাক্ষ্য আইনের ৬৭ ধারায় আলোচনা করা হয়েছে।
সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারায় আলোচনায় বলা হয়েছে যে, আদালত ৩০ বছর বা ততোধিক প্রাচীন দলিলের সম্পাদন এবং দুরীকরণ সঠিক বলে ধরে নিতে পারেন আবার সঠিক কিনা তা যাচাই ও প্রমানের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন। এখানে আদালতের সুবিবেচনা প্রসূত এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে। এই ধারার অনুমান খন্ডনযোগ্য। এই ধারামতে, দলিল বলতে নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত, ব্যক্তিগত এবং সরকারী দলিল হতে পারে।



প্রশ্ন-২
ক) সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী সাক্ষ্য কি?
খ) বিচার কার্যে সাক্ষ্যের বিভিন্ন প্রকারভেদ কি কি?
গ) দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলায় সাধারণত একই সাক্ষ্য হয়, এ নীতির কোন ব্যতিক্রম আছে কি?


ক)
'সাক্ষী ও সাক্ষ্য' মামলা-মোকদ্দমায় বিচারপ্রক্রিয়ার অন্যতম উপাদান। সাক্ষ্য বলতে বিচারাধীন বা অনুসন্ধানকালীন কোনো বিষয় প্রমাণ বা অপ্রমাণে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তির মৌখিক বিবৃতি বা দলিল উপস্থাপনকে বোঝায়। একজন বিচারক উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত রায় প্রদান করে থাকেন। তাই বিচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সাক্ষ্য বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সাক্ষ্য বলতে বিচারাধীন বা অনুসন্ধানকালীন কোনো বিষয় প্রমাণ বা অপ্রমাণে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তির মৌখিক বিবৃতি বা দলিল উপস্থাপনকে বোঝায়। একজন বিচারক উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত রায় প্রদান করে থাকেন। তাই বিচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সাক্ষ্য বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ল্যাটিন শব্দ ঊারফবহং বা  ঊারফবৎধ শব্দ হতে ইংরেজী ঊারফবহপব শব্দটি এসেছে। যার শাব্দিক অর্থ ঞড় ফরংপড়াবৎ পষবধৎষু বা প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা।
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারার বিধান মতে,বিরোধীয় বিষয় সম্পর্কে সাক্ষীকে যে বিবৃতি দান বা তথ্য প্রকাশের জন্য আদালত অনুমতি প্রদান করেন এবং বিচার কার্যের জন্য তার যে বিবৃতি আদালত কর্তৃক প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয় এবং যে সকল দলিলপত্র আদালত কর্তৃক পরীক্ষর জন্য উত্থাপিত করা হয তাকে সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী সাক্ষ্য বলে।
এক কথায় বলাা যায় যে, সাক্ষ্য হলো  বিরোধীয় ঘটনার সেই অংশ যা বিরোধকে দালিলিক বা মৌখিকভাবে প্রমানে সাহায্য কবে তাকে সাক্ষ্য বলে।
যে সকল দলিল আদালত কর্তৃক পরিদর্শনের জন্য উপস্থাপিত করা হয় এই সমস্ত দলিল কে বলা হয় দালিলিক সাক্ষ্য।
উপরোক্ত সকল বিষয়কেই সাক্ষ্য হিসাবে গন্য করা হয।
মহামতি বেনথামের মতে, সাক্ষ্য হচ্ছে কোন ঘটনার বিষয় যার ফলাফল কিংবা অভিপ্রায় অন্য কোন ঘটনার বিষয়ের উপস্থিতি সম্বন্ধে হ্যাঁ সূচক বা না সূচক কোন দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি করা।

চৎড়ভ ঞধুষড়ৎ  ঞযব ড়িৎফ ঊারফবহপব রহপষঁফবং ধষষ ঃযব ষবমধষ সবধহং বীপষঁংরাব ড়ভ সড়ৎব ধমমঁসবহঃ যিরপয ঃবহফ ঃড় ঢ়ৎড়াব ড়ৎ ফরংঢ়ৎড়াব ধহু সধঃঃবৎ ড়ভ ভধপঃ ঃযব ঃৎঁঃয ড়ভ যিরপয রং ংঁনসরঃ ঃড় লঁফরপরধষ রহাবংঃরমধঃরড়হ.
অধ্যাপক ঞধুষড়ৎ অনুরুপ মন্তব্য করেন যে, যার মাধ্যমে বিচার্য বিষয় এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়কে প্রমান করবার প্রয়াস করা হয়, তাকে সাক্ষ্য হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।

অতএব আমরা বলতে পারি যে, যার মাধ্যমে বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক বিষয়কে প্রমান করার প্রয়াস পায় তাকে সাক্ষ্য বলে।
খ)
বিচার কার্যে সাক্ষ্যের বিভিন্ন প্রকারভেদ:
১৮৭২ সালের সাক্স্য আইনের বিধান মতে, প্রত্যেক মামলায় উহার বিচার্যবিষয় প্রমানের জন্য সাক্ষ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন তাই উভয় পক্সেও বক্তব্য শোনার পর বিচারক বিচার্যবিষয় স্থিও করেন। স্বাভাবতই সংশ্লিষ্ট মামলার পক্ষগণ তাদেও ইচ্ছামত  কোন সাক্ষ্য দান করিতে পাওে না, যেহেতু সাক্ষ্য দানকালনি তাহাদেরকে সাক্ষ্য আইনের বিধিবদ্ধ মেনে চলতে হয়।
উল্লেখ্যযে, বিচারকার্যে সাধারণত বিভিন্ন ধরণের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলেও ১৮৭২ সালের বিধিবদ্ধ সাক্ষ্য আইনে কেবলমাত্র ২ প্রকার সাক্ষ্যের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যথা -
ক) মৌখিক সাক্ষ্য (৫৯-৬০) এবং
খ) দালিলিক সাক্ষ্য(৬১-৯০)
১) মৌখিক সাক্ষ্য: সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে যে,আদালতে যে ঘটনার বিষয় বিচার করা হয়, সেই সম্পর্কে সাক্ষীকে যে সকল বিবৃতি দেওয়ার জন্য আদালত অনুমতি দেন বা বিচারের জন্য যে সকল বিবৃতি আদালতের প্রয়োজন হয় ঐসকল বিবৃতিকে মৌখিক সাক্ষ্য বলে। মৌখিক সাক্ষ্য অবশ্যই শপথ গ্রহনপূর্বক আদালতে বর্ণনা করতে হয়। সাক্ষ্য আইনের ৫৯ ও ৬০ ধারায় মৌখিক সাক্ষ্য সম্পর্কে বর্ণনা আছে।
২) দালিলিক সাক্ষ্য: যে সকল দলিল আদালত কর্তৃক পরিদর্শনের জন্য উপস্থাপিত করা হয় তাকে দালিলিক সাক্ষ্য বলে।দালিরিক সাক্ষ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইনের ৬৪ ধারা অবশ্যই অনুসরণ করতে হয় ব্যর্থতায় ৬৫ ধারা অনুসরণ করতে হয়। সাক্ষ্য আইনের ৬১-৯০ ধারা পর্যন্ত দালিলিক সাক্ষ্য সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
উপরে বর্ণিত প্রধানত ২ ধরণের সাক্ষ্য ছাড়াও ১১৮ থেকে ১৩৪ ধারা পর্যন্ত সাক্ষী সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।
ক) যোগ্য সাক্ষী: উক্ত আইনের ১১৮ ধারায় বলা হযেছে কে সাক্ষ্য দিতে পারে:
এই ধারার বিধান মতে,সকল ব্যক্তিই সাক্ষ্যদানের যোগ্যতা সম্পন্ন,যদি তিনি জিগ্নাসিত প্রশ্ন বুঝতে পারেন এবং যুক্তি সংগত উত্তর প্রদানে সক্ষম হন, তিনি অতি বৃদ্ধ অথবা অতি অল্প বয়ষ্ক অথবা দৈহিক কিংবা মানসিক ব্যধিগ্রস্থ যাই হোক না কেন।
খ) বোবা সাক্ষী:একই আইনের ১১৯ ধারার বিধান মতে, যে সাক্ষ্য কথা বলতে পাওে না সে যদি থাহার বক্তব্য অন্য কোন ভাবে অথাৎ আদালতে লিখে কিংবা ইশারা ইঙ্গিতে বুঝাতে পাওে তবে তিনি বোবা হলেও সাক্ষ্র দিতে পারবেন এইরুপ সাক্ষ্য কে মৌখিক সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবেন।
ইহা ছাড়াও বিভিন্ন বিশারদগন তাহাদের আইনগ্রন্থসমূহে আরও কয়েক প্রকার সাক্ষ্যের উল্লেখ করেছেন। যেমন-
ক) প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য:কোন দলিল বা সাক্ষীর যে সমস্ত বিচার্য বিষয়ে অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা সম্পর্কে সরাসরি সমর্থন যোগায় তাকে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য বলে।
খ) অবস্থাগত সাক্ষ্য: ইহা পরোক্ষ সাক্ষী। অবস্থাগত সাক্ষ্য সরাসরিভাবে কোন বিচার্য বিষয় প্রমান করে না।
গ) প্রাথমিক সাক্ষ্য কোন বিচার্য বিষয়ে মৌলিক সাক্স্র থাকলে উহা প্রথমে প্রমান করতে হয়। সাক্ষ্র আইনের ৬২ ধারায় প্রাথমিক সাক্ষ্যেও বিবরণ দেওযা আছে।
ঘ) মাধ্যমিক/গৌণ সাক্ষ্য: প্রথমিক বা মৌলিক সাক্ষ্য উপস্থিত থাকলে ঐ বিষয়ে গৌণ সাক্ষ্য আদালতে গ্রহণীয় হয না। সাক্ষ্য আইনের ৬৩ ধারায় গৌণ সাক্ষ্যের বিবরণ দেওয়া আছে। আদালতে কোন অবস্থায় গৌণ সাক্ষ্য হয় তাহা ৬৫ ধারায় বর্ণিত আছে।
ঙ) জনশ্রুতিমূলক সাক্ষ্য: জনশ্রুতিমূলক সাক্ষ্যের অর্থ হলো শুনা কথা। এক কথায় বলতে গেলে সাক্ষী যাহা স্বচক্ষে দেখে নাই কিন্তু কেবরমাত্র অপরের নিকট হতে শুনেছে তাহা জনশ্রুতিমুলক সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধারণত: এইরুপ সাক্ষ্য আইনত গ্রহনীয় নয়। কিন্তু সাক্ষ্য আইনের ৩২ ও ৩৩ ধারায় এই ধরণের সাক্ষ্যের কিছু ব্যতীক্রম আছে।
এছাড়াও অত্যাবশ্যাক নয় এমন সাক্ষ্য এবং বস্তুগত সাক্ষ্য সমপর্কে বিভিন্ন নজীনে দেখা গেছে।

গ)
দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলায় সাধারণত একই সাক্ষ্য হয়, এ নীতির কোন ব্যতিক্রম আছে কি:

বিচারপতি বেষ্টের মতে,সাক্ষ্যের নিয়মকানুনের দিক থেকে দেওয়ানী এবং ফৌজদারী আদালতের মধ্যে কোন মামলায় সাধারণত সাক্ষ্যের কোন পার্থক্য নাই। বস্তুতপক্ষে, উভয় দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার লক্ষ্য হল সাক্ষীর উদ্দেশ্যে আইনানুগ সাক্ষ্য প্রমান গ্রহন করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। তাই এইরুপ কার্যক্রমের প্রয়োগ ক্ষেত্রে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলায় সাক্ষ্য আইনের বিধানসমূহ প্রায়ই একই রুপ হয়।
তবে সমষ্ঠিগত ভাবে উভয়প্রকার আদালতে সাক্ষ্য আইনের বিধানমতে ,এই নীতির কিছু ব্যতিক্রম আছে। যাহা নিম্নরুপ-
১) দেওয়ানী মামলায় সাক্ষ্য আইনের স্বীকৃতির বাধা সম্পর্কে ১৮ হতে ২৯ ধারা এবং ১১৫ হতে ১১৭ ধারাসমূহে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
পক্ষান্তরে,
ফৌজদারী মামলায়  সাক্ষ্য আইনের ২৪ হতে ৩০ ধারায় বর্ণিত স্বীকারোক্তি এবং ৫৩ ও ৫৪ ধারায় বর্ণিত চরিত্র সম্পর্কীয় বিধানসমূহ একমাত্র ফৌজদারী মামলায় প্রযোজ্য।
২) ফৌজদারী মামলায় প্রমানের দায়িত্ব বাদী পক্ষের উপর ন্যাস্ত  এবং এই নীতি কড়াকড়িভাবে পালন করতে হয়। অপরপক্ষে,দেওয়ানী মামলায় দলিলভূক্ত সাক্ষ্য সর্বাধিক অনুসরণীয়।
৩) ফৌজদারী মামলায় সন্দেহের অবকাশ থাকলে আসামী বেকসুর খালাস পাওয়ার অধিকারী। পক্ষান্তরে দেওয়ানী মামলায় বাদী এবং বিবাদী উভয় পক্ষের সম্মতিতে মামলা শিথিল করা যায়।
৪) ফৌজদারী মামলায় অনুমান বিশেষ গুরুত্ব রাখে। তাই,আসামীর দোষ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত আসামী নির্দোষ বলিয়া অনুমান করা হয়।
অপর পক্ষে. দেওয়ানী মামলায় অনুমান অনুরুপভাবে প্রযোজ্য নহে।
৫) ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জেরা করার বিধান নাই।
পক্ষান্তরে, দেওয়ানী মামলায় বাদী ও বিবাদী পক্ষকে জেরা করা যায়।

সাক্ষ্য আইনের প্রয়োজনীয়তা ও বিষয়বস্তু:
যে কোন মামলার যথাযথ ও ন্যায় সঙ্গত নিস্পত্তি করার ক্ষেত্রে স্বাক্ষ্য আইনের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য। স্বাক্ষ্য আইন ১৮৭২ সালের ১ নং আইন। ইহা ১৫ই মার্চ প্রকাশিত হয় এবং ১লা সেপ্টেম্বর হতে কার্যকর হয়। স্যার জেমস স্টিফেন এই আইনের প্রণেতা। ইহাতে ১৬৭ টি ধারা রযেছে যা ৩টি খন্ডে বিভক্ত। ইহার সবশেষ অধ্যায় হচ্ছে ১১টি। ইহা একটি পদ্ধতিগত আইন। সাক্ষ্যের সংজ্ঞা আইনের ৩ ধারায় আলোচনা হয়েছে।

সাক্ষ্য আইন তিনটি খন্ডে বিভক্ত
প্রথম খন্ডে (১-৫৫) কি প্রমান করতে হবে
দ্বিতীয় খন্ডে(৫৬- ১০০) কি প্রকারে প্রমান করতে হবে।
তৃতীয় খন্ডে(১০১-১৬৭) কার দ্বারা এবং কি পদ্ধতিতে প্রমান উপস্থিত করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, বিধিবদ্ধ সাক্ষ্য আইনে কেবলমাত্র  দুই প্রকার সাক্ষ্যের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

যে কোন একটি মামলায় বিচার্য বিষয় প্রমানের জন্য সাক্ষ্যের আবশ্যক হয় বিচারক উভয় পক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী বিচার্য বিষয় নির্ধারণ করেন। উভয পক্ষকে তাদের নিজ নিজ বক্তব্য অনুযায়ী নির্ধারিত বিচার্য বিষযের পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়া বিচার্য বিষয় প্রমানের, মিথ্যা প্রমানের অথবা অপ্রমানের সাহায্য করতে হয়। পক্ষগন ইচ্ছামত যে কোন বিষয়ে সাক্ষ্য উপস্থিত করতে পারেন না। এই বিষযে তাদের কতিপয় নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। এই সমস্ত নিয়ম কানুন সাক্ষ্য আইনে লিপিবদ্ধ আছে। ইহা একটি বিধিবদ্ধ আইন।
সাক্ষ্য আইন তিন খন্ডে বিভক্ত:প্রথম খন্ডের প্রথম অধ্যায়ে এই আইনের প্রয়োগ ক্ষেত্র ও অত্র আইনে ব্যবহৃত কতিপয় শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া আছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৫-৫৫ ধারা পর্যস্ত প্রাসঙ্গিক ষিয়াদির বর্ণনা আছে। দ্বিতীয় খন্ডের তৃতীয় হতে ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ৫৬ হতে ১০০ ধারা পর্যন্ত বিচার্য বিষয় এবং প্রাসঙ্গিক বিষয সম্পর্কে কি ধরনের সাক্ষ্য প্রমান দেওয়া যাবে তার বিধানাবলী পাওয়া যাবে।তৃতীয় খন্ডের অবশিষ্ট ৫ অধ্যায়ে ১০১ হতে ১৬৭ ধারা পর্যন্ত কার দ্বারা এবং কি পদ্ধতিতে সাক্ষ্য প্রমান উপস্থিত করতে হবে তার নিয়মকানুন বিবৃত আছে। সংক্ষেপে তিন খন্ডে তিনটি মূল প্রশ্নে উত্তর মিলবে। প্রথম খন্ডে কি প্রমান করতে হবে? দ্বিতীয় খন্ডে কি ধরণের প্রমান দিতে হবে? তৃতীয় খন্ডে কার দ্বারা এবং কি পদ্ধতিতে প্রমান উপস্থিত করতে হবে?



প্রশ্ন-৩ 
ক) সাক্ষ্য আইনে  প্রাসঙ্গিকতা বলতে কি বুঝ?
খ) ঘটনার প্রাসঙ্গিকতার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইনের নীতি সমূহ কি কি? বিস্তারিত আলোচনা কর।
গ) কোন কোন ঘটনা আদালতের প্রমানের প্রয়োজন নাই?
ক)
সাক্ষ্য আইনে প্রাসঙ্গিকতা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যে সকল ঘটনা বা বিষয় প্রাসঙ্গিক নয় সেগুলোর উপর কোন সাক্ষ্য দেওয়া যায় না।
১৮৭২ সনের সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ঘটনা হচ্ছে মূল ঘটনা বা বিবেচ্য বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত এমন সকল ঘটনা যা সাক্ষ্য দ্বারা  প্রতিষ্ঠিত হলে মূল ঘটনা বা বিবেচ্য বিষয়ের অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়। অথাৎ মুল ঘটনার বা বিষযের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য একটি ঘটনাকে প্রাসঙ্গিকতা বলা হয়।
১৮৭২ সালেরসাক্ষ্য আইনের ৬ হতে ৫৫ ধারা পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে।
 সাক্ষ্য আইনে বর্ণিত প্রাসঙ্গিকতার বিবরণগুলোকে নি¤েœাক্ত ৫ শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা-
১)    ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা(ধারা ৬-১৬);
২)    স্বীকৃতির প্রাসঙ্গিকতা (ধারা ১৭-৩৯);
৩)    সিন্ধান্তের প্রাসঙ্গিকতা(ধারা ৪০-৪৪);
৪)    মতামতের প্রাসঙ্গিকতা(ধারা ৪৫-৫১);
৫)    চরিত্রের প্রাসঙ্গিকতা(ধারা ৫২-৫৫)।


খ) ঘটনার প্রাসঙ্গিকতার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইনের নীতি সমুহ:
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনে ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে ধারা ৬ থেকে ১৬ পর্যন্ত দেওয়া আছে। নিম্নে সংক্ষেপে তাহার বর্ণনা তুলে ধারা হলো:
যে সকল ঘটনা বিবেচ্য বিষযের সাথে এমনভাবে জড়িত যেন তা একই কার্যের অংশ তবে তা প্রাসঙ্গিক হিসেবে গন্য হবে। (ধারা-৬)।
যেসকল ঘটনা বিচার্য বিষয়ের উপলক্ষ,কারণ বা পরিনাম সেগুলো প্রাসঙ্গিক (ধারা-৭)।
বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক ঘটনা সংঘটনে অভিপ্রায় বা উদ্যোগ যে ঘটনা দ্বারা সৃষ্টি হয় তা প্রাসঙ্গিক (ধারা-৮)।
কোনো বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক ঘটনার ব্যাখ্যা বা উপস্থাপনার জন্য আবশ্যকীয় ঘটনাও প্রাসঙ্গিক(ধারা ৯)।
অভিন্ন অভিপ্রায় প্রসঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীর কথা ও কাজ প্রাসঙ্গিক (ধারা-১০)।
যেগুলো কোন বিচার্য বা প্রাসঙ্গিক ঘটনার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ,কিন্তু কোন ঘটনার সহিত যুক্ত হয়ে বিচার্যবিষয় বা প্রাসঙ্গিক ঘটনার অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতাকে অধিক সম্ভব বা অসম্ভব করে তোলে তা প্রাসঙ্গিক(ধারা-১১)।
ক্ষতিপুরণের মামলায় যেগুলো ক্ষতির পরিমান নির্ধারণে সহায়ক সেগুলো প্রাসঙ্গিক বিষয়(ধারা-১২)।
বিচার্য বিষয় কোন অধিকার বা প্রথা হলে যে কারবার দ্বারা তা সৃষ্টি হয়েছে সেটা প্রাসঙ্গিক (ধারা-১৩)।
যে সকল বিষয় মনের বা দেহের অবস্থা বা দৈহিক উপলব্ধির অস্তিত্ব প্রদর্শন করে তা প্রাসঙ্গিক ঘটনা (ধারা১৪)।
কোন কাজ আকস্মিক বা ইচ্ছাকৃত এই প্রশ্নে যে সকল ঘটনার প্রভাব থাকে এটি প্রাসঙ্গিক ঘটনা (ধারা-১৫)।
ব্যবসার ক্ষেত্রে কোন রীতির অস্তিত্ব প্রাসঙ্গিক ঘটনা (ধারা-১৬)।
গ)
 সাক্ষ্য আইনের ৪ ধারার বিধান মতে, চুড়ান্ত প্রমান বা ঈড়হপষঁংরাব চৎড়ড়ভ  আদালতে প্রমান করার প্রয়োজন নেই। এই আইনের ধারা ৪১,১১২,১১৩ চুড়ান্ত প্রমানের ক্ষেত্রে অনুমানের বিষয় ,যে বিষয় আদালত সঠিক বলে অনুমান করবেন।
দ্য এভিডেন্স এ্যাক্ট ,১৮৭২ এর ৫৬ ও ৫৮ ধারাতে বর্ননা করা হয়েছে কোন কোন ঘটনা প্রমান করতে হয় না। ৫৮ ধারাতে বলা হয়েছে যে, স্বীকৃত কোন ঘটনা প্রমান করতে হয় না। অর্থাৎ বাদি যদি মামলা করে কোন ঘটনা যদি স্বীকার করেন তাহলে বিবাদিকে আর সেই ঘটনা প্রমান করতে হয় না। অনুরুপভাবে বিবাদি জবাবে কোন ঘটনা স্বীকার করে তাহলে বাদিকে আর সেই ঘটনা প্রমান করতে হয় না।
তেমনিভাবে ৫৬ ধারাতে বলা হয়েছে যে, যে সকল ঘটনা আদালত বিচারিক অবগতিতে (জুডিশিয়াল নোটিশ) নিবেন তা প্রমান করতে হয় না। কোন কোন ঘটনা বিচারিক অবগতিতে নিতে হয় একই আইনের ৫৭ ধারায় তার একটি তালিকা দেওযা আছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, সকল বাংলাদেশী আইন, শসস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধের নিয়মকানুন, পার্লামেন্টের কার্যবিবরণী, আদালতের মোহর,নোটারী পাবলিকের মোহর ইত্যাদি, দেশী বিদেশী পতাকা, সময়ের বিভাজন, বিশ্বের ভৌগোলিক অবস্থান,সরকারি গেজেটে প্রকাশিত জন উৎসব,রোযা এবং ছুটি, বাংলাদেশের সীমানা,বাংলাদেশের সাথে অন্য রাষ্ট্রের যুদ্ধ শুরু শেষ হওয়ার তারিখে, আদালতের বিচারক ও কর্মকর্তাকর্মচারি এবং রাস্তা ও নৌ চলাচলের নিয়ম-কে আদালত বিচারিক অবগতিতে নিবেন এবং ৫৬ ধারা অনুসারে এগুলো প্রমান করতে হবে না।

প্রশ্ন-৪ 
ক) ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনে চরিত্র কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে?
খ)“ভাল চরিত্র শব্দটি শুধুমাত্র সাধারণ খ্যাতিই বুঝায় না, বরং সাধারণ প্রকৃতিকেও বুঝায়”- ব্যাখ্যা কর।
গ) কেন বলা হয়ে থাকে যে,” আদালতের দায়িত্ব হচ্ছে মামলার বিচার করা, মানুষের নয়”?
ক) উত্তর:
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৫৫ ধারার ব্যাখ্যায় ঈযধৎধপঃবৎ বা চরিত্র শব্দটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। উক্ত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে,ঞযব ড়িৎফ পযধৎধপঃবৎ রহপষঁফবং নড়ঃয ৎবঢ়ঁঃধঃরড়হ ধহফ ফরংঢ়ড়ংরঃরড়হ. অর্থাৎ খ্যাতি ও প্রকৃতি উভয়ই চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। খ্যাতি বলতে বুঝায় একজন লোক সম্পর্কে জনসাধারণ কি বলে বা ভাবে। আর প্রকৃতি হইল একজন লোকের চরিত্র সম্পর্কে ব্যক্তিগত মতামত।
ওয়েবস্টারের মতে, চরিত্র হচ্ছে মানুষের স্বভাব বা প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য যা একজনকে অপর লোক হতে স্বতন্ত্র করে। তাই চরিত্র মানুষের একটি বিশেষ সম্পদ।
১৮৭২ সালের সাক্স্য আইনের ৫২ থেকে ৫৫ ধারা পর্যন্ত চরিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে।
৫২ ধারায় বলা হযেছে যে, দেওয়ানী মামলায় কথিত আচরণ প্রমান করার জন্য চরিত্র যখন অপ্রাসঙ্গিক তখন মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যেরুপ আচরণের অভিযোগ করা হয়েছে,তার চরিত্র অনুযায়ী তার পক্ষে ঐরুপ আচরণ সম্ভব বা অসম্ভব যাই হোক না কেন তা দেওয়ানী মামলায় অপ্রাসঙ্গিক।
৫৩ ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি মামলায় দোষী ব্যক্তির চরিত্র ভাল ইহা প্রাসঙ্গিক ঘটনা।
৫৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, ফৌজদারি মামলায় দোষী ব্যক্তির চরিত্র খারাপ ইহা অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা। তবে দোষী ব্যক্তির চরিত্র ভাল মর্মে সাক্ষ্য দেওয়া হয়ে থাকলে তাহার চরিত্র খারাপ ইহা প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
৫৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তির চরিত্র যদি এরুপ হয় যে, সে ব্যক্তির প্রাপ্ত ক্ষতি পূরণের পরিমান উহার দ্বারা প্রভাবিত’ হয় তবে দেওয়ানী মামলায় তাহা প্রাসঙ্গিক বিষয় বা ঘটনা।
খ)
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৫৫ ধারার ব্যাখ্যা অনুসারে চরিত্র শবদটি দ্বারা খ্যাতি ও প্রকৃতি উভয়কে বুঝায়। যেমন- কোন ব্যক্তি সম্পর্কে অন্যে যা ধারনা করে তা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম। আর প্রকৃতি হচ্ছে কোন ব্যক্তির স্বভাব সম্পর্কে অন্য লোকের মতামত বা অভিমত। অথাৎ লোকটি বদমেজাজী নাকি শান্ত প্রকৃতির ইত্যাদি বুঝানো হয়।
সুতরাং একজন মানুষের চরিত্র হচ্ছে তার খ্যাতি ও প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য। তাই ভাল চরিত্র বলতে সাধারণ লোকজনের মধ্যে শুধু সাধারণ খ্যাতি বুঝায় না,তার প্রকৃতিকেও বুঝায়। এজন্য সাধারণ খ্যাতি ও ভাল স্বাভাবের মানুষকে ভাল চরিত্রের অধিকারী বলা যায়।
ওয়েবস্টারের মতে, চরিত্র হচ্ছে মানুষের স্বভাব বা প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য যা একজনকে অপর লোক হতে স্বতন্ত্র করে। এজন্য চরিত্র মানুষের একটি বড় সম্পদ।
গ)
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৫২ থেকে ৫৫ ধারা পর্যন্ত চরিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে। উক্ত আইনের ৫৫ ধারার ব্যাখ্যায় চরিত্র শব্দটি দ্বারা খ্যাতি ও আচরণ উভয়কে বুঝানো হয়েছে। ওয়েবস্টারের মতে, চরিত্র হচ্ছে মানুষের স্বভাব বা প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য যা একজনকে অপর লোক হতে স্বতন্ত্র করে। এজনত চরিত্র মানুষের একটি বড় সম্পদ। একই আইনের একই ধারার ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে যে, মানুষের সুনাম ও প্রকৃতির সমন্বযে গঠিত হয় তার চরিত্র। সুনাম হচ্ছে তার সম্পর্কে অন্য লোকের ধারনা একং প্রকৃতি হচ্ছে তার স্বভাব সম্পর্কে অন্য লোকের অভিমত।  কোন লোক শান্ত প্রকৃতির না বদমেজাজী এটা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে বোঝা যায়। এজন্য লোকটির সামগ্রিক সুনাম ও প্রকৃতি বিবেচনা করতে হবে।
থমসন বনাম চার্চ(জড়ড়ঃ,৩১২) নামক এক আমেরিকান মামলায় আদালত মন্তব্য করেন যে, আদালতের কাজ হচ্ছে মামলার বিচার করা-মানুষের বিচার করা নয়।
কেননা খুব একটি খারাপ লোকেরও অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত বিবাদের কারণ থাকতে পারে। অনেক সময় দেখা গেছে প্রকৃত পক্ষে মামলার পক্ষগনের বিরোধের কারণসমূহ বিচার করতে গিয়ে পক্ষসমূহের বা সাক্ষীগনের চরিত্র নিয়ে অযথা টানাটানি শুরু হয়ে যায়। চরিত্র যদি বিচার্য বিষয় না হয় তবে পক্ষগনের চরিত্র সম্পর্কে বক্তব্য রাখা অপ্রাসঙ্গিক। চরিত্র বিচার্য বিষয হলে দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় মামলায় ভাল চরিত্র বা খারাপ চরিত্র সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়া যাবে। তবে চরিত্র নিয়ে বক্তব্য রাখতে চাইলে প্রথমে দেখতে হবে মামলাটি কোন ধরণের দেওয়ানী নাকি ফৌজদারী।
মামলাটি যদি দেওয়ানী প্রকৃতির হয় তাহলে সাক্ষ্য আইনের ৫২ ও ৫৫ ধারা অনুসরণ করতে হবে উভয় ধারায চরিত্রকে প্রাসঙ্গিক বিষয হিসেবে বলা হয়েছে।
সুতরাং চরিত্র নিয়ে টানাটানি করা দেওয়ানী মামলায় অনুচিত।
জায়েদ সাবেতের নিকট হতে টাকা কর্জ করেছে ,এই আরর্জিতে সাবেতের বিরুদ্ধে জায়েদ দেওয়ানী মামলা করলেন। জায়েদ বেশ্যাসক্ত কিনা, তা ্ মামলায় একেবারে অপ্রাসঙ্গিক। ইহার কারণ অতি স্পষ্ট। জায়েদ আদালতে সাবেতের কর্জ লওয়া প্রমান করতে এসেছে, নিজের সচ্চরিত্র প্রমান করতে আসে নাই।
আবার মামলাটি যদি ফৌজদারী প্রকৃতির হয় তাহলে সাক্ষ্য আইনের ৫৩ এবং ৫৪ ধারা অনুসরণ করতে হবে।
৫৩ ধারায় বরা হয়েছে,আসামীর ভাল চরিত্র প্রাসঙ্গিক ঘটনা। ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে আসামীর ভাল চরিত্র প্রাসঙ্গিক হলেও খারাপ চরিত্র অপ্রাসঙ্গিক বিষয থাকে যতক্ষন না ভাল চরিত্রের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়।
অতএব ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, নালিশের কারণ উদ্ভব হয় মানুষের কাজের দ্বারা। সে কাজটি যদি অন্যায় হয়ে থাকে তবে ভাল চরিত্রের অধিকারী হয়ে অব্যাহতি পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে কাজটি যদি বেআইনি বা অন্যায় না হয়ে থাকে তবে একজন খারাপ চরিত্রের মানুষকেও দায়ী করা যায় না। অন্যায় কাজ বলতে প্রচলিত আইনের পরিপন্থি অথবা আইন সমর্থন করে না এরুপ কাজ বুঝায়।
যেমন- ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে মেনসরিয়া বা দোষমুক্ত মনের সাথে সংঘটিত অপরাধের একটা সম্পর্ক দেখার প্রয়াস থাকে বটে, কিন্তু দোষমুক্ত মন যতই থাকুক অপরাধমূলক কাজটি সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে শাস্তি দেওয়া যায় না তাই যথার্থভাবেই বলা যায় যে, অপরাধমূলক কাজের বা বিরোধের কারনের বিচার করাই হচ্ছে আদালতের কাজ চরিত্রের বিচার নয়।


প্রশ্ন-৫
মৃত্যুকালীন ঘোষনা কি? এটা কিভাবে প্রমান করা যায়? তদন্তকালে কোন পুলিশ অফিসারের নিকট যদি এটা করা হয়, তাহলে কি সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহন করা যায়? যদি কোন মৃত্যুকালীন ঘোষনাকারী ব্যক্তি বেঁচে যায়, তাহলে তার ঘোষনা কি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা যায়? মৃত্যুকালীন ঘোষনা বিষয়ে বাংলাদেশের আইন এবং ইংলিশ আইনের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে?
মৃত্যুকালীন ঘোষণা (উুরহম ফবপষধৎধঃরড়হ):
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী, যদি কোন নিহত ব্যক্তি তার  মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যু কারন, অবস্থা এবং পরিস্থিতি বর্ননা করে কোন বিবৃতি বা জবানবন্দি প্রদান করে থাকেন তবে তাকে মৃত্যুকালীন ঘোষণা বা উুরহম ফবপষধৎধঃরড়হ বলা হয়।
৩২(১) ধারায় বলা হয়েছে যে,যদি কোন মামলায় কোন মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে, সে ক্ষেত্রে ঐ লোক মৃত্যুর পুর্বে তার মৃত্যুর কারণ বা যে ঘটনার ফলে তার মৃত্যু ঘটেছে তৎসংশ্লিষ্ট কোন পরিস্থিতি সম্পর্কে যদি কোন বিবৃতি দিয়ে থাকে। অনুরুপ বিবৃতি প্রদানের সময় বিবৃতি দান কারীর মৃত্যুর আশঙ্কা উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক এবং যে মামলায় তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে তার প্রকৃতি যাই হউক, উক্ত বিবৃতি প্রাসঙ্গিক। এরুপ ঘোষণা লিখিত বা মৌখিক বা ভাব ভঙ্গির মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে। উক্ত ঘোষণা যে কারো নিকট প্রকাশ করতে পারে। ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ বা বিশেষ ব্যক্তির নিকট হতে হবে এমন নয়।
সাক্ষ্য হিসাবে মৃত্যুকালীন ঘোষণাকে গ্রহণ যোগ্য করা হয়েছে মুলত দুটি কারণে। প্রথমতঃ বাস্তব প্রয়োজন। কারণ নিহত ব্যক্তি অপরাধের একমাত্র চাক্ষুষ সাক্ষী। তার বক্তব্য গ্রহণ না করলে বা বিবেচনার মধ্যে না আনলে বিচারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। মৃত্যুর পুর্বের বক্তব্য গ্রহণ না করলে পরে তাকে সাক্ষী হিসাবে আর পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, আসন্ন মৃত্যু বুঝতে পারলে সে ব্যক্তি আর মিথ্যার আশ্রয় নিবেনা এটাই স্বাভাবিক। পরকালিন চিন্তা তাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। তাই আদালতে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে যে সাক্ষ্য নেওয়া হয় মৃত্যুকালীন ঘোষণাকে তার সমপর্যায় ভুক্ত বলে মনে করা হয়।
মৃত ব্যক্তি মৃত বা যে ব্যক্তিকে পাওয়া যাচ্ছে না বা যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিতে অক্ষম বা অতিরিক্ত বিলম্ব এবং সাক্ষ্যের জন্য যে ব্যক্তিকে আদালতে আনা যাচ্ছে না সে সকল ব্যক্তির প্রাসঙ্গিক বক্তব্য প্রসঙ্গে সাক্ষ্য আইনের ৩২ এর উপধারা ১ থেকে ৮ এর মধ্যে পড়লে তা আদালতে প্রমান করা যাবে। ৮টি দফা এবং উদাহরন আছে ১১ টি।
যে ক্ষেত্র সমূহে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে, সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অথবা ঘটনার যে কোন অবস্থার ফলে তার মৃত্যু ঘটেছে সে সম্পর্কে যদি কোন বিবৃতি দিয়ে থাকে সেরুপ বিবৃতি দেওয়ার সময় বিবৃতি দান কারীর মৃত্যুর আশঙ্কা উপস্থিত হয়ে থাকুক বা না থাকুক এবং যে মামলায় তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে তার প্রকৃতি যাহাই হউক উক্ত বিবৃতি প্রাসঙ্গিক।
কুনওয়ার মাল কি সিং বনাম এম্পেরেল (এ.আই.আর.১৯৪৮ এলা.১৭০) মামলায় বলা হয়েছে যে, আদালতে বিশ্বাস করিলে কোনরুপ সমর্থন ছাড়াই কেবলমাত্র মৃত্যুকালীন বিবৃতির উপর নির্ভর করিয়াই আসামীর দন্ডাজ্ঞা প্রদান করা হইলে তাহা আইনে উত্তম বিধান বলিয়াই গণ্য হইবে।
এটা কিভাবে প্রমান করা যায় অথবা মৃত্যুকালীন ঘোষনা গ্রহনের ক্ষেত্রে আদালত যে সকল বিষয় বিবেচনায় নিবেন:
যে সকল ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যায় না তাদের বিবৃতি বিচারে প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনযোগ্য হয়। মারা গেছেন এমন কোন ব্যক্তিকে বিচারে সাক্ষী হিসেবে না পাওয়ার কারণে সাক্ষ্যআইন ১৮৭২ এর ৩২ ধারায় মৃত ব্যক্তির উক্তিকে প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনযোগ্য করার বিধান করেছে। উক্ত আইনের বিধান মোতাবেক বিচারাধীন হত্যা মামলায় মৃত্যুকালীন ঘোষনা বা উুরহম ফবপষধৎধঃরড়হ কে আদালতে প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনায় নেন।
মৃত্যুকালীন ঘোষনা প্রমান করার জন্য আদালত নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে থাকেন:
১) মৃত্যুর পূর্বে ঘোষনাকারীর ঘোষনা দেওয়ার মত শারীরিক সামর্থ্য ছিল কিনা।
২) এরুপ ঘোষনাকারীর মৃত্যুর কারণ বা পরিস্থিতি সম্পর্কে  হতে হবে।
৩) এরুপ ঘোষনাকারীর মনে এমন আশংকার সৃষ্টি হতে হবে যেন তার আর বাঁচার কোন আশা নেই।
৪) যার সামনে এরুপ ঘোষনা করা হয়েছে সে ব্যক্তি আদালতে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবেন।
৫) সমর্থন মূলক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এরুপ ঘোষনা প্রমান হিসেবে আদালতে গ্রহনযোগ্য হতে পারে।
তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের নিকট যদি মৃত্যুকালীন ঘোষনা প্রদান করা হয় তাহলে এই ঘোষনা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা যাবে কিনা:
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৩২ ধারা অনুসাওে প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যুর বিচারে মরণাপন্ন কোন ব্যক্তি তার নিজের মুত্যুর কারণ সম্পর্কে যে কোন ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার বা কোন সাধারন মানুষের কাছে মৃত্যুকালীন ঘোষনা প্রদান করতে পারবেন। এই বিবৃতি বা জবানবন্দী মৃত্যুকালীন ঘোষনা বা উুরহম ফবপষধৎধঃরড়হ নামে আদালতে প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য হিসেবে গন্য হয়।
আলোচ্য প্রশ্নের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে যে, তদন্তকারী পুলিম াফিসার যদি এই ঘোষনা রেকর্ড করেন তাহা আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন হবে কিনা। সাক্ষ্য আইনের ৩২ ধারা মতে ,যেহেতু মৃত্যুকালণি ঘোষনার সমর্থিত বিবৃতি আদালতে গ্রহনযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য এবং যে কেউ ইহা রেকর্ড করতে পারবেন,সেহেতু পুলিশ অপিসারের নিকট দেয় এই বিবৃতি আদালতে গ্রহনযোগ্য হবে। তবে আদালত এই জবানবন্দী বিবেচনায় নেওয়ার ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত ৫টি গ্রাউন্ড অবশ্যই বিবেচনা করবেন।
৪২ ডিএলআর (আপিল বিভাগ) ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, সাক্ষ্য সম্মুখে পাওয়া যেকোনো লোক লিপিবদ্ধ করতে পারে, তা লিখিত বিধান নেই যে এটা অপরাধ সম্পর্কীয় আইনের ১৬৪(৩) ধারার মতোই ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া অন্যত্র উল্লেখ রয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তার রেকর্ডকৃত মৃত্যু কালীন ঘোষণা সাক্ষ্য আইনে গ্রহণীয়, কিন্তু এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকবে যে বাদী পক্ষের কাছে এটা অপেক্ষা ভালো পদ্ধতিতে ঘোষণা রেকর্ডের কোনো সময় বা সুযোগ ছিল না। তবে এ কথা ঠিক নয় যে পুলিশ কর্মকর্তার রেকর্ডকৃত মৃত্যুকালীন ঘোষণা অনির্ভরযোগ্য।   

যদি কোন মৃত্যুকালীন ঘোষনাকারী ব্যক্তি বেঁচে যায়, তাহলে তার ঘোষনা কি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা যায়:

যদি ঘোষনাকারী দৈবাৎ বেঁচে যায় তবে তার আইনগতমূল্য  নিম্নরুপ হবে।
ঘোষনাকারী যদি মারা না-যান অর্থাৎ দৈবাৎ বেঁচে উঠেন তবে তার এই ঘোষনা ৩২(১) ধারা মতে মৃত্যুকালীন ঘোষনা হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবে না। তবে সাক্ষ্য আইনের ১৫৭ ধারা বিধান মোতাবেক তা সমর্থনমূলক সাক্ষ্য (ঈড়ৎৎনড়ৎধঃরাব বারফবহপব) হিসেবে গৃহীত হতে পারে। ঘোষনাকারী বেঁচে গেলে ঘোষনাকারী স্বয়ং আদালতে উপস্থিত থেকে শপথ বাক্য পাঠ ও জেরার সম্মুখীন হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সমর্থনমূলক সাক্ষ্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
মৃত্যুকালীন ঘোষনা বিষয়ে বাংলাদেশের আইন এবং ইংলিশ আইনের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে:
মৃত্যুকালীন ঘোষনা সম্পর্কে আমাদের আইন এবং ইংল্যান্ডের আইনের মধ্যে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। বিভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে এর পার্থক্যগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
ক্র:নং    পাথর্কের বিষয়    ইংলিশ আইন    সাক্ষ্য আইন
১    প্রযোজ্যের ক্ষেত্রে    ইংলিশ আইনে মৃত্যুকালীন ঘোষনা শুধুমাত্র নরহত্যা সংক্রান্ত ফৌ: মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।    সাক্ষ্য আইনের বিধান মোতাবেক এইরুপ বিবৃতি যে কোন মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে অর্থাৎ যে কোন মামলায় এটা গ্রহনীয় সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

২    মূত্যুর আশঙ্কা থাকার প্রশ্নে    ইংলিশ আইন মতে বিবৃতিদানকারী কেবরমাত্র তার আসন্ন মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হলে অর্থাৎ বাঁচা সম্বন্ধে নিরাশ হয়ে পড়লেই এরুপ ঘোষনা করতে পারে।    ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের বিধানমতে বিবৃতি দেওয়ার সময় বিবৃতি দাকারীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকার কোনরুপ প্রয়োজন নেই।অর্থাৎ সাক্ষ্য আইনে এ বিষয়ে কোন সীমাবদ্ধতা নেই।



মৃত্যুকালীন ঘোষনা কি সাজা প্রদানের একমাত্র ভিত্তি হতে পারে:
মৃত্যুকালনি ঘোষনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য বলে পরিগণিত করা হয। উহার উপর নির্ভর করে শাস্তি প্রদান করা যেতে পারে। সুতরাং মৃত্যুকালীন ঘোষনা সাজা প্রদানের একমাত্র ভিত্তি হতে পারে।
কুনওয়ার মাল কি সিং বনাম এম্পেরেল (এ.আই.আর.১৯৪৮ এলা.১৭০) মামলায় বলা হয়েছে যে, আদালতে বিশ্বাস করিলে কোনরুপ সমর্থন ছাড়াই কেবলমাত্র মৃত্যুকালীন বিবৃতির উপর নির্ভর করিয়াই আসামীর দন্ডাজ্ঞা প্রদান করা হইলে তাহা আইনে উত্তম বিধান বলিয়াই গণ্য হইবে।
মৃত্যুকালীন ঘোষনার সাক্ষ্যগত মূল্য:
মৃত্যুকালীন ঘোষনাকে আদালতে যথেষ্ট মূল্য দেওয়া হয়ে থাকে। যার মৃত্যু আসন্ন সে ব্যক্তি মিথ্যা বলতে পারেনা। এরুপ বিশ্বাস নিয়েই ইহা করা হয়ে থাকে। ঘোষনাটি যদি সত্য বলে প্রমানিত হয় তবে অন্য কোন সাক্ষ্য প্রমান ব্যতিরেকেই শুধুমাত্র এর উপর ভিত্তি করে আসামীর সাজা দেওয়া যেতে পারে।
কুনওয়ার মাল কি সিং বনাম এম্পেরেল (এ.আই.আর.১৯৪৮ এলা.১৭০) মামলায় বলা হয়েছে যে, আদালতে বিশ্বাস করিলে কোনরুপ সমর্থন ছাড়াই কেবলমাত্র মৃত্যুকালীন বিবৃতির উপর নির্ভর করিয়াই আসামীর দন্ডাজ্ঞা প্রদান করা হইলে তাহা আইনে উত্তম বিধান বলিয়াই গণ্য হইবে।
   


প্রশ্ন-৬
ক) সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা কিভাবে ভন্ডুল করা যায়?
খ) কখন বিচারক অশালীন এবং কুৎসামূলক প্রশ্ন করতে বাঁধা দিতে পারে?
ক) একজন সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করা যায় মুলত দু’ভাবে।
প্রথমত: ১৩৭ ও ১৩৮ ধারার বিধান মোতাবেক তাকে জেরা করে দেখানো যায় যে, তিনি যা বলেছেন তা সত্য বা স্বাভাবিক নয় এবং যথার্থ ঘটনার সাথে তার বক্তব্য মিলছে না। জেরার মাধ্যমে এটাও দেখানো যায় যে, চরিত্র ও সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি অনেক নি¤œস্তরের ব্যক্তি।
দ্বিতীয়ত: জেরার উপর নির্ভর না করে স্বাধীনভাবে সাক্ষ্য প্রমান এনে ১৫৫ ধারার বিধান মতে বিরুদ্ব পক্ষের সাক্ষীর বিশ্বস্থতা নষ্ট বা খর্ব করা যায়।
১৫৫ ধারা মতে, নি¤েœাক্ত উপায়ে সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করা যায়-
১) অন্যান্য সাক্ষীদের মতে ঐ সাক্ষী বিশ্বাসের অযোগ্য বলে মনে হলে তাদের দ্বারা সে মর্মে সাক্ষ্য দেয়ায়ে।
২) সাক্ষীকে ঘুষ দেয়া হয়েছে বা সাক্ষী ঘুষের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে অথবা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য কোনরুপ অবৈধ প্রলোভনের প্রস্তাবে সম্মত হযেছে, তা প্রমান করে।
৩) তার প্রদত্ত সাক্ষ্যে যা প্রতিবাদ সাপেক্ষ তা তার পূর্ববর্তী বিবৃতির সাথে সঙ্গতিহীন তা প্রমান করে।
৪) কোন ব্যক্তি যখন বলাৎকার অথবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারীতে সোপর্দ হন তখন দেখানো যেতে পারে যে, অভিযোগকারিনী সাধারণত দুশ্চরিত্রা ।
খ)
সাক্ষ্য আইনের বিধান মোতাবেক সাধারণত জবানবন্দী নেওয়ার সময় বা জেরা করার সময় একজন সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার প্রচেষ্টায় বিচারক বাধা দিতে পারেন না। তবে জেরা করার সময় বিরক্তিকর বা অপমানজনক প্রশ্ন করলে বিচারক বাধা দিতে পারেন। আদালতের কাজ হচ্ছে বিবাদের কারণ নিয়ে বিচার করা সাক্ষীর বিচার করা নয়। তাই কোন সাক্ষী মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার জন্য স্বতন্ত্রভাবে তা বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় । কিন্তু মিথ্যার অন্বেষায় কোন সাক্ষীকে অযথা হয়রানি করা হলে বিচারক হস্তক্ষেপ করে তা বন্ধ করতে পারেন।
সাক্ষ্য আইনের ১৪৯ ধারায় বলা হয়েছে যে,যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত প্রশ্ন করা যাবে না।
যেমন- এ্যাডভোকেটকে তার মক্কেল জানায় বিরুদ্ধ পক্ষ সাক্ষীর মধ্যে একজন সাক্ষী ডাকাত, জেরার সময় এ্যাডভোকেট সাহেব এই সাক্ষীকে, একথা জিগ্নাসা করতে পারবেন যে অপনি একজন ডাকাত।
উক্ত আইনের ১৫০ ধারায় বলা হয়েছে যে,বিচারকের মতে যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত প্রশ্ন করা হলে সেই আইনজীবির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট করতে পারেন।
একই আইনের ১৫১ ধারা মতে,বিচার্য বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্ন না হলে সাক্ষীকে অশ্লীল ও কুৎসামূলক প্রশ্ন করা হলে বিচারক বাধা দিতে পারেন।
১৫২ ধারা মতে, কোন প্রশ্ন যদি কাউকে অপমান বা উত্যক্ত করার উদ্দেশ্য-প্রনোদিত বলে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় অথবা প্রশ্নটি সঙ্গত হলেও অকারণ আক্রমাণাতœক আকৃতি সম্পন্ন বলে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় ,তবে আদালত অনুরুপ প্রশ্ন অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন।
অথাৎ সেই প্রশ্ন যা শুধু অপমান কিংবা বিরক্ত করার জন্য সাক্ষীকে করা হয় তা আদালত জিগ্নাসা করতে দিবেন না।
যে প্রশ্ন সাধারণভাবে আপত্তিজনক নয় তা আপত্তি জনক আকারে করা হলে আদালত সে আকারে ঐ প্রশ্ন জিগ্নাসা করতে দিবেন না।



প্রশ্ন-৭ Judicial Notice বলতে তুমি কি বুঝ? ”যে সকল ঘটনা আদালত কর্তৃক সাক্ষ্যনীয় তা প্রমান করার প্রয়োজন নেই” উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর এবং যে সকল ঘটনা সম্পর্কে আদালত অবশ্যই ঔঁফরপরধষ ঘড়ঃরপব দিবেন সেগুলোর তালিকা বর্ণনা কর।
জুডিশিয়াল নোটিশ (Judicial Notice):
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের বিধান অনুসারে সাধারণ নিযম হচ্ছে মামলার পক্ষগণ তাদের বক্তব্যের সমর্থনে সাক্ষ্য প্রমান উপস্থাপন করবেন এবং আদালত সেই সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ঘটনাকে বা ঘটনাবলীকে আইনের আলোকে বিশ্লেষণ পূর্বক নিস্পত্তি করবেন। কিন্তু এমন কতগুলো বিষয় আছে যা পক্ষগনকে প্রমান করতে হয় না, ইহা সর্বজন স্বীকৃত ও চিরসত্য। এইগুলিকেই জুডিশিয়াল নোটিশ বলা হয়।

সাক্ষ্য আইনের সাধারন বিধান অনুসারে মামলার পক্ষগণ তাঁদের নিজ নিজ দাবী সম্পর্কে আদালতে সাক্ষ্য প্রমান হাজির বা উপস্থাপন করতে বাধ্য থাকেন । তবে সাক্ষ্য আইনে এমন কিছু বিষয় আছে যা সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ এবং আদালত অবগত থাকেন । বিনা প্রমানে এ সকল বিষয় গৃহীত হয় । এসব বিষয়কে ঔঁফরপরধষ ঘড়ঃরপব বলা হয় ।
জুডশিয়াল নোটিশ সম্পর্কে উক্ত আইনের ৫৬,৫৭ ও ৫৮ ধারায় বলা হয়েছে।
সাক্ষ্য আইনের ৫৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে সকল বিষয় বিচারক হিসেবে আদালতের দৃষ্টি গোচরে আছে ,তা প্রমান করার প্রয়োজন নেই সাধারণভাবে প্রতিটি বিষয় প্রমান করতে হয় মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য দিয়ে । কিন্তু এই সাধারন নিয়মের তিনটি ব্যাতিক্রম রয়েছে । যেমন-
ক) যে বিষয় বিচারক আপন দৃষ্টিতে অবহিত হতে পারেন ,তাহা ,
খ) যে বিষয় স্বীকৃত তা ,এবং
গ)  যে বিষয় আদালত অনুমান করতে পারেন তা ।
উপরের তিনটি বিষয় প্রমানের প্রয়োজনে সাক্ষ্য নাও লাগতে পারে ।
এমন অনেক বিষয় আছে যা প্রায় সকলেরই জানা কিংবা প্রয়োজনবোধে সকলেই জানতে পারে। কাজেই আদালতও ইচ্ছা করলেই সহজে তা জেনে নিতে পারেন। এজন্য কাউকে প্রমানের দায়িত্ব দেয়া নিরর্থক। এটাই হচ্ছে বিচারকরুপে অবগত হওয়া বা জুডিশিয়াল নোটিশ নেয়ার মূল কথা।
যে সকল বিষয় আদালতেকে জুডিশিয়াল নোটিশে নিতে হবে বা বিচারক হিসেবে দৃষ্টিগোচরে নিতে হবে তার বিবরণ সাক্ষ্য আইনের ৫৭ ধারায় দেয়া হয়েছে।এগুলি হচ্ছে নি¤œরুপ--
১) বাংলাদেশের প্রচলিত আইন সমুহ ;
২) সশ¯্রবাহিনী সমুহের জন্য প্রণীত যুদ্ধবিধিসমুহ ;
৩) সংসদ এবং বাংলাদেশে বর্তমানে বলবত আইন বলে প্রতিষ্ঠিত কোন আইন সভার কার্যাবলী ;
৪) বাংলাদেশের কোন  সরকারী পদে যোগদানকারী ব্যক্তির নাম ,যোগদানের তারিখ ,পদবী ,কর্তব্য কাজ ও স্বাক্ষর ,
৫) সকল আদালত ,নোটারী পাবলিক এবং উপযুক্ত ক্ষমতাবলে কোন ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত সীলমোহর ;
৬) সরকার প্রদত্ত রাষ্ট্রের উপাধি ও জাতীয়পতাকা ,
৭) সময়ের বিভাগ সমূহ ও পৃথিবীর ভৌগোলিক বিভাগসমূহ এবং সরকারী গেজেটে বিজ্ঞাপিত সর্বসাধারণের উৎসব ,উপবাস ও ছুটি সমূহ।
৮) বাংলাদেশের ভু- খন্ডসমুহ ;
৯) বাংলাদেশের সাথে অন্য রাষ্ট্রের যুদ্ধ শুরু শেষ হওয়ার তারিখ
১০) আদালতের সদস্যবৃন্দ ,অফিসারগন এবং তাদের সহকারী ও অধিনস্থ কর্মচারীগন ,এডভোকেট ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম ইত্যাদি ।
১১) স্থল ,জল ও সমুদ্র পথের নিয়মাবলী
উপরিউক্ত সকল ক্ষেত্রে এবং সাধারণ্যে প্রকাশিত ইতিহাস,সাহিত্য,বিজ্ঞান,শিল্পকলা বিষয়ে আদালত উপযুক্ত রেফারেন্স,পুস্তক বা দলিলাদির সাহায্য গ্রহন করতে পারেন।
যে সকল বিষয় সম্পর্কে আদালত জুডিমিয়াল নোটিশে নিবেন না তাহাও উক্ত আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে। উক্ত ধারার বিধান মতে,
কোন ঘটনা জুডিশিয়াল নোটিশে নেয়ার জন্য কেউ যদি আদালতের নিকট দাবি জানায় তবে যে ব্যক্তি দাবি জানাবে সে উক্তরুপে প্রয়োজনীয় পুস্তক বা দলিল দাখিল না করা পর্যন্ত আদালত সেই ঘটনা দৃষ্টিগোচরে নিতে অস্বীকার করতে পারেন।
৫৮ ধারার বিধান মতে মামলার কোন পক্ষগন বা তাদের প্রতিনিধিগনের স্বীকৃত বিষয় প্রমান করার প্রয়োজন নেই।

কেন বিচারকরুপে অবগত হতে হয়:
আদালতে মামলা উপস্থিত হলে সে মামলায় যেসব ঘটনা এবং বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে ,সেসব ঘটনা সম্পর্কে স্বভাবতই আদালত অনভিজ্ঞ থাকেন । আইনের বিধান এই যে ,তর্কিত বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে ব্যক্তিগত ধারনা থাকলেও আদালত তা প্রয়োগ করবে না । তরকিত বিষয় সম্পর্কে আদালতের মন যেন এক খানি পরিষ্কার স্লেট এবং তা সম্পূর্ণ অলিখিত । এমন কি উহাতে সামান্য আঁকি -ঝুঁকিও নেই । সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে আদালতের মনের পটে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে তা হবে বিচারের ভিত্তি । বিবাদমান পক্ষগণ আদালতে সাক্ষ্য -প্রমান উপস্থিত করবেন এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।কিন্তু পৃথিবীতে এমনও অনেক বিষয় আছে যা প্রায় সকলের জানা । আদালতের পক্ষেও তা জানার কথা । আপন জ্ঞানের দ্বারা তিনি তা সংগ্রহ করবেন বা জানবেন । বিচাররুপে অবগত হওয়ার অর্থ এটাই । তবে বিচাররুপ অবগত হওয়ার আদালতের পক্ষে সম্পূর্ণভাবে নিজের জ্ঞানের উপর নির্ভর করা না।এ ক্ষেত্রে আদালত আপন জ্ঞানের উপর নির্ভর করবেন এবং তাতে না কুলালে যেখানে সেই জ্ঞান পাওয়া যায় সেখানে খোঁজ করবেন । এর ফলে তর্কিত বিষয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় ।



প্রশ্ন-৮ কখন কোন পক্ষ তার নিজের সাক্ষীকে জেরা করতে পারে? সাক্ষ্য আইনের জেরা সংক্রান্ত বিধানাবলী কতটুকু প্রতিদ্বন্দীতামূলক পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত? বাাংলাদেশে একজন বিচারক কি অবিচার প্রতিরোধকল্পে অনুসন্ধানী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে?
বৈরী সাক্ষী কাকে বলে :
মামলার পক্ষগণ তাদের নিজ বক্তব্যের সমর্থনে সাক্ষী উপস্থাপন করেন। স্বাভাবিক ভাবেই যে পক্ষ কোন সাক্ষীকে উপস্থাপন করেন, সাক্ষী সেই পক্ষকে সমর্থন করে সাক্ষ্য প্রদান করে থাকেন। কিন্তু কোন সময় দেখা যায় সাক্ষী তার আহ্বানকারী পক্ষকে সমর্থন না করে তার বিরুদ্ধ পক্ষকে সমর্থন করছে। এই ধরণের পরিস্থিতিতে আহ্বানকারী পক্ষ সেই সাক্ষীকে বৈরী বলে ঘোষণা করতে পারেন এবং তাকে জেরা করার অনুমতি চাইতে পারেন।
সাক্ষ্য আইনে বৈরী সাক্ষীর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। তবে সাক্ষ্য আইনের ১৫৪ ধারার বিধান মতে স্বীয় সাক্ষীকে বিরুদ্ধ পক্ষের মত জেরা করার বিধান আছে। আদালতের প্রচলিত ভাষায় স্বীয় সাক্ষীকে জেরা করার পুর্বে শত্রু বা বৈরী সাক্ষী বলা হয়। বৈরী সাক্ষীকে জেরা করতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। আদালত যদি মনে করেন যে আহ্বানকারী পক্ষের প্রতি সাক্ষীর মেজাজ বিগড়ে গেছে বা আচরণ বৈরী হয়ে গেছে বা কথাবার্তা শত্রু পক্ষের মত হয়ে গেছে, তাহলে আদালত আহ্বানকারী পক্ষকে বিরুদ্ধ পক্ষের ন্যায় তার নিজ সাক্ষীকে জেরা করার অনুমতি দিতে পারেন। সাক্ষীকে জেরা করতে দেওয়ার অধিকার আদলতের বিবেচনার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সাক্ষ্য আইনের ১৫৪ ধারায় বলা হয়েছে যে,আদালত যে পক্ষের সাক্ষী তলব করে এনেছে তার পক্ষের সাক্ষীকে তাকেই জেরা করবার অনুমতি দিতে পারেন এইরুপ সাক্ষীকে বলা হয় বৈরী সাক্ষী বা ঐড়ংঃরষব রিঃযহবংং। সাক্ষ্য আইনের ১৫৪ ধারায় বৈরী সাক্ষী বলে কোন কথা নেই। এই বৈরীর বিষয়টি ১৫৪ ধারায় প্রয়োগের মাধ্যমে এসেছে। আমরা একটি উদাহরণ দিয়ে দেখাতে পারি কিভাবে বৈরী সাক্ষী ঘোষিত হয়। যেমন- একটি মামলা চলা কালে বাদীর সাক্ষী চড-১এর সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর বাদীর ২নং সাক্ষী দখলের সাক্ষী যখন আদালতে আসে চড-২ উমেদআলী বলেন বাদী মামলার জমি দখর করে না।
আদালত তখন বৈরী ঘোষনা করে বাদী পক্ষের বিজ্ঞ কৌশুলীকে জেরা করার অনুমতি দিবে এবং জেরা করবেন এটাকেই বরা হয় পক্ষীয় অনুসন্ধান।
এই বিষয়টি ফৈজদারী মামলার ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে যেমন- বাদী প্রসিকিউশন পক্ষের কোন সাক্ষী যদি জবানবন্দী দেয় প্রসিকিউশন পক্ষের ঘটনাকে অস্বীকার করে তখন বিবাদী পক্ষের বিজ্ঞ কৌশুলী তাকে বৈরী ঘোষনা করে জেরা করবার অনুমতি চাইতে পারে এবং জেরা করতে পারবে এটাকেই বলা হয় পক্ষীয় অনুসন্ধান।
সাক্ষ্য আইনের জেরা সংক্রান্ত বিধানাবলী কতটুকু প্রতিদ্বন্দীতামূলক পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত:
বিচারকার্য পরিচালনার জন্য বর্তমান বিশ্বে দুটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। এগুলি হচ্ছে- অনুসন্ধানী পদ্ধতি ((ওহয়ঁরংরঃড়ৎরধষ ঝুংঃবস) এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পদ্ধতি (অফাবৎংধৎু বা  অপপঁংধঃড়ৎরধষ ঝুধঃবস)।
প্রথমটি মূলত: ফ্রান্সে এবং দ্বিতীয়টি ইংল্যান্ডে প্রচলিত রয়েছে। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পদ্ধতির। এই পদ্ধতিতে পক্ষগন নিজেরা আইনী যুদ্ধে অবর্তীর্ণ হয় এবং বিচারক আম্পায়ারের ভূমিকা পালন করে।এক পক্ষের সাক্ষীকে অপর পক্ষ যখন প্রশ্ন করে তখন তাকে জেরা বলে। জেরা করার উদ্দেশ্য মূলত: তিনটি-প্রথমত: বিরুদ্ধ পক্ষের সাক্ষ্যকে ধ্বংস বা দূর্বল করা;
দ্বিতীয়ত: বিরুদ্ধ পক্ষের সাক্ষীর নিকট হতে নিজ পক্ষের কিছু বক্তব্য আদায় করা এবং
তৃতীয়ত: সাক্ষীকে বিশ্বাসের অযোগ্য প্রতিপন্ন করা।
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনর ১৬৫ ধারায় বিচারককে সত্য উদ্ধারের জন্য সাক্ষীকে প্রশ্ন করার অধিকার দেয়া হয়েছে। সাক্ষীর জেরা- জবানবন্দী শেষ হলে আদালত সাক্ষীকে যে কোন প্রশ্ন করতে পারেন। সাক্ষী বিভ্রান্ত হতে থাকলে আইনজীবীকে থামিয়ে আদালত প্রশ্ন করতে পারেন। তবে জেরা,জবানবন্দীর মাঝখানে সাক্ষীক যদি বিচারক একাদিক্রমে প্রশ্ন করতে থাকেন তবে তা বিচারকের আচরণ বহিভূত আচরণ হবে,কেননা আদালতের কাজ ও আইনজীবীর কাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিদ্বিতামূলক নয় বা অনুসন্ধানীমূলক নয় বরং উভয় পদ্ধতির সংমিশ্রণ মাত্র।
বাংলাদেশের একজন বিচারক অনসন্ধানী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে কিনা:
আইনজীবি তার মক্কেলের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে এগিয়ে যাবেন, কিন্তু বিচারক উভয় পক্ষের প্রতি সমান দৃষ্টি রাখেন। এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজনবোধে বিচারক সাক্ষীকে প্রশ্ন করে সত্যউদঘাটনের চেষ্টা চালাতে পারেন। এ বৈশিষ্ট্যটি অনুসন্ধানী পদ্ধতির। তবে এই অনুসন্ধানীমূলক কােের্যর সীমা রয়েছে। আইনজীবীর কাজে অযথা কাম্য নয়।সাক্ষীগণ যে সাক্ষ্য দিয়েছে তাতে বিবেচ্য বিষয়ে কোন সংশয় দেখা দিলে বিচারক প্রশ্ন করে তা নিরসন করতে পারেন।
১৩ ডিএল আর ২৮৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যে, আদালতের অধিকার আছে সাক্ষীকে যে কোন প্রশ্ন করার। কিন্তু আদালত সকল সাবধানতার সহিত তাঁর এই ক্ষমতার ব্যবহার করবেন। ন্যায় বিচারের স্বার্থে যে টুকু অনুসন্ধান প্রয়োজনীয় তার অতিরিক্ত অনুসন্ধান বিচারক করতে পারেন না।
   

প্রশ্ন-৯
ক) সরকারের আইন আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি কিভাবে প্রমান করা যেতে পারে?
খ) একটি সহিমোহরকৃত নকলে কোন কোন বিষয় থাকা উচিৎ?
গ) আরজি ও জবাব কি সরকারী দলিল? কেন?
ঘ) দলিলের বিশুদ্ধতা কিভাবে প্রমান করা যায়?
ক) সাক্ষ্য আইনের ৭৭ ও ৭৮ ধারায় সরকারী দলিল প্রমানের পদ্ধতি বর্ণিত হযেছে।
৭৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, অনুরুপ জাবেদা নকল যে সরকারী দলিলের নকল বা যে সরকারী দলিলের অংশ বিশেষের নকল বলে বুঝতে দেয়া হয় সে দলিলের বা তা অংশ বিশেষের বিষয় বস্তুও প্রমানস্বরুপ তা দাখিল করা যেতে পারে।
৭৮ ধারা অনুযায়ী নিম্ন লিখিত সরকারী দলিলগুলি নি¤œ বর্ণিত উপায়ে প্রমান করা যেতে পারে:
১) সরকারের বা সরকারী কোন বিভাগের অথবা কোন রাজ-প্রতিনিধির আইন,আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রদানের সার্টিফিকেট সম্বলিত বিভাগীয় নথিপত্র দ্বারা অথবা সরকার বা রাজ প্রতিণিধির আদেশক্রমে যে দলির মুদ্রিত হয়েছে বলে বুঝতে দেয়া হয় তার দ্বারা।
২) সংসদের কার্যক্রম প্রমান করতে হলে সংসদীয় কার্যবিবরণী যে পুস্তকে সংকলিত হয় তদ্বারা প্রমান করা যায়। সংসদে পাশকৃত আইন সরকারী গ্রেজেটে প্রকাশিত হয়।
৩) শাসন বিভাগীয় কর্মকর্তার জারিকৃত আইন অথবা বিদেশী আইন পরিষদের কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত বা সংশ্লিষ্ট দেশে অনুরুপভাবে যা প্রকাশিত বলে ধারণা করা হয় তার দ্বারা অথবা সংশ্লিষ্ট দেশের বা সেখানকার সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের জাবেদা নকল বা জাতীয় সংসদের আইনের স্বীকৃতি দ্বারা।
৪) পৌর সংস্থার কার্যবিবরণী তাদের দ্বারা রক্ষিত কার্যবিবরণী বহি দ্বারা কিংবা তাদের মুদ্রিত পুস্তক দ্বারা প্রমান করা যায়।
৫) বিদেশে অন্য কোন প্রকার সরকারী দলিলের ক্ষেত্রে মূল দলিল দ্বারা অথবা যে দলিলের আইনসঙ্গত কর্তৃপক্ষের জাবেদা নকল দ্বারা। মূলত এসকল পদ্ধতিতে সরকারী দলির সমূহ প্রমান করা হয়। তবে এগুলি পূণাঙ্গ নয়। আদালত ইচ্ছা করলে অন্য পদ্ধতিও অবলম্বন করতে পারেন।
খ) একটি সহিমোহরকৃত নকলে যে বিষয়গুলো থাকা উচিৎ:
সকল সরকারী দলিলের জাবেদা নকল দেয়া হয় না। যে সকল দলিল পরিদর্শন করার অধিকার রয়েছে শুধু সেগুলোর নকল পাওয়া যাবে।
৭৬ ধারা বিধান অনুসারে যে সরকারী কর্মকর্তার নিকটে কোন সরকারী দলিল থাকে সেই কর্মকর্তা জাবেদা নকল বা সহিমোহরকৃত নকল সরবরাহ করবেন। তবে আইন সম্মত ফিস জমা দিতে হবে।
৭৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, মূল দলিল যেভাবে বা যেরুপ ছিল এ নকল মোটামুটি সেরুপ হতে হবে এবং ক্ষমতা প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা কর্তৃক যথাযথভাবে সার্টিফায়েড বা সত্যায়িত হতে হবে।ধারা-৭৯

গ) আরর্জি বা জবাব সরকারি দলিল কিনা: আরর্জি বা জবাব একত্রে সরকারী দলিল হিসেবে অনেক আদালত গ্রহন করেছেন [১৯ উখজ ৩৪০ (১৯৮৭)]কিন্তু আরর্জি বা জবাবকে স্বতন্ত্রভাবে সরকারী দলিল বলা হয়নি। আরর্জি ও জবাবের ভিত্তিতে বিচারকার্য সমাধা হয় এবং যে ব্যক্তি এগুলো পরিদর্শনের অধিকার রাখে সে এগুলোর সত্যায়িত নকল নিতে পারে। সেজন্য এগুলোকে সরকারী দলিল বলা হয়।
ঘ) দলিলের বিশুদ্ধতা প্রমান: ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনে ৩ ধারা মতে, দলিল বলতে বোঝায় কোন কিছু যা কোন অক্ষর দ্বারা বা চিহ্নের দ্বারা বা অন্য কোন কিছুর দ্বারা কোন বস্তুর উপরে লিখিত হয় বা প্রকাশ করা হয় কোন ঘটনা প্রমানের জন্য সেটাই হল দলিল।
উদাহরণ স্বরুপ:লিথোগ্রাফ,ফটোগ্রাফ ইত্যাদির দ্বারা কোন শব্দ এর মাধ্যমে কোন কিছু প্রকাশ করা।
একটি নকশা বা প্যান একটি দলিল।
কোন ধাতব দ্রব্য অথবা পাথরের পরে খোদাই করা বিষয়টি একটি দলিল।
কোন বিমূর্ত প্রতীক বা অঙ্গভঙ্গি তাহলে সেটা একটা দলিল।
দালিলিক সাক্ষ্য বলতে আদালতে পরির্দশনের জন্য দাখিলকৃত যাবতীয় দলিলকেই বুঝায়। দলিল প্রমাণের দুইটি পথ আছে। মূল দলিল দাখিল করা এবং মূল দলিলের সহিমোহর
একটি দলিলের বিষয়বস্তু দুভাবে প্রমান করা যায়। প্রথমত: প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা এবং দ্বিতীয়ত: গৌণ বা মাধ্যমিক সাক্ষ্য দ্বারা। যে দলিলটি প্রমান করতে হবে তা আদালতের পরিদর্শনের জন্য দাখিল করা হলে সাক্ষ্য আইনের ৬২ ধারা মতে তা প্রাথমিক সাক্ষ্য। আদালতে উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য সবচেয়ে বেশী গ্রহনযোগ্য যা উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য মতবাদের মূল কথা। দলিলের বক্তব্য সম্পর্কে দলিলই হচ্ছে উৎকৃষ্ট সাক্ষ্য। সাক্ষ্য আইনের ৯১ ও ৯২ ধারার বক্তব্য তাই।
 ৯১ ধারায় বলা হয়েছে যে, যখন কোন চুক্তি, মঞ্জুরী বা অন্য কোন প্রকার সম্পত্তি বিলি ব্যবস্থার শর্তাবলী একটি দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা হয় তখন এবং অন্যান্য যে সকল ক্ষেত্রে দলিলের আকারে কোন কারবার লিপিবদ্ধ করা আইনত আবশ্যক সে সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চুক্তি মঞ্জুরী বা অন্য প্রকার সম্পত্তির বিলি ব্যবস্থার শর্তাবলী বা সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে প্রমানের জন্য যে সকল দলিল ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষ্য দেয়া যাবে না। তবে যে সকল ক্ষেত্রে এ আইনে ইতিপূর্বে বর্ণিত বিধান অনুসারে সেকেন্ডারী বা গৌণ সাক্ষ্য গ্রহন যোগ্য সে সব ক্ষেত্রে গৌণ সাক্ষ্য দেয়া যাবে।
৯২ ধারায় বলা হয়েছে যে, দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা আইনত প্রয়োজন এরুপ কোন চুক্তি,মঞ্জরী, সম্পত্তির বিলি ব্যবস্থা বা অন্য কোন বিষয় যখন পূর্ববর্তী ধারা অনুসারে প্রমানিত হয়েছে তখন সেই দলিরের কোন শর্তের পরিবর্তন, সংযোজন বা বর্জনের উদ্দেশ্যে উক্ত দলিলের পক্ষগনের মধ্যে বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণের মধ্যে কোন মৌখিক চুক্তি বা বিবৃতি সম্পর্কে কোন সাক্ষ্য অবশ্যই গ্রহনযোগ্য হবে না।
দলিলের বক্তব্য স্পষ্ট হলে মৌখিক সাক্ষ্যের প্রয়োজন হয় না। সেই দলিলই হবে যথার্থ ও উপযুক্ত সাক্ষ্য।
এই ধারা দুটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, চুক্তি মঞ্জুরী বা অন্য কোন ধরণের সম্পত্তি বিলি বন্টনের ব্যাপারে যেখানে কোন লিখিত দলিল থাকে সেখানে এসব লিখিত দলিল ছাড়া অন্য কোন সাক্ষ্য দেয়া যাবে না। দলিলে
তাই বলা যায় যে লিখিত বস্তু কেবলমাত্র লিখিত বস্তু দ্বারাই প্রমান করতে হবে এবং লিখিত দলিল থাকলে বিরুদ্ধ সাক্ষীর বক্তব্যকে তা খন্ডন করে। কিন্তু কোন সাক্ষীর বক্তব্য দ্বারা লিখিত দলিলের বক্তব্য কে খন্ডন করা যায় না।


প্রশ্ন-১০ ইঙ্গিতবাহী  প্রশ্ন কাকে বলে? সাক্ষীকে কখন ইঙ্গিতবাহী  প্রশ্ন করা যায়? সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতাকে কিভাবে সন্দেহ করা যায়? কি কি কারণে একজন বিচারক এ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন? প্রশ্ন নিয়মমাফিক বা আইন সঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক হওয়া সত্বেও কখন সাক্ষীকে উত্তর দিতে বাধ্য করা যায় না?
ইঙ্গিতবাহী  প্রশ্ন(খবধফরহম ছঁবংঃরড়হ):
ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন (খবধফরহম ছঁবংঃরড়হ) কি তার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে দ্য এভিডেন্স এ্যাক্ট ,১৮৭২ এর ১৪১ ধারায়। সেখানে বলা হয়েছে যে,সাক্ষীকে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করা হয়। যে প্রশ্নের মধ্যে উত্তর বলে দেয়া থাকে তাকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন (খবধফরহম ছঁবংঃরড়হ) বলা হয়।
অর্থাৎ যে প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর নিহিত থাকে বা যে প্রশ্নের উত্তর  শুধু ’হাঁ’ বা ’না’উচ্চারণ করে দেওয়া যায় তাকে ইংঙ্গিতবাহী প্রশ্ন বা খবধফরহম ছঁবংঃরড়হ বলা হয়।
প্রশ্নে গর্ভে যদি উত্তর নিহিত থাকে তবে, উত্তরকারীকে আর কষ্ট করে কিছু বলতে হয় না। সামান্য হাঁ বা না বললেই উত্তর দেয়া হয়ে যায়। ইঙ্গিতবাহী প্রশ্নে নির্দিষ্ট কোন আকার বা আঙ্গিক নাই।
যে কোন আকারে বা আঙ্গিকে এরুপ প্রশ্ন করা যায়।
জায়েদকে জিগ্নাসা করা হল, আপনি কি দবিরের অধীনে চাকুরী করেন? এই প্রশ্নটি ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন। কারণ এখানে বলে দেয়া হচ্ছে যে, জায়েদ দবিরের অধীনে চাকুরী করেন। প্রশ্নে প্রতিধ্বনি করলেই যখন উত্তর হয়ে যায় তখন সেই  প্রশ্ন ইঙ্গিতবাহী হয়ে পড়ে।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, লিডিং কোশ্চেন হলো এমন একটি প্রশ্ন যে প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর লুকিয়ে থাকে।
সাক্ষীকে কখন ইঙ্গিতবাহী  প্রশ্ন করা যায়:
ইঙ্গিতবাহী প্রশ্নে নির্দিষ্ট কোন আকার বা আঙ্গিক নাই। যে কোন আকারে বা আঙ্গিকে এরুপ প্রশ্ন করা যায়। সাক্ষ্য
আইনের ১৪৩ ধারা অনুসারে,সাক্ষীকে জেরা করার সময় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায়।
 জেরায় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন ব্যাপকভাবে জিগ্নাসা করা যায় যাহা জবানবন্দী কালীন অহব্বানকারী ঐ আকারে জিগ্নাসা করতে পারেন না।
ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করলে জবানবন্দী প্রদানকালে করা যাবে না। তবে আদালত যদি অনুমতি দেয় তার বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে করা যেতে পারে। সাধারণত জবানবন্দীকালে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায় না।
তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন জিগ্নাসা করবার জন্য আদালত অনুমতি দিতে পারে। যেমন-
১) সাক্ষী সূচনাকালে জবানবন্দীতে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায় যদি অপরপক্ষ বাধাদেয় তাহলে করা যাবে না।
২) যদি বিষয়টি অপর পক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত থাকে এবং
৩) যদি বিষয়টি আদালতের মতে প্রমানিত বলে গণ্য হয়।
জেরার উদ্দেশ্য সাক্ষীকে জের বার করা। অবশ্য অন্যায়ভাবে জের বার করতে যাওয়া অবৈধ। শুধু ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা দোষনীয় নয়।
ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা চললে ও জড়ানো বা আচ্ছন্ন প্রশ্ন করা জেরাতে নিষিদ্ধ। এডভোজেট সাক্ষীকে প্রশ্ন জিগ্নাসা করলেন, আপনি কি চুকনগর গ্রামে মারামারি করতে গিয়েছিলেন? এক কথায় উত্তর দিবেন। হয হাঁ নয় না বলবেন। এই প্রশ্নটা জড়ানো বা আচ্ছন্ন। ইহা দুটো প্রশ্নে যোগফল, প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি চুক নগরে গিয়েছিলেন? এবং দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে যাদ আপনি সেখানে গিয়ে থাকেন,তবে কি মারামারি করতে গিয়েছিলেন? এই দুটো প্রশ্ন একটি প্রশ্নে মধ্যে করে মাত্র এক শব্দে উত্তর চাওয়া গুরুতর অন্যায়।
ডিফেন্স লয়ারকে লিডিং কোশ্চেন করায় পারদর্শী হতে হয় । কেননা এর মধ্যদিয়েই জেরার সময় খুব কৌশলে সাক্ষীর মুখ থেকে আসল ঘটনাটি প্রকাশ পেয়ে যায়, আর মামলাও অন্যদিকে ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । জেরার এই প্রক্রিয়াটি অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখলেও আসল ঘটনা উদঘাটনে একটি প্রতিষ্ঠিত কৌশল হিসাবে এটি আইন আদালতে বিবেচিত হয় ।
সাধারণত জেরা ও পুনঃ জেরার সময় ডিফেন্স লয়ার ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করে থাকেন । তাছাড়া বিপক্ষের আপত্তি না থাকলে, ভূমিকামূলক বিষয় হলে, তর্কিত ঘটনার অতর্কিত অংশ হলে, সাক্ষী যার পক্ষে সাক্ষী দিতে এসেছে তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া শুরুকরলে জবানবন্দী ও জেরা (ঊীধসরহধঃরড়হ রহ পযরবভ ্ ঈৎড়ংং বীধসরহধঃরড়হ) উভয়সময়ই আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে লিডিং কোশ্চেন করা যায় ।।


সাক্ষীকে কখন ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায় না:
এই প্রশ্ন করার কতগুলো নিয়ম আছে। প্রশ্নকর্তা চাইলেই সাক্ষীকে লিডিং কোয়েশ্চন করতে পারেন না। দ্য এভিডেন্স এ্যাক্ট,১৮৭২ এর ১৪২ ধারায় বলা হয়েছে যে, কখন ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন বা খবধফরহম ছঁবংঃরড়হ করা যাবে না। সেখানে বলা হয়েছে যে,আদালতের অনুমতি ব্যতীত এবং প্রতিপক্ষ আপত্তি দিলে সাক্ষীর জবারবন্দী এবং পুন জবানবন্দী গ্রহন কালে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করা যায় না। তবে যে সকল বিষয় ভূমিকা অথবা অবিসংবাদিত অথবা পূর্বেই যথেষ্টরুপে প্রমানিত হয়েছে বলে আদালত মনে করেন সে সকল বিষয়ে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করতে আদালত অনুমতি দিতে পারেন।
সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতাকে কিভাবে সন্দেহ করা যায়:
একজন সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করা যায় মূলত দুভাবে। প্রথমত ১৩৭ ও ১৩৮ ধারার বিধান মোতাবেক তাকে জেরা করে দেখানো যায় যে,তিনি যা বলেছেন তা সত্য বা স্বাভাবিক নয় এবং যথার্থ ঘটনার সাথে তার বক্তব্য মিলছে না। জেরার মাধ্যমে এটা দেখানো যায যে,চরিত্র বা সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি অনেক নি¤œ স্তরের ব্যক্তি।
 দ্বিতীয়ত: জেরার উপর নির্ভর না করে স্বাধীনভাবে সাক্ষ্য প্রমান এনে ১৫৫ ধারার বিধান মতে বিরুদ্ধ পক্ষের সাক্ষীর বিশ্বস্থতাকে নষ্ট বা খর্ব করা যায়।
সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধারা মতে. নিম্ন লিখিত উপায়ে প্রতিপক্ষ বা আদালতে অনুমতি নিয়ে সাক্ষী উপস্থিতকারী পক্ষ সাক্ষীকে বিশ্বাস যোগ্যতা বিষয়ে অভিযুক্ত করতে পারেন:
১) যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবেন সে বিশ্বাসের অযোগ্য এ বিষয়ে যাদের জানা আছে তাদের দ্বারা সাক্ষ্য দিয়ে;
২) সাক্ষীকে ঘুষ দেয়া হয়েছে বা সাক্ষী ঘুষের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে বা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অন্য কোন অন্যায় প্রলোভনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে প্রমান করে;
৩) তার প্রদত্ত সাক্ষ্যের কোন অংশ পূর্ববর্তী বিবৃতির বিরোধী তা প্রমান করে;
৪) কোন ব্যক্তি যদি নারী ধর্ষণ বা নারী ধর্ষনের প্রচেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত হয় তখন সাক্ষ্য দেওয়া যেতে পারে যে সেই নারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।
কি কি কারণে একজন বিচারক এ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন:
সাক্ষ্য আইনের বিধান মোতাবেক সাধারণত জবানবন্দী নেওয়ার সময় বা জেরা করার সময় একজন সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার প্রচেষ্টায় বিচারক বাধা দিতে পারেন না। তবে জেরা করার সময় বিরক্তিকর বা অপমানজনক প্রশ্ন করলে বিচারক বাধা দিতে পারেন। আদালতের কাজ হচ্ছে বিবাদের কারণ নিয়ে বিচার করা সাক্ষীর বিচার করা নয়। তাই কোন সাক্ষী মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার জন্য স্বতন্ত্রভাবে তা বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় । কিন্তু মিথ্যার অন্বেষায় কোন সাক্ষীকে অযথা হয়রানি করা হলে বিচারক হস্তক্ষেপ করে তা বন্ধ করতে পারেন।
সাক্ষ্য আইনের ১৪৯ ধারায় বলা হয়েছে যে,যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত প্রশ্ন করা যাবে না।
যেমন- এ্যাডভোকেটকে তার মক্কেল জানায় বিরুদ্ধ পক্ষ সাক্ষীর মধ্যে একজন সাক্ষী ডাকাত, জেরার সময় এ্যাডভোকেট সাহেব এই সাক্ষীকে, একথা জিগ্নাসা করতে পারবেন যে অপনি একজন ডাকাত।
উক্ত আইনের ১৫০ ধারায় বলা হয়েছে যে,বিচারকের মতে যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত প্রশ্ন করা হলে সেই আইনজীবির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট করতে পারেন।
একই আইনের ১৫১ ধারা মতে,বিচার্য বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্ন না হলে সাক্ষীকে অশ্লীল ও কুৎসামূলক প্রশ্ন করা হলে বিচারক বাধা দিতে পারেন।
১৫২ ধারা মতে, কোন প্রশ্ন যদি কাউকে অপমান বা উত্যক্ত করার উদ্দেশ্য-প্রনোদিত বলে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় অথবা প্রশ্নটি সঙ্গত হলেও অকারণ আক্রমাণাতœক আকৃতি সম্পন্ন বলে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় ,তবে আদালত অনুরুপ প্রশ্ন অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন।
অথাৎ সেই প্রশ্ন যা শুধু অপমান কিংবা বিরক্ত করার জন্য সাক্ষীকে করা হয় তা আদালত জিগ্নাসা করতে দিবেন না।
যে প্রশ্ন সাধারণভাবে আপত্তিজনক নয় তা আপত্তি জনক আকারে করা হলে আদালত সে আকারে ঐ প্রশ্ন জিগ্নাসা করতে দিবেন না।
প্রশ্ন নিয়মমাফিক বা আইন সঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক হওয়া সত্বেও কখন সাক্ষীকে উত্তর দিতে বাধ্য করা যায় না:
সাধারনত একজন সাক্ষী তার জানা তথ্য সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু আইনে কতিপয় ক্ষেত্রের উল্লেখ রয়েছে যেক্ষেত্রে সাক্ষীকে তার জানা তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য করা যাবে না। এধরনের সুবিধাকে বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত আদান প্রদান বলে। সামাজিক শৃঙ্খলা ও অন্যান্য সামাজিক স্বার্থেই এ অধিকার মঞ্জুর করা হয়েছে।
সাক্ষ্য আইনের ১২১ ধারামতে,কোন জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট উচ্চ আদালতের নির্দেশ ব্যতীত বিচারক থাকা কালে আদালতে তার আচরণ বা উক্ত সময়ে তাঁর গোচরীভূত বিষয়াবলী সম্পর্কে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি বাধ্য থাকবেন না। তবে ম্যাজিস্ট্রেট বা জজ থাকা কালে তার সম্মুখে অন্যান্য যে সকল বিষয সংঘটিত হয়,সেগুলি সম্পর্কে তিনি সাক্ষ্য দিতে পারেন।
সাক্ষ্য আইনের ১২২ ধারা মতে,কোন ব্যক্তি যিনি বিবাহিতা বা যার সাথে বিবাহ হয়েছে ,বিবাহ বজায় থাকাকালে সেই ব্যক্তির সহিত তার স্ত্রী বা স্বামীর বার্তার বিষয বস্তু প্রকাশ করতে সেই ব্যক্তিকে বাধ্য করা যাবে না।
সাক্ষ্য আইনের ১২৩ ধারা মতে,রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি সম্পর্কিত অপ্রকাশিত সরকারী দলিলপত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত  সাক্ষ্য দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না। সাক্ষ্য আইনের ১২৪ ধারা মতে, কোন সরকারী কমকর্তাকে অফিসিয়াল গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে প্রকাশ করতে বাধ্য করা যাবে না যার দ্বারা রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়।
সাক্ষ্য আইনের ১২৫ ধারা মতে, কোন ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কর্মকর্তা কোন অপরাধ সংঘটনের সংবাদ কোথা থেকে পেয়েছেন,তা প্রকাশ করতে বাধ্য করা যাবে না। অনুরুপভাবে সরকারী রাজস্ব সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনের সংবাদ রাজস্ব বিভাগীয় অফিসার কোথা থেকে পেযেছেন তা প্রকাশ করতে তাকে বাধ্য করা যাবে না।
সাক্ষ্য আইনের ১২৬ ধারা মতে, কোন উকিল কোন সময় তার মক্কেলের তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে অন্য কারো নিকট প্রকাশ করতে পারবেন না তবে মক্কেল যদি সম্মতি দেয় তাহলে সেটা করা যাবে। এই ধারায় আরো আছে যে, কোন উকিল তার মক্কেলের দলিলের গর্ভের বিষয় পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে অন্যের নিকট প্রকাশ করতে পারবে না।
সাক্ষ্য আইনের ১২৭ ধারা মতে, দোভাষী এবং আইনজীবীগনের কেরানী বা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ১২৬ ধারার বিধান সমূহ প্রযোজ্য হবে।
১২৯ ধারা মতে ,আইনজীদের নায় আইন উপদেষ্টার সাথে যোগাযোগ বা আদান প্রদান গোপনীয় থাকবে।
শেষকথা    :উপরোক্ত ধারাগুলির বর্ণনার আলোকে এ কথাই সুস্পষ্টবাবে প্রতীয়মান হয় যে, প্রশ্ন নিয়মমাফিক বা আইনসঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক হওয়া স্বত্বেও কখনও কখনও সাক্ষীকে উত্তর দানে বাধ্য করা যায় না।   










































প্রশ্ন-১১
ক) দুষ্কর্মের  সহযোগী সম্পর্কে  সাক্ষ্য আইনে যে দুটি বিবৃতি আছে তা সমন্বয় সাধন কর।
খ) দুষ্কর্মের সহযোগীর সাথে সহ আসামীর সাক্ষ্যগত মূল্য বিশদ ব্যাখ্যা কর।
ক)
সহযোগী বলতে বুঝায় কোন অপরাধের অভিযুক্ত আসামীদের মধ্যে একজন বা একাধিক জন।
এখানে মনে রাখতে হবে যে,যতক্ষন পযন্ত উক্ত সহযোগী অন্যান্য আসামীদের সহিত আসামী থাকবেন ততক্ষণে তিনি সহযোগী হিসাবে গন্য হবেন না এবং সাক্ষী দিতে পারবেন।
অপরাধের সহযোগী বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যিনি প্রত্যক্ষভাবে কোন অপরাধজনক কার্যসম্পাদনে অপর আসামীর সাথে অংশগ্রহণ করেছেন বা সহযোগিতা করেছেন। অর্থাৎ যেই ব্যক্তি অপরাধজনক কার্যে আসামীকে সাহায্য বা সহযোগিতা করে তাকে দুষ্কর্মের সহযোগী বা অপরাধের সহযোগী বলে। যদিও সাক্ষ্য আইনে অপরাধের সহযোগীর কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয় নাই, তবুও বিভিন্ন মামলার নজীরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, দুষ্কর্মদ্বারা অর্জিত সম্পত্তি যারা গ্রহণ করে (যেমন চোরাই মাল) তারাও দুষ্কর্মে সহযোগী বলে বিবেচিত হয়। যে ঘুষ খায় সে অপরাধী, যে ঘুষ দেয় সে সহযোগী অপরাধী। অপরাধ করার পূর্বে বা পরে যারা সহযোগিতা করে তারাও সহযোগী অপরাধী। তবে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে যাকে দিয়ে অপরাধমূলক কাজ করানো হয় তাকে অপরাধের সহযোগী বলা যায় না। তেমনি জোর করে ঘুষ আদায় করলে ঘুষ দাতাকে সহযোগী অপরাধী বলা যায় না।
সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারা অনুসারে দুষ্কর্মের সহযোগী অভিযুক্ত ব্যক্তি বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে পারেন এবং সেই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির দন্ড হতে পারে। কিন্তু সহযোগী যদি নিজেকে নির্দোষ ঘোষনা করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় তবে তা গ্রহনযোগ্য হবে না।
 দুস্কর্মের সহযোগীর সমর্থিত সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে কোন অভিযুক্তকে সাজা দেয়া হলে তা সাক্ষ্য আইনের ১১৩ ধারা অনুসারে বৈধ হবে। কিন্তু ১১৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, দুস্কর্মের সহযোগীর সাক্ষ্য যদি প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দ্বারা সমর্থিত না হয় তবে আদালত তা বিশ্বাসের অযোগ্য বলে অনুমান করতে পারেন। দুস্কর্মের সহযোগী একজন অপরাধী। ক্ষমার প্রতিশ্রুতিতে নিজের মুক্তির আশায় রাজসাক্ষী হিসেবে তার সহযোগী অসামীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। কাজেই সে একজন হীন চরিত্রের মানুষ ও বিশ্বাস ঘাতক বলা যায়। সত্য উদঘাটনের জন্য এরুপ করতে হয় বটে,তবে তার সাক্ষ্য গ্রহনের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে উচ্চ আদালতগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাই  যদিও দুস্কর্মের সহযোগীর অসমর্থিত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সাজা দেয়া অবৈধ নয় তবুও বিভিন্ন মামলার নজিরে এরুপ দূর্বল ও সন্দেহযুক্ত সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে শাস্তি প্রদানকে নিরুসাহিত করা হয়েছে।  ১৯৫৯ সালের পি এলডি (পেশোয়ার)৭৫ পৃষ্ঠায় হাইকোর্ট মন্তব্য করেছেন যে, অপরাধটি সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অন্য সাক্ষীর সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত না হলে দুস্কর্মের সহযোগীর সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে আসামীকে দন্ড দেয়া উচিত হবে না।

দুষ্কর্মের সহযোগীর সাথে সহ আসামীর সাক্ষ্যগত মূল্য:
ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট কাশমিরা বনাম মধ্য প্রদেশ রাজ্য মামলায় ((১৯৫২ ঝ.ঈ ঔ.২০১)এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, সহ আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষ্য দুস্কর্মের সহযোগীর সাক্ষ্য অপেক্ষা তুলনামূলক কম সাক্ষ্যগত মূল্য বহন করে। কেননা দুস্কর্মের সহযোগীর সাক্ষ্য শপথ গ্রহনের মাধ্যমে গ্রহন করা হয এবং সেখানে জেরার সুযোগ থাকে। কিন্তু সহ-আসামী যে নিজকে জড়ায়ে দোষ স্বীকার করে তাকে শপথ গ্রহনের মাধ্যমে সাক্ষ্য নেয়া হয় না এবং জেরার সুযোগ থাকে না।


প্রশ্ন-১২ টিকা লিখ:
ক) প্রমানের ভার:
কোন নির্দিষ্ট মামলায় ,মামলার কোন পক্ষ কর্তৃক বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে সকল ঘটনার অস্তিত্ব প্রমান করা আবশ্যক বলে ধরা বা বিবেচনা করা হয তাকে প্রমানের ভার বা প্রমানের দায়িত্ব (Burden of Prove)বলা হয়। মামলার যে পক্ষ কোন অধিকার বা দাবী প্রতিষ্টা করতে চায় তাকে উহা প্রমান করতে হবে। মামলার শুরুতে প্রমানের দায়িত্ব যে কোন এক পক্ষের উপর থাকলেও পরবর্তীকালে উহা অন্য পক্ষের উপর অর্পিত হতে পারে।
সাক্ষ্য আইনের ১০১ হতে ১০৬ ধারা পর্যন্ত প্রমানের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যার উপর প্রমানের ভার অর্পিত হয় ,যে ব্যক্তি আদালতে কোন বৈধ অধিকার অথবা দায় প্রমান করতে চায় তাকে সেটা প্রমান করতে হবে এবং যখন তিনি বিষয়টি প্রমান করতে বাধ্য তখনই তাকে বলে প্রমানের ভার বলা হয়।( ধারা-১০১)।
উদাহরণ স্বরুপ:
ক) ক আদালতে এই মর্মে দাবী করে যে, খ একটি আপরাধ করেছে এবং সেই অপরাধে খ এর সাজা হওয়া উচিত এ ক্ষেত্রে প্রমানের দায়িত্ব ক এর উপর পরে।
খ) ক এইমর্মে আদালতে রায় কামনা করে যে, খ এর দখলভূক্ত কোন একটি জমি ক পাবার অধিকারী। এর সমর্থনে ক কতগলি বিষযের অস্তিত্ব দাবি করেন এবং খ সে সকল বিষযের অস্তিত্ব অস্বীকার করে। এই সকল বিষযের অস্তিত্ব অবশ্যই ক এর প্রমান করতে হবে।
খ) সাক্ষী হিসেবে ৬ বছরের শিশু:
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১১৮ ধারা থেকে ১৩৪ ধারা পর্যন্ত সাক্ষী সম্পর্কে বিধান রয়েছে।উক্ত আইনের ১১৮ ধারায়  বলা হয়েছে যে, কে সাক্ষ্য দিতে পারে। এই ধারার বিধান মতে সকল ব্যক্তিই সাক্ষ্য প্রদানের যোগ্য,আদালত যদি মনে করেন যে, কোন ব্রক্তি অল্প বয়স্ক,অতিবৃদ্ধবয়ষ্ক,দৈহিক বা মানসিক ব্যধি অথবা অনুরুপ অন্র কোন কারণ থাকা স্বত্বেও উক্ত ব্যক্তি জিগ্নাসিত প্রশ্ন বুঝতে পারেন অথবা সে জিগ্নাসিত প্রশ্নের যুক্তি সঙ্গত উত্তর দিতে সক্ষম তাহলে সে ব্যক্তি সাক্স্র দানের অযোগ্র হবেন না। অর্থাৎ তার সাক্ষী আদালতে গ্রহনযোগ্য হবে।
উক্ত আইনের একই ধারার ব্যাখ্রায় আরও বলা হয়েছে যে, কোন বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যক্তি তার মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণে তাকে জিগ্নাসিত প্রশ্ন বুঝতে বা উহার যুক্তি সঙ্গত উত্তর দিতে অক্ষম না হয় তবে সে ব্যক্তি সাক্ষ্র দানের অযোগ্য হইবে না।
 আলোচ্য টিকার বিবেচ্য বিষয় হল সাক্ষী হিসেবে ৬ বছরের শিশুর সাক্ষ্য আদালতে গ্রহনযোগ্য কিনা। সাক্ষ্য আইনের ১১৮ ধারা বিধান মতে,সাক্ষী হিসেবে ৬ বছরের শিশুর সাক্ষ্য আদালতে গ্রহনযোগ্য হবে-যদি শিশুটি জিগ্নাসিত প্রশ্নের যুক্তি সঙ্গত উত্তর দিতে সক্ষম হয়। তবে জিগ্নাসিত প্রশ্নের যুক্তি সঙ্গত উত্তর দিতে সক্ষম না হলে সাক্ষী হিসেবে ঐ শিশুর সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য হবে না।
সুতরাং আমরা এক কথায় বলতে পারি সকল ব্যক্তি সাক্ষ্য দিতে পারবে যে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
গ) স্বীকৃতি ও স্বীকারোক্তি:
সাক্ষ্য আইনের ১৭ ধারায় স্বীকৃতির সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। স্বীকৃতি বলতে লিখিত বা মৌখিক এমন কোন বিবৃতিকে বুঝায় যা কোন বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক ঘটনা সম্পর্কে কোন অনুমানের ইঙ্গিত বহন করে এবং যা অতপর নিম্নে বর্ণিত উল্লেখিত কোন পরিস্থিতিতে কোন ব্যক্তি কওে থাকে।
সাক্ষ্য আইনের ১৭ থেকে ২০ ধারা পর্যন্ত স্বীকৃতির বিষযে ধারণা প্রদান করা হয়েছে।
স্বীকৃতি বিচার্য বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কোন সিন্ধান্তের সূচনা কওে অথবা বিচার্য বা প্রাসঙিবগক বিষয়ের সাথে অন্য কোন বিসয়কে প্রাসঙ্গিক কওে তুলে। আসামী দোষ স্বীকারের ভিত্তিতে তাকে দন্ডিত করা যায়। তবে এই ক্সেত্রে বিচারককে সাবধানতা আবলম্বন করতে হয়।
৩৭ উখজ(অউ) ২১২ ইবমঁস কড়ফবুধ াং ঐধলবৎধ কযধঃঁহ:
স্বীকৃতি স্বীকারোক্তিকারীর বিরুদ্ধে একটি জোরালো সাক্ষ্য,তবুও এটি বস্তুত কোন স্বীকৃতি নয়, এইরুপ প্রমানের জন্য স্বীকৃতি দাতা সাক্ষ্য দিতে পারে।
গাক্ষ্য আইনের ১৮ ধারায় নিম্ন লিখিত ব্যক্তিগন স্বীকৃতি দিতে পারে-
কোন মামলার যে কোন পক্ষ
কোন মামলার যে কোন প্রতিনিধি
এামলার বিষয় বস্তুতে যার মালিকানাগত বা আর্থিক কোন স্বাার্থ আছে
এামলার পক্ষগণ যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে মামলার বিষয়বস্তুতে স্বার্থ লাভ করেছে তাদের বিবৃতি।
স্বীকারোক্তি:
অপরাধ স্বীকার তথা দোষ স্বীকার শব্দটি কেবলমাত্র ফৌজদারি মামলায় প্রযোজ্য,সাক্ষ্য আইনে স্বীকারোক্তির কোন সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ২৪ থেকে ৩০ ধারায় স্বীকারোক্তির বিধিবিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। স্বীকারোক্তি বলতে অভিযুক্ত হওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের কথা স্বীকার করাকে বোঝায়।
নিজে ঐ অপরাধ অনুষ্ঠানে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করাকে বোঝায়্ স্বীকারোক্তি এমন একটি ববিৃতি যাতে অপরাধ অনুষ্ঠানে পূণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ করা হয়।
 স্বীকারোক্তি অবশ্যই স্বেচ্চায়, ও সুস্থ মস্তিষ্কে এবং সকল প্রকার প্রলোভন,ভীতি, প্রতিশ্রুতির প্রভাব মুক্তভাবে প্রদান করতে হবে এবং তা বিচার শুরুর পুর্বে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ি লিপিবদ্ধ করতে হবে।
সুতরাং কোন আসামী কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সহিত নিজেকে জড়িত কওে স্বেচ্ছায় সুস্থ মস্তিষ্কে, কোন প্রকার ভয়ভিিত, প্রলোভন বা প্রতিশ্রুতিতে প্রভাবিত না হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা বিদান অনুযায় কোন প্রথম শ্যেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের বা সরকার কর্তৃক ক্সমতা প্রাপ্ত ২  য শ্যেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট যে বিবৃতি প্রদান করে তাকে স্বীকারোক্তি বলে।
ঘ) প্রতিবন্ধ:
এস্টাপেল মানে মুখবন্ধ। আগে যা বলা হয়েছে পুনরায় তা আর বদলানো যাবে না।
ঊংঃড়ঢ়ঢ়বষশব্দটি ফরাসী শব্দ ” ঊংঃড়ঁঢ়ব”হতে উদ্ভুত, যার অর্থ হচ্ছে নিবৃত্তি। কোন ব্যক্তি যখন একটি কথা বলে এবং সে কথার উপর ভিত্তি কওে অন্য ব্যক্তি কোন কাজ কওে থাকে তখন প্রথম ব্যক্তিকে তার সে কথাটি আর পরিবতৃন করতে দেয়া যায়ন্ াএটাই হচ্ছে প্রতিবন্ধ সূত্রের মূল কথা। এই সূত্রটি সাক্স্য আইনের ১১৫ ধারায় বিবৃত হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে যে,
কোন ব্যক্তি যখন তার ঘোষনা,কার্য কিংবা নিরবতা দ্বারা অন্য ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন বিষয় সত্যবলে বিস্বাস করায়েছেন এবং সেই বিশ্বাসের বশবতী হয়ে কোন কোন কাজ করতে দিয়েছেন তখন সেই ব্রক্তি াথবা তার প্রতিনিধির সাথে মামলায় উক্ত বিষয়ের সত্যতা অস্বীকার করতে পারবেন না।
কোন ব্যক্তি যখন তার ঘোষনা দ্বারা ান্য কোন ব্যক্তিকে কিছু করতে প্ররোচিত কওে ,তখন প্রথম ব্যক্তি তার ঘোষনা আর প্রত্রাহার করতে পারবে না। উক্ত ঘোষনা প্রতিবন্ধরুপে কাজ করে। নিজ সাবাথৃ সিদ্ধিও জন্য কেউ যে যেন এই বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলেতে না পারে তারই ব্যবস্থা করা হয়েছে এই প্রতিবন্দনীতিতে।
উদাহরণ-ক স্বেচ্ছায় এবং মিথ্যাভাবে খ কে বিশ্বাস করায় যে ক কোন একটি জমির মালিক এবং তদ্বারা খকে ঐ জমি কিনতে প্রলুব্ধ করেন। পরবতীকালে ক প্রকৃতরুপেই ঐ জমির মালিক হন। বিক্রয়ের সময় এ জমিতে ক এর কোন স্বত্ব ছিল না এই অজুহাত উত্থাপন কওে ক উক্ত  বিক্রয় টি নাকচ করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধ নীতি কাজ করবে। তার বিক্রয় সময়ের স্বত্বহীনতা প্রমান করতে দেয়া হবে না।
ঙ) জবানবন্দী:
যে পক্ষ সাক্ষীকে উপস্থিত করিয়াছে সেই পক্ষ যখন সাক্ষীকে জিগ্নাসাবাদ করে সাক্ষ্য দেওয়ান তথন তাকে সাক্ষীর জবারবন্দী গ্রহন বলা হয়। জবানবন্দীর পর প্রতিপক্ষ যখন সেই সাক্ষীকে সাক্ষ্যের যথার্থতা যাচাই করের জন্য প্রশ্ন করেন তখন তাকে জেরা ঈৎড়ংং ঊীধসরহধঃরড়হ বলা হয়। জেরার পর যে পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করেছে তিনি যদি পুনরায় কোন বিষয়ে সেই সাক্ষীকে জিগ্নাসাবাদ করে তবে তাকে পুন: জবানবন্দী বা জব-বীধসরহধঃরড়হ গ্রহন বলা হয়। ধারা-১৩৭।
সাক্ষ্য আইনের ১৩৫ থেকে ১৩৮ ধারার বিধান মোতাবেক সাক্ষীকে আদালতে উপস্তিত করার পর জবান বন্দী গ্রহন করতে হবে। সাক্ষ্য আইনের ১৩৫ ধারা মতে, দেওয়ানী ও ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের বিধান এবং প্রথা সিদ্ধ রীতিনিিত অনুযায়ী নির্ধারিত ক্রমানুসারে সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে। এরপর তাদের জবানবন্দী গ্রহন ও জেরা করা হবে। এরপর কোন নিযম না থাকলে সেক্ষেত্রে আদালত যেরুপ যুক্তিযুক্ত মনে করবে ,সেই নির্দেশ বা আদেশ প্রদান করবেন।
মামলার বাদী পক্ষকেই প্রথমে সংক্ষেপে তার বক্তব্য পেশ করতে হবে। এটাকেই চুড়ান্ত শুনানী শুরু বা চালু করা বলে। এরপর বক্তব্যের সমর্থনে সাক্ষী উপস্থাপন করতে হয় এবং তার জবানবন্দী গ্রহন করতে হয়,বাদী পক্ষের জবান বন্দী শেষ হলে প্রতিপক্ষ কর্তৃক বাদীর সাক্ষীকে জেরার আইনসঙ্গত অধিকার জন্ম্ েএটাই হল সাধারণ নিয়ম।
এভাবে আনতি বাদী পক্ষে সাক্ষীকে বাদীর সাক্ষী আর বিবাদী পক্ষের সাক্ষীকে বিবাদীর সাক্ষী বলা হয। কিন্তু এমন অবস্থাও হতে পারে যখন কোনো বিশেষ ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহন করে আদালত বিচার্য বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারনা নিতে ইচ্ছুক কিন্তু বাদী বা বিবাদী কেউ তাকে সাক্ষ্য দেওযাতে অনাগ্রহী। তদবস্থায়আদালত স্বেচ্ছায় সমন দিয়ে এনে তার সাক্ষ্য নিতে পারেন। এই রকম সাক্ষীকে আদালতের সাক্ষী বলা হয় এবং তাকে উভয় পক্ষের জেরা করার অধিকার থাকে।
চ) প্রাইভেট ডকুমেন্টস ও পাবলিক ডকুমেন্টস:
দেশের সমগ্র দলিলকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।
প্রথমভাগে সরকারী দলিল এবং দ্বিতীয়ভাগে ব্যক্তিগত দলিল অর্থাৎ চঁনষরপ ফড়পঁসবহঃং ধহফ চৎরাধঃব ফড়পঁসবহঃং এদের কে পাবলিক ও প্রাইভেট দলিল বলা হয়।
সাক্ষ্য আইনের ৭৪ ধারায় সরকারী দলিলের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সরকারী দলিল বলতে নি¤œবর্ণিত দলিল সমূহকে বোঝায়-
ক) সার্বভেওম কর্তৃপক্ষের কার্যের লিপিবদ্ধ বিবরণীকে সরকারী দলিল বলা হয় যেমন- সংসদের আইন প্রভৃতি ইহার আওতায় আসে।
খ) সরকারী সংস্থা এবং ট্রাইব্যুনাল কার্যের লিপিবদ্ধ বিবরণীকে সরকারী দলিল বলা হয়।
গ) বাংলাদেশ বা বিদেশের সরকারী কর্মচারীদের কার্যের লিপিবদ্ধ বিবরনীকে সরকারী দলিল বলা হয়।
ঘ) যে সমস্ত ব্যক্তিগত দলিলের সরকারী রেকর্ড রাখা হয় সেগুরিকেও সরকারী দলিল বলা হয়।
প্রাইভেট ডকুমেন্টস:
যা সরকারী দরিল নহে তাই ব্যক্তিগত দলির। সাক্স্য আইনের ৭৪ ধারায় সরকারী ও ব্যক্তিগত দলিলের সংজ্হা প্রদান করা হয়েছে।
যে দলিলগুলি সরকারী নয় তাই ব্যক্তিগত। দলিলের প্রকৃতির ও প্রকারের অন্ত নাই, ইহার প্রায় সবগুলিই ব্যক্তিগত দলিল। দেশের যাবতীয় দলিলকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে যর্থাৎ চঁনষরপ ফড়পঁসবহঃং ধহফ চৎরাধঃব ফড়পঁসবহঃং সরকারী দলিলের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যা সরকারী নয় তা ব্যক্তিগত।
ছ) ৩০ বছরের পুরানো দলিল:
 যখন কোন দলিল ৩০ বছরের পুরাতন বলে প্রতীয়মান হয় বা প্রমানিত হয় তখন স্বাভাবিক নিয়মে দলিলটি যার হেফাজতে(ঈঁংঃড়ফু) থাকার কথা তার নিকট হতে যদি উহা দাখিল হয়,তবে আদালত অনুমান করতে পারেন (গধু চৎবংঁসব)যে এই দলিলে স্বাক্ষর, হাতের লেখা এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষর যে যে ব্যক্তি করেছেন তা সঠিক।
কোন প্রাসঙ্গিক দলিল আদালতে দাখিল হলেই তা সাক্ষ্যরুপে গ্রহনীয় হয় না। সাক্ষী দ্বারা দলিলটি প্রমান করতে হয় এবং তৎপর সাক্স্যরুপে গ্রহীত হয়।
সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারা এই সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম।
৩০ বৎসরের পুরাতন দলিল আদালতে দাখিল হলে তা অন্যান্য দলিলের ন্যায় সাক্ষী দ্বারা প্রমান করতে হয় না। শুধু ৩০ বছরের পুরাতন মূল দলির যথাযথ হেফাজত চৎড়ঢ়বৎ পঁংঃড়ফু প্রমান করলেই হয়।
অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে ৩০ বৎসরের প্ররাতন দলিলটি যার দখলে থাকার কথা সেখান হতে দলিলটি আদালতে দাখিল হয়েছে মর্মে যার দখলে দলিল ছিল তা দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য দিলেই হেফাজত প্রমান হবে এবং তদবস্থায় দলিলটি সাক্ষ্যরুপে প্রমান গৃহীত হবে এবং আদালত এই বিষয়ে অনুমান করবেন যে দলিলের লেখা সম্পাদন এবং প্রত্যায়িত দলিল হলে প্রত্যায়ন অকৃত্তিম। এইগুলি ব্যতীত দলিলে বিষযবস্তু, বিষয়ে আদালত কিছুই অনুমান করবেন না। ৩০ বছরের পুরাতন আসল দলিলটি যদি হেফাজতকারীর নিকট হতে হারিয়ে গিযে থাকে এরুপ প্রমান থাকে,তবে উক্ত দলিলের সহিমোহরকৃত নকল গৌন সাক্ষ্যরুপে এই ধারা অনুযায়ী গৃহীত হবে। দলিলের তারিখ হতে দলিলটি যখন সাক্ষ্যরুপে ব্যবহার করতে চাওয়া হবে সেই সময় পর্যন্ত ৩০ বৎসরের পুরাতন হইলেও এই ধারা সামনে আসবে। দলির প্রমানের সাধারণ পদ্ধতি সাক্ষ্য আইনের ৬৭ ধারায় আলোচনা করা হয়েছে।

জ) বিশ্বরায়(ঔঁফমবসবহঃ রহ জবস):দেশী হোক বা বিদেশী হোক আদালতের রায় দুই প্রকারের হতে পারে। এগুলো হচ্ছে বিশ্ব সম্পর্কিত রায় (ঔঁফমবসবহঃ রহ জবস) এবং পক্ষগণ সম্পর্কিত রায়(ঔঁফমবসবহঃ রহ ঢ়বৎংড়হধস)।
বিশ্ব সম্পর্কিত রায় শুধু মামলার পক্ষগণের উপরই প্রযোজ্য নয়;বরং তা সমগ্র মানবগোষ্ঠীর উপরই প্রযোজ্য।
সাক্ষ্য আইনের ৪১ ধারায় বলা হয়েছে যে,প্রবেট সম্বন্ধীয়, বৈবাহিক, নৌবিভাগ সম্পর্কিত অথবা ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা সম্পর্কীয় আদালতের পূর্ববর্তী রায সমূহ বিশ্ব সম্পর্কিত রায়। ইহা দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় মামলায়ই চুড়ান্ত।










6 comments:

  1. ধণ্যবাদ পোস্টটির জন্য

    ReplyDelete
  2. প্লিজ স্যার একটু বলবেন এটা কি ২০১৯ এলএলবি ফাইনাল পরিক্ষার সাজেশান

    ReplyDelete
  3. যদি ইংরেজি ফন্টগুলো ঠিক করে দিতেন তবে খুশি হতাম

    ReplyDelete
  4. তথ্যগুলো কি শেয়ারযোগ্য।

    ReplyDelete